somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শাহবাগ মোড় । আমার দেখা থার্টি ফার্স্ট

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাত ৮টা থেকাই র‍্যাব পুলিশরা টিএসসি থেকা সবার আইডি কার্ড চেক করতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন না এমন লোকজনরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ত্যাগ করার জন্য অনুরোধ করতে থাকেন তারা আদেশভঙ্গিমায়।
দশটার মধ্যে টিএসসি প্রায় বহিরাগতশূন্য। জাদুঘরের গেটের সামনের রাস্তায় থাকে পুলিশের কাটাতার দিয়া ঘেরা লোহার ব্যারিকেড। তার পিছনে অবস্থান নেয় জঙ্গি পুলিশ। বহিরাগত যারা যারা বিক্ষিপ্তভাবে ছবির হাট, কলাভবন, পাবলিক লাইব্রেরীতে বইসা ছিলো তারা ওইখান দিয়া বাইর হইতে থাকে দলে দলে; তাদের প্রায় সবাই বয়সে তরুন। সেই তরুনরা তখন শাহবাগের মোড়ে বইসা চা বিড়ি ছোলা বাদাম খাইতে থাকে। কিছু কিছু তরুনীও দেখা যায় ওইখানে।

শাহবাগে তিনজন হিজড়া আছে, সুন্দরী। চলতি হিন্দি সিনেমার নায়িকাদের দেইখা দেইখা ড্রেস ডিজাইন করেন তারা। দশটার পর পর ভারী মেকাপ নিয়া সেই সল্পবসনা হিজড়াগন ব্যারিকেডের সামনে গিয়া পুলিশরে অনুরোধ করতে থাকে ভিতরে ঢুকনের জন্য। বেশী কিছু চায় না তারা, টিএসসি থেকা একটা ঘুরান মাইরাই চইলা আসবে। সেই অনুমতি পাওয়া যায়। একদল যুবকও জোটে যারা নাকি তাদের পিছন পিছন হাটবে। আমার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বন্ধু লিটন গতবৎসর সেই যুবকদের দলে ছিলো।

এগারোটার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ফাঁকা। বহিরাগত তরুনরা ব্যারিকেডের উল্টাপাশে বন্ধ ফুলের দোকানগুলার সামনে জটলা করে। আর কবি সাহিত্যিকরা জাদুঘরের উল্টাপাশের ফুটপাতে বইসা চা খায়, লগে বেনসন। ফোন দিয়া গুলশান বনানীর বন্ধু-বান্ধবগো খোঁজ খবর করে।

বারোটা বাজতেই শুরু হয় শাহবাগের থার্টি ফাস্ট। হলে ভিতর কোথাও হয়তো বাজি ফুটলো, সেইটা বাজীর শব্দে উন্মাদ হয়া গেলো ব্যারিকেডের বাইরে থাকা তরুনরা। শাওবাগের সিগন্যালে যত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস পাজেরো পাওয়া গেলো, সেইগুলার উপরে খামাখাই খালি হাতেই ঘুষি লাত্থি চলতে থাকলো। অবস্থা বেগতিক দেইখা জঙ্গি পুলিশ আগায়া আসে, বেধরক লাঠিচার্জ চলে কিছুক্ষন। যুবকরা ভাইগা পিজির ভিতরে গিয়া ঢুকে।

যুবকদের ছত্রভঙ্গ কইরা দিয়া পুলিশরা আবার ব্যারিকেডের পিছনে গিয়া বইসা থাকে থানার সামনে। যুবকরা আবার জড়ো হয় সিগন্যালে, কাটাবন থেকা আসতে থাকা কোনো গাড়ির আর রক্ষা নাই। পুলিশরে আসতে দেখলেই সবগুলা দৌড়াইয়া পলায়া যায়। পুলিশ চইলা গেলে তারা আবার আসে, একসময় বিরক্ত হইয়া আর আসেই না। ভোর পর্যন্ত, ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত সেই যুবকেরা তাদের কর্মকান্ড চালাইতে থাকে।

তো, সেই যুবকেরা কারা? আমি আর সিনিয়র কবিবন্ধু ডেভিড কিছুক্ষন তাদের আশেপাশে ঘুরঘুর কইরা টের পাইলাম যে, সঙ্ঘবদ্ধ এই যুবকেরা নিজেরাও নিজেদের ভালোমতো চিনে না। হয়তো মিরপুর থেকা দুই বন্ধু আসছে, তিনজন আসছে নাখালপাড়া থেকা। একজনের বাসা কাফরুল। এইরকম আরো অনেকে জটলা কইরা গাড়ির উপর আক্রমন করতেছে।

কেন তারা এইরকম করে? গত পাঁচ বৎসর আমি থার্টি ফার্স্ট নাইটে একবার হইলেও শাহবাগ গেছি। দুইবাড় সাররাত ছিলাম। প্রতিবারই দেখি অবস্থা এইরকম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে সরকারের অবস্থান তুলনামূলক কঠোর ছিলো। তখনো কিন্তু শাহবাগের এই অবস্থা দেখছি আমি থার্টি ফার্স্টে।

সারারাত পিজির সামনে পূবালী ব্যাঙ্কের নীচে বইসা চা খাইতে খাইতে এই ঘটনার পক্ষে বিপক্ষে দার্শনিক অবস্থান নিয়া তর্ক বিতর্ক চালাইতে থাকেন শাহবাগের কবিরা। একফাঁকে হিজড়ারা আসে চা খাইতে। ঠাট্টা মস্করা করতে তারা চায়ের দোকানদার, বাদামোওয়ালাগো লগে। বহিরাগত যুবকদের কাউরে কাউরে আসতে দেখা যায় সেইখানে, হিজড়াদেরকে চা খাওয়ানোর প্রস্তাব রাখে তারা। আলাপ পরিচয় করে, ফোন নাম্বার দেয়। দূরে বইসা তাদেরকে আড়চোখে লক্ষ করে শাহবাগের কবিরা। মনে মনে দার্শনিক ব্যাখা খুঁজতে থাকে নাকি তারা?

ওরা, মানে ওই শাহবাগের রাতজাগা কবিরা, ওই যুবকদের কাউরেই চিনতে পারে না।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৃদ্ধাশ্রম।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৬



আগে ভিডিওটি দেখে নিন।

মনে করেন, এক দেশে এক মহিলা ছিলো। একটি সন্তান জন্ম দেবার পর তার স্বামী মারা যায়। পরে সেই মহিলা পরের বাসায় কাজ করে সন্তান কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

টের পেলে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৭

টের পেলে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

টের পেলে গুটিয়ে যায় লজ্জাবতী/ পরিপূর্ণ যৌবনে যুবতীর নিখুঁত অনুভূতি। আমার চাওয়া, ইচ্ছে, স্বপ্ন! আমার পছন্দ বুঝদার, সুন্দর হৃদয়ের রূপ! সৌন্দর্য সুন্দর যা চিরন্তন সত্য। কিন্তু সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×