somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃষ্ণ সাগর থেকে মারমারা সাগরে- ইস্তাম্বুল - ১

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
নোবেল বিজয়ী তুর্কী লেখক ওরহান পামুকের ইস্তাম্বুল বইতে ইস্তাম্বুল শহরের প্রাচীন কালের চেহারা এবং কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্য নিয়ে অনেক দুঃখের কথা জেনেছি। সেই ইস্তাম্বুল শহর মনের ভেতর তার হারানো অতীতের দুঃখ লুকিয়ে রেখে এখন আবার নতুন ভাবে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। এখন ইস্তাম্বুলে গেলে অতীতের হারানো নিদর্শনের পাশাপাশি প্রাচুর্যপূর্ণ বর্তমান চোখে পড়বে। আমার কাছে ইস্তাম্বুলকে একটা আন্তরিক আর সুন্দর শহর বলে মনে হয়েছে। এই শহরের মানুষ, নীল আকাশ, বসফরাস আর মারমারা সাগরের গাঢ় নীল জলের অপুর্ব দৃশ্য যে কোন মানুষের মনকে উতলা করবেই। এখানকার মানুষের উদারতা যেন বেশ ভালভাবে অনুভব করা যায়। সপরিবারে মনের আনন্দে এরকম একটা দেশে যাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।
তুরস্কে বেড়ানোর শখ অনেক আগে থেকেই ছিল, সময় আর সুযোগের অভাবে তা এতদিন হয়ে উঠেনি। তাই এবার যখন সুযোগ পেলাম তখনই আর দেরী না করে ইস্তাম্বুলে বেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।আমি ইস্তাম্বুলে যাচ্ছি জেনে তুরস্কের এক পুলিস অফিসার আমাকে তাঁর নাম ঠিকানা লিখা একটা চিঠি দিল, কোথাও যদি কোন সমস্যাতে পড়ি তাহলে এটা দেখাতে বলল। তাঁর আন্তরিকতা দেখে বেশ ভাল লাগল। সাউথ সুদানের জুবা থেকে টার্কিশ এয়ারের বিমান উড়ে না তাই উগান্ডার এন্টেবি থেকে ইস্তাম্বুল হয়ে দেশে ফেরার প্ল্যান করলাম।
ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে নেমে প্রথমে ইমিগ্রেশনে গেলাম। অফিসাররা তেমন ইংরেজিবোঝে না, বাংলাদেশীদের জন্য অনএরাইভাল ভিসার ব্যবস্থা আছে। কাউন্টারে পুলিস অফিসার পাসপোর্টে সিল মেরে দিল।প্রথমে লাগেজ জমা দিলাম। ২৪ ঘণ্টার জন্য ১৮ টার্কিশ লিরা, এর বেশী এক ঘন্টার জন্য হলেও আরও ১৮ টার্কিশ লিরা লাগে। লাগেজ জমা দিয়ে বাহিরে এলাম। সুন্দর পরিচ্ছন্ন এলাকা, সামনেই হাভাতাস কোম্পানির সুন্দর চকচকে বাস দাঁড়িয়ে আছে। এই বাস সরাসরি তাক্সিম স্কোয়ারে যায়। ভাড়া দশ টার্কিশ লিরা।
এক ঘণ্টা সময় লাগে তাক্সিম স্কোয়ার যেতে, পথে শহরের নতুন এ পুরাতন স্থাপত্যের দৃশ্য, বসফরাস প্রণালী দেখতে দেখতে চললাম। একটু বৃষ্টি হচ্ছিল, আকাশ মেঘলা, আশা করছিলাম ঝকঝকে সূর্যের আলো। বাহিরে ১৪/১৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা, জ্যাকেট পরে নিয়েছি তাই কোন সমস্যা নেই।

তাক্সিম স্কোয়ার
তাক্সিম স্কোয়ার বিশাল এলাকা নিয়ে। মাঝে গোল চত্তর , সেখানে মাটির নীচে মেট্রো স্টেশন।টার্কিশ ডিলাইট মিষ্টি, ঘরে বানানো চকলেট, টার্কির কাবাব ও অন্যান্য খাবারের অনেক দোকান আছে।


তাক্সিম স্কোয়ার


ফলের, ফুলের দোকান , ব্রান্ডের জিনিষপত্রের দোকান সবই আছে এখানে। এটা বেশ পস এলাকা।এখানে একটা ছোট ট্রাম চলে, পর্যটকেরা সেই ট্রামে চড়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখতে ও ছবি তুলতে পারে। ঘুরতে ঘুরতে দুপুর হয়ে গেল খাবার সময়, তুরস্কে এসেছি তাই তুর্কী খাবার খেতে হবে, একটা বড় এবং বেশ চালু রেস্টুরেন্টে গেলাম। অনেক খাবার সাজানো আছে, আরও বানানো হচ্ছে, মানুষ আসছে অর্ডার দিচ্ছে। বেশ ব্যস্ত পরিবেশ।আমরা দুজন দু রকমের মেইন ডিশের অর্ডার দিলাম সাথে কোমল পানীয়। ভেতরে বসতে গিয়ে দেখলাম ব্রেড ফ্রি, সাথে নানা ধরনের সালাদ ও ফ্রি। মজা করে খেয়ে আবার ঘুরতে বের হলাম।


লোভনীয় তুর্কী খাবারের দোকান- তাক্সিম, ইস্তাম্বুল
তাক্সিম স্কোয়ারে বেশ বড় একটা স্টারবাক কফির আউটলেট আছে । এখানে নানা স্বাদের কফি এবং এর সাথে সম্পর্কিত জিনিসপত্র বিক্রি হয়। বসার ব্যবস্থা ও বেশ ভাল, আমরা তৃপ্তির সাথে কফি খেলাম।
এবার ইস্তাম্বুলে আসার আগে কয়েকটা জায়গা ঘুরে দেখার প্ল্যান করেছিলাম।থাকার জায়গা সুলতান আহমেতএলাকা, এটা ইস্তাম্বুলের বেশ পুরানো এবং ইউরোপীয় অংশে। এখান থেকে মারমারা সাগর তুর্কী ভাষায় মারমারা দেনিজি এবং বসফরাস প্রণালী দেখা যায়। বসফরাস প্রণালীকৃষ্ণ সাগর, তুর্কী ভাষায় কারা দেনিয এবং মারমারা সাগরের সাথে যুক্ত করেছে। মারমারা সাগর থেকে অ্যাজিয়ান সাগর হয়ে ভূমধ্যসাগরের যাওয়ার বিখ্যাত জলপথ। এই পথের কারনেই তুরস্ক তথা ইস্তাম্বুল কৌশলগত দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু ইস্তাম্বুলে এসেছি তাই কৃষ্ণ সাগর দেখে যাওয়ার ইচ্ছা হল। ইস্তাম্বুলের পর্যটন এলাকা থেকে একটু দূরে বলে অল্প সময় নিয়ে যারা ইস্তাম্বুলে বেড়াতে আসে তারা সাধারণত কৃষ্ণ সাগর এলাকায় যায় না। তবে বেশ সহজে এখানে আশা যায়। ইন্টারনেট থেকে যাবার রুট এবং কিভাবে যাব তা জেনে নিলাম।


হাচি ওসমান মেট্রো স্টেশন
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×