somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্প ঃ পাখিদের স্নিগ্ধ কন্যা!

০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘুমঘরের কপাট খুলে তাকিয়ে দেখি তিনটি পাখি ঘর ময় উড়ে বেড়াচ্ছে! পাখি তিনটা লাল! ওরা নাকি আমায় গল্প শুনাবে!
পাখি তিনটা থাকতো এক স্নিগ্ধ কণ্যার সাথে! কণ্যা ওদের রোজ গান শুনাতো, গল্প করতো, কবিতা শোনায়, কাশবনে ঘুরতে নিয়ে যেত! বদ্ধ খাচায় ও পাখি তিনটে তাই বড্ড খুশি!
বিকেলের ছাদে কন্যা ওদের সাথে গল্প করে! তার বাবা তার জন্য পাত্র দেখছে! পাখিদের মন খারাপ হয়, আর যদি গান না শুনতে পায় কন্যার!
.... ধুর বোকার দল তোদের ফেলে কোথায় যাবো! কিন্তু জানিস বাবা যাদের দেখে তাদের কাউকেই ভালো লাগেনা, আমার অযোগ্য! ওরা গান ভালোবাসেনা, ওরা কবিতা বুঝেনা ! শুনে পাখি তিন টার আরো মন খারাপ হয়!
তাই কন্যা ওদের নিয়ে নদীতীরের কাশবনে যায়!
হাওয়ার তালে উড়তে থাকা কাশফুল গুলো ওদের উচ্ছ্বাসে যোগ দেয়! রাজকন্যা ওদের কবিতা শুনায়
" তোরা জানিস, আমার স্বপ্নপুরুষ এলো! সে আমার সাথে সুর মিলিয়ে গান গায়, সে আমার কবিতায় আঁকিবুকি করে! সে আমার বুকের স্পন্দন টের পায়! সে আমার স্বপ্ন পুরুষ! "
——— জানিস আমার স্বপ্নপুরুষ তোদের কবিতা শুনাবে! বিকেলের নদীতীরে পাখি তিনটা কাশবনের দোলায় রাজকন্যার স্বপ্নে হারিয়ে যায়!
আরেক দিন বিকেল বেলা কন্যা খুব খুশি ! কাশবনে এসে কন্যা উড়তে থাকে স্নিগ্ধ কাশফুলের তালে ! তার লালচে ওড়না টা উড়ে এসে খাচার উপর দিয়ে হারিয়ে যায় !
--- তোরা জানিস , আমি সত্যি পেয়ে গেছি আমার স্বপ্ন পুরুষ ! সে আমার সাথেই পড়ে ! সে আমার গান ভালোবাসে , কবিতা ভালোবাসে , সে আমায় ভালোবাসে ! পাখিদের সাথে নিয়ে বসন্ত পার করে দেয় ! রাজকুমার কে নিয়ে অনেক খুশি !
একদিন বাস্তব এসে ভর করে গল্পে ! কন্যার জন্য সুযোগ্য পাত্র নিয়ে এসেছে বাবা ! কেঁদে কেঁদে মেয়েকে বলে “তোর আরো ছোট দুটি বোন আছে , আমার যাবার সময় হলো , তুই আর না করিস না !” বাবার চোখের জল চূর্ণ বিচুর্ণ করে দেয় তাকে ! পাখিদের বড্ড মন খারাপ ! কি হবে তার স্বপ্ন পুরুষ আর তার সাথে দেখা রংধনু স্বপ্নের !
দেরী না করে বাবার কথা বলে তার রাজকুমার কে ! শুনেই রেগে যায় তার রাজকুমার ! বিয়ে কিছুতেই করা যাবেনা ! বাবার চোখের জল আর নিজের স্বপ্নের রঙ মিলেমিশে একাকার !
স্বপ্ন পুরুষ ইদানিং আর কন্যাকে বিশ্বাস করেনা ! যদিও বিয়েটা ভেঙ্গেছে !
আরেকবার বিয়ের আয়োজন , স্বপ্ন পুরুষ কে বললো আর দেরী করোনা ! বাবার সাথে কথা বলো ! স্বপ্নপুরুষ দুঃস্বপ্ন হয়ে যায় ! সে কিছুতেই দেখা করবেনা !
একদিন কন্যাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়ে কন্যার উপর ঝাপিয়ে পড়ে ! পাখি তিনটা আর্তনাদে ছটপট করে ! কন্যার সর্বস্ব লুটে নিয়ে পায়ে ধরে মাফ চায় রাজকুমার ! অনেক ভালোবাসে তাই হারানোর ভয় তাকে পাগল করে দিচ্ছে !
বাড়িতে বিয়ের আলাপ আসলেই তার কল্পনার স্বপ্নপুরুষ ভয়ানক হয়ে যায় ! সে বাবার সাথেও দেখা করবেনা , বিয়েও করতে দিবেনা ! কুৎসিত এক পথ বেচে নেয় সে , সেদিনের করা নোংরা বিডিও দেখায় সে ! নিজেই বিয়ে না ভাঙ্গলে এসব দিয়ে ক্ষতি করবে !
নিখাদ ভালোবাসার মরণ হতে পারতো তখনই ! শুধুই ঘৃণা ! খুব ভীতু কন্য বাবার সম্মানের কথা ভেবে চুপ থাকে ! ইদানিং কথায় কথায় গায়েও হাত তুলে কল্পনার রাজকুমার ! বাবার চোখের জল আর নিজের স্বপ্নভঙ্গের জল মিলে পাখিদের গায়ে রক্ত হয়ে পড়ে !

