somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঃঃঃ এডভেঞ্চার পুবের পাহাড়৬ : নদীর নাম রেমাক্রিঃঃঃঃ

১১ ই এপ্রিল, ২০১০ রাত ২:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলাদশের সদ্য আবিষ্কৃত (২০০৮) সর্বোচ্চ চুড়ার নাম তল্যাং ময় বা সাকা হাফং। সাকা হাফং শব্দের বাংলা অর্থ পুবের পাহাড়। এডভেঞ্চার পুবের পাহাড়ের আগের পর্ব।

১৩ডিসেম্বর রাত শেষে ১৪ইডিসেম্বর, শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। বমদের যেই গ্রামটাতে আমরা আছি নাম থাইদুং পাড়া। গ্রামের কারবারীর নাম শিপটন বম। বাংলা জানেন না জানার মতোই। গ্রামের বাকীদের বাংলা জ্ঞান আরো খারাপ। এর কারন গ্রামটার অবস্থান এত দুর্গম জায়গাতে যে বাংলাভাষী কারো এই গ্রামে আসার দরকার বা ইচ্ছা হয়না। শিপটন দা’ জানালেন আমরাই প্রথম বহিরাগত অ-পাহাড়ী যারা এই গ্রামে রাত কাটালো। এর আগে অবশ্য এক সাদা চামড়ার বিদেশী লোক আসছিলো, এই গ্রামে কিছুক্ষন যাত্রা বিরতী করেছিলো এবং অনেক ছবি তুলেছিলো। বুঝলাম কিংবদন্তি ব্রিটিশ এডভেঞ্চার জীন ফুলেনের কথা বলছে। এছাড়া আরেকটা দল (বিএমটিসি) শিম্পলাম্পতি পাড়ায় রাত্রী বাসের পরে সকাল বেলা এই গ্রামের সামনে দিয়ে হেঁটে গিয়েছিলো।
রাতটা ভয়ঙ্কর গেছে। কৃষ্ণপক্ষের রাত, তাজিনডং ভেঙ্গে বিশাল দুর্গম রাস্তা এসে পথ হারিয়েছিলাম। জিপিএসে থাইদুং পাড়ার নাম গন্ধও ছিলো না। শুধু শিম্পলাম্পতির কারবারী আর শেরকর পাড়ার লালসিয়াম বমের কথায় ভরসা করে অন্ধকারে হাতরে হাতরে এমন জায়গায় এসেছি বাইরের জগতের কাছে যার অস্তিত্ব নাই। দিনের বেলাতেই হরীনের ডাক শুনছিলাম, ট্রেকের প্রথম রাতে জঙ্গলে পথ হারিয়ে এমন জায়গায় চলে গিয়েছিলাম যার চারিদিকে ভাল্লুকের তাজা পায়েরছাপ, একটু পর পরেই স্বগর্জনে নিজেদের রাজসিক অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিলো। রাতে আমার অনেক জ্বর এসেছিল। ম্যালেরিয়ার এলাকা, ভয় পেয়েছিলাম বেশ। কিছুই খেতে পারিনি।
সকালে শরীর বেশ ফ্রেস লাগছিলো। শিপটন দা দৌরা দৌরি করে কোত্থেকে যেন এক গাদা পাকা পেঁপে, পাহাড়ী বুনো কমলা, মারফা (একধরনের পাহড়ী ফল, কাঁচা অবস্থায় শষার মতো, পাকা অবস্থায় কুমড়োর মতো) নিয়ে এলেন। নিমিষেই দ্রুত সেগুলো সাবাড় করেদিলাম, বাধা দেবার আগেই আবার ছুটলেন। বমদের অসাধারন আতিথ্য নতুন নয়। কিন্তু শিপটন দা’র কথা ভুলে যাওয়া অসম্ভব।
সকালে আমাদের প্রস্তুতী নিতে বেশ দেরী হয়ে গেল। আজকে আমরা মদকে ঢুকবো। মদক মোয়ালের অনেক উচুতে মেঘের সাথে মিতালী করা ত্রিপুরাদের গ্রাম শালুকিয়া পাড়া। বর্মা সীমান্তের একদম গা ঘেষে। যেতে হবে রেমাক্রি নদী ধরে। সীমান্তের এ অংশে আরাকান লিবারেশ আর্মির উৎপাত। র‌্যাবের মতো কালো পোষাক পড়ে হাতে কারবাইন আর হিংস্র শিকারী কুকুর নিয়ে রেমাক্রি দিয়ে বড় মদক, ইয়াংরাই পর্যন্ত প্রায় এদের যাতায়াত করতে দেখা যায়। পোশাকের কারনেই কালা বাহিনী নামে সবাই ডাকে। বার্মার একটা অংশের স্বাধীনতা ঘোষনা করে বার্মিজ আর্মির সাথে দির্ঘদিন ধরে লড়াই করছে, অস্ত্র আর রসদের কারনে কিডন্যাপিং, স্মাগলিং, ড্রাগ ডিলিংস (কুখ্যাত গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গলের সবচেয়ে অবাধ এলাকা) এদের খুব প্রিয় কাজ।স্থানীয়দের স্বগোত্রীয় হওয়ায় ঘাটায় না সহজে, কিন্তু বাঙ্গালীদের জন্যে এরা আতঙ্ক। উপস্থিতি বাড়লে বাংলাদেশ আর্মি ধাওয়া দেয়, ওদিকে বার্মিজ আর্মির সাথে নিত্য লড়াই, এদিকে মিজো বা অন্যান্য বার্মিজ বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপদের সাথেও গোলাগুলি হয়। রেমাক্রি থেকে বড় মদক ওদের কাছে বেশ আস্থার একটা এস্কেপ রুট।

