somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারত ভ্রমণ- ৩

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আগ্রা ফোর্টে ঢুকতে টিকেট লাগে । তাজমহলের টিকেট দেখিয়ে সাথে ৬০ রুপি দিয়ে টিকেট করলাম । এটাও একটা মোগল আমলের প্রসিদ্ধ স্থাপনা এটা বিখ্যাত মোগল সম্রাট আকবর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন । পরবর্তীতে এটার বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম জাহাংগীর , শাহজাহান ও আওরঙ্গজেবের সময় হয়েছিল । এই বিশাল দুর্গ মুগল সম্রাটের ইচ্ছা,পছন্দও তৎকালীন এর প্রয়োজনীয়তার ছাপ বহন করে চলেছে । এটাও যমুনা নদীর তীরে এবং সেখান থেকেই সম্রাট শাহজাহান শেষ জীবনের কটি দিন কাটিয়েছেন তাজমহল দেখে । সময় অত্যন্ত কম এ সময়ে যা দেখা যায়। পাথরের বিশাল দুর্গ। চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনী দুর্গের পরেই জংগল সেখানে বাঘ ভাল্লুক ছিল একসময়। এখন অবশ্য তা নেই। তারপর বড় নালা যেখানে কুমির ছিল। এখন তেমন পানিও নেই। তার পরের বেষ্টনীতে আবার জংগল। দুর্গের দেয়াল একদম খাড়া । কোন আসামীর/পলায়নপর কেউ যে কোন জায়গা থেকে নীচে পড়ে গেলে নির্ঘাত মৃত্যু কিংবা গুরুতর আহত হবার সম্ভাবনা রয়েছে, তাও বাঁচা যাবে না কারণ সেখানে হিংস্র প্রাণীর বিচরণ, হিংস্র প্রাণীর খাদ্য হতে হতো সেই হত ভাগাকে । তাজমহল এর সাথে আগ্রাফোর্টের ও নাম চলে আসে । সম্রাট আকবরের তৈরি এ প্রাসাদটি ৭০ ফুট উচু শক্ত লাল বেলেপাথরের দেয়াল দ্বারা ঘেরা এর পুরু প্রাচীর গুলো দুই স্তরে এর চওড়া দেওয়াল বানানো হয়েছে । দুর্গকে সুরক্ষিত করার জন্য বাইরের দেয়াল চল্লিশ ফিট উচ্চতা আর ভিতরেরটা সত্তর ফিট । বাহির থেকে কোন শত্র“ সহজে এই দুর্গে ঢোকা অসম্ভব ছিল । তেমনি কেউ দুর্গ থেকে পালাতে চাইলে নির্ঘাত মৃত্যু অপেক্ষা করছে নীচে । এর ভিতরে স্মৃতি সৌধের সংখ্যা ছিল পাঁচশ । ভিতরে সাদা মার্বেল পাথরে তৈরী সম্রাটের নিজস্ব মহল ‘দেওয়ান-ই-খাস ’ ‘দেওয়ান-ই-আম’ বা দরবার কক্ষটির মেঝ ও ছাদ লাল বেলে পাথরে তৈরী । জেসমিন প্রাসাদটিতেই জীবনের শেষ কটিদিন বন্দী অবস্থায় আবদ্ধ ছিলেন সম্রাট শাজাহান । দীর্ঘ আটটি বছর নিয়তির কথা ভেবে অশ্র“-সিক্ত নয়নে শুধু আরশি দিয়ে তাকিয়ে দেখতেন প্রিয়তমা মমতাজের সমাধি ।