প্রতিবার গায়ে হাত তুলে শিশুর মত কান্না করে ! সে অনেক ভালোবাসে , কিন্তু এখন গেলে বাবা মেনে নিবেনা তাই যাবেনা , আবার হারাবেও না কিছুতেই !
কন্যার মায়া হয় ! বাবাকে বলে তার ভালোবাসার কথা ! বাবা সময় বেধে দেয় , পড়াশুনা শেষ করার পর আরো দু বছর !
আবার বসন্ত ফিরে আসে ! আবার স্বপ্নের ক্যানভাসে আঁকিবুঁকি ! ফিরে আসে কাশবনের মৃদু হাওয়ার ছন্দালাপ !
একদিন কন্যা জানলো তার স্বপ্ন পুরুষ মাদকাসক্ত ! মাদকের ছোবলে তার ভবিষ্যত অন্ধকার ! আরেকটি লড়াই , ভালোবাসার মানুষ টিকে মানুষ করার ! কিন্তু হয়না ! নিংড়ানো ভালোবাসা হেরে যায় মাদকের কাছে বারবার ! এদিকে বাবার দেয়া সময় শেষ প্রায় ! মনে করিয়ে দিলেই সেই ভয়ানক চেহারা ! সেই ভয় দেখানো , গায়ে হাত তুলা !
এসব আর কন্যার খারাপ লাগেনা ! সয়ে গেছে ! তার কষ্ট একটাই যাকে ভালোবেসে সব হারালো সে কখনোই ভালোবাসেনি ! কন্যা অন্য কিছু ভাবতে পারেনা ! আশ্চর্যজনক ভাবে তার মনন জুড়ে সেই ভয়ানক মানুষ টি !
অনেক দিন হলো পাখিদের গান শোনায় না ! কাশবনে কবিতার আসর বসেনা ! শুধু চোখ বেয়ে পড়া রক্তজলে পাখিদের শরীর লাল হয় ! তাই কন্যা ওদের মুক্তি দিয়েছে , যন্ত্রণার সঙ্গী করতে চায়না ! কিন্তু পাখিরা এই মুক্তি চায়না , ওরা ওদের স্নিগ্ধ কন্যার মুক্তি চায় !



“এই গল্পটি প্রিয় ব্লগার কান্ডারী অথর্ব ভাই কে উপহার দিলাম ! তার জন্য লিখেছি ”

বিঃ দ্রঃ বাস্তবই কল্পনা হয়ে ধরা দেয় ! কারো সাথে মিলে গেলে ক্ষমাপ্রার্থী !


সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৫৫
৩৪টি মন্তব্য ৩৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×