বিদায় থাইদুং পাড়া। শিপটন দা'র বাচ্চা কাচ্চারা।


থাইদুং পাড়া'কে বাই বাই জানালাম।


পুরো এলাকা ভর্তি হরীনের ফাঁদ। বনের মাঝে আলম ভাই আর লালভান।

শিপটন দা তার এক ভাতিজাকে সাথে দিলেন পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে। ১৮থেকে ২০এর মধ্যে বয়স, চটপটে সুগঠিত কিশোর ললভান বম। সে এই গ্রামের না। থানছিতে মিশনারী স্কুলে বাংলায় পড়াশুনা করেছে। খুবই মিশুক। লালভানের সাথে আমরা ফের পথে নামলাম।
বিশাল অবারিত বনের ভেতরে খুবই ছোট থাইদুং পাড়া গ্রামটাকে খুবই ভালো লেগে গিয়েছিলো। বেরুবার সময় শিপটন দা’র পরিবার বিদায় দিল। গ্রামের বদমাশ কুকুর গুলো (এগুলো প্রায় সবই শিকারের কাজে লাগে, তাই এদের ধাওয়া খাওয়া মোটেই আনন্দের ব্যাপার না) লেজ নেড়ে বেশ খানিকটা এগিয়ে দিল। গতরাতের উৎপাতের অপরাধ ক্ষমা করে দিলাম। গ্রামে প্রচুর সাদা শুকর চোখে পড়লো।এগুলো আমাদের দেশে হয়না। শুনলাম বাংলাদেশের কাছের হাটের চেয়ে বার্মার হাট কাছে হওয়ায় ওরা ওখান থেকেই গবাদী পশু কিনে।
কিছুটা পথ আকা বাঁকা হেটে আমরা হঠাত ধপ করে নেমে গেলাম একটা ঝিরিতে। চারপাশে প্রচুর পাথর আর তার মাঝে একচিলতে ঠান্ডা পানি টলটল করে বয়ে যাচ্ছে। আসে পাশে জঙ্গল এত ঘন যে দিনমানেই অন্ধকার। ভেজা স্যাত স্যাতে পরিবেশ। জোঁকের আদর্শ পরিবেশ। ডিসেম্বরে জোঁক আর সাপ থাকেনা, অথচ ঝিরিতে ঢুকতে না ঢুকতেই অনেকগুলো জোঁক ছ্যাকা দিয়ে ফেলতে হলো গা থেকে। প্রচুর বুনো জন্তুর পানি খাবার জায়গা এটা বুঝতে দেরী হলো না। তাছাড়া আসে পাশে প্রচুর হরীনের ফাঁদ গ্রামের লোকেরা ফিট করেছে।
ঝিরির নুড়ি পাথর ভর্তি হিম শিতল পানিতে পা ডুবিয়ে আমরা হাটা শুরু করলাম লালভানের পিছু পিছু। ঝিরির পথ বরাবরই আকর্ষনীয়। কিন্তু উল্লেখ করার মতোই কিছুই হয়নি। বড় বড় পাথরে ফাঁক দিয়ে অলস সাপের মতো এঁকে বেঁকে হঠাত এসে নামলাম রেমাক্রি নদীর পাড়ে।
দুই ধারে সাদা চকচকে বালু, তার পরে একটু পরে পরে আদা বা এধরনের ক্ষেত, তার পরে আকাশ ছোঁয়া সব পাহাড় ভর্তি ঘন কালচে সবুজ বন, আর সেই বনের ফাঁক দিয়ে শীতের সুর্যের আলোকচ্ছটা এসে পরছে রেমাক্রির পাথুরে বুকে লাফিয়ে চলা সাদা পানিতে। ডিসেম্বর মাস। নদীতে পানি সবচেয়ে কম থাকার কথা। সাঙ্গুতেই নৌকা চলতে কষ্ট হয়। কিন্তু এখানে পানি যেন যৌবনদীপ্ত উচ্ছল। বিশাল বিশাল সব পাথরের মধ্যে দিয়ে লাফিয়ে কুদিয়ে নামছে। প্রচন্ড স্রোতের তোড়ে পানি সবসময় সাদা। খুব সহজেই চমতকার হোয়াইট ওয়াটার রেফটিং করা যাবে।