আগ্রা দুর্গের ৪টা প্রবেশ দ্বার ছিল বর্তমানে দুটো ব্যবহার করা হয় । একটা হলো অমর সিং গেইট আরেকটা দিল্লী গেইট । প্রথমটা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত । বাইরের দেয়ালের খালে গভীর পরিখা কাটা এগুলোতে কুমীর ও অন্যান্য ভয়ংকর প্রাণী ছেড়ে রাখা হতো পলাতক বা আগ্রাসী কাউকে হত্যার জন্য । এরপর জংগল যা ছিল হিংস্র বন্য প্রাণীতে পূর্ণ এবং তার পাশে আবার ও গভীর পরিখা,এগুলোও হিংস্র জলজ প্রাণী দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল । বর্তমানে এটা ভরাট করে রাস্তা বানানো হয়েছে । যথানিয়মে টিকেট কেটে ভিতরে যেতে হয় । বিশাল দেয়াল ঘেরা রাস্তা । তাজমহলের টিকেট দেখালে বিশ রুপী দিতে হয় । গেইটে চেক করে তারপর ভিতরে ঢোকা । এখানেও একটা গেইট আছে । গার্ড পাহারা দিচ্ছে । ঢুকতেই ভবনের মত, মানুষ একটু বিশ্রাম করে । তারপর উপর থেকে নীচের দিকে ঢালু রাস্তা । নীচে থেকে আস্তে আস্তে হেটে উঠছি দুর্গের মূল চত্তরে যাওয়ার জন্য । রাস্তা বিশাল গাড়ী চলতে পারে এবং এগুলোও চওড়া লাল বেলে পাথর দিয়ে তৈরী দেয়াল দিয়ে ঘেরা। প্রায় দু’শ গজ পর দুর্গের মূল এলাকা । এটাও বিশাল ভেতরে ঢোকার দুই তিনটা জায়গা আছে। এখানে পর্যটকদের ব্রিফ করা হয় এবং দুর্গের ম্যাপ লাগানো আছে । দুর্গের এই অংশে সবুজ বাগান ও বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার রাস্তা আছে । গাইড একদিক থেকে দুর্গে ঢুকিয়ে আরেক রাস্তা দিয়ে বের করে নিয়ে আসে । প্রবেশ পথে একটা বড় পাথরের চৌবাচ্চা আছে । কথিত আছে এটা সম্রাট জাহাংগীরের গোসল করার জন্য ব্যবহৃত হত । সম্পুর্ণ দুর্গের ভিতর অনেক কারুকাজ ,তবে রক্ষনাবেক্ষণ তেমন নেই তবুও জৌলুসের ছোয়া কিছুটা হলেও দেখা যায়।
দুর্গের ভিতর রয়েছে খাস মহল এটা সম্রাজ্ঞী ও রাজকন্যাদের হেরেম বা মহিলা মহল, এটা মার্বেল পাথরে তৈরী । এর তিন দিকে দোতলা কক্ষ গুলো আছে । এগুলো এমন ভাবে বানানো যে বাইরের কেউ এখানে প্রবেশ করতে পারবেনা । বাতাস চলাচলের জন্য যে সমস্ত রাস্তা আছে তা একদিকে দেখা যায় অন্যদিকে মনে হয় কিছুই নেই । এগুলোর স্থাপত্যশৈলী চমৎকার । এর সামনে আঙ্গুরের বাগান এখন গাছ নেই তবে নতুন করে লাগানো হচ্ছে । হেরেম শরীফ এর মহিলারা এই বাগানে ঘোরাফেরা ও আনন্দ করত । রাজকন্যা জাহানারা ও রওশন আরার রুম দুটো চমৎকার । একদিক দিয়ে প্রকৃতি , যমুনা নদী ও খোলা আকাশ দেখা যায় অন্য দিকে আঙ্গুর বাগান । মার্বেল পাথরের বানানো কক্ষগুলো নানাবিধ পাথর দিয়ে কারুকার্য খচিত । এক সময় এসব কক্ষ দুর্লভ গালিচা দিয়ে ঢাকা থাকত । এর ফ্লোর গুলোর নীচে শীতল পানির