somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ছোট্ট বাবুটা (৩)

১২ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আগের পর্বঃ আমার ছোট্ট বাবুটা (২)

প্রচুর পরিমান মিষ্টি কিনে আবার ক্লিনিকে যাই, কেবিনে ঢুকতেই দেখি সবার মুখে চিন্তার রেখা। মা আমাকে বাইরে নিয়ে এসে বলেন বাবু কিচ্ছু খাচ্ছেনা আর ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, নাক আর ঠোট নীল হয়ে যাচ্ছে বার বার, সে জন্য অক্সিজেন দিয়ে রেখেছে। মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে। এখানকার চিকিৎসার অবস্থা তো আমি নিজেই দেখলাম, বাচ্চার ভাল কোন ট্রিটমেন্ট এখানে সম্ভব নয়। সাথে সাথে ডিসিশন নিয়ে ফেলি বাবুকে বগুড়াতে নিয়ে যাব (বগুড়া এখান থেকে ১ ঘন্টার পথ) এখানে আর এক মুহুর্ত নয়। চাইল্ড কেয়ার রুমে গিয়ে দেখি ওদের কোন ইনকিউবেটার পর্যন্ত নাই, বাবুর মুখে বড়দের অক্সিজেন মাস্ক দিয়ে কোন ভাবে ওকে অক্সিজেন দেয়ার চেষ্টা চলছে। আমার সমস্ত পৃথিবী আঁধার হয়ে আসে যেন ...

দৌড়ে বের হয়ে আসি এম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করতে, ক্লিনিকের গেটেই দেখা হয়ে যায় ডাক্তার রাব্বির সাথে, উনি নাম করা শিশু বিশেষজ্ঞ, আমেরিকাতে থাকেন, দেশে এসেছিলেন কয়েক মাসের জন্য, কোন এক সুত্রে তার সাথে পরিচয় হয়েছিল আমার। ক্লিনিকে এসেছেন তার পরিচিত একজনকে দেখতে। উনাকে খুলে বলি ঘটনা, উনি সাথে সাথেই আমার সাথে দোতলায় গিয়ে বাবুকে দেখেন, তারপর ফোন করে উনার বাসা থেকে কি কি যেন আনতে বলেন। পরে আমাকে বুঝিয়ে বলেন কি হয়েছে - বাবু প্রচুর নড়াচড়া করতো পেটের মধ্যে। সে কারনে তার গলায় পেঁচিয়ে যায় umbilical cord, জন্মের পরে সে জন্য কিছু বিশেষ ব্যাবস্থা নিতে হয়, যা সব ডাক্তারদেরই জানার কথা। বাবুর ক্ষেত্রে সেই রকম কিছুই করা হয়নি আর বাচ্চার নাক মুখ থেকে amniotic fluid সাবধানে শুষে নিতে হয়, সেইটা করা হলেও তা সঠিক ভাবে হয়নি। এর মধ্যেই ডাক্তার সাহেবের মেডিকেল কিট এসে পড়ে। উনি খুব দ্রুত বাবুকে একটা ইঞ্জেকশান দেন ও ওটিতে নিয়ে কি কি যেন করেন। ১০ মিনিট পর বাবুকে কোলে করে এনে আমার হাতে দিয়ে বলেন আপনার বাবু মাশআল্লাহ বেশ শক্ত। এ অবস্থায় ২ ঘন্টা অনেক বাচ্চাই সার্ভাইভ করতে পারেনা। আমি ডাক্তার সাহেবকে ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা খুজে পাইনা। তারপর ডাক্তার সাহেব ক্লিনিক অফিসে ঘুরে এসে আরেক বিচিত্র তথ্য দেন, ওদের ক্লিনিকে খুব ভাল একটা ইনকিউবেটার আর চাইন্ড সেইফটি কিট আছে, কিন্তু অনেক দামী (সাহায্য সংস্থার অনুদানে পাওয়া) বলে ওরা সেটা মোড়ক খুলে বের করেনি X(

