somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

প্রাচীন মানচিত্র তৈরীর অজানা ইতিকথা

২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১২ বিকাল ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানচিত্র যার ইংরেজী নাম Map. এসেছে লাতিন Mappa থেকে। Mappa মানে রুমাল বা ওই ধরনের ছোট কাপড়। সম্ভবত এক সময় কাপড়ের ঊপর ছোট ছোট কিছু নকশা একে রাখা হত এই জন্য এরকম নাম করন।
মানচিত্র রচনার পরিভাষিক নাম Cartography. এই Cartography ঘেটে দেখা যায়্ মানচিত্রের উপর মানূষের নির্ভরশিলতা প্রাচীন কাল থেকে। আর একাজে সাহায্য নেয়া হত অকাশের তারার। লন্ডনের ব্রিটিশ মিউজিয়ামে রাখা আছে পৃথিবীর এ যাবত উদ্বারকৃত প্রাচীনতম ম্যাপের একটি- মাটির তৈরী, পাওয়া গেছে ব্যাবিলনের ৩২০ কিমি উত্তরে “গা-সুর” শহরে। এই মানচিত্রর বয়স আনুমানিক ৪৩০০ বৎসর। চারটি দিকের অবস্থান ছাড়াও এই মানচিত্রে আছে দুটি নদী এবং দু্টি পর্বতের মাজে একটি শহর।


খেজুর পাতার ওপর আকা মানচিত্র পাওয়া গেছে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ থেকে।


গ্রীসেও মানচিত্র রচনার চল ছিল। মিলেটাস দ্বীপের বাসিন্দা দার্শনিক অ্যানাকসিম্যান্ডের (খৃঃ পূঃ ৬১০-৫৪৬) যে মানচিত্র একেছিলেন তাতে পৃথিবীকে গোল দেখান ও হয়েছে চারিদিকে সমুদ্র ঘেরা, মাঝে ঈজিয়ান সাগরের তীরে বর্তমানের তিনটি মহাদেশ এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের কিছু অংশ। আরো উন্নত মানচিত্র একেছিলেন ইরাটোস্থেনিস (২৭৬-১৯৪ খৃঃ পূঃ) যাতে আলেকজান্দারের অভিযানের কিছু দেশের স্থান ছিল, এশিয়া অপেক্ষাকৃত বড় ও চওড়া। সবচেয়ে আশ্চর্যর ব্যাপার এখানে অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংষ রেখার উল্ল্যেখ আছে।


ষ্ট্রাবো তার জিওগ্রাফিকা গ্রন্থে ইউরোপের নানা জায়গার মান চিত্র অংকন করেছেন।

টলেমির (১৫০ খৃঃ পূঃ) আকা মানচিত্র দীর্ঘদিন ভবিষ্যৎ মান চিত্রকরদের অনুপ্রানিত করেছে।

তবে এই সব মান চিত্রের অনেক দোষ ত্রুটি ছিল। ক্ষেত্রসীমা বা নানা জায়গা ঘুরে জরিপ করে সঠিক মানচিত্র অকা কাজ শুরু হয়েছিল রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার এর আমলে। রীতিমত প্রসিক্ষন দিয়ে একদল লোক নিয়োগ করা হয়েছিল, যাদের বলা হত “এগ্রিমেন্সোর”। প্রিয় ৩০ বছর যাবৎ এরা গোটা রোমান সম্রাজ্য চষে বেরিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে শুরু করে মানচিত্র তৈরীর কাজ। বিরাট বিরাট মানচিত্র তৈরী করে বিভিন্ন প্রদেশে শাষন কাজের সুবিধার জন্য পাঠান হতে থাকল। তত দিনে সিজার এবং তার ছেলে গত হয়েছেন, তাদের অসমাপ্ত কাজ শেষ করেন তার জামাই ভিস্পানিয়াস এগ্রিপ্পা। এগ্রিপ্পার মৃত্যুর এই কাজ ভাটা পরে কিন্ত শ্বেতপাথরে খোদাই করে কিছু মান চিত্র রেখে দেয়া হল। কনরাড পুতিংগার নামে এক প্রত্নসংগ্রাহক ষোড়স শতকে এগুলো কিছু অংশ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেন যার নাম হয় পিউটিংগারের মানচিত্র।


৬.৭৫ মিটার লম্বা এবং ০.৫৪ মিটার চওড়া এই মান চিত্রে ইউরোপ, এশিয়া ছাড়াও পারস্য, ভারত, উত্তর আফ্রিকার কিছু অংশের চিত্র আছে। আছে রোমান সম্রাজ্যের নানা গুরুত্তপূর্ন স্থানের পরিচয়।