প্রবাহ রুমগুলোকে ঠান্ডা রাখত । আরাম আয়েশের সব ব্যবস্থা এখানে আছে । এছাড়াও আছে শীষ মহল এখানে অনেক আয়নার কাঁচ দেয়ালে লাগানো আছে । হাম্মাম আছে সেখানে সুগন্ধী পানি দিয়ে বাদশাহ ও বেগমরা গোসল করতেন । সব আরাম আয়েশ তারা উপভোগ করতেন , তবে এসব ছিল এক্লুসিভ, সাধারণের জন্য নয় । হেরেমে অন্য কোন পুরুষের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ । এর থেকে বাইরে এসে দেওয়ানি খাস । এখানে বাদশাহ বিভিন্ন লোকজনের কথা শুনতেন । এখানে একজন ইংরেজ এর সমাধি দেখলাম ।
আগ্রা ফোর্টের অনেক অংশে পুনঃ নির্মান কিংবা সংস্কারের কাজ চলছে । তাই সবকিছু পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত না । সম্রাট শাহজাহান বন্দী অবস্থায় মৃত্যুর পূর্বে যে কক্ষে ছিলেন তা দেখলাম । এখানে দেয়ালে এমন ভাবে কাঁচ আছে যে সব জায়গা থেকে তাজমহলের ছবি দেখা যেত । শেষ জীবন তিনি তাজমহলের দিকে তাকিয়ে পার করে দিয়েছিলেন। একসময়ের প্রতাপশালী মোগল বংশের আজ কিছুই অবশিষ্ট নেই । গাইডরা এদের প্রশংসা না করে ভোগ বিলাস বিবাহ ও অন্যান্য বিষয়ে রগরগে ভাবে বর্ণনা করে । সেগুলোকে আমল না দিয়ে ইতিহাস ও স্থাপত্যের অপূর্ব অবস্থা দেখতে দেখতে আগ্রাফোর্ট থেকে বের হয়ে এলাম ।




জয়পুর
এরপর আমাদের গন্তব্য জয়পুর । সম্রাট আকবর এর পতœী জুদাবাই এর রাজ্য । কথিত আছে এই জুদাবাই আকবরকে ছেলে সন্তান উপহার দিয়েছিল । রাজস্থান প্রদেশের অন্যতম প্রধান একটি শহর জয়পুর। এটা তিন দিকে রুক্ষ পাহাড় ঘেরা রাজ্য । ১৭২৭ সালে রাজা দ্বিতীয় জয়সিং এই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জয়পুরকে পিংক সিটিও বলা হয়ে থাকে । ১৮৮৩ সালে ইংল্যান্ডের প্রিন্স এডওয়ার্ড এর আগমন উপলক্ষ্যে জয়পুরকে গোলাপী রং এ সাজানো হয়েছিল । সেই থেকে শহরকে এই নামে ডাকা হয় । এখনও শহরের পুরানো সবকিছুর রং গোলাপী । তিনদিকে পাহাড় ঘেরা এই শহরে দূর্গ, পাহাড় ,সুন্দর দালান বাগান ইত্যাদি রয়েছে । প্রিন্স এলবার্টের একরাত থাকার জন্য একটা বিলাশবহুল প্রাসাদের মত বানানো হয়েছিল তা এখন এলবার্ট হল হিসেবে সুপরিচিত আগ্রা থেকে আমরা জয়পুরে এলাম রাস্তার পাশেই খাড়া পাথুরে রুক্ষ পাহাড় । বড় বড় বোল্ডার দেখা যায় এর মধ্যে দিয়েই শহর বাড়ীঘর । জয়পুরের প্রসিদ্ধ জায়গা গুলো হলো সিটি প্যালেস, হওয়া মহল যন্তর মন্তর, আম্বার ফোর্ট প্যালেস, এলবার্ট হল ইত্যাদি ।

হাওড়া মহল, জয়পুর
