টরেন্ট নামটির সাথে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের অধিকাংশ-ই পরিচিত বলে আমার মনে হয়। আজ বাংলাদেশ এর টরেন্ট সাইটগুলোর এক ক্রান্তিকালে আমার প্রথম ব্লগ লেখা শুরু করলাম সবাই আমার ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বলে আশা করছি ...
টরেন্ট কি ???
টরেন্ট - একটি মেটাডাটা যা Bittorent Client এ ব্যবহার করা হয় । উল্লেখ্য টরেন্ট এ প্রকৃত তথ্যগুলো থাকে না। তথ্য শেয়ার যিনি করেন তার কম্পিউটার থেকেই আপলোড হয়। টরেন্ট এ শুধুমাত্র ফাইলটির Location সম্পর্কে তথ্য থাকে । এবং কেউ ডাউনলোড করার সময় আপলোড ও করতে থাকে অন্যদের জন্য যা Seeding নাম এ পরিচিত।
টরেন্টিং একটি জনপ্রিয় ফাইল শেয়ারিং পদ্ধতি। এটি মূলত Peer to Peer (P2P) ফাইল শেয়ারিং এর মাধ্যমে কাজ করে তাই বড় আকারের ফাইল আদান-প্রদানের জন্য এটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত পদ্ধতি। তদুপরি এই পদ্ধতিতে ডাউনলোড ইচ্ছানুসারে বন্ধ ও পুনরায় শুরু করা যায় খুব সহজেই। এমনকি কম্পিউটার বন্ধ করার পরেও সহজেই পুনরায় ডাউনলোড শুরু করা যায় আগের ডাউনলোড করা অংশের পর থেকেই
টরেন্ট বিস্তারিত উইকিপিডিয়া
বিটটরেন্ট প্রটোকল
টরেন্ট কীভাবে কাজ করে ???
টরেন্ট কাজ করার জন্য অনেক প্রোগ্রাম আছে যাদের মধ্যে Utorrent, Bittorrent, Azureus অন্যতম। টরেন্ট একটি ফাইল এর তথ্যকে অনেক খণ্ডে বিভক্ত করে ফেলে। এবং এর কারণে অনেক সময় ধরে ডাউনলোড করা যায় বিভিন্ন খণ্ড ডাউনলোড করে। তাই বড় ফাইল ডাউনলোড করা হয়ে যায় অনেক সোজা। কেউ যদি আপলোড দিতে থাকে তাহলে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝামেলা থাকে না ।
বহির্বিশ্ব ও টরেন্ট --
বিশ্বব্যাপী অনেক টরেন্ট সাইট আছে যার মধ্যে Piratebay.org , Extratorrents.com, Demonoid.me, Iptorrents.com, h33t.com , picktorrents উল্লেখযোগ্য । বিশ্বে টরেন্ট নিয়ে Cyber Law আছে । যা তাদের নির্দিষ্ট নিয়মনীতির অধীনে আপলোড এ সহায়তা করে
টরেন্ট ও বাংলাদেশ
ডিজিটাল বাংলাদেশ এর বাস্তবায়নের সূচনালগ্নে কিছু প্রাইভেট টরেন্ট সাইট ইন্টারনেট এর সহজলভ্যতার সাথে সাথে গড়ে উঠেছে। যেগুলো Local Peer প্রাপ্তির জন্য অধিক গতিতে ডাউনলোড করতে সদস্যদের সহায়তা করে। ৩০০-৪০০ KBps স্পীড এ ডাউনলোড করা সম্ভব হয় যা ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের জন্য এক পরম পাওয়া। Sharing is Caring - এই মূলমন্ত্র নিয়ে সকল সদস্যরা তাদের কাছে থাকা চলচ্চিত্র, ভিডিও, নাটক, গান, প্রামান্য চলচ্চিত্র, গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, দেশ - বিদেশের ব্যাতিক্রমধর্মী খবর, রান্নার টিপস্ থেকে শুরু কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান সব তথ্যই আদান-প্রদান হয় এই সাইটগুলোতে। এক স্থানে বিভিন্ন প্রকার, প্রয়োজনীয় এবং নিজের পছন্দের ফাইল পাওয়ার জন্য এই সাইটগুলো ইন্টারনেট ব্যাবহারকারীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশ এ টরেন্ট এর বিষয় এ নীতিমালা নেই।
কেন আমার এই ব্লগ এর অবতারণা---
আমি নিজে গত প্রায় দুই বছর ধরে টরেন্ট সাইট এর সদস্য। কিন্তু সম্প্রতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলা চলচ্চিত্র "গেরিলা" নিয়ে টরেন্ট এর ব্যাপারে কিছু নতুন সমস্যার অবতারণা ঘটেছে। বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ টরেন্ট সাইট DaruchiniBD.com এর এডমিন কে পাইরেসি এর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। যদিও তিনি এই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। এখন তিনি জামিন এ মুক্তি পেলেও আমাদের এই সাইটটির ভবিষ্যত সম্পর্কে আমরা সত্যিই চিন্তায় আছি। অসহায়ের মত চেয়ে আছি একটি ভালো ফলাফলের আশায়।
বিঃ দ্রঃ আমাদের সাইট এর নিচে স্পষ্টভাবে Disclaimer লেখা ছিল সাইট কোনো ফাইল সেভ করে রাখে না। আপলোডাররা তাদের নিজ নিজ আপলোড এর জন্য দায়ী।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ---
