সবাই বলে “বাংলাদেশে অভাব আর অভাব, সব কিছুরই অভাব, কোন কিছুইতেই আমাদের পূর্ণতা নেই।” তবে আমার মনে হয়, অ্যাটলিস্ট একটা ক্ষেত্রে আমাদের সমাজে কোনই অভাব নাই। আমরা স্বয়ং-সম্পূর্ণ। আমাদের কোনও জাতি বা দেশ থেকে বা কারো কাছ থেকেই ধার করা লাগে না। নিজেরাই ১০০ তে ১০০। অবাক হতে পারেন, এমন কোন্ জিনিসটা আছে এই দেশে? আছে আছে!
এখানে ‘অপরাধ ও অপরাধী’র কোনই কমতি নাই। যতধরনের অপরাধ দুনিয়ার মানুষ করেছে, এমন কোনটা নেই যেটা বাংলাদেশে হয়নি। বসেছিলাম অপরাধের লিস্টি করতে। আর তা করতে গিয়ে তো রীতিমত রিসার্চ পেপার লিখে ফেলার মত অবস্থা। এত এত অপরাধ, এতরকমের অপরাধ; কোনটাই মনে হয় বাদ নাই এই দেশে। যাইহোক, অত বড় লিস্টি এখানে আর দিচ্ছি না। এখানে মেজর মেজর কিছু অপরাধের লিস্ট দিলাম।
যৌতুকঃ যৌতুক একটা সামাজিক ব্যাধি। বাংলাদেশে এর প্রচলণ বহুকাল ধরে চলছে। হয়তো অনেকে বলবেন এখন আর নাই এই ব্যাধি, আমি বল্বো না ভাই না। এখন এর রূপটা হয়তো বদলেছে। প্রথাটা এখনো আছে। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা আরো ভয়াবহ। গ্রামে-গঞ্জে, শহরে-বন্দরে কোথাওই থেমে যায়নি এই প্রথা। এর বিরুদ্ধে রূঁখে দাড়াতে হলে ঘুরে দাড়ান। ভিডিও করে রাখুন যখন বর পক্ষে কনে পক্ষের কাছে অনৈতিকভাবে কিছু দাবী করে। সবার সামনে খুলে দিন নির্লজ্জ সেই বরের ভাল মানুষী মুখোশ।
ধর্ষণঃ প্রতিবছর হাজারো ধর্ষিতা নারী আত্মহত্যা করে। কী নিষ্ঠুর আমরা! মেয়েটার তো কোন দোষ ছিল না। চলন্ত বাসে ওর সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে কিছু নরপিশাচ। এমন কাহিনী এখন প্রতিদিনই ঘটে। পেপার-পত্রিকায় আর কয়টাই বা আসে? আপনার চোখের সামনে যা দেখছেন শেয়ার করূন। সামাজিক ঘৃণা তৈরী করূণ ধর্ষনকারীদের বিরূদ্ধে। রিপোর্ট করুন আমাদের ওয়েবসাইটে।
খুনঃ জনসম্মুখেই কুঁপিয়ে হত্যার ঘটনা যেখানে ঘটে, সেখানে প্রতিদিন গড়ে কয়জন লোক খুন হয় তার হিসেব করতে ভয়ই লাগে। আপনার চোখের সামনে ঘটে যাচ্ছে এমন অহরহ খুন আর হত্যা। সামাজিক দায়িত্ব থেকেই রিপোর্ট করূণ আমাদের ওয়েবসাইটে। পুরা ঘটনার ফুটেজ দিয়ে দিন ওয়েবসাইটে।
প্রতারণাঃ ‘প্রতারণার ডোজ রোজ রোজ’। আমার এক বন্ধুর লিখা ব্লগের হেডলাইন। টিভিতে যারা বিভিন্ন পণ্যের যাদুকরী শক্তির অ্যাড দিচ্ছেন তারাও কিন্তু প্রতারণা করছেন। আদম ব্যবসা থেকে শুরু করে কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সেটা পরিশোধ করতে গিয়ে ধানাই পানাই করা, সবই পড়ে প্রতারণার মধ্যে।অবৈধ ব্লাড ব্যাংক,ঔষধ তৈরীর কারখানা, ভুয়া ডাক্তার ইত্যাদি সব প্ররতারণার রিপোর্ট করুন।
নারী ও শিশু নির্যাতনঃ ঘরে-বাইরে সবখানেই নারী ও শিশু নির্যাতনের ব্যাপারটা অনেক বেশিই দেখা যায়। শিশুশ্রম আইন কয়জন মানে আমাদের? যেখানেই অনিয়ম দেখবেন, সরাসরি রিপোর্ট করূন।
গৃহকর্মী নির্যাতনঃ অনেক শিক্ষিত ঘরেও আজ-কাল গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। কিছু দিন আগেও পত্রিকায় এসেছিল বর্বর এক ঘটনা। আপনার পাশের ফ্ল্যাটেই হয়তো এমনটা ঘটছে। চুপ না থেকে আপনার কণ্ঠ্যকে মুক্তি দিন।