সিটি প্যালেস জয়পুরের একটা অন্যতম প্রধান আকর্ষণ । টিকেট কেটে এর মধ্যে যেতে হয় । টুরিষ্ট বাসে করে আমরা এর চত্বরে এলাম । পরিচ্ছন্নতার মান ভাল না । অজস্র কবুতর এখানে ঘুরে বেড়ায় লোকজন এদেরকে খেতে দেয় । ঘোড়ার গাড়ী আছে এখানে । মানুষ এগুলোতে চড়ে বেড়াতে পারে আশেপাশে। রিক্সারও চল আছে । সিটি প্যালেস মোগল ও ট্র্যজিশনাল রাজস্থানী সংস্কৃতির মিশ্রনে সাজানো ও বানানো এর ভেতরে একটা মিউজিয়াম আছে । ক্যামেরা নিতে হলে আলাদা ভাবে টিকেট নিতে হয় । ভেতরে গেলে প্রাচীন রাজাদের ভোগ বিলাস সামগ্রী, কাপড় চোপড় ও অস্ত্রের সাজানো সম্ভার দেখা যায় । তাজমহল ও অন্যান্য মোগল স্থাপনার যতেœর চেয়ে এই সিটিপ্যালেস অনেক যতেœ রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় । ভালই লাগল মিউজিয়াম দেখতে ।
রাজস্থানে আমাদের দেখার অন্যতম জায়গা নির্বাচন করলাম আম্বার ফোর্ট প্যালেস, এটা ১৫৯২ সালে রাজা মানসিংহ নির্মান শুরু করেন এবং পরবর্তীতে রাজা প্রথম জয় সিং এর নির্মাণ শেষ করেন । চীনের প্রাচীরের মত চার পাশের পাহাড়ে প্রাচীর নির্মান করে এই আম্বার প্যালেসকে সুরক্ষিত করা হয়েছে । প্রাসাদে যেতে প্রথমে পাহাড়ের নীচে ব্যাটারী চালিত গাড়ীর ষ্ট্যান্ডে আসলাম । এখানে বিশাল দোকান আছে টুরিষ্টদের জন্য সব রকম জিনিষ পাওয়া যায় । বিশেষত সোনা ও রুপার মিনা করা গয়না,শাড়ী,জুতা,পিতল কাসার জিনিষপত্র সবই পাওয়া যায় । তবে দাম শহরের সাধারণ দোকান থেকে বেশী ।

অম্বর প্যালেস, জয়পুর
ব্যাটারী চালিত জীপে করে আমরা পাহাড় বেয়ে উঠতে লাগলাম বেশ খাড়া পাহাড়ী রাস্তা জীপগুলো কেমন যেন একেবেকে উঠে যায় । এ রাস্তায় রাজারা হাতীতে করে প্রাসাদে যেতেন । পাহাড়ের উপর উঠে নীচের শহরের ছবি তুললাম । চারপাশে চীনের প্রাচীরের মত মাঝে মধ্যে প্রহরীর থাকার ব্যবস্থা । পাহাড়ের চড়াই উৎরাই এর মধ্যে দিয়ে প্রাচীর গুলো বানানো হয়েছে বেশ মজবুত করে । প্রাসাদে ঢুকতে টিকেট লাগে, গাইড নিয়ে গেলে ভাল সব কিছু সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেয় । টিকেট করে ভিতরে ঢুকে পড়লাম । এর ভেতরের সব কিছুতে মোগল ও হিন্দু সংস্কৃতির মিলিত সৌন্দর্যের প্রকাশ দেখা যায় ।
