somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোডেক্স অ্যাটলানটিকাস, এ্যাট দ্য এ্যাম্বাসিয়ানো এ্যাট মিলানোঃ লিওনার্ডো দ্য ভিঞ্চি – শেষ পর্ব

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোডেক্স অ্যাটলানটিকাস, এ্যাট দ্য এ্যাম্বাসিয়ানো এ্যাট মিলানোঃ লিওনার্ডো দ্যা ভিঞ্চি (প্রথম পর্ব)

কিভাবে কিভাবে যেন ২০০ তম পোষ্ট দেয়া হয়ে গেছে। কৃতজ্ঞতা তাদের প্রতি যারা কষ্ট করে, ধৈর্য্য ধরে পড়ে এবং প্রায়শঃই উৎসাহ দিয়েছে।।



নেপলসের মিত্র হিসাবে মিলান যখন ফ্লোরেন্সের সাথে যুদ্ধেরত, সেই সময় নিশ্চয়ই লিওনার্দোর যুদ্ধাস্ত্র তৈরীর কৌশল কাজে লেগেছিল বলে মনে করা যেতেই পারে। এই সময় তার নোট বইর তারিখ দেখে দেখা যায় তিনি যুদ্ধাস্ত্র এবং বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি নির্মানের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। পুরো নোট বুক জুড়েই মেসিনগান, কামান, দুর্গ আক্রমন, প্রতিরোধ এই সব ছবি এবং বিভিন্ন ফুটনোটে ভর্তি।

সম্ভবতঃ মিলানের ডিউক লডোভিকো লিওনার্দোর যথাযথ কদর বুজতে পারে নি, হয়ত কোন কোন যুদ্ধাস্ত্র কৌশল কাজে লাগালেও ব্যাপক ভাবে সেরকম ব্যাবহৃত হয়েছে তার কোন প্রমান কোথাও দেখা যায় নি। মিলানে থাকা অবস্থাতে প্রথম তার উল্লেখ্যযোগ্য কাজ দেখা যায় চিত্রকর হিসাবেই। সেখানকার পাদ্রিরা মিলানের এক চ্যাপেলের জন্য লিওনার্দো এবং এমব্রজিয়ো নামক অপর এক চিত্রশিল্পীকে দায়িত্ব দেন ছবি আকার জন্য। এখানেই লিওনার্দো আঁকেন “ভার্জিন অন দ্য রকস।” শিশু সহ ম্যাডোনা, সেন্ট জন এবং একজন দেব দুত।



লিওনার্দোর পরবর্তী কাজের নিদর্শন দেখা যায় সে বছর শেষের দিকে মিলান যখন প্লেগ মহামারীতে আক্রান্ত। হাজার হাজার মানুষ মৃত্যু ভয়ে শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। ডিউকও পালিয়ে গেছেন। লিওনার্দোর নোট বইতে একের পর এক স্বাস্থ্যকর নগরের চিত্র ফুটে ওঠে। নগরীর প্রধান স্থপতিকে পরামর্শ দেন মিলান কে বিকেন্দ্রীভুত করে ছোট ছোট উপনগরীতে পরিবর্তন করতে (আধুনিক বড় বড় নগর কিন্তু এখন এমন ভাবেই তৈরী হচ্ছে), প্রতিটি উপনগরীতে থাকবে পাচ হাজার গৃহ এবং ত্রিশ হাজার নাগরিক।


The Plague Inspired Da Vinci To Design A City.

গৃহের নকশা একে বুজিয়ে দেন বাড়ীর জানালা হবে যতটা সম্ভব বড় কারন ঘরের মাঝে প্রচুর আলো বাতাস চললেই মানুষ জন সুস্থ্য থাকবে, বাড়ীর চিমনি এমনভাবে তৈরী হবে যাতে সমস্ত ধোয়া বের হয়ে যেতে পারে। প্রতিটি উপনগরীতে থাকবে পয়ঃনিস্কাষনের সু ব্যবস্থা, সরকারি উদ্যান, খাবার পানি প্রবাহের নিরন্তর প্রবাহ। নগরীতে হবে দুটো রাস্তা, একটি নীচ দিয়ে আর একটা তার ওপর দিয়ে ( আধুনিক ফ্লাইওভার ভাবা যায় ৫০০ বছর আগে কেউ ফ্লাই ওভার নিয়ে ভাবছে)। নীচের রাস্তা দিয়ে যানবাহন, মালবাহী গাড়ী এবং ওপরের রাস্তা নগরবাসী ব্যাবহার করবে।


