তিনি লাতিনে নিজের নাম লিখতেন হিরোনিমাস কারডানাস, ইংরেজরা তাকে ডাকে জেরোম কারদানো আর ইতালিয়ানে তার পিতৃপ্রদত্ত নাম গিরোলামো কারদানো। অদ্ভুত এক মানুষ এই গিরোলামো কারদানো। আপনি যদি উইকিপিডিয়ায় তার খোজ নেন তবে দেখবেন তার পরিচয় দেয়া আছে ম্যাথমেটিশিয়ান, ফিজিশিয়ান, বায়োলোজিষ্ট, ফিজিসিষ্ট, কেমিষ্ট, এ্যাষ্ট্রোলোজার, এ্যাষ্টোনোমার, ফিলোসোফার, রাইটার এবং গ্যাম্বলার হিসাবে। একজন মানুষ আর কত বিচিত্রভাবে পরিচিত হতে পারে?
লিওনার্ডো দ্যা ভিঞ্চির সমসাময়িক এত এত জ্ঞানী মানুষটার ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠলে যা সর্বপ্রথম মনে হয় তা হল জগৎ সংসারে উদাসীন সারা দিন গবেষনায় ব্যাস্ত কোন উদাসী সন্নাসীর। কিন্তু কারদানো যেন বিজ্ঞানীর সংজ্ঞা উল্টানোর জন্যই জন্ম নিয়েছিলেন।
ভেনিস শহরের এক চিপা গলি, তার মাঝে আধো আন্ধকারে এই জুয়ার আড্ডায় জুয়া খেলা চলছিলো। যে জুয়ারী প্রায় প্রতিদিন জিতে সে আজকে হারছে গো হারা, এমন তো হবার কথা না কারন জুয়া খেলায় জেতার জন্য কপালের থেকে যে হিসাব নিকাশের একটা সম্পর্ক আছে, সে হিসাব নিকাশে সে পাকা, হয়ত কপালের কারনে দু একবার সে হারতে পারে কিন্তু এভাবে গো হারা! এটা মেনে নিতে পারছিলো না সে হেরে যাওয়া জুয়ারী। যত হারছে তত তার জিদ বেড়ে যাচ্ছিল।
হঠাৎ করে সেই দক্ষ জুয়াড়ী যে হেরে যাচ্ছিল সে ধরে ফেলল তার হেরে যাবার কারন, আলো আধারিতে এতক্ষন বুজতে পারেনি। বিপরীত জুয়ারী তাসের গায়ে এক কোনে চিহ্ন দিয়ে রাখছে। তাসের গায়ে চিহ্ন দিয়ে রেখে জুয়া খেলা? না হেরে কোন কায়দা আছে? ব্যাস আর যায় কোথায়? হেরে যাওয়া জুয়ারী কোমড় থেকে বের করে ফেলল বাকানো ছুরি। ধাম ধাম করে করে কয়েকটি কোপ বসিয়ে দিল জালিয়াত জুয়ারীর গায়ে, পর মুহুর্তে জালিয়াতের হাতে ধরা টাকা গুলো এক থাবায় ছিনিয়ে নিয়ে জানলা দিয়ে অন্ধকারে।
এদিকে তাসের আড্ডায় অন্যান্যরা প্রথমে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেও কিছুক্ষনে সম্বিত ফিরে পায়, ধাওয়া শুরু করল চাকু মারা জুয়ারীকে। শুরু হল অন্ধকার রাতে ভেনিসের গলি, তস্যগলিতে ধাওয়া। ধাওয়া খেয়ে চাকু মারা জুয়ারী গিয়ে পড়ল ভেনিসের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত এক ছোট নদীতে, এদিকে ওই জুয়ারী সাতার জানে না, প্রানটাই চলে যেত সে যাত্রা কপাল ভালো পাশ দিয়ে যাওয়া এক গন্ডোলা টেনে তোলে ডুবন্ত জুয়ারীকে। রক্ষা পায় সে যাত্রা চাকু মারা জুয়ারী। এতক্ষনে কি বুজতে পারছেন কার কথা বলছি? কে এই চাকু মারা জুয়ারী? হ্যা ঠিকই ধরেছেন ইতিহাস খ্যাত ম্যাথমেটিশিয়ান, ফিজিশিয়ান, বায়োলোজিষ্ট, ফিজিসিষ্ট, কেমিষ্ট, এ্যাষ্ট্রোলোজার, এ্যাষ্টোনোমার, ফিলোসোফার, রাইটার এবং গ্যাম্বলার গিরোলামো কারদানোই এই চাকু মারা জুয়ারী। প্রোবাবিলিটি, কমপ্লেক্স নাম্বার এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সের জনকও বলা হয় এই জুয়ারী কারদানোকে। চলুন সেদিকে একটু দৃষ্টি ফেরাই।
কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর ফান্ডামেন্টাল বিষয়ই হচ্ছে প্রোবাবিলিটি বা সম্ভাবনার সুত্র এবং কমপ্লেক্স বা জটিল নাম্বার। এদুটোর আবিস্কারকর্তা কিন্তু ওই জুয়ারী কারদানো। কিভাবে? জুয়ার নেশাতেই কারদানো মেতে উঠছিলেন প্রোবাবিলিটি বা সম্ভাবনার গনিতে। সে সময়ে জুয়া খেলার সব থেকে জন প্রিয় উপায় ছিল ডাইস বা “ছক্কা” ছুড়ে মারা। উদাহরন দিলে ব্যাপারটা একটু ক্লিয়ার হবে।
চামড়ার তৈরী একটি গ্লাসে তিনটি “ছক্কা” থাকবে। দুজন জুয়ারী থাকবে। আমরা এদের “প্রথম জুয়ারী” এবং “দ্বিতীয় জুয়ারী” হিসাবে নামকরন করি। দুজনে খেলার আগে ঠিক করল যদি তিনটি “ছক্কা” বা ডাইসের যোগফল যদি ৯ হয় তবে প্রথম জুয়ারী জিতবে। আর যদি তিন ছক্কার যোগফল ১০ হয় তবে দ্বিতীয় জুয়ারী জিতবে। আর যদি কোনটাই না হয় অন্য কোন সংখ্যা হয় তবে কোন হার জিত হবে না।
আপাত দৃষ্টিতে মনে হবে সব ঠিক আছে এভাবেই তো জুয়া খেলা হয় এটাই তো নিয়ম। আবার যারা একটু শিক্ষিত মাথা ঘামাবে তারা হিসাব করে দেখবে ঠিকই আছে, কারন ৯ হবার ছয়টি উপায় আবার ১০ হবারও ছয়টি উপায়। কিভাবে? আমাদের ডাইস কিন্তু তিনটি এটা মাথায় নিয়ে নীচের দিকে দেখুনঃ
একটি ছক্কায় সংখ্যা থাকে (১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬) এখান থেকে কতভাবে ৯ এবং ১০ হতে পারে নিচে দেখুন।
৯ = (১+২+৬), (১+৩+৫), (১+৪+৪), (২+২+৫), (২+৩+৪), (৩+৩+৩)
১০ = (১+৪+৫), (১+৩+৬), (২+৪+৪), (২+২+৬), (২+৩+৫), (৩+৩+৪)
এবার তিনটি ছক্কায় আলাদা সংখ্যা পড়বে কিন্তু তাদের সমষ্টি হবে এমন সম্ভাবনার সংখ্যা হতে পারে তিন রকম (১+২+৬), (১+৩+৫), (২+৩+৪)। যেহেতু এগুলো আলাদা সংখ্যা তাই এদের প্রত্যেকটির দান পড়ার সম্ভাবনা ৬ রকম (কারন প্রতিটা ছক্কায় ৬ টি সংখ্যা)। তা হলে এভাবে ৯ হবার মোট সম্ভাবনা (৩ X ৬) = ১৮,
দুটো ছক্কায় একই সংখ্যা পড়বে অথচ সমষ্টি হবে ৯ এমন সংখ্যা হতে পারে ২ রকম (২+২+৫) এবং (৪+৪+১) এদের জন্য মোট দানের সম্ভাবনা ৩ X ২ =৬
এবং তিনটি ছক্কায় একই সংখ্যা পড়বে এবং যোগফল দাঁড়াবে ৯ এমন দান একটিই হতে পারে (৩+৩+৩) এদের মোট দানের সম্ভাবনা ১
সেক্ষেত্রে ৯ হবার মোট দানের সম্ভাবনা দাড়ায় ১৮+৬+১ = ২৫
কিন্তু ১০ এর বেলায় এই সম্ভাবনা তিনটি আলাদা সংখ্যা হতে পারে (২+৩+৫), (৩+১+৬) এবং (৪+১+৫) যেহেতু আলাদা সংখ্যা তাই এদের প্রত্যেকটির দান পড়ার সম্ভাবনা ৬ রকমের, এভাবে ১০ হবার মোট সম্ভাবনা ৩ X ৬ = ১৮
