বাসের সময় ছিল ৪.৩০ পিএম অর্থাৎ বিকালে। গন্তব্য বগুড়া-ঢাকা। টিকেটে স্পষ্ট করে লিখে দেওয়া আছে যে,”নির্ধারিত সময়ের ১৫ মিনিট আগে বাস এর সামনে উপস্থিত হইতে হবে, নাহলে যাত্রা বাতিল বলে গন্য হবে”। স্বভাবতই আমি ৪৫০ টাকার যাত্রা বাতিল করিতে চাহিলাম না, এবং ঠিক ৫০মিনিট আগে বাস টার্মিনালের দিকে যাত্রা শুরু করিলাম,সেই সাথে আমার যাত্রা আরম্ভ হইলো।
সাথে ২টা ব্যাগ দেখিয়া হয়তো রিক্সাওয়ালারা আমারে বিপদে ফেলতে চাচ্ছিল। কিন্তু ভাল রিক্সাওয়ালাও থাকে। একজন ভাল রিক্সাওয়ালার সাথে ২০টাকার ভাড়া ৩৫টাকাতে রফা হলো। আমি বাসষ্টান্ডে পৌছালাম ৪.০৫ মিনিটে।
তখনো বাস আসতে অনেক দেরী। আমি কাউন্টারে বসে আছি। হঠাৎ কাউন্টার আলোকিত হয়ে ঊঠলো। আমি ভাবলাম, কেউ হয়তো লাইট জ্বালাইয়া দিছে। যখন দিনের বেলায় লাইট জ্বালানোর কারন খুজিতে গেলাম, ঠিক সেই মুহুর্তে আমি আমার দুইটা হার্টবিট মিস করলাম। কারন সামনে যা দেখলাম, তা কবির ভাষায়, “অর্ধেক মানবী তুমি অর্ধেক কল্পনা”। যাই হোক, সে যে আমার পাশে বসবে না সেটা ভেবে আমি দুঃক্ষ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগিলাম।(**কন্যার মা সাথে ছিল)।
একটু পরে আমি কাউন্টারে বসা লোকটাকে জিজ্ঞেস করলাম, ভাইজান বাস কখন আসবে? উনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করিলেন না। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম। এইবার উনি রাগ করে আমাকে যা বললেন, তা প্রকাশ করে আমি নিজের মর্যাদাহানী করতে চাচ্ছি না। বুঝলাম, উনি আমার উপর প্রচন্ড রাগ করেছেন। আশার কথা হল যে, মানুষের প্রচন্ড রাগ বেশিক্ষন থাকে না। মোটামুটি রাগ ভাঙ্গানো খুব কঠিন।
অবাক হইলাম এইটা দেখে যে, বাস একদম সঠিক সময়ে উপস্থিত হইলো।(আমি জানতাম না,
আরো অবাক হওয়া বাকি আছে আমার)। বাসে ঊঠলাম... আমার সিট নাম্বার ছিল D-6।
সিটে বসিলাম,খেয়াল করিলাম যে আমার পাশের সিটটা তখনো ফাকা। একটু পরে, দেখিলাম সেই মেয়েটি তার মা সহ বাসে ঊঠিলেন। আমি মাথা নিচু করে আড়-চোখে তাকিয়ে থাকলাম। ভয় পেয়ে গেলাম যখন তারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে পরল এবং আমাকে বলল, একটু দাড়ান। তখন, ভয়ে আমার হাত-পা.........। ভয় সাথে সাথেই দূর হইয়া খুশিতে রুপান্তরিত হলো যখন দেখলাম মেয়েটা আমার পাশেই আসন গ্রহন করলো। মেয়ের মা মেয়েকে বলিলেন, “উনি তোমার বড় ভাইয়ের মত”। আমি বুঝতে পারলাম না, আমার চেহারায় বড়ভাই বড়ভাই ভাব কবে থেকে আসলো। তবে কি আমার যৌবন আজ আস্তমিত...????
বাস চলতে শুরু করলো। আমি বোকার মত একটু পরে মেয়েটিকে প্রশ্ন করলাম, আপু আপনি কোথায় নামবেন? মানুষের চোখ দিয়ে যদি আগুন জ্বালানোর ক্ষমতা থাকতো তাহলে আমি এতক্ষন বাষ্প হয়ে উরে যেতাম। বাংলা ছিনেমার নায়কের ছোটবেলার সময় যখন,নায়কের বাবা ভিলেন কে “শয়তান তোকে আমি গুলি করে মারবো” বলে হার্ট-এটাক করে, তখন,নায়ক যে দৃষ্টিতে তাকায়। মেয়েটা সেই দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালো। আমি চুপষে গেলাম......
যাত্রাবিরতির পরে যখন বাস আবার নতুন করে চলতে শুরু করলো। আমারা যমুনা সেতু পাড় হইলাম। পরিবেশ রোমান্টিক। সুর্য অস্ত যাচ্ছে, আকাশে লালচে আভা...... পাশে একজন মেয়ে(সুন্দরী)। আহ্ আহ্......
এমন সময় আমাকে কে যেন ডাকলো। না, আপ্নারা যা ভাবছেন তা নয়। আমাকে প্রকৃতি ডাক দিয়েছে। আমি নিম্নচাপ অনুভব করলাম(নোনা-পানির সাগর উত্তাল)। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। বাসের সুপারভাইজারকে বললাম, ভাই একটু সাহায্য করা যায় না...? উনি কারন জানতে চাইলেন, আমি কানে কানে কারনটা বললাম। উনি মনে হয় আমার উপর আবার রাগ করলেন, এবং আমাকে অপমান করার জন্য সজোরে বলে উঠলেন,”মিয়া, কাম সাইরা বাসে ঊঠতে পারেন না?” অতঃপর আমার প্রেস্টিজ পাংচার......
নিম্নচাপ থেকে মুক্ত হয়ে আমার মনে হলো, জগতের সকল শান্তি আমার উপর বর্ষিত হচ্ছে।
এরপর বাসে উঠে আর কথা বলার প্রয়োজন বোধ করলাম না। এবং বাকি রাস্তাটা ঘুমের ভান করতে করতে ঢাকা চলে আসলাম।
ইহাই হচ্ছে আমার আগামীকালের বাস জার্নি। হয়তো , এরকম কিছুই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
পিলিজ বন্ধুরা, আমার জন্য পেরে ফর মি।