সম্রাট আকবরের স্ত্রী জুদা বাই এর রাজ্য এই জয়পুর । আকবর তার স্ত্রীর জন্য এখানে মহল বানিয়ে দিয়েছিলেন । ভেতরে ঢুকেই খোলা চত্ত্বর, এখানে রাজা তার সভাসদ নিয়ে বসতেন । ছবি তোলা হচ্ছে একের পর এক । চত্ত্বরের পুরু দেয়াল ঘেরা জায়গায় দেয়ালে বসে দুরের পাহাড় ও দুর্গ প্রাচীর এর ছবি তুলছে অনেকে। গোটা জয়পুর এখান থেকে দেখা যায় । গরম অত্যধিক সময় কম আমরা অন্তপুরের দিকে চললাম । অনেক গুলো সিড়ি পার হয়ে উঠতে হয় অন্তপুরে । এখানে শীষ মহল আছে । মহিলাদের মহল সব কিছুতে আয়না লাগানো এত নিখুত ভাবে লাগানো যে একটা আলো জ্বালাতে হাজার হাজার ছোট ছোট আয়নাতে তার প্রতিফলন দেখা যায় । গাইড একটা ম্যাচের কাঠি জ্বালাতেই সব গুলো আয়নাতে এর আলো দেখা গেল । এখন শীষ মহলের ভেতরে ঢোকার ব্যবস্থা নেই মেরামত কাজ চলছে । আগ্রা ফোর্টের আংগুর বাগানের মত এই শীষ মহলের সামনেও বাগান আছে তবে গাছপালা নতুন ভাবে লাগানো হচ্ছে । রাজার অন্যান্য রাণীদের থাকার জায়গায় গেলাম । মহিলারা গল্প করার জন্য সুন্দর আয়োজন করা আছে । গোসল ও ঠান্ডা বাতাসের জন্য মেঝের নীচে দিয়ে পানি প্রবাহের ব্যবস্থা আছে । আজ থেকে কয়েকশ বছর আগেও মানুষ তার আনন্দের ব্যবস্থা পাহাড়ের চুড়ার উপর নিয়ে গিয়েছিল । রাজা বাদশাদের কাজকর্মই অন্যরকম । এভাবে ঘুরে ঘুরে অন্যান্য মহল দেখলাম । কোথাও ঢালু কোথাও উৎরাই পার হয়ে ফেরার পালা । ফিরতি পথে হকাররা বিভিন্ন ডিজাইনের কাচের চুড়ি বিক্রি করছে । মহিলারা থেমে গিয়ে কাচের চুড়ি কিনতে লেগে গেল । দাম বেশ হাকাচ্ছে, বুদ্ধি বিবেচনা করে না কিনলে ঠকার সম্ভাবনা আছে । সন্ধা হয় হয় আমরা আম্বার প্যালেস থেকে বাইরে এলাম । এরপর আমরা দিল্লীর পথে জয়পুর ছেড়ে যাব । জয়পুরে দুটো দিন ভালভাবেই কেটে গেল ।

কুতুব মিনার,দিল্লী
রাতে দিল্লীতে ফিরে হোটেলে বিশ্রাম নিলাম পরদিন সকালে দিল্লীর কুতুব মিনার দেখতে বের হলাম। ভারতের স্বাধীনতা দিবসে সকাল বেলা রেড ফোর্ট এলাকায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান চলছিল । অনেক গুলো রাস্তাতে যান চলাচলের নিষেধ ছিল । আমরা কুতুব মিনার দেখতে এলাম । নয়া দিল্লী থেকে প্রায় ১৭ কিমি দক্ষিণে কুতুব মিনার । ৮০০ বছরের পুরানো ২৩৪ ফুট উচু এ পাঁচতালা মিনারটির নির্মাতা কুতবুদ্দীন আইবেক । ভারতের প্রাচীনতম মুসলমান স্থাপত্যের নির্দশন হিসেবে কুতুব মিনার বিখ্যাত । মিনারের গায়ে কোরানের বাণী অলংকৃত। এর ভিতরের দিকের ও ৩৭৬ টি ধাপের ঘোড়ানো সিঁড়ি বেয়ে মিনারটির শীর্ষে আগে উঠতে পারা যেত এখন তা বন্ধ আছে । পাশেই রয়েছে ৫ শতকের একটি লৌহ স্তম্ভ । ২৪ ফুট উচু স্তম্ভটি এখনও নতুন বলে মনে হবে । আমাদের বাস টিকেট কাউন্টারের পাশে বাস ষ্ট্যান্ডে এসে থামল । টিকেট করে