somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বসফরাসের পাশ দিয়ে কৃষ্ণ সাগর- কিলিয়স, ইস্তাম্বুল -২

২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


তাক্সিম স্কোয়ার থেকে মেট্রোতে করে হাচি ওসমান স্টেশনে আসলাম। এটা এই লাইনের শেষ স্টেশন। স্টেশনে এসে ট্রেনে উঠার জন্য তিন লিরা দিয়ে টোকেন নিতে হয়, ট্রাভেল কার্ড থাকলে দুই লিরা লাগে। মেশিনে কয়েন কিংবা ৫, ১০ টাকার নোট দিয়ে টিকেট করতে হয়। আমার কাছে কয়েন নেই, এক তুর্কী আমাকে বলল তাকে দুই লিরা দিতে, আমি তাকে টাকা দিলে সে আমাকে গেইট পার করে দিল তার কার্ড দিয়ে।
আমাকে বলল কোথায় যাবে, বললাম কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে, সাগর দেখতে যাব।
চেনা কেউ সেখানে আছে কিনা জানতে চাইল
বললাম, না কেউ নেই
বলল শহর থেকে দূরে মানুষেরা ইংরেজি ভাষা বুঝবে না, তোমার সমস্যা হতে পারে।তোমার এই ক্রেইজি শখ হল কি করে?
তাকে বললাম, তুমি কৃষ্ণ সাগর দেখেছ?
সেখানে আমার কেউ থাকে না তাই যাওয়া হয়নি।
আমার জন্য শুভ কামনা করে আমাকে বিদায় দিল।
হাচি ওসমান স্টেশনে নেমে মাটির উপর এলাম, অল্প অল্প বৃষ্টি ছিল তখন ও।বাস স্টেশনে কয়েকটা বাস দাঁড়িয়ে ছিল, ১৫১ নাম্বার বাস ছিল না, অফিসে গিয়ে একজন কন্ডাক্টটারকে বুঝালাম আমি কিলিয়স যাব।
- নো প্রব্লেম
- টিকেট কোথায় পাব? টিকেট কাউন্টার দেখছি না
- এবারেও, নো প্রব্লেম
১৫১ নাম্বার বাস এসে গেল, দেখি সেই লোকই ড্রাইভার,আমাকে বাসে আসতে বলল। বাসে উঠার পথে একজন যাত্রীকে আমার জন্য তার কার্ড পাঞ্চ করে দিতে বলল। আমাকে বলল তাকে ২ টার্কিশ লিরা দিতে। আমি ৫ লিরার নোট দিলাম। টার কাছে তিন লিরা ছিল না , দুই লিরা দিল,আমি বললাম আর লাগবে না।একটু পরে সে বাকী টাকা ফেরত দিয়ে দিল, আমি ভাষা না বুঝলেও এদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হলাম।


বাসে করে বসফরাসের পাশ দিয়ে
বাস কখনো বসফরাসের পাশ দিয়ে, কখনো পাহাড়ের উপর দিয়ে যাচ্ছে,উপর থেকে নীচে ইস্তাম্বুল ও সাগরের নীল দৃশ্য অপুর্ব লাগছিল, প্রথমে একটু বৃষ্টি ও আকাশ মেঘলা ছিল আস্তে আস্তে মেঘ কেটে সূর্য উঁকি দিচ্ছে, আর আমার মনটা প্রফুল্ল হয়ে উঠছে। তুরস্ক দেখতে এসেছি, সোনালি আলোতে সেটা দেখলে মনটা ভরে উঠে।


কিলিয়স সেন্টার, ইস্তাম্বুল


প্রায় তিরিশটা পয়েন্টে বাস থামল, মাঝে মাঝে কেউ উঠছে কেউ নামছে। এক ঘণ্টার পথ পেরিয়ে আমি সারিয়ার জেলার কিলিয়স মারকেজ বা কিলিয়স সেন্টারে নেমে গেলাম। কিলিয়স একটা ছোট সুন্দর শান্ত জনপদ, আকাশে বিকেলের সোনালি আলো, আবহাওয়া একটু ঠাণ্ডা। হালকা পাহাড়ি এলাকা এই অঞ্চল। আসার পথে এই ৩৫ কিলোমিটার এলাকা দেখতে দেখতে এসেছি। এটা এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। পাশেই একটা বেশ বড় মসজিদ, সারা ইস্তাম্বুলে এ ধরনের অনেক মসজিদ আছে। এখানে একটা পার্কের মধ্যে বেশ সুন্দর মনুমেন্ট পাশে তুরস্কের পতাকা উড়ছে। আসে পাশে বেশ কিছু দোকানপাট। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রায় সব জিনিষ সেখানে পাওয়া যায়। আমি কয়েক বোতল পানি কিছু ফল কিনলাম খাবার জন্য।



