ঘটনাটা ঠিক কিভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না। হারানোর বেদনা যে কত মর্মান্তিক ও হৃদয় বিদারক হতে পারে তা আজ সকালে আবারো নতুনভাবে বুঝতে পারলাম। আমি এর আগে অনেক মৃত্যু দেখেছি। এর মধ্যে সবচাইতে বেশী কষ্ট (সরাসরি) পেয়েছি যেটাতে সেটা হচ্ছে আমার ছোট ভাই শিমুলের মৃত্যুতে। যে ১৯৯৬ সালে ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ২ বছর বয়সে মারা যায়। সে আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে নিজে চলে গেল। সে দিকে আজ যাচ্ছি না। সেটা আরেক ইতিহাস। সময়সাপেক্ষে অন্য এক সময় ভাইকে নিয়ে লেখার চেষ্টা করব। যে মৃত্যুতে আবার খুব বেশী দুঃখ পেলাম সেটা হচ্ছে আজ সকালে।
গতকাল আমাদের বাড়ীর এক কাকা মারা যায়। উনার জানাযা আজ সকাল ৯.০০টায় অনুষ্ঠিত হয়। যথারীতি আমরা সবাই জানাযায় হাজির হলাম। কাকার ২ ছেলে ১ মেয়ে। বড় ছেলে এবার এস.এস.সি পাশ করেছে। মেয়েটা এবার ক্লাস সেভেন-এ। ছোট ছেলেটা ক্লাস ফোর-এ। যার বয়স মাত্র ১০ বছর। যখন সবাই খাটিয়া নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে বাড়ীর দরজার দিকে যাচ্ছে তখনই শুরু হল কান্নার রোল। সবাই কাঁদছে। এর মধ্যে যে দু'জনকে সবচাইতে বেশী কাঁদতে দেখেছি তারা হল কাকার মেয়ে এবং ছোট ছেলেটা। কেউ ছোট ছেলেটাকে কোন রকমেই শান্তনা দিতে পারছে না। তার মা, তার ফুফুরা, তার মামারা কেউ তার কান্না থামাতে পারছে না। তাকে কেউ শান্তনা দিতে পারছে না। অবশেষে যখন তার দাদু তার কাছে এসে বলল দাদাভাই আমরাতো আছি। আমরা সবাই তোমাকে আদর করব, ভালবাসব। ছেলেটি কিছুতেই থামছে না। দুহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে জবাব দিল- দাদু আমি বুঝলাম সবাই আমাকে আদর করবে, ভালবাসবে। কিন্তু আমি কাকে বাবা বলে ডাকব? যখন আমার বন্ধুরা স্কুলে বা ঈদের মাঠে বাবার হাত ধরে যাবে- আমি কার সাথে যাব? কাকে নিয়ে যাব? কার হাত ধরে যাব? সবাই তখন নিস্তব্দ। কি উত্তর আছে এই প্রশ্নগুলোর? কে দেবে এর উত্তর? আরো বেশি কান্না শুরু হল। কে বোঝাবে তাকে এভাবে একদিন সবাইকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
এমন কোন আলৌকিক শক্তি আছে কি? যে ছোট্ট এই শিশুটির প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে পারবে এবং তাকে একটু শান্ত করতে পারবে।
হে আল্লাহ!তুমি এই অবুঝ শিশুটিকে এবং তার পরিবারকে ধৈর্য্য ধরার তৌ্ফিক দান কর।