শূণ্য এক :
বৃক্ষ-পাতার সবুজ আভা ডুবে যাচ্ছে। হলদে হয়ে যাচ্ছে তাদের সীমান্ত। নতুন দিনের আলোড়ন জ্বাগিয়ে আমার ইচ্ছেরা সবুজের মতো নিরুদ্দেশ প্রায়। বেঁচে শুধু এক টুকরো দহন আর দানা দানা বিষাদ। আমি একলা পথিক। গন্তব্য সঠিক জানা নাই।
শূণ্য দুই :
পথটা উপরের দিকে উঠে গিয়ে মিশে গেছে বহুদূর। মাথার উপর সূর্য্য নিয়ে হেঁটে যাচ্ছি আরো একটি নতুন বিষাদী জীবনের পথে। বামে, থানা রোডের ভোতা কোনে জড়ো হয়ে আছে কিছু নিচু দরের মানুষ। কেউ বসে আছে, কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বা আবার গাছের চামড়া উঠে যাওয়া শরীরে ঠেস দিয়ে। কোনোমতে। অপেক্ষা ব্যাপারটা কখনো কখনো খুব বেশি আবেগী হয়। ওরা সেরকম অপেক্ষায় আছে। চোখে কেউ কান্না নিয়ে, হৃদয় কোনে আগুন জ্বেলে। কেউ হতাশা আর অনিশ্চয়তায়, অপেক্ষায় আছে। থানা থেকে যখন শেষ বয়সী মুড়ির টিনটা জনা পনেরো/বিশ মানুষকে পেটে পুরে নিয়ে রাস্তায় এসে গতি ধীর করলো, যখন স্বজনেরা ইতিউতি করে দ্রুত খুঁজে যাচ্ছে আদরের ছেলে, বাবা, মামা, কাকার মুখ-চোখ-শরীর কিংবা জমাট ভালোবাসা ঠিক তখন পশ্চিমের নেমে যাওয়া পথ ধরে উঠে এলো সে।
শূণ্য তিন :
- অই ব্যাটা তোরে দেখা যায় না কেন?
- কোন হালায় বলছে?
- না কেউ বলে নাই। আমিই মনে হয় দেখিনা তরে। কই যাস?
- বাজারে
- ক্যান?
- কিছু জিনিস পত্র কেনা লাগবে।
- কি ধরনের?
- বালতি, হাড়ি পাতিল, গ্যাস চুলা. . . এ-ই সব।
বান্দা মুখটা গম্ভির করে, তিন দিনের দাঁড়ি না কামানো গালে হাত রেখে কিছুক্ষন চিন্তা করে খিক খিক হেসে বলে-
- শালা তুই বিয়া করছস।
- কি বলিস শালা, কখন করলাম?! আমি নিজেই তো জানিনা!
- না করলে এ-ই সব কিনতে যাস ক্যান?
যাসলে, আমিতো আর জানিনা বালতি, হাড়িপাতিল কেবল বিয়ের পরেই মানুষ কেনে?!
শূণ্য চার :
- হ্যালো
- ভাইয়্যা কেমন আছেন?
- আছি ভালো। আচ্ছা, আলু ভাজি কিভাবে করিসরে তোরা?
ওপারে বিস্মৃত কণ্ঠস্বর।
- কেনো ভাইয়্যা?
- কিভাবে করতে হয় সেটা বল। বেশি প্রশ্ন করার দরকার নাই।
- প্রথমে. . .
আলু ভাজি ভোগাস একটা রান্না। খুব সহজ!
শূণ্য পাঁচ :
রিক্সার ক্রিং ক্রিং ধ্বনী যখন মিলায়ে যায় নিরব হাহাকারে, যখন ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত দোপায়ারা ঘুমে বেহুশ প্রায়, তখন, ঘুমের বদলে আমি গাঢ় অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকি। ছোট্ট বারান্দায় হেলান দিয়ে বসে কত কি ভাবতে থাকি...। মানুষ বিপদে পড়লে বুঝে যায় তার সৃষ্টির আসল রহস্য। এই সময়ে আশ পাশের মানুষজনকে কতো কি না মনে হয়। কতরকম অদ্ভুত সব মুখোশে ঢাকা থাকে তাদের শরীর, মন, কিংবা সবকিছু। নিজেকে খুব বেশি নি:স্ব মনে হয়। আমি এমনো কালবেলায় স্বাভাবিকভাবেই নি:স্ব। না কেউ বানী পাঠায়না হযরতের মতো। আমি ভাওতাবাজি পছন্দ করার মতো পচনশীল নই। তবু, টুকরো আলোর মতো কেউ কেউ আমার স্বপ্নকে জাগিয়ে রাখে, মেলামাইনের মতো! এই আলোর আবার ঘ্রান আছে। নষ্টলজিক করে দেয় প্রায়শই। আমার শৈশবি গ্রাম্য ঘরের পেছনে ঠিক যেমন করে মধ্যরাতে মিষ্টি গন্ধে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিতো... সেই বাতাবি নেবুর গাছটার জন্য আজ মনের ভেতর যেমন অদ্ভুতুড়ে অনুভূতি হয়, তেমন অনুভূতিতে ছেয়ে থাকে মন। আমি তার জন্য অদ্ভুত টান অনুভব করি। আশ্চার্য্য... আমি তার জন্য অপেক্ষা সহ্য করতে পারি!
- এ্যাই, কি রান্না করলে আজকে?
- আলু ভাজি, ডিম ভাজি, ভাত!
- পারলে?
- ক্যালক্যাসিয়ান মুদ্রা দোষটা বন্ধ করো। খেয়েছো, গিয়েছো, করেছো... অদ্ভুত সব শব্দ!
ওপাশে নৈস্বর্গিক হাসি। সে ক্ষনিক থেমে বলে,
- করবো।
- গুড।
- তোমার জন্য সব ছাড়তে পারবো।
- তাই?
- হুমম।
- বিয়ের পর মজা টের পাবা তুমি।
- কেনো জামাই দিয়ে মার খাওয়াবা নাকি?
- জামাইতো তুমি
- অসম্ভব
- কেনো?
- না-মানুষরা বিয়ে টিয়ে করে না
- রাখো তোমার না-মানুষ। নামানুষের কপালে ঝাড়ু মারি।
- ভয়ঙ্কর কথা!
- ভয়ঙ্করের এখন কি দেখলে? কাল দেখাবো।
- কখন?
- বিকেল চারটেয়
- আমার সময় হবেনা
- বের করো
- সম্ভব না
- করো নাাাাাাাাাাাা
- দেখি
- এ্যাঁই
- হুম?
- যা বলবো সেটা তোমার কাছে সস্তা...
- এতোই যখন বুঝো বলার দরকার কি?
- না তবু বলবো.................
- না থাক
- না বলবো...
আমি নিরবে হাসতে থাকি। পাশো ঘুমন্ত ক্যাকটাস আর তার লালচে ভালোবাসা ছাড়া আমার এই সুখি ভাব দেখার কেউ নেই। থাকার প্রয়োজনও নাই। আমি ঘুমকাতুরে হয়ে উঠি হঠাৎ। ডুবে যাই নিবিড় নির্জনতায়।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