আমরা নদীতে নেমে গেলাম। পাহাড়ী নদী। কোন ঠিক ঠিকানা নাই। কোথাও হাটু পানি, পরক্ষনই গলা পানি। খুজে পেতে যেই জায়গা দিয়ে আমরা পার হলাম তাতে পেট আর বুকের মাঝা মাঝি পর্যন্ত ডুবলো। ব্যাকপেকের আদ্ধেকই পানির নিচে।
রেমাক্রি’কে নদী বলা যায় কি না সন্দেহ আছে অনেকেরই। লম্বায় খুবই ছোট। তামলো পাড়ার কাছে ৩ঝর্নার উৎস থেকে শুরু। রেমাক্রি (ইউনিয়নের নাম) আর মদকের অনেক গুলো ঝিরি, যার কিছু কিছু আবার এসেছে বার্মা সীমান্তের ওপার থেকে মিশে, ফুলে ফেপে বিশাল আকার নিয়েছে। আসার সময় সাঙ্গুতে দেখলাম পায়ের পাতা ভেজানো পানি, আর এখানে জায়গায় জায়গায় গলা পানি। পাথরের ফাঁক গলে গলে আছড়ে পড়েছে মদকবাজারের কাছে সাঙ্গুতে।
মুরং দের একটা মেয়ে বাহিনী নেমেছে হাটু পানিতে পোলো জাল বিছিয়ে। সবচেয়ে ছোট জেলেনীর বয়স টেনেটুনে ৪আর সবচেয়ে সিনিয়র জন ৭০এর কোটা পেড়িয়ে গেছেন। পিচ্চি অবাক চোখে দেখছিলো আমাদের, তার অবাক চোখের ছবি তুললাম দূর থেকে। এই এলাকাটা বুঝি প্রজাপতীর স্বর্গ। লাল, নীল, হলুদ, সবুজ হেন রঙ নেই প্রজাপতীদের, সংখ্যায় অসংখ্য। একটা নীল অদ্ভুত প্রজাপতীর ম্যাক্রো তুলতে গিয়ে টাশকি খেলাম, পাখা গুলো প্রজাপতীর মতো কিন্তু শরীরটা একদম গঙ্গা ফরিং এর। এমন আজব পতঙ্গ এই প্রথম দেখলাম।
লালভান বেশ জাত্যাভিমানী ছেলে। তখন থেকে তার কথার বক্তব্য বম’রা পরিচ্ছন্ন, বমরা পরিশ্রমী আর সাহসী বম’রাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতী। রাস্তা খুব খারাপ দেখে কিছুক্ষন বকা দিলো, এগুলো ত্রিপুরাদের কাজ। এগুলো বম গ্রাম হলে দেখতেন রাস্তা কতো পরিচ্ছন্ন হতো। এরা নাকী রেমাক্রিতে পানি বাড়লে গ্রামে বসে থাকে ক’মাস। জঙ্গল কেটে যে বিকল্প রাস্তা বানাবে তাতেও আগ্রহ নেই।
একটু পড়ে আমরা আরেকটা গ্রাম পেলাম। ত্রিপুরা’দের একটা গ্রাম তাকরাই পাড়া। গ্রামে ঢোকার ইচ্ছে ছিলো না। নদী থেকে বেশ উচুতে গ্রামটা। কিন্তু নদীর পাড়েই এক বয়স্ক লোক কালো কোট আর সাদা নেংটি পড়ে বাঁশের পাইপে তামাক টানছিলো। বহিরাগত দেখেই অতিথী সৎকারে টানা টানি শুরু করলেন। তাকরাই পাড়ার কারবারীর নাম দোনারাং ত্রিপুরা। কারবারীর নামে গ্রামটা দোনারাং পাড়া নামেও পরিচিত। নদীর পাড় থেকে বেশ উচুতে। আমাদের গ্রামে ঢোকার বিশেষ ইচ্ছে ছিলোনা। কিন্তু পাড়েই এক লোক গায়ে কালো কোট আর কোমড়ে সাদা নেংটি পড়ে হুক্কা টানছিলো। আমাদের হাত ধরে প্রায় হিরহির করে গ্রামে নিয়ে গেল। আতিথিয়তার জোর উপেক্ষা করা কঠিন। দোনারাং কারবারী নিজেই বেড়িয়ে এলেন অতিথি সতকারে। বেচারা এই দুপুরেও বদ্ধ মাতাল। সোজা হয়ে দাড়াতেই পাড়ছেননা



