somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

শের শায়রী
অমরত্বের লোভ কখনো আমাকে পায়না। মানব জীবনের নশ্বরতা নিয়েই আমার সুখ। লিখি নিজের জানার আনন্দে, তাতে কেউ যদি পড়ে সেটা অনেক বড় পাওয়া। কৃতজ্ঞতা জানানো ছাড়া আর কিছুই নেই।

জাতিস্মর

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাহিরে কোথায় যেন প্রচন্ড শব্দে বজ্রপাত হল। চমকে উঠলাম মেঘমন্দ্র গলার স্বরে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল কে যেন জলদ গম্ভীর স্বরে বলল লিখে রাখ জন্ম ১লা আষাঢ়, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ, রাত ৩টা ২৩ মিনিট………

রাত্রে আমি এক স্বপ্ন দেখেছি। এতো স্বপ্ন না এ যেন এক চলমান ছায়াছবি। কিছুতেই ভূলতে পারছি না সেনানায়ক বলীভদ্র, নগরনটী অম্ভা, রাজপুত্র চিত্রক সেন……

একি স্বপ্ন না মহাকালের স্মৃতি গহ্বর থেকে বের হয়ে আসা আমার পুরানো জীবনের কাহিনী। পূর্ব জীবন বলে কি কিছু আছে? আমি তো জানি মৃত্যুতেই সব বিলীন। কিন্তু শেষটাকেই শুরু করে আবার মহাজীবনের প্রারম্ভ কি এভাবেই হয়।

আমার স্বপ্ন যেন সেটাই ঈঙ্গিত দিয়ে গেল। এক জীবন মৃত্যু হতে অন্য জীবনের শুরু, বীজ হতে অঙ্কুর, অঙ্কুর হতে ফুল, ফুল হতে ফল আবার ফল হতে বীজ- এটাই কি জীব জীবনের পূর্নচক্র না? কিন্ত এই চক্র আমাদের পূর্নভাবে দৃশ্যমান নয়। মাঝখানের অনেকাংশ অব্যাক্ত। আমার স্বপ্ন যেন এই জীবন আর ওই জীবনের ওপর সেতু বেধে দিল। সত্যিই কি সেতু আছে? আমি বৈজ্ঞানিক। যুক্তি দিয়ে আমি কাজ করি। ইলেক্ট্রনের সুক্ষ্ম কনা নিয়ে আমার গবেষনা সেখানে অলীক কোন কিছুই আমি বিশ্বাস করি না। কিন্ত আমার স্বপ্নকে কি ব্যাখ্যা দিবেন।

ঘুম ভেঙ্গে গেছে। আস্তে করে উঠে বসলাম। যে শিশু কেদে উঠল সে কে আমি? মনে পড়ে গেল ৩৯ বছর পূর্বে ১লা আষাঢ়, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ, রাত ৩টা ২৩ মিনিট আমার জন্ম।

আমি স্বপ্নে দেখছি আমি বলীভদ্র প্রাচীন বৈশালী নগরীর মহারাজের প্রিয় সেনাপতি। সারা দেশ জুড়ে আনন্দ আহ্লাদের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিছু কাল আগেই আমরা উজ্জয়নী নগরী কে যুদ্বে হারিয়ে অসংখ্য সম্পদ আর যুদ্ব বন্দী হিসাবে বেশ কিছু সুন্দর দাস দাসী নিয়ে এসেছি। ওই তো নগর নটী অম্ভা ঘুরে ঘুরে রাজার সামনে নাচছে। বুড়ো রাজা বল্লাল সেন মদের নেশায় চুড় হয়ে বসে আছে। অম্ভা কি আমার দিকে এক বার চোখের চকিত চাহনী দিয়ে গেল না?

দেবেই বা না কেন আমি এই রাজ্যর সবচেয়ে সুপুরুষ সেনাপ্রধান। ঘুঙুরের নিক্করে মাজে মাজেই আমার সামনে থেকে ঘুরে সরে যাচ্ছে। কিন্ত ওকি রাজপূত্র চিত্রক সেন ও তো একক ভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আমি বুজতে পারছি ওই লম্পট রাজপুত্রের আজ মনে ধরেছে নর্তকী অম্ভা কে কিন্তু আমি তা কেন হতে দেব? অম্ভা আমার হবে আজ রাতে, এ আমার ন্যায্য পাওনা, যেখানে অম্ভার চকিত সন্মতি আমি পেয়ে গেছি।

অম্ভার নৃত্য শেষ হল রাজকীয় ফুল বাগানের মধ্য দিয়ে ওর নিজের ঘরের দিকে যাচ্ছে, আমি ডাকলাম “অম্ভা” আমি তাকে স্পর্শ করতে গেলাম। লগু চরনে অম্ভা সরে গেল।

বলল “তুমি বুজি শিকারী, হরিনীকে কি এত সহজ়ে ধরা যায়?”

উস্মা স্বরে বললাম, ‘আমি শিকারী নই, তুমি নিষ্ঠুর বাজপাখী আমাকে খুন করেছ’।

এবার সে আমার কাছে এসে আমার উত্তেজিত বুকে হাত রেখে বলল, ‘দেখি’। তারপর দ্রুত লঘু পায়ে নাচের এক মুদ্রায় সরে গেল, ‘কই বধ তো করতে পারি নি, বোধ হয় সামান্য আহত হয়েছ। আমি আহত বাঘের কাছে যেতে পারব না’।

এ চটুলতার সামনে আমি বাকহারা হয়ে গেলাম। তখন সে আমার কাছে আসল, হরিনী চোখে মদির ভাবে আমাকে মেপে নিয়া আমার বুকের মধ্যে মাথা রেখে অস্ফুটে বলল, ‘তুমি বোধ হয় ছদ্মবেশী নাগরাজ আমি তোমাতে নিমজ্জিত’।