দুটো সংখ্যা একই হতে পারে সমষ্টি হবে ১০ এমন সংখ্যা (৩+৩+৪), (২+২+৬), (২+৪+৪) এভাবে ১০ হবার সম্ভাবনা ৩ X ৩ = ৯
আর তিন ছক্কায় একই সংখ্যা পড়ে দান ১০ হতে পারে এমন কোন দানের সম্ভাবনাই নেই। সেক্ষেত্রে
১০ হবার সম্ভাবনা দাড়ায় ১৮+ ৯ = ২৭
তিনটি ছক্কা দিয়ে দান পড়তে পারে কত রকমের? ৬ X৬ X৬ = ২১৬ রকমের
সেক্ষেত্রে ৯ পড়ার সম্ভাবনা কত ২৫ / ২১৬ = ০.১২
আর ১০ পড়ার সম্ভাবনা কত ২৭ / ২১৬ = ০.১৩
অর্থ্যাৎ ১০ হবার সম্ভাবনা সামান্য হলেও বেশী। এই সম্ভাবনা বা প্রোবালিটির সহজ সুত্রটি কিন্তু ওই জুয়ারী কারদানোর আবিস্কার। এখন যদি আপনাকে বলা হয়, আপনি ৯ অথবা ১০ এর পক্ষে বাজী ধরতে আপনি কার পক্ষে ধরবেন? ও হ্যা সম্ভাবনার এমন গানিতিক হিসাবই কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ভিত। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের নিশ্চয়তা অনিশ্চয়তার হিসাবের মাঝ থেকে এভাবেই বিজ্ঞানীরা বের করে আনেন মুল ব্যাপারটা। ( আবার এই সামান্য সুত্র ধরে কোয়ান্টাম মেকানিক্স হিসাব করতে গেলে ভুল করবেন, আমি শুধু ভিত্তিটাই জানালাম) কোয়ান্টাম মেকানিক্স নিয়ে অনেক আগে একটি মজার লেখা দিয়েছিলাম সময় থাকলে ঘুরে আসতে পারেন বিড়ালটি বেচে আছে আবার মরে গেছেঃ শ্রোয়েডিংগারের সংকট
এই বার আসি জটিল সংখ্যায়। কারদানো তার এক বইতে প্রশ্ন তুললেন কোন দুটো সংখ্যার যোগফল ১০ এবং গুনফল ৪০?
ধরি একটি সংখ্যা X অপর সংখ্যাটি হবে তা হলে (10 – X) এখন এদের গুনফল হবে 4০
X (10 – X) = 40
10X - X² = 40
এখন যদি এই সমীকরনের সমাধান করি তবে X মান আসবে x = 5 + √- 15 এবং 5 - √- 15 রেজাল্ট দুটো নিয়ে যোগ করুন
5 + √- 15 + 5 - √- 15 = 10
আবার পুরন করুন (5 + √- 15) X (5 - √- 15 )
= 5² - (√- 15)²
= 25 – (-15)
= 25+15
=40
এখানে (√-১৫ ) মাইনাস ১৫ এর বর্গমুল এটাই জটিল বা কমপ্লেক্স সংখ্যা। এই জটিল সংখ্যা একটু জটিলই বটে। স্বাভাবিক ভাবে কিন্তু কারদানোর জবাব দেয়া যেত না কিন্তু যেই জটিল সংখ্যার আমদানি হয়েছে কারদানোর প্রশ্ন যতই জটিল হোক তার জবাব কিন্তু দেয়া গেছে। সরল প্রশ্নটার একটু জটিল উত্তর হয়ে গেল। তা হোক জবাব তো অস্বীকার করতে পারবেন না। কোয়ান্টাম মেকানিক্স আপনি ঢুকলেই দেখবেন অনেক সরল প্রশ্নের উত্তর এই জটিল বা কমপ্লেক্স নাম্বারের মাঝে লুকিয়ে আছে।