The early bridge design was sketched in a notebook, and described in detail in a letter

ভিঞ্চির অধিকাংশ সমরাস্ত্রের মত এই প্রস্তাবগুলোর প্রায় কোনটাই গৃহীত হয়নি তবে মাস খানেক পর নগরীর মাঝে জলাভুমি ভরাট এবং বিশুদ্ধ পানি প্রবাহের প্রস্তাব গৃহীত হয় এবং অচিরেই মিলান এর সুফল লাভ করে। ডিউকের কাছে লিওনার্দোর পরিচয় কিন্তু নগর স্থপতি, সমরাস্ত্রবিদ বা চিত্রশিল্পী হিসাবে ছিল না, ছিল বিনোদনকারী হিসাবে। রাজ প্রসাদের বিভিন্ন উৎসবে তাকে ডাকা হয় মঞ্চ সজ্জা, নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র এবং যান্ত্রিক পুতুল নাচ দেখিয়ে সবাইকে বিনোদন দেয়া। দরবারে পাঠ এবং অভিনয়ের জন্য তিনি সে সময়ে কিছু নীতিকথা মুলক এবং জীব জন্ত বিষয়ক গল্প লিখেছিলেন।

আসলে মিলানে থাকা সময়ে তার গুরুত্বপূর্ন কোন কাজ ছিল না প্রচুর অবসর থাকত, সে সময় তার নোট বই ভরে উঠত চোখের মনি কিভাবে নড়ে, চোখ কেন বন্ধ হয়, নাক উচু কেন, দাত ও ঠোটের কার্যপ্রনালী, হাসির কারন, বিস্মিত হবার কারন, ঠান্ডায় কাপা, ঘামার্ত হওয়ারা কারন, মাতৃগর্ভে ভ্রুনের অবস্থান আবার অপর পৃষ্টায় প্যারাসুট, উড়ন্ত বিমান অথবা সূর্য গ্রহনের ছবি অদ্ভুত রকমের বৈপরিত্য।


leonardo da vinci sketch flying machine


Da Vinci Parachute, 1485


Studies of a fœtus from Leonardo's journals

১৪৮৭ সালে তার ডাক পড়ে মিলান ক্যাথেড্রালে নতুন কিছু গড়ার জন্য। উৎসাহের সাথে কাজে নেমে ছুতোরের সাহায্যে একটি মডেল তৈরী করে ডিউকের কাছে জমা দেন, কিন্তু ওই পর্যন্ত কাজের অনুমতি আর পান না।

এরপর তাকে স্ফোরজা স্মরনস্তম্ভ তৈরীর জন্য ডাকা হয়, ইতালীতে “স্ফোরজা” মানে শক্তি। শক্তির প্রতীক হিসাবে তিনি তেজস্বী অশ্বের মুর্তি গড়তে চান, মিলানের অশ্বশালা গুলো ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন শক্তিশালী অশ্বের স্কেচে ভরে উঠতে থাকে তার স্কেচ খাতা। বাড়ী ফিরে নোট বইতে সেই সব স্কেচ আবার নতুন করে বিভিন্ন আঙ্গিকে তুলে রাখতেন। পেশিবহুল অশ্বের ছবিতে ভরে ওঠে তার নোট বই। এর পর শুরু হয় মাটির তৈরী অশ্ব মুর্তি তৈরীর পালা, টানা তিন বছর ধরে চলল মাটি দিয়ে তৈরী মডেল। শৌর্য্য বির্য্যের এক অপূর্ব সমন্বয়, মিলানের সে সময়ের সমসাময়িক কবি বালডাসার ট্যাকোনে সেই মাটির তৈরী অশ্ব মডেল দেখে লিখছিলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি গ্রীস ও রোমে এর থেকে মহান শিল্পকর্ম আমি আর দেখি নি। আমার এই বিশ্বাস অভ্রান্ত।” এখন আসল এই মাটির ঘোড়ার ওপর পেতলের আস্তরন লাগাবার পালা।