কৃষ্ণ সাগর- কিলিয়স, ইস্তাম্বুল
আমাকে কৃষ্ণ সাগরে যাবার রাস্তা দেখিয়ে দিল এক যাত্রী। বাস স্টপেজ থেকে সোজা রাস্তা চলে গেছে কৃষ্ণ সাগরের পাড়ে। এটা বেশ চড়াই পথ, প্রায় দশ মিনিট হাঁটার পর একটা হোটেল দেখলাম। সাগর দেখতে এসে হোটেল দেখতে ইচ্ছা করছিল না। তাই হোটেলের একজন কর্মীকে সাগর কোথায় জিজ্ঞাসা করলাম। বেশ আন্তরিক মনে হল লোকটাকে। আমাকে বলল এখানেই এবং ইশারায় নীচের রাস্তা দেখিয়ে দিল। ঘোরানো প্যাঁচানো সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে কৃষ্ণ সাগর দেখতে পেলাম। বিশাল সাগর আর পাহাড়ের কাছাকাছি এসে মনটা ভাল হয়ে গেল। এই সাথে প্রকৃতি ও যেন হেসে উঠল, সোনালি আলোর ডানা মেলে দিল সারা এলাকাতে। পর্যটকরা তুরস্কে এপ্রিলেই আশা শুরু করে, কৃষ্ণ সাগর এলাকার রিসোর্টগুলো একটু ঠাণ্ডা বলে আরও কিছুদিন পর এগুলো ভরে উঠবে মানুষে। পাহাড় থেকে নেমে সাগরের পাড়ে গিয়ে কিছু ছবি তুললাম, শহর থেকে রাস্তা এসেছে সাগরের পাড়ে সে পথেই আশা যেত, রাস্তা চেনা ছিল না বলে আসতে পারিনি। এখানে বেশ কয়েকটা রেস্টুরেন্ট আছে, সামনেই বীচ, এখন পর্যটক নেই, তিনটি ঘোড়া নিয়ে মালিক অপেক্ষা করছে। পর্যটকরা এসব ঘোড়াতে চড়ে বীচে ঘুরে বেড়ায়।

কৃষ্ণ সাগর পাড়ে – কিলিয়স, ইস্তাম্বুল
প্রায় ঘণ্টাখানেক আশেপাশে এলাকা ঘুরে কৃষ্ণ সাগর দেখার শখ পূরণ করে সুলতান আহমেত এলাকার বুকিং দেয়া হোটেলে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলাম। একই পথে কিলিয়স বাস স্টপেজে এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করলাম কিছুক্ষণ। আমার সাথে আরও কয়েকজন যাত্রী অপেক্ষা করছিল। বাস চলে এলো কিছুক্ষণের মধ্যে, এক যাত্রী আমার জন্য তাঁর কার্ড পাঞ্চ করে দিল, আমি তাকে দুই টার্কিশ লিরা দিলাম। বিদেশী বলে সবাই আমাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত বলে মনে হল। তাদের আন্তরিক ব্যবহারে আনন্দ পেলাম, মনে হল বন্ধুদের মাঝেই আছি, তবে কেউই ইংরেজিতে কথা বলতে পাড়ে না। বিকেল হয়ে গেছে, সূর্যের আলো তখনো আছে, পাহাড়ি উঁচু নিচু পথে ফিরে চলছি হাচি ওসমান মেট্রো স্টেশনে। পাহাড়ের উপর থেকে বস ফরাস প্রণালীর দৃশ্য দেখতে বেশ লাগছিল। শেষ বিকেলে পৌঁছে গেলাম মেট্রো স্টেশনে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×