তার মানে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের যে ভিত্তি মুল তার ভিত কিন্তু গঠিত হয়েছিল ওই জুয়ারীর হাত ধরেই। জন্ম ১৫০১ সালে সালে ইতালির পাভিয়া শহরে বাবা ফাজিয়ো কারদানো, মা চিয়ারা মিচেরি। বাবার পেশা ওকলাতি নেশা ছিল গনিতে। এই ফাজিরোর বড় বন্ধু ছিল লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি। ভিঞ্চি কিন্তু আঁকাআঁকির পারসপেক্টিভ সমস্যার সমাধান নিতেন এই ফাজিরোর কাছ থেকে। পারসপেকটিভ হল ক্যানভাসে আঁকাআঁকির সময় দুরের জিনিস আর কাছের জিনিসের দুরত্বের হিসাব বোজান। ছবিতে দেখুন ল্যাম্পপোষ্ট গুলো কিভাবে দূরে ছোট হয়ে গেছে, এটাই পারসপেকটিভ।
বাঁক প্রতিবন্ধীদের জন্য সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের আবিস্কারক হিসাবে এই কারদানোর নাম উচ্চারিত হয়।
Astrology and natal chart of Gerolamo Cardano, born on 1501/09/24
এতো ছিল কারদানোর একটা দিক আর একটা দিক ছিল সম্পূর্ন বিপরীত। মন্ত্র তন্ত্র, জাদুটোনা, সম্মোহন, জ্যোতিষি বিদ্যায় তার ভয়াবহ ঝোক ছিল। চুড়ান্ত কুসংস্কারাচ্ছন্ন বলতে যা বোজায় কারদানো ছিল এক অর্থে তাই, এই রকম বিপরীত চরিত্র আমাকে সব সময় টানে তাই কারদানোর ওপর আমার আলাদা ইন্টারেষ্ট আছে। তার ওপর নাকি কোন এক “গার্ডিয়ান এ্যাঞ্জেলের” প্রভাব আছে যে তাকে বিভিন্ন সময়ে মৃত্যুর মুখ থেকে বাচিয়ে এনেছে।
তিনি নাকি তার জীবনের সব বড় ঘটনা স্বপ্নে দেখতে পেয়েছেন আগে ভাগেই। তিনি বলে বেড়াতেন তিনি নাকি জ্যোতিষি চর্চার এক নতুন শাখা আবিস্কার করেছেন, সেটা কি? মেটোপোসকপি, মানুষের কপালের ভাজ দেখে তার ভাগ্যবিচার। সে আমলে এই করেও অনেক টাকা উপার্জন করতেন। জ্যোতিষি চর্চায় তার কেরামতির একটা উদাহরন দেই, সে কালে তার বিরাট নাম ডাক জ্যোতিষি হিসাবে ইংল্যান্ডের রাজা অষ্টম হেনরি তার ছেলে ষষ্ঠ এডোয়ার্ডের কোষ্ঠি ঠিকুজি করার দায়িত্ব দিলেন এহেন নাম ডাক ওয়ালা জ্যোতিষিকে। রাজা জানতে চান তার সন্তানের ভাগ্য, কারদানো অনেক হিসাব নিকাষ গ্রহ নক্ষত্র বিচার করে বললেন যুবরাজ ২৩, ৩৪, ৫৫ বছর বয়সে সামান্য কিছু রোগ ভোগে বাদ দিলে দীর্ঘ জীবন পাবে। অথচ ষষ্ঠ এডোয়ার্ড মারা গেল ১৬ বছর বয়সে! হায় জ্যোতিষি বিদ্যা।
সব মিলিয়ে প্রায় আড়াইশো বই লিখছিলেন, তার মাঝে নিজের আত্ম জীবনী “দ্য ভিতা প্রপিয়ের লিভা” মানে আমার জীবনীগ্রন্থে নিজেকে চরিতার্থ করেছেন বদমেজাজি, ধুর্ত, একরোখা, ফন্দিবাজ, কুটিল, ঠোটকাটা, পরিশ্রমী, অধৈর্য্য, লোভী আর মিথ্যেবাদী। গুন বোধ হয় একটাও বাকী ছিল না ইতিহাস খ্যাত বিজ্ঞানীর! এটা বুঝাই যাচ্ছে তার বন্ধু না থাকলেও শত্রুর অভাব ছিল না। জুয়া খেলার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন “লিবের দ্যা লুদো আলে”তে আর বীজগনিত এর জটিল সংখ্যা নিয়ে আলোচনা করছেন “আরতিস ম্যাগনা সিভ দ্যা রেগুলিস আলজেবরাইসিস লিবের আনাসে”। মুলতঃ এটাই তার বিখ্যাত বই।
Niccolò Fontana Tartaglia