রেমাক্রিতে যেন প্রজাপতীর মেলা।


রেমাক্রির বুকে।


রুপসী কন্যা রেমাক্রি।


মুরং (ম্রো) মেয়েরা মাছ ধরছে রেমাক্রি'তে



জুমের সিজন শেষ। গ্রামবাসীর হাতে অফুরন্ত সময়। গ্রামের প্রথম বাড়িটাতে দিনের বেলায় সবাই তইয়া ভর্তি দো-চোয়ানী নিয়ে বসেছি। আর গ্রামের ছেলে বুড়ো, পুরুষ মহিলা সবাই আয়েশ করে খেয়ে বদ্ধ মাতাল হয়ে বসে আছে। আমাদের খাবার জন্যে আবার জোড়াজুড়ি শুরু করে দিল।
তাকরাই পাড়ার কারবারী দোনারাং ত্রিপুরা খুবই রিকোয়েস্ট করলেন তাদের গ্রামে থেকে যাবার। দুই পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে পুব আকাশে বুক চিতিয়ে থাকা সাকা হাফংকে চিনিয়ে বললেন, কাল সকালে আপনাদের ওখানে ওঠার জন্যে যা করা লাগে সব করবো। কিন্তু আমরা বেশ জোরালো ভাবেই জানালাম আমাদের প্ল্যান চুড়াটার যতো কাছে যাওয়া সম্ভব এগিয়ে যেতে। আমরা শালুকীয়া পাড়াতেই থাকবো। দোনারাং দা জানালেন, ঠিক আছে, কিন্তু যখন কোন দরকার হবে অবশ্যই যেন তাকে জানাই। দোনারাং দা শর্ট কাট পথে জোর করে নিয়ে যাবেন। তার শর্ট-কাট রাস্তাটা শর্ট হলেও বিস্তর ওঠা নামার, আমাদের কোন ইচ্ছাই ছিলো না। কিন্তু তিনি বদ্ধ মাতাল কোন কথাই শুনবেন না। পরে ট্রেকে উঠে দেখি অদ্ভুত সুন্দর চুম্বকই ফলস পিছে ফেলে এসেছি। অনেক দূর থেকে পানির গর্জন শোনা যাচ্ছে, কিন্তু পিছে গিয়ে দেখা হলো না। আসার সময় চুম্বকই মিস হয়নি। কিন্তু ক্যামেরার চার্জ শেষ।
নদীর ওপারে যেতে হলো আরেকবার। এদিকে ভয়ঙ্কর জঙ্গল। মানুষ চলাচল কম হওয়ায় হাটাই মুশকিল। আরেকবার নদী পার হতেই একটা চমতকার ৩ধাপি ঝর্না পেলাম। জিপিএসএ মার্ক করার সময় খেয়াল করলাম ঝর্নার সামনে বাঁশের ফ্রেমে কিছু ফিতে জড়ানো। লালভান জানালো এটা নাকি পবিত্র। এদিকে এখনো কিছু পাহাড়ী গ্রাম আছে যারা ধর্মান্তরিত হয়নি, প্রাচী ধর্ম পালন করে। তাদের কাছে এটা নাকি অনেক পবিত্র। পিছে খুব সুন্দর নাকি একটা গল্প আছে, যা সে ভুলে গেছে।
আর সামান্য এগুতেই বামে একটা গিরিপথ পেলাম। বিশাল বিশাল সব শ্যাওলা ধরা পিচ্ছিল পাথরের আড্ডা, অনেক উচু দুই পাহাড়ের মাঝে তাই সূর্যের আলো না ঢুকে সব সময় পিচ্ছিল। তার উপরে তিব্র গতীতে ঝিরির পানি নামছে। লালভান বললো ঝিরিটা নাকি বার্মার পিক্ষং পাড়া গ্রামের কাছ থেকে এসেছে। এদিকে উপরে কোথাও চাকমাদের একটা গ্রাম আছে। বান্দারবানে চাকমা’রা একদম নেই বললেই চলে। এদিকে চাকমা গ্রাম খুবই বিরল ব্যাপার। আর শান্তিবাহিনীর বিদ্রোহের সময় এদিকে ওদের উতপাত খুবই বেশী ছিল। এত