আমার শরীরের মধ্য দিয়ে বিদ্যুত বয়ে গেল।‘অম্ভা আমি নাগরাজ হলে আজি রাতে আমার নীল গরলের বিষে তোমাকে জর্জরিত করতে চাই’।

‘সেনা নায়ক তোমাতে দেখেই আমি নিমজ্জিত হয়ে আছি, আর কি ভাবে বলব’ অম্ভা ফিস ফিস করে বলল।

আমি বোধ হয় তখন মদের ভারে অনেক খানি তালহারা। হঠাৎ কিছু দূর থেকে কে যেন চিৎকার করল ‘অম্ভা’। তাকিয়ে দেখি রাজপূত্র চিত্রক সেন। খোলা তলোয়ার হাতে দাঁড়িয়ে আছে। আর ক্রোধে মদমত্ত হাতীর মত হুয়াংকার করছে।

‘সেনানায়ক বলভদ্র, এইবার আমার অসির মধ্যে নিমজ্জিত হও’ আমকে কিছু বুজতে না দিয়েই আমাকে অন্যায় ভাবে আমার বুকের মধ্যে রাজপুত্র চিত্রক সেনের অসি নিমজ্জিত হয়ে গেল।

আমার দেহের সাথে আমার যেন একটা দ্বন্দ্ব চলছে, আমি আমাকে ধরে রাখতে চেষ্টা করছি কিন্ত পারছি না আমি যেন এক বায়ুহীন কারাকক্ষে বন্দী হয়ে আছি। প্রচন্ড কষ্টে আমি এখান থেকে মুক্তি লাভের চেষ্টা করছি। এই টানাটানি আমার কাছে অসহ্য হয়ে উঠল। তারপর হঠাৎ করে মুক্তি লাভ করলাম।

প্রথমে কিছু ধারনা করতে পারলাম না। রাজকীয় ফুল বাগিচায় আমি দাড়িয়ে আছি আমার পায়ের কাছে আমার মৃতদেহ পড়ে আছে। রাজপুত্র চিত্রক সেন অম্ভার হাত ধরে ধীরে নিস্ক্রান্ত হল আর কিছু রক্ষী আমার দেহটি কাধে নিয়ে চলল। বুঝলাম আমি মৃত। নর্তকী অম্ভা যে কিনা একটু আগে আমাকে নিয়ে ছলাকলা করছিলো একই ছলাকলা এখন সে রাজপুত্র চিত্রক সেনের সাথে শুরু করল। আমি নির্মিমেষ দৃষ্টিতে অম্ভার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। দেহের সাথে সাথে আমার কাম প্রবৃত্তির ও নিবৃতি হয়েছে।

এর পর আমার নতুন জীবন শুরু হল। শরীর নাই তাই রোগ শোক ও নাই। প্রথম কিছু দিন দেহবোধ ছিল আস্তে আস্তে তাও শেষ হয়ে গেল। জীবিত মানুষ স্থান, কাল আশ্রয় করে নিজের সত্ত্বাকে প্রকট করে কিন্তু প্রেতলোকে তা নেই। নিরবয়ব বলে বোধ হয় তার স্থান প্রয়োজন হয়না।

অবাধ এখানকার যাতায়াত। ঠান্ডা, গরম কোন বোধই আমাদের থাকে না। এখানকার কালের গতিও পার্থিব কালের থেকে ভিন্ন। পার্থিব এক চান্দ্র মাস আমাদের একদিনের সমান। তাই কালের বিভিন্নতার জন্য পার্থিব ঘটনা আমার কাছে অতি দ্রুত মনে হল।

রবি চন্দ্র তারা ঘুরছে কাল অগ্রসর হচ্ছে। বোধ হয় পৃথিবীর হিসাবে দুই হাজার বছর কাল অতিক্রান্ত হল তার পর এক দিন আদেশ আসল ফিরতে হবে।

অদৃশ্য শক্তির প্রেরনায় চন্দ্রলোকে আসলাম। ওখান থেকে সূক্ষ চন্দ্রালোক অবলম্বন করে আলোকের বেগে ছুটে আসলাম পৃথিবীতে। নিকষ কালো অন্ধকারে আমি প্রশান্ত জলরাশির ওপর দিয়ে একটি বড় বাগান অধ্যুষিত বাড়ীর ওপর স্থির হলাম।

তারপর এক অন্ধকার জগতে প্রবেশ করলাম। সামান্য উষ্ণ এক জলপাত্রে নিজেকে আত্মস্থ করলাম। স্থানুর মত নিশ্চল কিন্তু আনন্দময়। আমার সচেতন আত্মা কিন্তু অস্তিত্ব হারাল না। আমি যোগ নিদ্রায় নিদ্রিত হলাম।

সহসা এক দিন যোগনিদ্রা ভেঙ্গে গেল। প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছি। আমি এই শান্ত নিরিবিলি উষ্ণ আধার ছেড়ে বের হতে চাচ্ছিলাম না।

যন্ত্রনা বাড়তে লাগল। সেই শ্বাস রোধকর যন্ত্রনা। সেই মৃত্যর সময়কার যন্ত্রনা। প্রচন্ড কষ্টে আমি এক পিচ্ছিল সুড়ঙ্গ পথ ধরে ধাবিত হলাম। যন্ত্রনা কান্নায় রূপ লাভ করল। কে যেন জলদ গম্ভীর স্বরে বলল, লিখে রাখ জন্ম ১লা আষাঢ়, ১৩৭৯ বঙ্গাব্দ, রাত ৩টা ২৩ মিনিট………

(আমার গল্প লেখার প্রথম প্রয়াস)
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৭:৫৩
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×