somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথোপকথন

২৯ শে জুন, ২০১৭ রাত ১১:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আকাশটা অনেক মেঘলা । যার জন্যে চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেছে । হালকা বৃষ্টি পড়ছে । অর্ক, যাত্রী ছাউনীর নিচে বসে আছে । সে খুউব চিন্তিত আর একটু আগে তার সাথে যা ঘটেছে তা সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ।
এই যে শুনছেন ...
অর্ক একটু অবাক হল , তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখেও আশেপাশে ভাল করে দেখে নিয়ে , সেই মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে বলছেন?
- আর কাকে বলব ? আর তো কেউ নেই এখানে । আমি অভ্র আর আপনি ?
- আমি অর্ক ।
- অর্ক সাহেব , আপনি অতিরিক্ত চিন্তা করছেন । অবশ্য এই ফিলিংসটা আপনার জন্যে নতুন । মাত্র একঘন্টা হয়েছে তো এজন্য আপনার এমনটা মনে হচ্ছে ।
অর্ক-তার মানে আপনিও ...
অভ্র – জ্বী , আমিও ...
অর্ক- এখন কি করব ?
- ভাল প্রশ্ন । চলুন আপনাকে ইন্টারেস্টিং কিছু বলি ।
- উঠব এখান থেকে, বলছেন?
- উঠতে তো হবেই অর্ক সাহেব । নাহলে আপনার চিন্তা-ভাবনা বেড়েই যাবে ।
- কই যাব ?
- এই মোড়ের মাথায় একটা রেস্টুরেন্ট আছে । ওখানে গিয়ে বসি চলুন । এ সি রেস্টুরেন্ট ।
- মজা করছেন ?
- আহা ! বললাম তো মাত্র একঘন্টা হয়েছে আপনার আর আমার কয়েকবছর । তো আমার অভিজ্ঞতা একটু বেশি । আর ওখানে কেউ আমাদের ডিস্টার্ব করতে আসবেনা । আর মজার বিষয় আমাদের আর কাউকে ডিস্টার্ব করার যোগ্যতাও নেই ।
- হুমম...
অর্ক আর অভ্র হাটা শুরু করল ।
অভ্র – আচ্ছা , আপনার ফেসবুক আইডি’র পাসওয়ার্ড কেউ জানে?
অর্ক - আপনি খুব রশিক মানুষ বোধ হয়...
অভ্র - তা একটু আধটু । প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু পেলাম না ।
অর্ক – নাহ ।
অভ্র – আপনি একটু কম কথা বলেন ।
অর্ক – আপনি বেশি ।
হা হা । উচ্চস্বরে অভ্র হাসতে লাগল । অর্ক অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে । রেস্টুরেন্টে পৌছাল তারা । রেস্টুরেন্টে এখন লোকজন কম । রেস্টুরেন্ট-টা বেশ বড় । লাইটিইংও অনেক সুন্দর । কোনার দিকের একটা টেবিলে তারা দুজন বসে পড়ল ।
অভ্র – বলুন কি খাবেন ?
অর্ক – আবার মজা করছেন কেন ?
অভ্র – আচ্ছা , আপনি এত সিরিয়াস কেন ?
অর্ক – সিরিয়াস না । অনেক কিছু চলছে মাথার মধ্যে ...
অভ্র – কি করে হল আপনার এই অবস্থা ?
অর্ক – গাড়ী নিয়ে বের হয়েছিলাম আজ সকালে । গন্তব্য ঠিক করিনি । আমিই ড্রাইভ করছিলাম । কখন চোখ লেগে গিয়েছিল বুঝিনি । চোখ খুলে দেখি গাড়ীর চারপাশে পানি । সিট বেল্ট টাও বাধা । কি করব বুঝে উঠতে পারিনি ...
অভ্র – শুনেছি , পানিতে ডুবে মরলে নাকি জান্নাতে যায় । হা হাহা হাহাহা হা...
অর্ক – ওহ ... আপনি পারেনও । বাসার কাউকে কিছু বলে আসিনি । বাবা মা জানতে পারবে যখন বড্ড কষ্ট পাবে !!
অভ্র – আর সেজন্য আপনার এখন বাড়ী যাবার কোন দরকার নেই । লাশ দেখেছেন আপনার ?
অর্ক – নাহ । লোক জড় হয়েছিল অনেক । আমাকে গাড়ী থেকে বের করেছে কিনা কে জানে ?
অভ্র – বাদ দিন । এখন আপনি মুক্ত । নো টেনশন ...
অর্ক – আর আপনার গল্পটা কি ?
অভ্র – মার্ডার ।
অর্ক – মানে? কে করল ?
অভ্র – আমার এক খুব কাছের মানুষ ।
অর্ক – কীভাবে ?
