পানির আরেক নাম জীবন। এই গরমে হাঁসফাঁস করতে করতে একটু শান্তির জন্য পিপাসা মেটাতে আমরা পানি পান করি। নদীমাতৃক আমাদের বাংলাদেশের অনেক নদী এখন পানির অভাবে শীর্ণ হয়ে গেছে। সারা দেশজুড়ে অজস্র জলাধার এখন ভরাটের কবলে। আমাদের সময় এসেছে পানি নিয়ে চিন্তা করার। পৃথিবীর প্রায় দশ ভাগের এক ভাগের কাছাকাছি সুপেয় পানি আমাদের দেশে রয়েছে। আমাদের দেশের শতকরা প্রায় আশি ভাগ পানি আসে বৃষ্টি থেকে, সেজন্য আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি। তা না হলে নদীগুলো যেভাবে মরে যাচ্ছে তাতে আমরা মহা বিপদের মুখে পড়তাম। বৃষ্টি বেশী হলে বন্যা আর কম হলে খরা। এই দুটোই সমান ক্ষতিকর। আমরা পরিকল্পনার মাধ্যমে এই দুটো অবস্থাকেই আমাদের কাজে লাগাতে পারি।
আমাদের নদীগুলোকে দূষিত করছি আমারাই, প্লাস্টিক বর্জ্য, কেমিক্যাল ও নানান ধরনের দূষিত পদার্থ আমরা অপরিকল্পিত ভাবে ফেলে আমাদের প্রিয় নদীগুলোকে মেরে ফেলছি। এই নদীতে নৌকা ভ্রমন, যাতায়াত বাণিজ্য, নদীর মাছ সবই আমাদের জন্য ছিল সৌভাগ্যের। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তা বুঝতে পারছি না বা বুঝতে চাইছি না। পৃথিবীর বহু দেশে পানির অভাবে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, খাবার পানির জন্য মাইলের পর মাইল হেঁটে যেতে হয়, তাও পরিস্কার পানি পাওয়া যায় না। আর আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের মনের ভুলে কত পানি নষ্ট করছি।
বৃষ্টির পানিকে কিভাবে সারা বছর ধরে ব্যবহার করা যায় তা নিয়ে প্রতিনিয়ত গবেষণা চালিয়ে যেতে হবে। বন্যা মোকাবেলায় কিভাবে কাজ করা যায়, বন্যার পানিকে কিভাবে আটকে রেখে আমাদের কাজে ব্যবহার করা যায় তা এখন থেকেই ভাবতে হবে।আমাদের নদীগুলোকে আবার স্বচ্ছ সলিলা করার দায়িত্ব আমাদেরই। হুমায়ূন আহমেদ আইওয়া থাকার সময় সেখানকার নদীর দূষিত পানি দেখেছিলেন, তখন আমাদের নদীগুলো ছিল প্রবাহমান ও স্বচ্ছ। অনেক বছর পর তিনি আবার সেখানে বেড়াতে গিয়ে দেখেন নদীগুলো পরিস্কার পানি নিয়ে বয়ে চলছে। আর সে সময় আমাদের নদীগুলো দূষিত কালো পানিতে ভরে গেছে। আমাদেরকেই এই নদী বাঁচাতে এগিয়ে আসতেই হবে।
এখন আমাদের আগুনের ঘটনায় পানির উৎস খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। পানির নতুন নতুন উৎস বের করতে হবে। পানি পুনঃ ব্যবহার করার উদ্যোগ নিতে হবে। এগুলো নিয়ে চিন্তা চলমান রাখলে এক সময় তা বাস্তবে পরিণত করার চেষ্টা হবে। সিঙ্গাপুরের মত ছোট একটা দেশ তাদের নিজেদের জন্য পানি রিজার্ভায়ারে সংগ্রহ করে রাখে। তারা তাদের পানির জন্য মালয়েশিয়ার উপর নির্ভরশীল, কোন কারনে সমস্যা হলে সেটার মোকাবেলায় তারা তাদের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।
বৃষ্টির পানি কাজে লাগানো, বন্যার পানিকে নিয়ন্ত্রন ও ধরে রাখা, জলাধার ভরাট বন্ধ করে নতুন জলাধার তৈরি করা, নদী, পুকুর খাল বিলে আবার মাছ চাষের জোয়ার নিয়ে আসলে আমাদের এই সুন্দর মাতৃভূমি আবার আর ও সুন্দর সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলা দেশে পরিণত হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম তখন এই সুফল উপভোগ করবে।
আধুনিক জীবন যাপনের ফাঁকে একটু বিরতি নিয়ে আমরা কিছুটা সময় পার করতে পারি এই জল রাশির পাশে, কিংবা জলের বুকে নৌকায় বা হাউজ বোটে। আমাদের এই সুযোগ গুলো অবশ্যই কাজে লাগাতে হবে। দূষণ মুক্ত প্রবাহমান নদী, খাল বিল পুকুর ডোবা হাওর গুলো আবার আমাদের জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে উঠুক এটাই চাই।
পানির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হন, নদী জলাধার ভালবাসুন, নিজে ভালভাবে বাঁচুন, নদীকে বাঁচান।
ছবি নেট থেকে
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৪০