গভীরে আর এত ভয়ঙ্কর দুর্গম যে সরকারী বাহিনীর আক্রমন হতোনা বললেই চলে। আশে পাশে কোথাও একটা পরিত্যাক্ত হেলিপ্যাডও নাকি আছে। শান্তিবাহিনীর গেরীলারা নাকি সেটা ব্যাবহার করতো। ঝিরি’তে গল্পের মাঝেই হঠাত খালি গায়ে এক হাড় জিড়ে লোক পাহাড় থেকে নেমে আসলো। আলম ভাই সাথে সাথে চিনে ফেললেন। এর নাম মরা ত্রিপুরা। মরা ন্যাচার ক্লাবের সাথে প্রথম সাকা হাফং অভিযানে কাটার হিসাবে ছিল। মরাও আলম ভাইকে চিনে খুব খুশী। জানালো মরার ছেলের ভয়ঙ্কর ম্যালারিয়া। সে ৪দিনের রাস্তা ভেঙ্গে এখন যাবে থানছি বাজারে, প্যারাসিটামল কিনতে। আমরা সাথে ম্যালারিয়ার ওষুধ এনেছিলাম গ্রামের লোকেদের জন্যে। ওকে কষ্ট করে এতটা পথ যেতে হবেনা যেনে খুশী হলো। মড়ার সাথে পাহাড় বাওয়া শুরু হলো। প্রায় হাজারখানেক ফুট উপরে ওদের গ্রাম শালুকীয়া পাড়া। যেতে যেতেই মড়ার সাথে আমরা কথা পাকা করে রাখলাম। আগামীকাল ১৫ই ডিসেম্বর আমরা যাব সাকা হাফং (তল্যাং ময়/মদক তোয়াং) সামিট করতে। যেহেতু আমরা ছোট দল, কাটার আর গাইডের বিশাল দলের প্রয়োজন নেই। শুধু ট্রেইল চেনাতে একজন গাইড হিসাবে মরা একাই যথেষ্ট। গতবার মরা যেই টাকা পেয়েছে, সে টাকার চেয়ে কিছু বেশী অফার করলাম। মরা সানন্দে রাজী হলো।
উঠছি তো উঠছি উঠা শেষ হয়না। এটাতে কোন উচু নিচু নেই। নিরবিচ্ছিন্ন উঠা। জিপিএসে হিসাব করা ছিল, রেমাক্রি ধরে টানা ১০০০ফুট উঠতে হবে অর্থাৎ ঢাকা চিটাগাং হাইওয়ে থেকে চন্দ্রনাথে চুড়া পর্যন্ত হাইটে। উঠতে উঠতে যখন বিরক্ত ধরে গেল তখন চুড়ায় একখন্ড সমতলে চোখে পড়লো বড় একটা মাঠ আর মাঠের ওপাশে ছিমছাম সুন্দর গ্রাম শালুকিয়া পাড়া। সিগারেটের সংগ্রহ শেষ। আমার ইমার্জেন্সি একটা স্টক আছে। তার পরেও এক প্যাকেট বার্মিজ বিড়ি কিনলাম। জ্বালাতেই পুরো মুখ তিতা হয়ে গেল।
মরার বাসায় ব্যাক প্যাক খুলে চিত হয়ে পড়তেই সারা গ্রাম ভেঙ্গে পড়লো আমাদের দেখতে। খুবই কিউট একটা বাচ্চা দেখলাম। নলীরাম ত্রিপুরার মেয়ে। নলীরাম গ্রামের স্কুল টিচার, এবং ব্যাবসায়ী। সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যাক্তি। বাচ্চার অলঙ্কারেই বোঝা যায়। বাবা-মায়ের মতো অসম্ভব রুপ নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে।
মরার ছেলের গায়ে হাত দিয়ে দেখি অসম্ভব জ্বর। গা পুরে যাচ্ছে। তাকে ওষুধ পত্র দিলাম আমরা। সে একটু বেটার হলে কাদা মাখা কাপড় চোপড় ছেড়ে বেরুলাম ঝর্নায় গোসল সাড়তে। তখনো বুঝতে পারি নি, কি বিরাট ভিলেজ পলিটিক্সএর শিকার হতে যাচ্ছি।