দূর্ণীতিঃ ৭০ বছরের বুড়ো। সারাটা জীবন কাটিয়েছেন প্রাইমারী স্কুলের ধর্ম শিক্ষক হিসেবে। কখনো সুদ-ঘুষের ধার কাছ দিয়েও ঘেষেন নি। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! আজকে এই বুড়ো বয়সে এসে ঘুষ ছাড়া নিজের পাওনা টাকাটা তুলতে পারেন না। বাড়িতে তার বিয়ের উপযুক্ত মেয়ে, ছোট ছেলে, ছোট মেয়ে নিয়ে তার সংসার। এত বড় সংসার চলে পেনশনের টাকায়। তাও পান না তিনি।দূর্ণীতির ধরন-রকম আছে আরো অনেক অনেক। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সতর্ক হয়ে যাই। শক্তি এখন জনগণের কাছে। যেকোন সময়ই রিপোর্টেড হয়ে যাবেন আপনি। সো সাবধান!
ছিনতাইঃ সারারাত জেগে থেকে কষ্ট করে প্রোজেক্টের কাজ শেষ করেছে রিজভী। সকাল ১০ টায় সাবমিশন। সকালে ঘুম থেকে উঠে সে রিকশা নিল বুয়েট যাবে বলে। তার রিকশা যখন আজিমপুর-পলাশী’র রাস্তার মাঝে, মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন যুবক এসে ধরল তাকে। তার রিকশা থামিয়ে দিল। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে নিয়ে গেল তার ল্যাপ্টপটা। টাকা পয়সাও যা ছিল নিয়ে গেল। বাকিটা পথ রিজভীকে হেঁটেই পৌছতে হলো বুয়েটে। এভাবেই দিনে-দুপুরেই চলছে ছিনতাই। ছিঁচকে পোলাপান থেকে শুরু করে বড় বড় গ্যাং বানিয়ে চলছে এদের কার্যক্রম। আপনার চোখের সামনে ঘটেছে, আপনি কিছুই বলতে পারেন নি, বলার সাহস হয়নি।কিন্তু এখন থেকে আপনি রিপোর্ট করতে পারেন আমাদের ওয়েবসাইটে। জানিয়ে দিন সবাইকে। ঘটনা ভিডিও করে ফেলুন, ছবি তুলে ফেলুন অপরাধীর। দেখিয়ে দিন সবাইকে।
চাঁদাবাজিঃ সরকারী দল, বিরোধী দল, এলাকার পাতি মাস্তান কেউই বাদ যায় না, সবাইই এসে বকশিশ(!) চায় আপনার কাছে। আপনি নাও করতে পারেন না, আবার না দিলেও কপালে বিপদ আছে। রিপোর্ট করূন আমাদের ওয়েবসাইটে।
চুরিঃ একবার শুনেছিলাম, ধানমন্ডি এলাকায় চুরির হার অন্যান্য জায়গার চেয়ে অনেক বেশি। মসজিদ, মন্দির, ঘর-বাড়ি কোন জায়গাই রেহাই পায় না চোরদের হাত থেকে। এমন কিছু ঘটলেই রিপোর্ট করুন আমাদের সাইটে।
কালোবাজারিঃ লঞ্চঘাট, বাস-স্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশনে ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি এখন নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। যারা এমনটা করছেন হয়তো না বুঝেই করছেন। এতে হাজার হাজার মানুষ হচ্ছেন হয়রানির শিকার। এই ধরনের কালোবাজারি থামানোর জন্যই আমাদের উদ্যোগ। সত্যটা জানিয়ে দিন সবাইকে।
মারামারিঃ রাস্তা-ঘাটে , বাজারে-বন্দরে, ঘরে-বাইরে সবখানেই চলছে মারামারি, হানাহানি। বাসের কন্ডাক্টরের সাথে ১-২ টাকার জন্যই ঘুষা-ঘুষি, রিকশাওয়ালার গায়ে হাত তোলা, আচারওয়ালা মামার সাথে বিনা কারণেই হাতা-হাতি, দুই পক্ষের মধ্যে ইট-পাটকেল ছোড়াছোড়ি এসবের কিছু দেখলেই জানিয়ে দিন সবাইকে। ক্ষমতা এখন আপনার হাতে।
ক্যাম্পাস সন্ত্রাসঃ শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে, ক্যাম্পাসের সাধারণ পরিবেশ নষ্ট করে, ক্যাম্পাসে উষ্ণতা ছড়ায় অথবা মানবিকতার শৃংখল মানে না , যে কারো মাধ্যমে এমন যে কোন কর্মকান্ডই ক্যাম্পাস সন্ত্রাস। রিপোর্ট করূণ, আপনার ক্যাম্পসকে রাখুন সন্ত্রাস মুক্ত।
মাদকঃ যেকোন প্রকার অবৈধ মাদক ব্যবসা, মাদকাসক্তির ব্যাপারে লিখুন আমাদের সাইটে।
তো এখন কী হল?