ঢুকতে হয় । ভারতীয়দের জন্য একদাম বিদেশীদের জন্য আলাদা দামে টিকেটের ব্যবস্থা । গেইটে চেক করে ভিতরে ঢুকার অনুমতি দেয় । ভেতরে সুন্দর রাস্তা বানানো আছে । এটা একটা কমপ্লেক্সের মত । অনেক স্থাপনা ও বাড়ীঘর কালের আবর্তে ভেংগে গেছে । এখানেও একই অবস্থা পর্যটক আছে আয় হচ্ছে কিন্ত রক্ষণাবেক্ষণ খাতে খরচ তেমন করা হয় বলে মনে হলোনা। মূল মিনার ৭৩ মিটার লম্বা এবং ১৫ মিটার ব্যাসের । উচ্চতার কারণে ছবি একটু দুরে থেকে তুলতে হয় । এটা ৫টা ভাগে ভাগ করা আছে এবং প্রত্যেক ভাগে একটা বেলকনি আছে । সিড়ি দিয়ে উঠা যেত তবে আমরা যখন গেলাম তখন বন্ধ ছিল । এটা লাল বেলে পাথরে তৈরী । তিন তালা পর্যন্ত একই রকম, চতুর্থ ভাগ মার্বেল এবং তার উপরের অংশ বেলে পাথরে বানানো । ১৩৬৮ সালে এর নির্মান কাজ শেষ হয় । কুতুবউদ্দিন আইবেক এটা বানানো শুরু করলেও শেষ করতে পারেন নি । পরবর্তীতে তার বংশধররা ২ তালা থেকে বাকী অংশ শেষ করে । এখন টাওয়ারটা একটু হেলে আছে এবং এর উপর উঠা এখন আর সম্ভব না বিপজ্জনক । কালের সাক্ষী হয়ে এই মিনার দাড়িয়ে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী। কুরানের আয়াত ও অনেক ক্যালিগ্রাফি আছে এই মিনারের চার পাশে। অপূর্ব সুন্দর কাজ । কমপ্লেক্সের অন্যান্য ভবন ভেংগে গেছে । গ্রীক সভ্যতার ধ্বংসাবশেষ এর মত মাঝে মাঝে লোহার থাম দেয়াল ,কিছু সিড়ি ২/৩ টা ভাংগা কক্ষ আছে । বিশাল এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখলাম ছবি তুললাম কয়েকটা। এটা আসলে ভারতে হিন্দু রাজাদের পরাজয় ও মুসলমানদের বিজয়ের চিহ্ন বহন করছে । তাই স্বাধীন ভারত এটাকে গুরুত্ব দিতে তেমন আগ্রহী না । ইতিহাসের পট বদলালে গুরুত্ব ও সাথে সাথে বদলে যায় । তবুও কালের স্বাক্ষী দাড়িয়ে জানান দেয় তার অস্তিত্বকে ।

ইন্ডিয়া গেইট , দিল্লী
এরপর আমরা ইন্ডিয়া গেইট দেখতে গেলাম, স্বাধীনতা দিবসে বহু মানুষের সমাগম হয়েছে । কিংস রোডের পূর্ব প্রান্তে এ তোরণটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত প্রায় ৯০ হাজার ভারতীয় যোদ্ধাদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত । গরম পড়েছে বেশ, হেটে হেটে গেইটের কাছাকাছি গেলাম, কয়েকটা ছবি তুলব বলে । আইফেল টাওয়ার যেমন প্যারিসের তেমনি এই গেইট ও দিল্লীর স্মৃতি ধরে রাখতে সাহায্য করে পর্যটকদের । এটাকে ইন্ডিয়া গেট ও বলা হয় । এটার কাছেই রাজপথ এবং অনতিদুরে রাষ্ট্রপতি ভবন । ইন্ডিয়া গেইট এর আশে