কারদানোর আর এক বিখ্যাত শত্রু ষোড়শ শতাব্দীর গনিতবিদ নিকোলো ফোন্তানা, কিন্তু তোতলা ছিলেন বিধায় তাকে ডাকা হত “তার্তাগলিয়া” বলে ইতালিয়ানে তার্তাগলিয়া মানে তোতলা। সে সময়ে ত্রিঘাত সমীকরনের সমাধান আবিস্কার হয় নি, কিন্তু নিকোলা তার্তাগালিয়া তার সমাধান আবিস্কার করে ফেললেন, সেকালের ধারা অনুযায়ী কোন কিছু আবিস্কার হলে তো সাথে সাথে ছাপার অক্ষরে দেখা যেত না, তাই ওই বিষয়ের ওপর দুই এক জন পন্ডিতকে ডাকা হত যাদের সামনে তার আবিস্কার দেখানো হত এবং কোন ভুল চুক থাকলে তার সাথে তর্ক যুদ্ধে যেত। তর্কে যে জিতত তারটাই মেনে নেয়া হত। সে সময় তার্তাগালিয়া আর এক গনিতবিদ ফিয়রের সাথে তর্কে নামলেন ত্রিঘাত সমীকরন নিয়ে, সে তর্কে অবশ্য তার্তাগালিয়া জিতছিলো। এমন সময় মঞ্চে আবির্ভাব আমাদের ধুর্ত কারদানোর।
সে তখন তার বিখ্যাত বই “আরতিস ম্যাগনা সিভ দ্যা রেগুলিস আলজেবরাইসিস লিবের আনাসে” লিখছিলেন। তিনি চাচ্ছিলেন তার্তাগালিয়া যেন তার বইতে বীজগনিতের এই ত্রিঘাত সমাধান যেন প্রকাশ করে, অনেক খোশামোদের পর তার্তাগালিয়া রাজি হয় তবে এক শর্তে আগে তার নিজের বইতে ত্রিঘাত সমীকরন সমাধানের কৌশল ব্যাখ্যা করে তারপর কারদানোর বইতে দেবেন। রাজী হলেন কারদানো কিন্তু “আরতিস ম্যাগনা সিভ দ্যা রেগুলিস আলজেবরাইসিস লিবের আনাসে” ছাপানোর সময় তার্তাগালিয়ের সাথে দেয়া কথা রাখলেন না কারাদানো কারন ততদিনে নিজে চর্তুঘাত সমীকরন সমাধানের কৌশল আবিস্কার করে ফেলছেন, আর সেটা দিয়ে ত্রিঘাত সমীকরনের সমাধানও করা যায়। বই প্রকাশের পর তার্তাগালিয়া মহা খাপ্পা হয়ে বিভিন্ন জায়গায় গালাগাল দিতে লাগলেন।
জীবনের শেষটা খুব একটা শান্তিতে কাটাতে পারেনি এই মানুষটি। ওদিকে কারদানো যীশুখ্রিষ্টের ঠিকুজি তৈরী করে ফেলছেন গোপনে, সেখানে লেখা ছিল যীশু মোটেই সাধু সন্ত ঈশ্বরের পুত্র ছিল না, দোষে গুনে মানুষ। তার্তাগালিয়া সে গোপন খবর পেয়ে গেলেন কারন কারদানোর ঘরের মানুষ তার ছোট ছেলে এ্যালডোকে ততদিনে বশ করে ফেলছে। চার্চের কাছে গিয়ে এই ভয়ানক কোষ্ঠি ঠিকুজির কথা ফাস করে দিলেন, চার্চ কারদানোকে ডেকে ভয়াবহ রকমের ভৎসনা এবং অপমান করে।
১৫৭৬ সালের ২০শে সেপ্টেম্বর এই বিজ্ঞানী, জুয়ারী, আরো অনেকে বিশেষনে বিশেষিত মারা যান। মজার ব্যাপার হল নিজের মৃত্যুর তারিখটি অনেক আগে থেকেই নিজে ঘোষনা করেছিলেন গননা করে। অনেকেই সন্দেহ করেন তার মৃত্যুটি ছিল আত্মহত্যা! কারন? কারন আর কিছুই না নিজেকে জ্যোতিষী হিসাবে অমর করে রাখা।
উৎসর্গঃ লেখাটা আমি বোন করুনাধারাকে উৎসর্গ করলাম যিনি গনিত বিষয়ে লেখা বিপুল আগ্রহে পড়েন এবং লেখেন ও বটে
সুত্রঃ লেখার মাঝে বিভিন্ন জায়গায় লিঙ্ক দিয়েছি, এছাড়াও বিভিন্ন পত্রিকা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৮