মাছ ধরতে শিশু কিবা বৃদ্ধা সবাই সমান ব্যাস্ত। বাচ্চাটার ফেশিয়াল এক্সপ্রেশানটা দারুন লাগছে, সম্ভবত তার ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতায় প্রথম সমতলবাসী দেখা।


মুরং কিশোরের দল। তাদের মতই নির্মল রেমাক্রির পাশে।


ঘন অরন্য ভেদ করে রেমাক্রি। এই বন কেটে কেটে পাহাড় চড়া খুবই বিরক্তিকর কাজ গুলোর একটা।


ইচ্ছে হলো একরকমের গঙ্গা ফরিং, অনিচ্ছেতেও লাফায় শুধু তিরিং বিরিং।


এই ঝর্নাটা নিয়ে নাকি আদি ধর্মানুসারীদের ইন্টারেস্টিং কিছু ধর্মাচরন আছে। কিন্তু ইতিহাসটা জানা হলো না। গুগল ম্যাপে আমরা নামকরন করলাম ৩ ধাপি ঝর্না বলে।






তাকরাই পাড়া থেকে মদং মোয়ালের ভিউ।


তাকরাই পাড়ার দোনারাং কারবারীর মা।


তাকরাই পাড়ায় দো-চোয়ানীর আড্ডা।


তাকরাই পাড়ার বালিকা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:১৭
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×