অভ্র – ছবি তোলার জন্য ছাদে উঠেছিলাম । ছাদে আবার রেলিং নেই (হাহা) ।
দুইহাত দু’দিকে দিয়ে পেছন থেকে ছবি নিতে চাইল আমার কাছের মানুষটি । আমিও তার কথামত সেটাই করলাম । আর কয়েকমিনিটের ব্যবধানে ছাদ থেকে মাটিতে ।
অর্ক - কেন করল ?
অভ্র – ও জেনে আপনার কি লাভ ? আমারও প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল তাকে কেন এত বিশ্বাস করতে গেলাম, তাকে যদি বিশ্বাস না করতাম আজ বেচে থাকতাম । এখন আর এসব মনে হয়না । কারন, বেচে তো যাবনা আর !
অর্ক – তো এখন কি কাজ আমাদের ?
অভ্র– এখনই তো উপযুক্ত সময় , মানুষকে পর্যবেক্ষণ করার । বাইরে যান , যেকোন একটা মানুষ কে সিলেক্ট করুন এবং সারাটা সময় ধরে তাকে পর্যবেক্ষন করুন । আপনি দেখতে পারবেন মানুষটি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে , হাজারবার , হাজারভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন সে আপনাকে শুনতেই পাবে না ...
অর্ক – জানেন , আমি ড্রাইভ করার সময় কখনও ঘুমায় না । আজ কীভাবে এমনটা হল এখনও বুঝতে পারছিনা । আচ্ছা , আমাকে আপনি কীভাবে চেনেন?
অভ্র-আমি অনেকদিন ধরে আপনাকে পর্যবেক্ষন করছি । যাবার আগে এতটুকুই বলি ...
অর্ক – কোথায় যাবেন ? আর আমাকে যদি চেনেন তাহলে আমার নাম কেন জিজ্ঞেস করেছিলেন?
অভ্র – আরেকজনকে পর্যবেক্ষন করতে আর ফরমালিটি মেইন্টেইন করেছি,ব্যছ । মানুষ মারা গেলে আর পর্যবেক্ষন করে কি লাভ ...!!
তো যা বলছিলাম , আপনি মানুষটা অনেক বোকা । আপনার স্ত্রীর কান্না সহ্য হয় না আপনার । বোকা বললে ভুল হবে , আপনি আবেগী আতেল ...
অর্ক – এটার মানে কি ?
অভ্র – অর্ক সাহেব । আজ আমি মোটামুটি খুশি কারন আজ আপনি আমার কথা শুনতে পারছেন । কিন্তু কোন লাভ নেই আপনি আর ফিরে আসবেন না । আপনি এই রেস্টুরেন্ট-টা চিনতে পেরেছেন?
অর্ক – (এদিক -ওদিক তাকিয়ে ) ঠিক মনে করতে পারছিনা ।
অভ্র – হাহা । এটাই সেই টেবিল যেখানে আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে প্রথম মিট করতে এসেছিলেন ।
অর্ক – ওহ , হ্যা তাইতো... একদম খেয়াল নেই ।
অভ্র – জানি সেটা । আপনি আবেগী আতেল ।
অর্ক – ধুর ... কি বলছেন ? পরিষ্কার করে বলুন ...
অভ্র – ফেসবুকে ইফতির সাথে পরিচয় আপনার । আমি ইফতির সাথে ,আপনার চ্যাটিং এর সময় থেকে, আপনাকে সাবধান করে যাচ্ছি । নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আপনাকে , অনেকবার বলেছি । আপনি শুনতে পান নি ।
(অর্ক কৌতূহলী চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে )
আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ইফতির বার্থডেট ,ই-মেইল, আপনার ব্যংক , ক্রেডিট কার্ড এমনকি আপনার ল্যাপটপের পাসওয়ার্ডও ইফতির বার্থডেট । সিরিয়াসলি , আপনার লাইফ ইন্সুরেন্স এর টাকাও ইফতির নামে , ফ্ল্যাট-গাড়ী সবকিছুই ইফতির নামে ... আচ্ছা , আপনি তো কফি পান করেন না কখনও ব্রেক-ফাস্ট এর পর । আজ সকালে তাহলে কেন করলেন ?
অর্ক – ইফতি-ই তো জোর করেছিল । কেন বলুন তো?
অভ্র – (মুচকি হেসে উঠে দাড়াল) । কফিতে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল ।
আপনি জানেন , আমার কাছের মানুষটার নাম কি ?
অর্ক – কি বলছেন এসব ? না...
অভ্র – অর্ক সাহেব , বিশ্বাস করা ভাল , অন্ধ-বিশ্বাস একদমই নয় (অভ্র হাটা শুরু করল) ।
অর্ক – আপনার কাছের মানুষের নাম কি ?
অভ্র – (পেছন ঘুরে) জবাব দিল , ইফতি ... !!!
(অর্ক নিজের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে । একটু পরে মাটি দেয়া হবে । অর্ক ইফতির দিকে তাকিয়ে আছে । ইফতির চোখে পানি , হাতে টিস্যু আর ঠোটে তৃপ্তির হাসি । অর্কও হাসছে ... হাহা ...হাহা... )
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:৩০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×