প্রত্যেকটা দিন যেভাবে শুরু হয়, সেভাবেই শেষ হয়না। কোন কোন দিন খুবই ব্যস্ত থাকতে হয়, কোন কোন দিন খুবই অলসভাবে কেটে যায়, কোন কোন দিন রোদের দেখা মেলে খুবই সকাল সকাল , কোন কোন দিন মেঘের মাঝে সূর্য হারিয়ে যায়, কোন কোন দিন ফুটপাতের নির্মম ব্যস্তবতা দেখেও পাশ ফিরিয়ে যেতে হয়, কোন কোন দিন পকেট থাকে খালি আবার কোন কোন দিন পকেট ভর্তি, কোন কোন দিন যায় খুব হাসি-ঠাট্টায় আবার কোন কোন দিন মুড অফ…!!
প্রতিদিন, অপূর্নতা থেকেই যায় । এমন কিছু অপূর্নতা থাকে,যেগুলো কখনও পূর্নতা পায় না । নীরবে মন বাক্সের এক কোণে পড়ে থাকে । কিছু কিছু সময় হঠাৎ করে উদয় হয় , সবকিছু ক্ষনিকের জন্যে এলেমেলো করে দিয়ে আবার এক কোণে গিয়ে পড়ে থাকে । মানুষের সবথেকে বড় প্লাস পয়েন্ট হল তারা কথা বলতে পারে এবং এই কথার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে পারে তার অনুভূতিগুলো, ব্যাখা করতে পারে যেমন স্বপ্ন তেমনি ভেঙেও দিতে পারে সেই স্বপ্ন, দিতে পারে মিথ্যা আশা- ভরসা, এলেমেলো করে দিতে পারে আরেকজনের সফলতার পথ । আরেকজনের কথা শোনার সময় আমাদের বিশ্বাস নামক এক অদৃশ্য জিনিস কাজ করে। বিশ্বাস এমন এক জিনিস যা আপনাকে যৌক্তিক চিন্তা করতে বাধা দেয় এবং কারন ছাড়াই অচেনা অজানা মানুষকে আপনার কাছের করে তোলে । প্রতিটা দিনই এই বিশ্বাস নামক অদৃশ্য জিনিসের সম্মুখীন হতে হয় । এই ধরুন, রিকশায় চড়ে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেলেন আপনি একা । সেখানে পৌছানোর পর রিকশা থেকে নেমে পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করেন । কিন্তু আপনি চাইলেই অস্বীকার করতে পারেন এবং আপনার গন্তব্যে পৌছানোর পর আপনি রিকশার চালককে বলতেই পারেন , আমি আপনার রিকশায় উঠিনি । রিকশা চালক যদি বলে , আমি নিজে আপনাকে নিয়ে এসেছি । আপনিও তাকে বলতে পারেন, স্বাক্ষী বা প্রমান দেখান যে ,আপনি তার রিকশায় উঠেছিলেন। কিছুক্ষন তর্ক বিতর্ক হবে কিন্তু রিকশা চালকের কিন্তু কিছুই করার নেই । ঠিক একইভাবে আপনাকে গন্তব্যে পৌছে দেবার পর, আপনি যখন পকেটে হাত দিয়ে টাকা বের করছেন। ঠিক সেই মুহুর্তে রিকশা চালক যদি বলেন যে, আপনাকে সে তার রিকশায় করে নিয়েই আসেনি তাই আপনার কাছ থেকে সে টাকা নিবেনা । আপনি একটু হলেও অবাক হবেন কিন্তু নিজের সুবিধা দেখে তর্কে যাবেন না । টাকাটা পকেটে ভরে আপনি কেটে পড়বেন,ওখান থেকে । কি বুঝলেন ?
আপনি আসলে স্বার্থবাদী বা স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের জায়গা থেকেই আপনি চিন্তা করবেন । কারন, ছোট বেলা থেকেই আপনাকে স্বার্থপর হবার জন্যেই প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। আপনি এখন পর্যন্ত যা যা করেছেন সব কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্যেই । পড়াশোনা, চাকুরী বা খাওয়াদাওয়া – সবকিছু আপনার স্বার্থেরই অংশ ।
আপনি আপনার স্বার্থের জন্যেই কথা বলেন । এই যেমন ধরুন, “মা, ক্ষুধা পাইছে, খেতে দাও” অথবা “আব্বা, মোবাইলে ব্যাল্যান্স নাই,টাকা দাও’’। এমনকি আপনি আরেকজনকে বিশ্বাসও করছেন আপনার স্বার্থের জন্যেই । ঐ রিকশা চালককেই ধরুন , আপনি পকেট থেকে টাকা বের করে তাকে তখনই দিচ্ছেন যখন সে আপনার বলা জায়গায় আপনাকে পৌছে দিচ্ছে, মানে আপনার স্বার্থসিদ্ধির পর । কিন্তু আপনার স্বার্থসিদ্ধি হবার আগেই যদি সে আপনাকে মাঝপথে নামিয়ে দেয় তাহলে আপনি ভুলেও তাকে টাকা দিতে যাবেন না। জাগতিক সকল পূর্নতা -অপূর্নতা ,আশা-ইচ্ছে,মায়া-মমতা-অনুভূতি সবকিছুই টিকে আছে এই স্বার্থের কারনে । নিঃস্বার্থভাবে হয় এমন কিছু আছে বলে আমার জানা নেই ! যৌক্তিকভাবে চিন্তা করলে, সবাই স্বার্থপর । সবাই তার স্বার্থ পূরণের জন্যেই আরেকজনের কাছাকাছি আসে, মিথ্যা আশা-ভরসা আর মিথ্যে স্বপ্ন দেখাতে শেখায় ,স্বার্থসিদ্ধি হলেই হারিয়ে যায় । কিন্তু, সবথেকে অবাক হবার মত জিনিস কি জানেন? আপনাকে যদি কেউ হুট করে জিজ্ঞেস করে, আপনি স্বার্থপর কিনা? আপনি নিঃসঙ্কোচে উত্তর দেবেন, “না,আমি নই’’। আবার যখন কেউ রেগে বলে, আপনি একজন স্বার্থপর । আপনার মস্তিষ্কের তার কেটে যায় । অবাক হলেও সত্য যে, আমরা সবাই স্বার্থপর। নিজের স্বার্থের জন্যেই সব কাজ করি কিন্তু প্রকাশ করতে চাইনা , আমরা যে স্বার্থপর…!!
তাই কেউ যদি বলে, keep calm and avoid selfish people. এর মানে হচ্ছে, হয় সে আপনার মৃত্যু কামনা করছে অথবা ঐ কথাটা বলার পিছনেও তার স্বার্থ কাজ করছে।। আমার তো সেটাই মনে হয়…!!!
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ৮:৫৯