somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আন্তর্জাতিক নারী দিবসঃ প্রত্যাশা ,প্রাপ্তি

০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


০৮ ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস । এ দিবসটিকে মাথায় রেখে সবচেয়ে ভালো বাক্য হতে পারেঃ
সাম্যের গান গাই- আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই! বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।
আমাদের সামাজিক , রাজনৈতিক , অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়ন , সুশিক্ষা নিশ্চিতকরণ , নারীর সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে ! নারী কখনো মা , কখনো বোন , কখনো স্ত্রী হিসেবেই কেবল নয় আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যাবস্থায় বৈশ্বিক উন্নয়ন এর ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রতিযোগীতায় ধরে রাখতে নারীদের ভূমিকা উল্লেখ করার মত ।
কিভাবে আসলো নারী দিবস ?
বিশ্বব্যাপি এই দিবসটি পালনের পেছনে রয়েছে এক অনন্য ইতিহাস । ১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটি সূচ কারখানার মহিলা শ্রমিকগণ কর্মক্ষেত্রে মানবেতর জীবন ও ১২ ঘন্টা কর্মদিবসের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের উপর নেমে আসে পুলিশি নির্যাতন । ১৮৬০ সালে ঐ কারাখানার মহিলা শ্রমিকেরা ‘‘মহিলা শ্রমিক ইউনিয়ন’’ গঠন করেন আর সাংগঠনিক ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন । তারপর ১৯১০ সালের ৮ মার্চ কোপেনহেগেন শহরে অনুষ্ঠিত এক আর্ন্তজাতিক নারী সম্মেলনে জার্মানির মহিলা নেত্রী কারা জেটকিন ৮ মার্চকে ‘‘আর্ন্তজাতিক নারী দিবস’’ঘোষণা করেছিলেন। ১৯১১ সালে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ৮ মার্চ ‘‘আর্ন্তজাতিক নারী দিবস’’পালন করা হয়। ১৯৮৫ সালে ৮ মার্চকেও জাতিসংঘ আর্ন্তজাতিক নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মত ১৯৯১ সালে এই দিবসটি পালন করা হয় । এই বছর বাংলাদেশে নারী দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে 'অগ্রগতির মূল কথা-নারী-পুরুষ সমতা।’
আমাদের সামাজিক বলয়ের বাইরে আমাদের অর্থনীতিতে নারীদের ভূমিকার কথা বলতে গেলে গর্ব করার মত একটা জায়গা তৈরী হচ্ছে । লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠানের করা সমৃদ্ধির সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৩ যেখানে প্রতিবেশী ভারতের অবস্থান ১০৬ । নারী-পুরুষ ক্ষমতার সমতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ১১ ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ । ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) ২০১৩ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনে ১৩৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭৫। ২০১২ সালে এ অবস্থান ছিল ৮৬।
সার্কভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। শ্রীলঙ্কা ৫৫তম অবস্থান নিয়ে প্রথম অবস্থানে ।
আমাদের সমৃদ্ধির সূচক এবং নারী-পুরুষ ক্ষমতার সমতা এই দুটি সূচকের পারস্পরিক অবস্থান বিচার করলেই আমাদের অর্থনীতিতে নারীদের গুরুত্ব অনুধাবনা করা যায় । বিগত বছরগুলোতে আমাদের অর্থনীতির একটা বড় অংশ এসেছে তৈরী পোশাক খাত থেকে । যেখানে ৮০% সূচকর্মী নারী , স্বল্প বেতনে আমাদের অর্থনীতিতে এ অবদান অনস্বীকার্য । বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হচ্ছে নারীরা , মহিলা আইনজীবির সংখ্যা বেড়েছে , ডাক্তারের সংখ্যা বেড়েছে । এটা শুধুমাত্র সম্ভাবনার একটা বীজ মাত্র , উন্নত দেশসমূহে যার সংখ্যাটা আরো অনেক বেশী । সব ধরনের পেশাতে নারীদের অংশগ্রহন দেশের সমৃদ্ধির জন্য কাজে লাগানো উচিৎ । আগে শুধুমাত্র যারা কৃষিকাজে সাহায্য করতো রাষ্ট্রীয় সূচকে যার কোন প্রভাব পড়তোনা , সেই নারীরাই যখন এখন সূচকর্মী হিসেবে কাজ করছে তার ফলাফল ই উন্নয়নের সূচকে আমাদের এগিয়ে যাওয়া ।
এই অগ্রযাত্রা আরো বেগবান করা সম্ভব শুধুমাত্র সামাজিক আর রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদানের মাধ্যমেই । ঐতিহাসিক ভাবেই আমাদের সমাজ ব্যাবস্থায় নারীরা ঘরে – বাইরে নানা বৈষম্যের স্বীকার । পারিবারিকনারী নির্যাতন শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা , নারী শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করা , ধর্ষনের দ্রুত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মাধ্যমে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানের কাজ শুরু করা যায় । এতসব অর্জন ম্লান হয়ে যায় দেশব্যাপী নারী নির্যাতন , ২ বছরের কন্যা শিশু থেকে শুরু করে ৮০ বছরের বৃদ্ধার ধর্ষনের খবরে , ফতোয়া বাজদের ফতোয়ার শিকার গৃহবধূর নির্যারনের খবরে । সামাজিক ভাবে আমরা অসাম্প্রদায়িক । ধর্মীয় গোঁড়ামি যেমন ধর্মের জন্য ক্ষতিকর একই ভাবে ক্ষতিকর দেশের সামাজিক অবক্ষয় আর অর্থনৈতিক উন্নয়নের । মাঝে মাঝেই দেখা যায় নারী নির্যাতনের পেছনের যুক্তি ধর্মীয় ভুল ব্যাখা । যেখানে ঘটছে দোররা মারার মত মধ্যযুগীয় নির্যাতনের ঘটনা সেখানে অনেকের খারাপ লাগা স্বত্বেও প্রতিবাদ করতে পারছেনা কেননা এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় ব্যাখ্যার অপব্যাবহার আর আমাদের জনগণ ধর্মভীরু ! নারীশিক্ষার প্রসার , সামাজিকভাবে নারী-পুরুষের সম অধিকার , রাষ্টীয় ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান আমাদের অগ্রযাত্রাকে আরো তরান্বিত করতে পারে । কারো মা , কারো বোন , কারো স্ত্রী হিসেবে নারী যেমন ব্যাক্তি জীবনে অবদান রাখতে পারে সামাজিক এবং রাষ্টীয় উন্নয়নে ও তেমনি অবদান রাখতে পারে সে সম্ভাবনা ইতিমধ্যে জাগ্রত হয়েছে !
রাজনীতির সুষ্টু এবং প্রগতিশীল উন্নয়নের মাধ্যমেই সম্ভব সামাজিক ভাবে সবাইকে সচেতন করা । তাই এবারের নারী দিবসের প্রতিপাদ্যটি আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিতে চাই
“অগ্রগতির মূল কথা-নারী-পুরুষ সমতা।’“
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ৩:৩০
৬৯টি মন্তব্য ৬৯টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×