আমার শুধু ইচ্ছে করে
পৃথিবীটা দেখব
দুচোখ ভোরে দেখে দেখে
অনুভবে মাখবো।
নানান মানুষ নানান দেশে
জীবন টেনে চলছে
অনেক মানুষ হাসিমুখে
দুঃখ গুলো ভুলছে।
জীবন যাপন মুখের ভাষা
পৃথক সবার জন্য
মানবতার মহৎ গুণে
সবাই হবে ধন্য।।
এশিয়া মহাদেশের মধ্যে চীন আয়তন ও জনসংখ্যার দিক থেকে একটা বিশাল দেশ। এর পূর্ব থেকে পশ্চিমে দূরত্ব পাঁচ হাজার কিলোমিটার আর উত্তর দক্ষিণে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার। ১৪ টা দেশের সাথে চীনের সীমান্ত আছে।চৌদ্দ হাজার পাঁচশত কিলোমিটার সমুদ্রসীমা আছে চীনের, এই সীমানাতে আছে পূর্ব চীন সাগর, পীত সাগর, কোরিয়া বে আর সাউথ চায়না সাগর।চীনের পতাকার লাল রঙ বিপ্লবের প্রেরণার স্মারক আর পাঁচটা তারা কম্যুনিস্ট সুশাসনেরসফলতার ফসল চীনা জনগনের ঐক্যের প্রতীক।
বাইশটা প্রদেশ, পাঁচটা স্বায়ত্ত শাসিত অঞ্চল এবং চারটা মিউনিসিপালিটি নিয়ে মেইন ল্যান্ড চায়না। প্রায় ৯.৬ মিলিয়ন বর্গ কিলো মিটার আয়তনের চীন ভূমির দিক থেকে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। আধুনিক বিশ্বের অগ্রগতির সাথে সাথে প্রাচীন সভ্যতার অনেক নিদর্শন নিয়ে চীনও দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে আধুনিকায়নের পথে। চীনের প্রায় সবকিছুই ভাল লেগেছে। আমাদের বেড়াতে যাওয়ার সময়টা বেশ ভাল ছিল, এপ্রিল মাসের শেষে না শীত না গরম। তাই সুন্দর সময় কাটাতে পেরেছিলাম চীনে। তিনটা এলাকাতে গিয়েছিলাম এবার, ইউনান প্রদেশের কুনমিং, রাজধানী শহর বেইজিং আর গুয়াংঝু প্রদেশের সেনঝেন শহরে।
এবারের ছুটিতে সপরিবারে চীন যাওয়ার প্লান করলাম। চাইলেই তো সব হয় না, প্রথমেই টিকেট বুকিং তারপর ভিসার চেষ্টা সবশেষে নানা ধরনের ভ্রমনের প্রস্তুতি নিতে লেগে গেলাম সবাই মিলে। ইন্টারনেটে ঢাকা থেকে কুন মিং এর ভাড়া তেইশ হাজার টাকা দেখে বেশ খুশি লাগল, তবে সব কাজ শেষ করে টিকেট কিনতে গিয়ে জানলাম একটু দেরি হয়ে গেছে তাই সেই দামে টিকেট কেনা যায়নি, গুনতে হল আরও বেশকিছু বাড়তি টাকা। ভিসার জন্যও টাকা লাগলো কিছু। অবশেষে চীন যাবার জন্য আমরা সবাই প্রস্তুত হলাম।
চায়না ইস্টার্নের বিমানে ঢাকা থেকে কুনমিং এর উদ্দেশে রওয়ানা হলাম। বিমান টেকঅফ করতে দেরী হল কিছুক্ষণ। দুই ঘণ্টার ফ্লাইট , রাত সাড়ে আটটা বেজে গেল কুনমিং পৌঁছাতে। নতুন এবং সুন্দর বিমান বন্দর। বিমান থেকে নেমে অনেক দূরে নানা বাঁক পেরিয়ে ইমিগ্রেশানের লাইনে দাঁড়ালাম।এক মহিলা ইমিগ্রেশান অফিসার দাঁড়িয়ে সবাইকে ঠিক ভাবে লাইন মেনে চলতে নির্দেশ দিচ্ছে। বেশ কড়া মহিলা। সব সিস্টেম আধুনিক, ইমিগ্রেশান অফিসার কম্পিউটারে তথ্য চেক করে তাড়াতাড়ি পাসপোর্টে সিল মেরে দিল । ইমিগ্রেশান পার হয়ে বাহিরে আসার পরে ব্যাগেজেরজন্য অপেক্ষা। এখানেও আধুনিক ব্যবস্থা, মনিটরে লোকেশান দেখাচ্ছে, সেখানে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ব্যাগ পেয়ে গেলাম।