somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার দেখা ঢাকা ভার্সিটির অস্ত্রবাজরা

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সময়টা তখন ছিল খুব খারাপ। সবে মাত্র দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। ১৯৯১ সাল। ঢাবিতে ভর্তি হয়েছি। জিয়া হলে অ্যাটাচড।কিন্তু সে সময় হলে সিট পেতে হলে বড় ভাইদের (মায়ের পেটের আপন বড় ভাই না কিন্তু) আশীর্বাদ বাধ্যতামূলক ছিল।আমার বাড়ী বরিশাল। আমার বন্ধু জুয়েল এর বড় ভাই সোহেল ভাই তখন মুজিব হলে থাকত।জুয়েল কে নিয়ে ওনাকে ধরলাম। ছোট ভাইয়ের বন্ধু হিসাবে আমাকে হলে থাকার সুযোগ করে দিলেন। সেটা মুজিব হলের ৫০১/ক। জানি না এখন ও ওই রুম আছে কিনা। ওটাকে আমরা বলতাম গনরুম। মানে ৮ বেডের রুম। কিন্ত্ থাকত ১৬ জনের ও বেশী। ভাল কথা আমরাই সায়েন্স ফ্যাকাল টির লাষ্ট ব্যাচ যারা আর্টস ফ্যাকাল্টির হলে অ্যাটাচড ছিলাম।

মাস খানেক ও লাগল না যেতে ওয়ান ফাইন মর্নিং মুজিব হলের পিছনে ধাম ধাম গুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। এক গড়ান দিয়ে তখন মেজেতে নেমে গেছি কারন অন্যরাও ততক্ষনে মেঝেতে হামাগুড়ি দিচ্ছিল। দশ মিনিট গোলাগুলির শেষে ফলাফল ইলিয়াস গ্রুপের মাহমুদ আর স্বপন মৃত।সেই প্রথম জীবনে ক্যাম্পাসে গুলি আর লাশের অভিজ্ঞতা।

তখনকার ছাত্র রাজনৈতিক পরিস্থিতি একটু বলে নেই, অভি গ্রুপ ডাঃ মিলন হত্যাকান্ডের জন্য বি এন পি অধ্যুষিত হলগুলো থেকে বিতাড়িত সব যেয়ে জগন্নাথ হলে উঠছে। ছাত্রদল আধ্যুষিত হলগুলো তখন এক কভাবে ইলিয়াস গ্রুপের দখলে। শোনা গেল অভি গ্রুপ নাকি হল অ্যাটাক করে মুজিব হলের পেছনের দেয়াল টপকে বের হয়ে যাচ্ছিল। এই সময় ইলিয়াস গ্রুপের ক্যাডাররা তাদের ধাওয়া করে, হলের পেছনের দেয়াল টপকাতে যেয়ে ওপারে আজিজ মার্কেটে অভি গ্রুপের পালটা গুলির শিকার হয়ে মারা যায়। মাহমুদ আর স্বপন ছিল আমাদের ব্যচমেট। খুব অল্প সময়ে ভাল সাহসী হিসাবে ইলিযাস গ্রুপে নাম করেছিল।

ওই সময় অভি গ্রুপের যাদের নাম খুব শুনতাম শিশির, সজল, গুড্ডু, কাজল, ক্যাপ সোহেল আরো অনেকে। স্মৃতির ভারে নাম গুলো এখন বিস্মৃত প্রায়।

এর কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের ব্যাচের খালেদ, রুনু, ডগ শিশির, মিলন, তাপস, টিটু, পাভেলের মোটামুটি অস্ত্র নাড়াচাড়া করতে শুরু করছে টোকাই জাকিরের নেতৃত্বে এই গ্রুপটাকে বলা হত জুনিয়ার গ্রুপ বা জাকির গ্রুপ। ইতিমধ্যে ইলিয়াস গ্রুপের মধ্যে নেতৃত্বর দ্বন্দ আবার শুরু হয়ে গেছে। ইলিয়াসের সাথে তখন ঠান্ডা লড়াই চলত রতনের। ইলিয়াস গ্রুপের মধ্য তখন নাম করা সিনিয়র অস্ত্রবাজ ছিল জিন্নাহ, বুষ্টার মানিক, ওয়েষ্টার্ন মানিক, নুরু, ফ্রিডম সোহেল, বরিশালের তুহিন, ন্যাটা বাবু।

