মনে কি পড়ে প্রিয়? - (২)
পরের তিনটা দিন কেটে যায় চরম ব্যস্ততায়। এর মাঝে শুভ আর রানা নিয়মিত ক্যাম্পাসে গেছে, রানার মুখ থেকে শুনতে পাই। শুভর সাথে কথা বলার সময়ই পাইনা আমি, অনেক রাতে ঘরে ফিরে দেখি সে ঘুমাচ্ছে, ওর ঘুম ভাঙ্গার আগেই বেড়িয়ে পরেছি আমি। তিনদিন পর সকালে ঘুমিয়ে আছি, শুভর মধুর কন্ঠে ঘুম ভাঙ্গে। "বাবা উঠো, সকাল হইছে, দেখো ... কি সুন্দর কাক পাখীর ক্লাসিকাল গান শোনা যায়" - হেসে ফেলি ওর কথা শুনে। প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে ধরাই, একটা বাড়িয়ে দেই ওর দিকে, কাচুমাচু মুখ করে ফিরিয়ে দেয়, বলে - 'বিড়ি খাইতামনা, তিথী পছন্দ করেনা'। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ি বিছানায়। মানুষ কত বদলায় প্রেমে পড়লে
হাত মুখ ধুয়ে এসে ঘরে ঢুকি, দেখি রানাও এসে গেছে ততক্ষনে। চিন্তিত মুখে রানা বল - 'বস্, একটু হেল্প করতে হবে। সম্পার একটা সার্ভে করতে হবে, তিন'শ লোকের ডাটা নেয়া লাগবে, আপনার তো গ্রামে অনেকে পরিচিত আছে, আপনে যদি একটু বইলা দেন, তাইলে কাজটা সোজা হয়ে যাবে' । এই কাজে আমি আগেও কয়েকজনকে হেল্প করেছি, কাজেই আমার জন্য কঠিন কিছু হবে না, কিন্ত শুভর চকচকে হাসি হাসি মুখটা দেখে সন্দেহ হয়। জিজ্ঞ্যেস করি ঘটনা কি? জানতে পারি - সম্পা যাবে সার্ভে করতে, সাথে তিথীও যাবে ওকে হেল্প করতে। কিন্তু গ্রামের মধ্যে এই দুটো মেয়েকে একা ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠেনা, গ্রামের সব মানুষ এক রকম না। কাজেই আমাদেরও যেতে হবে ওদের সাথে। আসন্ন্য ডেটিংয়ের স্বপ্নে শুভর মুখটা তাই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে
দুদিন পর আমরা পাঁচজন গ্রামে গিয়ে ঢূকি। যাবার পথে রিক্সায় বসে শুভকে আমি আর রানা অকাতরে জ্ঞ্যান বিতরন করি, শুভ চোখ মুখ শুকনো করে আমাদের কথা শোনে। একটু পর এলাকার চেয়ারম্যানের বাসায় দেখা যায় আমাদের সবাইকে। চেয়ারম্যান সাহেব আমার পুর্ব পরিচিত, অফিস থেকে বেড়িয়ে এসে জড়িয়ে ধরেন আমাকে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমরা তার এলাকাতে যাওয়াতে নিজেকে ধন্য মনে করছেন
ওদের নিয়ে চলে যাই গ্রামের ভেতর। ওরা আমার হাতে কিছু প্রশ্নপত্র ধরিয়ে দিয়ে দিয়ে কাজ শুরু করে। সম্পা আর রানা একদিকে, তিথী আর শুভ আরেক দিকে, মাঝখানে আমি - ছাগোলের তিন নম্বর বাচ্চার মত না লাফিয়ে এক বাড়ীর দাওয়ায় মাদুর পেতে বসে বসে ফর্ম গুলো পূরন করতে লাগলাম। নিজেকে আমি মিশিয়ে দিয়েছিলাম গ্রামের সাধারন মানুষ গুলোর সাথে, সার্ভের সব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা। এভবে বসে বসে কাজ করছি আর সিগারেট খাচ্ছি, হঠাৎ খিল খিল হাসির শব্দে চমকে উঠি। ওরা ফিরে এসেছে আর দাঁত বের করে হাসছে আমাকে দেখে, কিন্তু কেন? নাহ, তেমন কিছুনা, তিথী একটা পুরানো জোক বলেছে, সেই নিয়ে হাসি - সিগারেটের এক প্রান্তে আগুন আর আরেক প্রান্তে না কি একটা রামছাগোল, যে জেনে শুনে বিষ করিছে পান