আমরা একটা প্ল্যাটফর্ম তৈরী করেছি। একটা ওয়েবসাইট। আমাদের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া যেকোন একটা অপরাধের ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে সেখানে রিপোর্ট করতে পারেন আপনি। আপনি নির্ভয়েই এই কাজটি করতে পারেন। কারণ, আপনার পরিচয় কেউই জানবে না।
এছাড়া আমাদের সাইটে আপনি যথযথ প্রমান থাকলে সেটাও উপস্থাপন করতে পারেন। আপনার মোবাইলে তোলা ছবি, কিংবা কোন ভিডিও ক্লিপ্স থাকলে আপনি সেটাও শেয়ার করতে পারেন এখানে। ভিডিও এর ব্যাপারে প্রথমত ক্লিপ্সটি YOU TUBE এ আপ্লোড করতে হবে। সেটার লিঙ্কটা শেয়ার করতে পারবেন সাইটে।
যখনই কিছু শেয়ার করবেন, তার লোকেশনটাও আপনি অ্যাড করে দিতে পারবেন। এতে করে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন স্ট্যাটিস্টিক্স আমরা বানাতে পারবো। কোনও অঞ্চলে অপরাধের পরিমান বেড়ে গেলে সে অঞ্চলের মানুষের নিজেদেরই দায়িত্ব হবে সেটাকে রূখে দাঁড়ানো। কিন্তু আগে তো তাদেরকে জানাতে হবে যে তাদের অঞ্চলে অপরাধ অনেক বেড়ে গেছে। তাদের আশ-পাশটা নিরাপদ নয়।
ছোট্ট অনুরোধ
আর কতকাল মুখ বুজে সহ্য করবেন? চোখ কে বন্ধ রাখবেন? বিবেকের দরজাটা আর কতদিন বন্ধ রাখবেন? আজ অপরাধ এর সামনে আমরা সবাই । তাই আপনার মুখের বাধন খুলতে, আপনার বিবেকের দরজা খুলতে, আপনার কণ্ঠকে মুক্ত করতে নিয়ে আসছি 'অপরাধের মুখোমুখি'।
নিজেকে জাগাতে অপরকে জাগাতে চোখ রাখুন
http://crimereportsbd.com/
কিছু টিপস
সাইটে গেলে দেখবেন, দু'ধরনের রিপোর্ট আছে। একটা হল, 'Approved' আর অন্যটা 'Verified'। যদি কোনও খবর বা রিপোর্টের যথাযথ প্রমান আমরা পেয়ে যাই যেমনঃ কেউ ভিডিও লিঙ্ক দিল, বা ছবি তুলে দিল বা কোনও NGO হয়তো একটা রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করে দেখল; এসব ক্ষেত্রে আমরা বলবো এটা Verified। আর যেকোন রিপোর্টই অ্যাডমিন প্যানেল থেকে অ্যাপ্রুভ করলেই কেবল সবার কাছে 'Visible' হবে। তখন সেটাকে বলবো 'Approved'। আমাদের বিভিন্ন ফীচারগুলো নিয়ে আমরা খুব তাড়াতাড়িই একটা ভিডিও টিউটোরিয়াল বানিয়ে ফেল্বো। ততদিন পর্যন্ত নিজেরাই ঘাটতে থাকুন, দেখতে থাকুন আর যেকোন অপরাধ বা অনিয়ম দেখলেই রিপোর্ট করুন।
সবাই ভাল থাকবেন, পাশে থাকবেন।
বিবেক মন কণ্ঠ মুক্তি পাক, অপরাধ নিপাত যাক।
বিবেক মন কণ্ঠ মুক্তি পাক,অপরাধ নিপাত যাক।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