উল্লেখ্য কিছুদিন আগে আমাদের টরেন্ট সাইটটিতে গেরিলা (Guerrilla) চলচ্চিত্রটি আপলোড হয়। ১২০০০+ সদস্যের সাইটটিতে সবার ই আপলোড করার অধিকার ছিল। সাইট এর মডারেটররা এই চলচ্চিত্রটি এর ব্যাপারে বাংলাদেশে তথাপি সাইট এর নিয়মাবলি না থাকায় Delete করা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। এর আগে Copyright সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখিন না হওয়ায় তাদের ধারণা ছিলনা কি ঘটতে চলেছে। এবং আমার জানা মতে বাংলাদেশ এ এখনো কোনো Copyright আইন নাই । যা পরিস্থিতি আরও ঘোলা করে ফেলেছে।
যিনি আপলোড করেছেন আমাদের ধারণা তার ও এই ব্যাপারে কোনো ধারণা ছিল না। প্রথমে তিনি DVD এর ফরম্যাট .VOB তে আপলোড করেন যা পরে Rip করে .avi ফরম্যাট এ আপলোড দেন। ফাইলটি ছিল Festival Preview এর পাইরেটেড কপি। এটি যেহেতু Festival Preview এর কপি সুতরাং গেরিলা এর কর্মকর্তাদের প্রথম দায়িত্ব আমার মতে নিজেদের মধ্যে গাদ্দার কে খুঁজে বের করা। আমি তাদের পরামর্শ দেওয়ার যোগ্যতা রাখিনা জানি তারপরেও বললাম। যিনি আপলোড করেছেন তিনি কোথা থেকে DVD পেলেন এবং এর পেছনে কে কে আছে খুঁজে বের করা উচিত। বিনা দোষে আমাদের Admin জেল খাঁটলেন এবং হয়রানির শিকার হলেন। এই পরিস্থিতি আরও অনেক এর ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে যদি সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হয়। দোষী মুক্তবিহঙ্গ আর নির্দোষী খাঁচায় বদ্ধ চিড়িয়া ... আর আমরা শুধু চোখ বন্ধ করে না দেখার ভান করব ।
হয়ত অনেকে বলবেন আমি শুধুমাত্র আমাদের সাইট এর জন্য বলছি, পক্ষপাতিত্ব করছি। আমি গেরিলা চলচ্চিত্রটি ইতিমধ্যে ২ বার Cineplex এ গিয়ে দেখেছি। একবার নিজে, তারপর বন্ধুদের সাথে নিয়ে। আমার মতে এটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বাংলা চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে নিঃসন্দেহে সর্বশ্রেষ্ট । এই চলচ্চিত্রের ব্যাবসায়িক কোনোপ্রকার ক্ষতি পূরণ করার ক্ষমতা আমাদের নাই তবে অজান্তে হওয়া ভুল এর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারি। খুবই দুঃখের বিষয় এখনো ইন্টারনেট এ এই চলচ্চিত্রের কপি পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের শুধুমাত্র একবার বললে আমরা নিঃসন্দেহে Delete করতাম তৎক্ষণাৎ। কিন্তু আমাদের তেমন কোনো সতর্কবাণী ও আমি যতদূর জানি দেওয়া হয় নি।
আমি DaruchiniBD.com এর পক্ষ থেকে হাত জোড় করে গেরিলা এর সাথে সংশ্লিষ্টদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আমাদের অধিকাংশ সদস্য ই ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সের। এবং সবার আপলোড করার অধিকার থাকায় এমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সবাই আপনাদের কাছে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছুক । আমরা শুধুমাত্র পরিস্থিতির শিকার। আমাদের ১২,০০০ সদস্যের এই ভার্চুয়াল পরিবারটাকে ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচাতে পারে আপনাদের একটি সহানুভুতিশীল সিদ্ধান্ত। আমি জানি না আমার এই আর্জি আপনাদের কানে পৌঁছাবে কি না --- কিন্তু আমরা সত্যিই Sorry
এমন পরিস্থিতি পুনরায় যাতে উদ্ভব না হয়, তার জন্য এখনই হয়তো সময় এগিয়ে আসার। আর যেন কাউকে এমন পরিস্থিতির শিকার না হতে হয় তার জন্য আমি পরমকরুনাময় এর কাছে প্রার্থনা করি।
পাইরেসি বন্ধ হোক, ইন্টারনেট তথা টরেন্ট এর সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নির্ধারণ হোক। এবং "গেরিলা" চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা আমাদের এই পরিবারটির সদস্যদের উপর সহানুভুতিশীল হবেন এই আশা করছি।
মূল লেখকঃআগন্তুক ধ্রুব
মূল লেখাঃটরেন্ট, বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট ও গেরিলা প্রসঙ্গ

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




