ঢাকা শহরে যারা লেখাপড়া করেছেন তাদের মাঝে স্কুলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।আর এখনকার যুগে তো মনে হয় কোচিং সেন্টারেও ভর্তি হতে পরীক্ষা দেয়া লাগে।এই দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল আমাকেও। আজ সেই দিনের কথা ভাবলে হাসব না কাঁদব বুঝতে পারিনা ।

ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়েছি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে।এরপর আব্বু-আম্মুর মনে হল-নাহ,ছেলেকে এবার অথৈ জলে ফেলা উচিত।তারা আমাকে ঢাকার তথাকথিত নামকরা আইডিয়াল স্কুল এ ভর্তি করানোর সিদ্ধান্ত নিলেন । আর আমিও বাধ্য সন্তানের মত প্রস্তুতি নিতে লাগলাম।যদিও আমি কোন কোচিং সেন্টারে পড়িনি,তবে বাবা-মার তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতি খারাপ হয়নি ।

অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।আমার চেয়ে মনে হল আমার অভিভাবকের টেনশনই বেশি ।তো আগের দিন রাতে আব্বু ডেকে বলল-"বাবা মাথা ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দিবা,আর কোন প্রশ্নে আটকায় গেলে সেইটা নিয়ে বসে থাকবানা।আরো একটা উপদেশ আব্বু দিয়েছিল যেটা কোনদিন ভুলবনা । আব্বু বলেছিল কোন ইংরেজী শব্দের অর্থ না জানলে সেই শব্দটাই বাংলায় লিখে দিতে।"

উপস্থিত হলাম পরীক্ষার হলে।মাথা ঠান্ডাই ছিল।কিন্তু মনে হয় একটু বেশিই ঠান্ডা ছিল।

একটি ট্রান্সলেশন ছিল এরকম-
Find a cow

Find শব্দটির অর্থ আমি জানতাম না।তাই বাবার বাধ্য সন্তানের মত আমি লিখে দিলামঃ ফিন্ড একটি গরু - আমি ভেবেছিলাম Find কোন গরুর নাম । এ লজ্জা রাখি কোথায়?

আমার তো মনে হয় আমার খাতা দেখে পরীক্ষকই হাসতে হাসতে পরে গেছিলেন।

ওই পরীক্ষায় আমি আরেকটি গাধামি করেছিলাম মনে আছে। জাহাজ শব্দটি নিয়ে বাক্য রচনা করেছিলাম জাহাজ সাগরে চলে। আমার পাশের জন বলল-" জাহাজ তো নদীতে চলে।তুমি নদী লিখ, আর আমি তোমারটা দেখতেছি -তাই আমি সাগর লিখলাম,কারণ এটা ভুল"।আমিও তাই করলাম।

পরীক্ষা শেষে আমি বের হয়ে আব্বুকে আমার বীরত্বগাঁথা তুলে ধরলাম।আব্বু নির্বাক হয়ে গেলেন।তারপরদিনই তিনি আমাকে ঐ কিন্ডারগার্টেনেই ক্লাস টুতে ভর্তি করে দিলেন।

তবে আশ্চর্যজনক কথা হল আমি ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলাম ।কীভাবে হয়েছিলাম খোদাই যানে......