এদিকে তখন জাকিরের নেতৃত্বে জুনিয়ার গ্রুপ সিনিয়রদের খুব একটা পাত্তা দিচ্ছিল না। ব্যাপারটা সিনিয়রদের মাথা ব্যাথার কারন হয়ে দাড়াল। জুনিয়র গ্রুপকে শিক্ষা দেবার জন্য এক দিন পাভেলকে মহসিন হলে সিনিয়র গ্রুপ দরজা আটকিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলে। ওই সময় ব্যাপারটা খুব অলোচিত হয়েছিল, এতে ব্যাপারটা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। সিনিয়রদের রাজনৈতিক অবস্থান অনেকটা নড়বড়ে হয়ে যায়।

সূর্যসেন হলের সেক্রেটারী জিন্নাহ তখন অনেকটা সুবিধজনক অবস্থানে ছিল, সে নিজের একটা গ্রুপ তৈরী করার প্রস্তুতি নেয় রতনের সাথে মিলে। ব্যাপারটা ইলিয়াস আলীর পছন্দ হয় না। আবার যুদ্ব। মারা যায় জিন্নাহ। ইলিয়াস গ্রুপ হয় ক্যাম্পাস থেকে বহিস্কৃত। এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিল জাকির। ক্যাম্পাসে তখন ইলিয়াস গ্রুপ নেই, রতন গ্রুপের সিনিয়রা বহিস্কৃত। সমস্ত জুনিয়রদের নিয়ে জাকির ক্যাম্পাসে এক ছত্র আধিপত্য কায়েম করে।

জাকির গ্রুপের ক্যাডাররা সরাসরি অস্ত্র হাতে নিল। ইতিমধ্যে খালেদ, রুনু, ডগ শিশির, মিলন, তাপসদের সাথে সুজন, নান্না, আসাদ, পালাশ, আরিফ এর যোগ দেয়। জাকির গ্রুপের হাতে চলে আসে ঢাবি র তৎকালীন ১৪টা হল। এরাই আমার জানা মতে শেষ বাহিনী যারা মুজিব হল থেকে এফ এইচ হল পর্যন্ত পুরো ক্যাম্পাস দখলে রাখছিল।

এদের প্রায় সবার সাথে আমার ভাল সম্পর্ক থাকার কারনে খুব কাছ থেকে তাদের ব্যাবহৃত কিছু অস্ত্র দেখার সৌভাগ্য(!) হয়েছিল। কাটা রাইফেল, ৭.৬২ পিস্তল, .৩৮ রিভলবার, শটগান, কিছু সময়ের জন্য একটা স্টেন গান ও দেখছিলাম। মাঝে মাঝে দেখতাম কোথা থেকে যেন এক টা G-3 রাইফেল আসত।

প্রতিটা হলে গেটে অবধারিত পাহারা থাকত জুনিয়র ক্যাডারদের সহায়তায়। সিনিয়ররা মাঝে মাঝে প্রহরা চেক করে যেত। যুদ্ব কালীন পরিস্থিতিতে হলের ছাদেও পাহাড়া হত। যেকোন অপরিচিতকে গেটে ক্যাডার দের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হত। পান থেকে চুন খসলেই সিনিয়রদের জেরা। প্রায় আর্মি কমান্ড চলত। জুনিয়ররা সিনিয়দের সামনে দাঁড়িয়ে থাকত। সিগারেট তো অসম্ভব সিনিয়রদের সামনে। হল ক্যান্টিন থেকে ফ্রি খাবার আসত।

১৯৯৩ সালে একবার ছাত্রলীগ শক্তি সঞ্চয় করে ডাস দখলের চিন্তা করে ওই সময় দেখছিলাম এক রাত্রে ১৭ টা অবৈধ অস্ত্র। তার আগের দিন জাকিরকে লক্ষ্য করে ডাসে গুলি করা হয়। কিন্তু ভাগ্যবশত জাকির বেচে যায় হলে এক সাথে এত অবৈধ অস্ত্র আমি একসাথে জীবনে দেখিনি।মাজে মাজে জুনিয়রদের দিয়ে গুলি ফুটিয়ে অস্ত্রের কার্যকারিতা পরখ করত। জাকির এক পর্যায়ে রতনের নেতৃত্ব অস্বীকার করে সরাসরি তৎকালীন এক কেন্দ্রীয় নেতার নেতৃত্বে চলে যায়। নাখোশ হয় রতন।

এদিকে ন্যাটা বাবুর নেতৃত্বে রতন গ্রুপ আবার ক্যাম্পসে আস্তে আস্তে প্রবেশ করে। ওদিকে দেশের রাজ নৈতিক পট পরিবর্তনের সময় চলে। (চলবে)

পরের পর্ব

আমার দেখা ঢাকা ভার্সিটির অস্ত্রবাজরা - ২য় পর্ব
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১৩
৪৯টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×