পাশে সবুজ ঘাসের মাঠগুলোকে সুন্দর ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় । অনেক পর্যটক এসে ঘুরে ঘুরে দেখছে । ইন্ডিয়া গেইটটা ৪২ মিটার উঁচু পাথরের তোরণ এটাতে ৮৫,০০০ ভারতীয় সৈন্যের নাম আছে যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, ১৯১৯ সালের আফগান যুদ্ধ ও উত্তর পশ্চিম ফ্রন্টিয়ার অপারেশনে প্রাণ হারিয়েছিল । এলাকার বিশালতা বেশ উপভোগ করলাম । ভারত ভ্রমন প্রায় শেষের দিকে । হোটেল থেকে সব জিনিষপত্র নিয়েই কুতুবমিনার থেকে যাত্রা করে বেরিয়েছি । বিকেলে ট্রেন দিল্লি রেল ষ্টেশনে সময়মত চলে এলাম । কলকাতার দিকে যাত্রা এবার । দিল্লীর পাঠ শেষ করে কলকাতার পথে রওয়ানা হলাম রাজধানী এক্সপ্রেসে ।

আবার কলকাতা

দিল্লী থেকে ছেড়ে যাওয়া রাজধানী এক্সপ্রেস ট্রেনটা এবার হাওড়া ষ্টেশনে যাবে । আগেরবার শিয়ালদা থেকে দিল্লী এসেছিলাম। সার্ভিস মোটামুটি একই রকম তবে যাওয়ার পথের সার্ভিস ভাল লেগেছিল । হাওড়া ষ্টেশনও বিশাল, কুলি নিলাম । ট্যাক্সি ষ্ট্যান্ডে এসে ১৫০ রুপি দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে হোটেলে এলাম। আগেই রুম বুকিং ছিল । ২ টার দিকে রুমে এসে আবার মার্কেটিং এ বের হলাম । টাইটান এর শোরুম থেকে হাত ঘড়ি কিনলাম। পার্ক ষ্টীট এর ফার্টফুডের দোকানে সোয়ারমা খেলাম । বেশ মজা। ভাল ভাল দোকানের কিছু শাড়ী কেনা হলো । দ্রুত সন্ধ্যা হয়ে এলো টেরই পেলাম না । রাতে কলকাতা নিউমার্কেটে গেলাম । এর নীচে আন্ডার গ্রাউন্ড মার্কেট থেকে কিছু কেনাকাটি হলো । পরদিন ঢাকা ফেরার পালা । ফিরে আসার দিন ট্যাক্সিতে করে নেতাজী সুভাস চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এলাম । তেমন আহামরি কিছুনা । সাদামাটা বিমান বন্দর । আমাদের বিমান বন্দর তার থেকে অনেক সরগরম মনে হলো । বাংলাদেশ বিমানেই দেশে ফিরে যাব। ভেতরে বসার জন্য প্লাষ্টিকের উন্নতমানের চেয়ার। এসি চলছিল তবুও কিছুটা গরম লাগছিল । ডিউটি ফ্রি শপে গিয়ে চকলেট কিনে ভারতীয় রুপীগুলো শেষ করে দিলাম । প্লেন একটু লেট হওয়াতে বেশ কিছুক্ষণ লাউঞ্জে বসে থাকতে হলো । তারপর যথারীতি ইমিগ্রেশন শেষ করে বিমানে উঠলাম । বিমান কলকাতা ছেড়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে উড়াল দিল । ভারতের দিনগুলো স্মৃতিপটে গেথে নিয়ে দেশের দিকে মন ফিরালাম । এটাই আমার জন্মভূমি । আমার প্রিয় বাংলাদেশ ।

৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×