কিন্তু তার আগেই মিলানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করল ফ্রান্স। সমস্ত ব্রোঞ্জ চলে গেল কামান তৈরীতে। তিন চার বছরের কঠোর পরিশ্রম এক নিমিষে ধুলিষ্যাৎ। হাতাশা ছেকে ধরল লিওনার্দোকে। হাতাশা থেকে বের হবার জন্য পানির শব্দ তরঙ্গ এবং বাতাসে শব্দ তরঙ্গ নির্নয়ে মেতে উঠলেন। বাজ পড়ার আওয়াজ শুনে দূরত্ব মাপার এক যন্ত্র তিনি এই ফাকে তৈরী করে ফেললেন। নোটবই থেকে জানা যায় এই সময় নদীর স্রোতের শক্তি এবং নদীর পানির স্রোতের গতি প্রকৃতি নির্নয় করার যন্ত্রর পরিকল্পনা করে ফেলছিলেন। এর পাশাপাশি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করার করার কৌশল ও নির্নয় করে ফেলছিলেন।


Studies of water

এদিকে মিলানের আসল ডিউক জিয়ান গ্যালিয়াজ্জো স্ফোরজা মারা গেলে (মারা গেছে না মেরে ফেলছে?) তারা চাচা লুডভিকো স্ফোরজা নিজেকে ডিউক ঘোষনা করেন (১৪৯৪ সালে)। ডিউক হয়েই ক্ষমতালোভী স্ফোরজা নিজেকে আরো যুদ্ধ সজ্জায় সজ্জিত করে চললেন। লিওনার্দোর আকুল আবেদন সত্ত্বেও মাটির “স্ফোরজা” অশ্বের জন্য ব্রোঞ্জ পেলেন না। হতাশা লিওনার্দো তার কাছে ছবি আকার অনুমতি চাইলেন। ডিউক তাকে তার প্রিয় গির্জা সান্টামারিয়া ডেল গ্রাৎসি গির্জায় ছবি আকার অনুমতি দিলেন। অনেক ভাবনা চিন্তার পর লিওনার্দো বাইবেলের একটি ঘটনা সান্টামারিয়া গির্জার দেয়ালে ফুটিয়ে তোলার চিন্তা করলেন। যীশু ক্রুশে বিদ্ধ হবার আগে তার বারো জন শিষ্য সমেত খেতে বসেছেন। ইতিহাসে যাকে “দ্য লাষ্ট সাপার” নামে চেনে। প্রায় তিন বছর ধরে লিওনার্দো এই ছবি আঁকেন।



এরপর লিওনার্দো “চিত্রশিল্পের অনুশীলন” নামে একটি গুরুত্বপূর্ন বই লেখেন। এদিকে মিলানের ডিউকও তাকে ঠিক মত বেতন দিত না, এক চিঠি থেকে দেখা যায় প্রায় দুই বছর লিওনার্দো বেতন পায়নি। ওদিকে ফ্রান্সের সম্রাট দ্বাদশ লুই মিলান আক্রমন করে বসে। প্রান ভয়ে ডিউক পালিয়ে যান ফরাসী সেনারা মিলান দখল করে নেয়। লিওনার্দোর সাধের মাটির “স্ফোরজা অশ্ব” মডেল ফরাসী সেনাদের লক্ষ্যভেদের নিশানা হয়ে দাড়ায়। লিওনার্দোর চোখের সামনে তিলে তিলে ধ্বংস হয়ে যায় তার প্রিয় একটা কাজ। বিশ্ব হারায় এক অমূল্য সম্পদ। রাগে দুঃখে অনেকটা নিরূপায় হয়ে লিওনার্দো মিলান ত্যাগ করেন ১৪৯৯ সালে। যে দরখাস্ত দিয়ে ১৪৮৪ সালে মিলান জীবন শুরু করছিলেন প্রায় ষোল বছর পর তার যবনিকাপাত ঘটে। এর পর লিওনার্দোর জীবনে অন্য ঘটনা। অন্য কোন দিন শুনাব।।

এখানে সামান্য কিছু পাবেন কেউ চাইলে দেখতে পারেন Science and inventions of Leonardo da Vinci

কারো যদি এই টাইপের লেখা ভালো লাগে তবে লিঙ্কে ক্লিক করে দেখে আসতে পারেন জেনোর প্যারাডক্স --- ২৫০০ বৎসরের হেয়ালি


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৪২
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×