somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আফ্রিকার এক দেশে

০৭ ই মে, ২০১৩ দুপুর ২:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পশ্চিম আফ্রিকার আইভরি কোস্টের আবিদজান শহরে এক বছরের দিন রাত্রি যাপন করেছিলাম । দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে, সুদুর আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে এই দেশে অনেক স্মৃতি, আনন্দ ও বেদনার সময় পার করেছি।কত মানুষ, নানা শহর, গ্রাম - জনপদ দেখেছি তখন।বার বার মনে পরে সেসব কথা। আবিদজানকে আফ্রিকার প্যারিস বলে। আসলেই উপনিবেশিক ফরাসীরা তাদের প্রিয় রাজধানীর আদলেই এই শহরটাকে সাজিয়ে ছিল।আজস্র লেগুণের ছড়াছড়ি পুরো আবিদজান জুড়ে । বড় দুটো ব্রিজ শহরটাকে একসাথে যেন বেধে রেখেছে ।ব্রিজ গুলোর নীচে শান্ত লেগুণের কাল পানি।সাগরের সাথে মিতালী থাকায় এই পানি লবনাক্ত। প্রচুর মাছ আছে এসব লেগুনে।

বুলেভারড সাঁ জারমেইন এর পাশে জোন ক্যাতার বা জোন চার এলাকায় কোন এক অলস দুপুরে আলোর বন্যা ছড়ানো নীল আকাশের সুরযের নিচে দাড়িয়ে লেগুন দেখলে কত কিছুই না দেখা যাবে। দূরে ছোট্ট কালো রঙের ডিঙ্গিতে একলা বসে মাছ ধরছে কালো এক মানুষ। কালো পানি, ডিঙ্গি আর জেলে যেন একাকার হয়ে গেছে দূর নীলিমার সাথে। এ রকম মাছ ধরছে দূরে দূরে আরও অনেকে। পূর্ব পশ্চিমে বয়ে যাওয়া রাস্তার পাশেই লেগুন ।এর মাঝে কোথাও কোথাও দোকান, রেস্টুরেন্ট, পেইন্টিং শপ কিংবা ফার্নিচারের দোকান।পেশি বহুল সুঠাম দেহের কারিগরেরা একমনে উদম দেহে কাজ করে যাচ্ছে।ওরা এত কাজ করে তবুও অভাব কেন যেন ওদের পিছু ছাড়ে না ।

দূরে জেলে তার জাল একটু একটু করে গুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে । আর দূরে দিগন্তের কাছে আবিদজান বন্দরের পাশে তেল শোধনাগারের বড় বড় অবয়ব।দূরে নোঙর করা জাহাজও মাঝে মাঝে দেখা যায়।তপ্ত দুপুরে গাড়ি একটু কমই চলে এই রাস্তায়, তবে স্রোতের মত গাড়ির বহরও চলে এখান দিয়ে।রাস্তার দুপাশে ফুটপাথ নেই, রয়েছে মোটা বালির পাড়, গরমে বালিতে হাঁটতে গেলে পা দেবে যায়।গরিব মানুষগুলো এই বালিতেই খালি পায়ে দিব্যি হেঁটে যাচ্ছে। চেহারাতে কোন অভিযোগ নেই। বড় ভাল লাগে এই শানত মানুষগুলোকে। তবে প্রতিবাদে দ্রগবার দেশের এই মানুষ গুলো হয়ে উঠে হিংস্র, অবলীলায় মেরে ফেলে শত মানুষ ।
এক সময় তাপ কমে আসে, আটলান্টিক থেকে তখন বয়ে আসে শীতল বাতাস। স্থানীয়রা তখন নিজ ডেরায় ফিরে যায় ।যুবকেরা বারে গিয়ে জোরে আফ্রিকার গান ছেড়ে বিয়ারের বোতল খুলে বসে।আমরা এই সময় হাঁটতে বের হতাম আশেপাশের এলাকায়।সন্ধ্যার সময় আজানও শোনা যেত প্রায় সময়। তখন আমাদের ঘরে ফেরার পালা। সারারাত আশেপাশের কোকো ফ্যাক্টরি গুলতে কাজ চলত ।বড় বড় ট্রাকে করে কোকো এসে জমা হোতো অয়্যারহাউজে। সকালের বাতাস তাই ভারী হয়ে থাকতো কোকোর মিষ্টি মত ঘ্রানের কুয়াশাতে।এই গন্ধ যেন এক জায়গাতে জমা হয়ে আছে । আবহাওয়া তাই গুমট মনে হতো ।
আবিদজানের বহু সকাল এভাবেই কেটে গেছে। পরে যখন সাগর পারের সাইদা বিচ এলাকাতে চলে এলাম তখন পরিবেশটা একটু অন্য রকম হল।


সলিব্রা ব্রুয়ারি মোড়


প্লাতুর ব্যাস্ত সড়ক

ইবরি লেগুন , অনেক গুলো পেনিন সুলা ও দ্বীপ নিয়ে আবিদজান শহর । দুইটা বড় এবং বিখ্যাত ব্রিজ দিয়ে সংযুক্ত। একটা ফেলিক্স হুপহুত বুইনি ব্রিজ অন্যটা চার্লস দ্য গল ব্রিজ । এই দুটো ব্রিজ প্লাতু এবং থ্রেসভিলের মাঝামাঝি । চার্লস দ্য গল ব্রিজ দিয়ে এয়ারপোর্ট এর সাথে শহরের সংযোগকারী ভেলেরি জিসকারড বুলেভারড যাওয়া যায় । এটা শহরের একটা অন্যতম সড়ক ।১৯৫১ সালে শেষ হওয়া ভারিডি চ্যানেল আবিদজানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সী পোর্ট হিসেবে বিখ্যাত করেছে ।


আবিদজান শহর

আবিদজানে জীবন যাপনের জন্য শহরের নানা জায়গায় যেতে হতো । বেড়াতে যেতাম দু প্লাতু এলাকায় মাঝে মাঝে রিভেরাতেও যেতাম । থ্রেসভিলে যেতাম বাজার করতে, তাছাড়া কোকোডি, কমাছি, বাসাম ও কাছের বীচ এলাকায়। হোটেল নভতিল পারগোলা থেকে বের হয়ে ক্যাশ সেন্টারে আসতে পাঁচ মিনিট লাগতো ।বিশাল ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর, প্রায় সব জিনিষ এখানে পাওয়া যেত । পশ দোকান দাম একটু বেশী । যুদ্ধের সময় এই শপই ছিল আমাদের ভরসা।

৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×