ব্যাগ নিয়ে বাহিরে এসে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী দেখলাম। তারা তাদের কার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের হোটেল ও খাবারের রেস্টুরেন্ট আছে কুনমিং শহরে। আমরা আগে থেকেই যোগাযোগ করে গিয়েছিলাম। এবার বাংলাদেশী হোটেলেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম।হোটেলে আসতে আসতে বেশ রাত হয়ে গেল।
কুনমিং বিমান বন্দরে ভেতরে
বিমান বন্দরের কাছেই আমাদের হোটেল।আগে বিমান বন্দর শহরের কাছে ছিল, তাই বাংলাদেশীদের হোটেলগুলো কুনমিং শহরেই ছিল, এখন নতুন বিমানবন্দর শহর থেকে বেশ দূরে, তাই নতুন এলাকাতে এই হোটেল কেবলমাত্র চালু হয়েছে। এলাকাটা নতুনভাবে সাজানো হচ্ছে।এখানে একটাই সমস্যা তা হল মূল শহর থেকে বেশ দূরে এই অঞ্চল। হোটেলে পৌঁছাতে রাত এগারটা বেজে গেল। বেশ ঠাণ্ডা পড়ছে, চীনের শীতকাল শেষ হলেও আমাদের জন্য বে ঠাণ্ডা আবহাওয়া। রাতে খেয়ে দেয়ে পরদিন স্টোন ফরেস্ট ও জিওজিয়াং কেইভ যাওয়ার প্ল্যান করলাম। সারা দিনই থাকতে হবে তাই একটা মাইক্রো নিলাম। চাইনিজ ড্রাই ভার বাংলাদেশীদের সাথে থাকতে থাকতে এখন বাংলা বলতে পারে। সবকিছু সেট করে বিশ্রাম, বেশ সকালে উঠে নাস্তা সেরেই রওয়ানা হতে হবে।
এয়ারপোর্ট থেকে শহরের দিকে
সকাল ন’টার সময় রওয়ানা হলাম জিওজিয়াং কেইভের দিকে। আগে একটু কুন মিং শহরে যেতে হবে। বেশ দুরের পথ, আমাদেরকে বেইজিং যাওয়ার টিকেট কিনতে হবে। কয়েকদিন আগে না কিনলে টিকেট পাওয়া যায় না, শহরের একটা ট্রাভেল এজেন্টের অফিসে গেলাম, বাহিরে পারকিং ফি দিয়ে গাড়ি রেখে ভেতরে গেলাম। কাউন্টারে পাসপোর্টের কপি জমা দিয়ে টিকেট করলাম। সবই কম্পিউটারে, এরা কিছু ফি নেয় এই সার্ভিসের জন্য। ভাগ্য ভাল, চার জনের একটা কুপে পেলাম।কাজ শেষে আবার রওয়ানা হলাম। শহরে কিছুটা ট্রাফিক জ্যাম আছে, ভালই লাগল প্রথমবারের মত একনজর দেখে।
শহর ছেড়ে চীনদেশের জনপদ দেখতে দেখতে চলছি। একটু দূরে পাহাড় তার পাশ দিয়ে বিশাল রাস্তা, প্রায় এক ঘণ্টা পর ড্রাইভার একটা ফুয়েল স্টেশনে থামল। আমরাও নেমে একটু হাত পা ছাড়িয়ে নিলাম। এখানে ছোট সপ আছে একটা সেখান থেকে বাচ্চারা আইসক্রিম কিনল, তারপর আবার যাত্রা শুরু।যেতে যেতে এক্সপ্রেস ওয়ের নিচে কুনমিং থেকে বেইজিং যাওয়ার রেল লাইন দেখলাম। এরপর আমরা টানেলের ভেতর ঢুকে গেলাম।পাহাড়ের বুক চিরে টানেল চলে গেছে বেশ লম্বা টানেল আমরা পাহাড়ের আরেক পাশে চলে এলাম। এদিকেও পাশে পাহাড়ের সারি। সোনালি রোদ, সহনীয় ঠাণ্ডা পরিস্কার হাওয়া, নীল আকাশ আর চীনের গ্রামের দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছি।
জিওজিয়াং কেইভের এন্ট্রি