ঘটনা – ৪
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ১ম বর্ষ । হল জীবনের প্রথম লড়াইয়ে টিকে গেছি সবেমাত্র অর্থাৎ হলে গণরুমে থাকার অধিকার অর্জন করেছি । ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে ৭-৮ জনের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠেছে। বুঝতে পারছি সবাই মোটামুটি উচ্চমধ্যবিত্ত শ্রেণির, আমি নিম্নমধ্যবিত্তের নিচের শ্রেণির লোক,বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ,পাঁচ ভাইবোন । বাবা সংগ্রাম করছেন পাঁচ ভাই-বোনকে উচ্চ শিক্ষিত করতে। কেন্দ্রীয় লাইব্রেরীর ২য় তলা হল আমাদের ঠিকানা, নির্দিষ্ট টেবিলে সবাই সকাল ৮টায় হাজির হই । ক্লাসে আমি ছাড়া সবাই অনয়মিত । ক্লাসে ফাঁকে ‘ঢাকসু’তে ১ টাকার চা,২ টাকার সিঙ্গারা /সমুচা, দুপুরে ঢাকসুর খাবার। রাতে একেকদিন একেক ক্যান্টিনে খাবার খাওয়া। হলে ফিরে ছাদে আড্ডা দেয়া। ছারপোকার হাত থেকে বাঁচার আর একটা উপায় ছিল টিভি রুমে সারারাত টিভি দেখা । মোটামুটি এই রুটিন ছিল ১ম বর্ষের ।
সবাই টিউশনি পাওয়ার আশায় বড় ভাইদের পিছনে ধরনা দিতে থাকলাম । অনেকেই টিউশনি পেয়ে গেলাম । মূলকথায় আসি , একদিন সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত হল রাতে সবাই নীলক্ষেতে মামা হোটেলে খেতে যাব। বিল মিটানো হবে সবার চাঁদায়, যাকে বলে যার যার বিল সে দিবে । আমি পড়লাম মহা বিপাকে ,আমার কাছে আছে ১৫০ টাকা। টিউশনির টাকা পেতে এখনও ২-৩ দিন সময় লাগতে পারে । যদি টাকাটা খরচ করে ফেলি ,দুইদিন চলব কীভাবে ? যথাসময়ে সবাই রওনা দিলাম , রোকেয়া হলের সামনে থেকে রিকশায় উঠব। আমি চিন্তা করে দেখলাম ,এইতো সুযোগ! ১৫-১৬ জনের মত লোক ,সবাই হাটছে ,আমি আস্তে আস্তে পিছনের দিকে যেতে লাগলাম , একসময় পিছন থেকে হারিয়ে গেলাম । হলে গিয়ে ফোন বন্ধ করে রাখলাম । পরের দিন লজ্জা লজ্জা অপরাধী চেহারা নিয়ে লাইব্রেরীতে আসলাম । পিন পতন নীরবতা । কারো চেহার দিকে তাকাতে পারছিলাম না । কেঊ আমার সাথে কথা বলছিল না । এক-দেড় ঘণ্টা পর চা বিরতিতে সবাই দোতলা থেকে নিচে নামলাম। লাইব্রেরীর সামনে বসতে যাব ,এমন সময় একজন খারাপ ভাষায় গালি দিয়ে আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। কিল, ঘুষ্ চড় ,থাপ্পর যে যেভাবে পারল মারল। সবাই বলল , তোর কারণে কাল আমাদের এত সুন্দর পরিকল্পনা নষ্ট হল অর্থাৎ কেউ কালকে খেতে যায়নি । রাগ করে যে যার মত হলে চলে গিয়েছিল। এরপর থেকে অঘোষিত নিয়ম হয়ে গেল টাকা থাকুক আর নাই থাকুক খেলে সবাই খাবে নতুবা কেউ খাবেনা । সেই দিন থেকে সবাই এক কাতারে নেমে আসলাম অর্থাৎ নিম্ন মধ্যবিত্তের নিচের শ্রেণিতে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