আগের পর্বঃ আমার ছোট্ট বাবুটা (৪)
এইভাবে সপ্তাহখানেক চলার পর বুঝতে পারলাম বাবু আমাকে চিনতে পারছে। আমাকে দেখা মাত্র সে একটা হাসি দেয়, ছোট্ট হাত দুটো বাড়িয়ে দেয় আমার দিকে। সেটা ছিলো জুলাই মাসের মাঝামাঝি। আমার ফ্লাইট নভেম্বরে, কাজেই কাজ ছেড়ে দেই, ঠিক করি যাবার আগ পর্যন্ত আমি সম্পুর্ন সময়টা আমার বাবুর সাথে কাটাবো।
সে সময় বাবুকে কয়েকটা টিকা দেয়া হয়। বাচ্চারা খুব কান্না করে টিকা দিলে, অনেক কষ্ট লাগে তখন, কিন্তু কিছুই করার নেই। আমাদের বাসার পাশেই ছিলো সুর্যের হাসি ক্লিনিক, সেখান থেকেই টিকা দেই, কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাবু মিনিট দুয়েক কেঁদে চুপ হয়ে যায়, বাসায় আসতে আসতে চুপ। ওর মা'ও খুব অবাক হয়। বাবুটা আসলেও অনেক কম কান্না করতো সে সময়। কিন্তু গভীর রাতে মাঝে মাঝে কেঁদে উঠতো, কেউ থামাতে পারতোনা ওকে, শুধু আমি কোলে নিলে সে চুপ করতো। পরে আব্বু একটা তাবিজ এনে দেন ওকে, তখন থেকে আর প্রতিরাতে কাঁদতো না।
এর মধ্যে আমিও বাবুর সাথে ঘুমানো আর যাগায় অভ্যস্ত হয়ে যাই। সে একটানা ২ ঘন্টা ঘুমাতো, আবার কিছুক্ষন জেগে থাকতো, খেতো, খেলতো। ওর তো আর রাত দিন বোঝার মত বয়স হয়নি তখন, তাই মাঝ রাতে উঠে খেলতে শুরু করতো। আমি দেখেছি - আমাকে থাবা দিয়ে জাগানোর চেষ্টা করতো সে। যদি আমি সাড়া না দিতাম, তাহলে একা একাই হাত পা নেড়ে খেলতে শুরু করতো। আমার খুব মজা লাগতো ওর খেলা দেখতে। কিন্তু এক সময় কাঁথা ভিজিয়ে ফেললেই সে আর তার ছোট্ট বিছানায় থাকতো না। কোল বালিশ ঠেলে ঠেলে আমার বুকের ওপর এসে উঠতো। সে জন্য আমিও মাঝে মাঝে ওর খেলা দেখতে দেখতে হাত দিয়ে ও কাঁথা ভিজিয়েছে কি না সেইটা পরখ করতাম, সে যখনই বুঝে যেত যে পাপা জেগে আছে ... সে কি হাসি তার। দাঁত ছাড়া মুখের সে হাসি হলো পৃথিবীর সবচাইতে দামী জিনিস।
আস্তে আস্তে বাবুর জেগে থাকার সময়টা বাড়তে থাকে। ১০ মিনিট খেলেই সে আর ক্লান্ত হয়ে যায়না। বিছানাতেও থাকতে চায়না তখন। সেই সময় আমি ওকে নিয়ে চলে যেতাম বসার ঘরে। একুইরিয়ামের সামনে বসিয়ে দিলে সে তার চেঁপে ধরতো কাঁচের সাথে, কি যে মজা লাগতো তখন। আর কেন যেন মাছ গুলো এগিয়ে আসতো ওর মুখের বা হাতের দেখা পেলেই। সে খুব অবাক হয়ে একবার মাছদের দেখতো, আবার আমার মুখের দিকে দেখতো। আমি ওকে মাছগুলোর নাম বলতাম, সে চুপ করে শুনতো। এক সময় আমি অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে আমি ওর সাথে অনেক গল্প করি, অনেকটা বড় মানুষের মতই, সে মনযোগ দিয়ে শোনে
প্রতিদিনই দেখি বাবুটা একটু একটু করে বড় হচ্ছে, প্রতিদিনই সে নতুন নতুন কান্ড করতে শুরু করে। খুব মিশুক বাবু সে, সবার কোলে যায়, কোলে গিয়ে হাসে, খায় দায়, ঘুমায় তার ইচ্ছে মত, জেগে উঠে কাউকে না দেখতে পেলে কিছুক্ষন একা একাই খেলে, তারপর একটা চিৎকার দেয়, কেউ আসলেই থেমে যায় অবস্য। এর মাঝেই আমার বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি চলতে থাকে। বেশ কিছুক্ষন পর আমাকে দেখতে পেলে বাবু ঝাপিয়ে আমার কোলে আসে, আর আমাকে জাপটে ধরে রাখে শক্ত করে। আর বিকেল বেলা আমার সাথে ঘুরতে যাওয়া ওর অভ্যাস হয়ে যায় ততদিনে। একটা নতুন কিছু দেখলে সে আমার দিকে তাকায়, আমি বলে সেইটা কি, তারপর আবার দেখে। আমি ওকে নিয়ে বেশীরভাগ সময় রিক্সা দিয়ে বেড়াতাম বাসার আসে পাশেই। সে এক সাথে রাস্তার সব কিছু দেখে ফেলতে চেষ্টা করত, বার বার ঘাড় এদিক ওদিক করতো
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০০৯ সকাল ১১:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