দুপুরে ভাবীর রান্না করা অসম্ভব ঝাল কিন্তু অমৃত স্বাদের রুই মাছের তরকারী দিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার কাজ শুরু করি। এবার চলে যাই গ্রামের আরও ভেতরে। ওদের একা ছেড়ে দেয়ার মত পরিবেশ নেই, কাজেই আমাকে যেতেই হয় ওদের সাথে। গ্রামের পথে হাটার সময় মাঝে মাঝেই তিথী আমার পাশে এসে পরে, প্রথমে খেয়াল না করলেও একটু পরে বুঝতে পারি সেটা। শুভর অনিশ্চিৎ অভিমানী মুখটা আঁড় চোখে দেখে বেশ মজা লাগে। পথের মাঝে মাঝে ক্ষেতে পানি দেয়ার জন্য কেটে রাখা নালা গুলো পার হতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করি তিথী বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। অনেক গুলো নালাই বেশ খানিকটা গভীর, পাশের মাটিও নরম, আমি এপথে চলে চলে অভ্যস্ত, কাজেই আমার কিছু মনে হচ্ছেনা, কিন্তু একটা মেয়ের জন্য সে জায়গাটা পার হওয়া সত্যি কষ্টকর। মাথায় দুষ্টুমি খেলে যায়, শুভকে পাশে টেনে নিয়ে বলি, এর চাইতেও বড় একটা নালা আসবে সামনে, তখন শুভ যেন হাত বাড়িয়ে দেয় তিথীর দিকে
আয়েশ করে সিগেরেটটা ধরিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াই, দেখি ওরা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে শুভকে ঝাড়ি দেই - 'হাত বাড়া শালা, লজ্জায় লাল হইয়া নীল হইয়া যাইতাছস তো
ক্রমশ ...
মনে কি পড়ে প্রিয়? - (২)
পরের তিনটা দিন কেটে যায় চরম ব্যস্ততায়। এর মাঝে শুভ আর রানা নিয়মিত ক্যাম্পাসে গেছে, রানার মুখ থেকে শুনতে পাই। শুভর সাথে কথা বলার সময়ই পাইনা আমি, অনেক রাতে ঘরে ফিরে দেখি সে ঘুমাচ্ছে, ওর ঘুম ভাঙ্গার আগেই বেড়িয়ে পরেছি আমি। তিনদিন পর সকালে ঘুমিয়ে আছি, শুভর মধুর কন্ঠে ঘুম ভাঙ্গে। "বাবা উঠো, সকাল হইছে, দেখো ... কি সুন্দর কাক পাখীর ক্লাসিকাল গান শোনা যায়" - হেসে ফেলি ওর কথা শুনে। প্যাকেট থেকে সিগারেট নিয়ে ধরাই, একটা বাড়িয়ে দেই ওর দিকে, কাচুমাচু মুখ করে ফিরিয়ে দেয়, বলে - 'বিড়ি খাইতামনা, তিথী পছন্দ করেনা'। হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ি বিছানায়। মানুষ কত বদলায় প্রেমে পড়লে
হাত মুখ ধুয়ে এসে ঘরে ঢুকি, দেখি রানাও এসে গেছে ততক্ষনে। চিন্তিত মুখে রানা বল - 'বস্, একটু হেল্প করতে হবে। সম্পার একটা সার্ভে করতে হবে, তিন'শ লোকের ডাটা নেয়া লাগবে, আপনার তো গ্রামে অনেকে পরিচিত আছে, আপনে যদি একটু বইলা দেন, তাইলে কাজটা সোজা হয়ে যাবে' । এই কাজে আমি আগেও কয়েকজনকে হেল্প করেছি, কাজেই আমার জন্য কঠিন কিছু হবে না, কিন্ত শুভর চকচকে হাসি হাসি মুখটা দেখে সন্দেহ হয়। জিজ্ঞ্যেস করি ঘটনা কি? জানতে পারি - সম্পা যাবে সার্ভে করতে, সাথে তিথীও যাবে ওকে হেল্প করতে। কিন্তু গ্রামের মধ্যে এই দুটো মেয়েকে একা ছেড়ে দেয়ার প্রশ্নই ওঠেনা, গ্রামের সব মানুষ এক রকম না। কাজেই আমাদেরও যেতে হবে ওদের সাথে। আসন্ন্য ডেটিংয়ের স্বপ্নে শুভর মুখটা তাই উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে
দুদিন পর আমরা পাঁচজন গ্রামে গিয়ে ঢূকি। যাবার পথে রিক্সায় বসে শুভকে আমি আর রানা অকাতরে জ্ঞ্যান বিতরন করি, শুভ চোখ মুখ শুকনো করে আমাদের কথা শোনে। একটু পর এলাকার চেয়ারম্যানের বাসায় দেখা যায় আমাদের সবাইকে। চেয়ারম্যান সাহেব আমার পুর্ব পরিচিত, অফিস থেকে বেড়িয়ে এসে জড়িয়ে ধরেন আমাকে। ভাব দেখে মনে হচ্ছে আমরা তার এলাকাতে যাওয়াতে নিজেকে ধন্য মনে করছেন
ওদের নিয়ে চলে যাই গ্রামের ভেতর। ওরা আমার হাতে কিছু প্রশ্নপত্র ধরিয়ে দিয়ে দিয়ে কাজ শুরু করে। সম্পা আর রানা একদিকে, তিথী আর শুভ আরেক দিকে, মাঝখানে আমি - ছাগোলের তিন নম্বর বাচ্চার মত না লাফিয়ে এক বাড়ীর দাওয়ায় মাদুর পেতে বসে বসে ফর্ম গুলো পূরন করতে লাগলাম। নিজেকে আমি মিশিয়ে দিয়েছিলাম গ্রামের সাধারন মানুষ গুলোর সাথে, সার্ভের সব প্রশ্নের উত্তর আমার জানা। এভবে বসে বসে কাজ করছি আর সিগারেট খাচ্ছি, হঠাৎ খিল খিল হাসির শব্দে চমকে উঠি। ওরা ফিরে এসেছে আর দাঁত বের করে হাসছে আমাকে দেখে, কিন্তু কেন? নাহ, তেমন কিছুনা, তিথী একটা পুরানো জোক বলেছে, সেই নিয়ে হাসি - সিগারেটের এক প্রান্তে আগুন আর আরেক প্রান্তে না কি একটা রামছাগোল, যে জেনে শুনে বিষ করিছে পান
দুপুরে ভাবীর রান্না করা অসম্ভব ঝাল কিন্তু অমৃত স্বাদের রুই মাছের তরকারী দিয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে আবার কাজ শুরু করি। এবার চলে যাই গ্রামের আরও ভেতরে। ওদের একা ছেড়ে দেয়ার মত পরিবেশ নেই, কাজেই আমাকে যেতেই হয় ওদের সাথে। গ্রামের পথে হাটার সময় মাঝে মাঝেই তিথী আমার পাশে এসে পরে, প্রথমে খেয়াল না করলেও একটু পরে বুঝতে পারি সেটা। শুভর অনিশ্চিৎ অভিমানী মুখটা আঁড় চোখে দেখে বেশ মজা লাগে। পথের মাঝে মাঝে ক্ষেতে পানি দেয়ার জন্য কেটে রাখা নালা গুলো পার হতে গিয়ে হঠাৎ খেয়াল করি তিথী বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। অনেক গুলো নালাই বেশ খানিকটা গভীর, পাশের মাটিও নরম, আমি এপথে চলে চলে অভ্যস্ত, কাজেই আমার কিছু মনে হচ্ছেনা, কিন্তু একটা মেয়ের জন্য সে জায়গাটা পার হওয়া সত্যি কষ্টকর। মাথায় দুষ্টুমি খেলে যায়, শুভকে পাশে টেনে নিয়ে বলি, এর চাইতেও বড় একটা নালা আসবে সামনে, তখন শুভ যেন হাত বাড়িয়ে দেয় তিথীর দিকে
আয়েশ করে সিগেরেটটা ধরিয়ে আবার ঘুরে দাঁড়াই, দেখি ওরা এখনও দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে শুভকে ঝাড়ি দেই - 'হাত বাড়া শালা, লজ্জায় লাল হইয়া নীল হইয়া যাইতাছস তো
ক্রমশ ...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে জুলাই, ২০০৯ দুপুর ১:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