এর পর বাবু ৪/৫ চামচ দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরে, ওর মা'র তখনও জ্ঞ্যান স্বাভাবিক অবস্থায় আসেনি, কিন্তু ডাক্তার সাহেব সব দেখে বললেন যে চিন্তার তেমন কিছু নেই। এ অবস্থায় আমি বাসায় চলে আসি, গোসল করে নামাজ আদায় করে সারা রাতের ধকল শেষে ঘুমিয়ে পরি। ঘন্টা তিন পরে উঠে ক্লিনিকে আবার যাই ... আমি কেবিনে ঢুকতেই বাবু চোখ মেলে তাকায় আর ঠোট চাটতে শুরু করে, মা বলে - তার খিদে পেয়ে গেছে, কিন্তু সে কান্না করেনা, শুধু এদিক সেদিক অবাক হয়ে দেখে। আমি ওকে কোলে নিয়ে বলি - "এই যে বাবু, আমি তোমার পাপা"। সে এদিক ওদিক মাথা ঘুরিয়ে দেখে, শব্দের উৎস বুঝে সেই দিকে তাকানোর কায়দাটা রপ্ত করে নিতে চেষ্টা করে মনে হয়। তখন ওর নাম দেয়ার কথা মনে আসে, আমার বাবা বসে ছিলেন পাশেই, উনার কোলে দেই বাবুকে, দিয়ে বলি একটা নাম দিতে, আব্বু তখনই বলেন ওর নাম হবে "আদিত্য", যেটা উনি পথে আসার সময় ঠিক করেছেন।



এরপর দুটো দিন পার হয়ে যায় সীমাহীন ব্যস্ততায়। কখনও ক্লিনিক, কখনও বাসা, এর মাঝে ঢাকা থেকে বাবুর জন্য কিছু দরকারী জিনিস কিনেও এনেছিলাম। বাবু হবার চতুর্থ দিনে আমরা ওকে নিয়ে আসি বাসায়, মানে ওর নানা বাড়ীতে। বাসায় ঢুকে মনে হয় আমি আমার ইচ্ছে মত বাবুকে নেড়েচেড়ে দেখার সুযোগ পাই। তখন থেকেই সে হাসতে শেখে, ঘুমের মধ্যেও। আমি সেই হাসি দেখার জন্য রাত দিন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। বাবুটা খুব শান্ত ছিল ছোটবেলায়। কান্না করতোনা সহজে, শুধু গভীর রাতে ভয় পেয়ে কেঁদে উঠতো মাঝে মাঝে। ওর মা অপারেশনের কারনে উঠে দাঁড়াতে পারতোনা, কাজেই আমাকেই শিখে নিতে হয় কিভাবে ওকে কোলে নিয়ে হাটাহাটি করতে হবে, ঘুম পাড়াতে হবে, ভেজা কাঁথা বদলাতে হবে।

মোট নয়দিন ছিলাম আমি ওদের বাসায়, পরে ঢাকায় চলে আসি ছুটি শেষ হয়ে গেছিলো বলে। বাসায় ঢূকে খুব একা একা লাগে, বাবুটার জন্য মন খারাপ লাগে খুব, অফিসেও মন খারাপ করে বসে থাকি, কাজে ভুল হয়। বস্‌ বলেন ওকে বাসায় নিয়ে আসতে, আমি চান্স পেয়ে আরও তিনদিনের ছুটি নিয়ে চলে যাই বাবুর কাছে :D গিয়ে দেখি এক সপ্তাহেই বাবুটা অনেক বড় হয়ে গেছে :) তারপর ডাক্তারের সাথে কথা বলে ওদের নিয়ে আমি চলে আসি ঢাকায়। শুরু হয় আমাদের নতুন জীবন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০০৯ বিকাল ৩:০৩
৩৭টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×