মানচিত্র আকাঁ সহজ কাজ নয়, কারন পৃথিবীর আকার এমনই যে তাকে চৌকো কাগজে আকতে গেলে বিপত্তি অনিবার্য।একমাত্র যাকে বলে গ্লোব সেখানেই মোটামুটি নির্দিষ্টভাবে সাগর, মহাসাগর দ্বীপপুঞ্জ, দেশ নদীনালা অবস্থান আকা ঠিক ভাবে সম্ভব। কাগজে আকতে গেলে স্থানিক দূরত্ব বা আকার আয়তনের ক্ষেত্রে গোলমাল থেকেই যাবে। এর মূল কারন হল গোলকের ক্ষেত্রে Spherical Trigonometry র সাহাযা নেয়া সম্ভব। সেই জন্য দূরত্বের ব্যবহার বুজানোর জন্য স্কেলের ব্যবহার চালু হয় জরিপ পদ্বতির। যার সাহায্যে দূরত্ব উচ্চতা প্রভৃতির মান নির্নয় করা যায়।
যে কোন মানচিত্রেই নির্দিষ্ট কিছু ভৌগলিক বিষয়ের উপর ছবি আকা হয় এবং দিকের নির্দিষ্ট মানের উপর ভিত্তি করে। প্রতিকী চিহ্ন দিয়ে বুজানো হয় পাহাড়, পর্বত, নদীনালা, রাস্তাঘাট এই সব। চিহ্নগুলো সহজ করে আকাঁ হয় যাতে সাধারন মানূষ সহজ করে বুজতে পারে। নানা রকম রঙ দিয়ে প্রতীক চিহ্ন আকা হয় যাতে আলাদা আলাদা ভাবে বস্তু বুজা যায়। অক্ষাংশ দ্রাঘিমাংশ বুজাতে সরল রেখার ব্যাবহার করা হয়। যে কোন মানচিত্রে উত্তর, দক্ষিন, পূর্ব, পশ্চিম ব্যাবহার করা হয়, দূরত্বের মান আকা হয় স্কেলে। এই স্কেলের মান বিভিন্ন রকম কারন মাত্র এক সেন্টিমিটার জায়গায় যদি পৃথিবীর এক কিলমিটার জায়গার ছবি আকতে হয়, আবার আর একটা মানচিত্রে যদি ওই এক সেন্টিমিটার জায়গায় যদি একশো কিলোমিটার কোন জায়গার ছবি আকতে হয় তবে সঙ্গত কারনে দ্বিতীয় মানচিত্রের বিষয় বস্ত প্রথম মান চিত্রের একশো ভাগ ছোট করে আকতে হবে। অর্থ্যাৎ সহজভাবে বলতে গেলে বলা যায় মানচিত্র আকা হয় দুধরনের – বড় স্কেলের এবং ছোট স্কেলের। বড় স্কেলা দুজাতের মানচিত্র আকা হয়। একটার নাম মৌজা বা ক্যাডাষ্ট্রাল ম্যাপ যার স্কেলের মাপ ১৬”= ১ মাইল। এই ম্যাপে চাষের জমি বা বাস্তু জমির খতিয়ান নাম্বার সমেত সীমান আঁকা হয়। আর দ্বিতীয় জাতের মানচিত্র যার ইংরেজী নাম Ordnance Survey Sheet বা Topo Sheet. ব্রিটিশ আমলে এই সার্ভে দপ্তরের কাজ ছিল Topo Sheet তৈরী করা


ইচ্ছে আছে বাংলাদেশের মান চিত্র তৈরীর রোমাঞ্চকর আদি কাহিনী শুনাব যদি শুনতে চান। তাকে বলা হয় “ফাদার অফ ইন্ডিয়া জিওগ্রাফি” একক প্রচেষ্টায় তিনি এই উপমহাদেশের তিন লক্ষ বর্গমাইলের মানচিত্র অংকন করেছেন যার তুলনা আজকের দিনেও মেলা ভার। স্রেফ নিজের পরিশ্রম, নিষ্ঠা, মেধা দ্বারা এই বিশাল কাজ সম্পাদন করেন। পৃথিবীর মানচিত্র অংকনে এই প্রবাদ পূরুষের নাম জেমস রেনাল।


আজ এই পর্যন্ত তাহলে। দেখুন না হাতের কাছে ম্যাপটা নিয়ে। ও ভাল কথা যার বাসায় ৭-৮ বৎসরের বাচ্চা আছে তাকে একটা বিশ্ব মানচিত্র কিনে দিননা, দেখুন সে কেমন exited হয়ে যায়। ছেলে মেয়েদের সাধারন জ্ঞানতো বাবা মাকেই বাড়াতে হবে। তাহলে শুরু হোক ।

কৃতজ্ঞতাঃ
প্রাচীন জরিপের ইতিহাস – অরুন কুমার মজুমদার
মানচিত্রের চালচিত্র (প্রবন্ধ) – ত্রিদিব কুমার বসু
জেমস রেনেল – এফ.সি.হার্ষ্ট
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৬:৩৩
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×