আকাশটা অনেক মেঘলা । যার জন্যে চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেছে । হালকা বৃষ্টি পড়ছে । অর্ক, যাত্রী ছাউনীর নিচে বসে আছে । সে খুউব চিন্তিত আর একটু আগে তার সাথে যা ঘটেছে তা সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছে না ।
এই যে শুনছেন ...
অর্ক একটু অবাক হল , তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখেও আশেপাশে ভাল করে দেখে নিয়ে , সেই মানুষটির দিকে তাকিয়ে বলল, আমাকে বলছেন?
- আর কাকে বলব ? আর তো কেউ নেই এখানে । আমি অভ্র আর আপনি ?
- আমি অর্ক ।
- অর্ক সাহেব , আপনি অতিরিক্ত চিন্তা করছেন । অবশ্য এই ফিলিংসটা আপনার জন্যে নতুন । মাত্র একঘন্টা হয়েছে তো এজন্য আপনার এমনটা মনে হচ্ছে ।
অর্ক-তার মানে আপনিও ...
অভ্র – জ্বী , আমিও ...
অর্ক- এখন কি করব ?
- ভাল প্রশ্ন । চলুন আপনাকে ইন্টারেস্টিং কিছু বলি ।
- উঠব এখান থেকে, বলছেন?
- উঠতে তো হবেই অর্ক সাহেব । নাহলে আপনার চিন্তা-ভাবনা বেড়েই যাবে ।
- কই যাব ?
- এই মোড়ের মাথায় একটা রেস্টুরেন্ট আছে । ওখানে গিয়ে বসি চলুন । এ সি রেস্টুরেন্ট ।
- মজা করছেন ?
- আহা ! বললাম তো মাত্র একঘন্টা হয়েছে আপনার আর আমার কয়েকবছর । তো আমার অভিজ্ঞতা একটু বেশি । আর ওখানে কেউ আমাদের ডিস্টার্ব করতে আসবেনা । আর মজার বিষয় আমাদের আর কাউকে ডিস্টার্ব করার যোগ্যতাও নেই ।
- হুমম...
অর্ক আর অভ্র হাটা শুরু করল ।
অভ্র – আচ্ছা , আপনার ফেসবুক আইডি’র পাসওয়ার্ড কেউ জানে?
অর্ক - আপনি খুব রশিক মানুষ বোধ হয়...
অভ্র - তা একটু আধটু । প্রশ্নের উত্তরটা কিন্তু পেলাম না ।
অর্ক – নাহ ।
অভ্র – আপনি একটু কম কথা বলেন ।
অর্ক – আপনি বেশি ।
হা হা । উচ্চস্বরে অভ্র হাসতে লাগল । অর্ক অবাক হয়ে লোকটার দিকে তাকিয়ে আছে । রেস্টুরেন্টে পৌছাল তারা । রেস্টুরেন্টে এখন লোকজন কম । রেস্টুরেন্ট-টা বেশ বড় । লাইটিইংও অনেক সুন্দর । কোনার দিকের একটা টেবিলে তারা দুজন বসে পড়ল ।
অভ্র – বলুন কি খাবেন ?
অর্ক – আবার মজা করছেন কেন ?
অভ্র – আচ্ছা , আপনি এত সিরিয়াস কেন ?
অর্ক – সিরিয়াস না । অনেক কিছু চলছে মাথার মধ্যে ...
অভ্র – কি করে হল আপনার এই অবস্থা ?
অর্ক – গাড়ী নিয়ে বের হয়েছিলাম আজ সকালে । গন্তব্য ঠিক করিনি । আমিই ড্রাইভ করছিলাম । কখন চোখ লেগে গিয়েছিল বুঝিনি । চোখ খুলে দেখি গাড়ীর চারপাশে পানি । সিট বেল্ট টাও বাধা । কি করব বুঝে উঠতে পারিনি ...
অভ্র – শুনেছি , পানিতে ডুবে মরলে নাকি জান্নাতে যায় । হা হাহা হাহাহা হা...
অর্ক – ওহ ... আপনি পারেনও । বাসার কাউকে কিছু বলে আসিনি । বাবা মা জানতে পারবে যখন বড্ড কষ্ট পাবে !!
অভ্র – আর সেজন্য আপনার এখন বাড়ী যাবার কোন দরকার নেই । লাশ দেখেছেন আপনার ?
অর্ক – নাহ । লোক জড় হয়েছিল অনেক । আমাকে গাড়ী থেকে বের করেছে কিনা কে জানে ?
অভ্র – বাদ দিন । এখন আপনি মুক্ত । নো টেনশন ...
অর্ক – আর আপনার গল্পটা কি ?
অভ্র – মার্ডার ।
অর্ক – মানে? কে করল ?
অভ্র – আমার এক খুব কাছের মানুষ ।
অর্ক – কীভাবে ?
অভ্র – ছবি তোলার জন্য ছাদে উঠেছিলাম । ছাদে আবার রেলিং নেই (হাহা) ।
দুইহাত দু’দিকে দিয়ে পেছন থেকে ছবি নিতে চাইল আমার কাছের মানুষটি । আমিও তার কথামত সেটাই করলাম । আর কয়েকমিনিটের ব্যবধানে ছাদ থেকে মাটিতে ।
অর্ক - কেন করল ?
অভ্র – ও জেনে আপনার কি লাভ ? আমারও প্রথম প্রথম মনে হয়েছিল তাকে কেন এত বিশ্বাস করতে গেলাম, তাকে যদি বিশ্বাস না করতাম আজ বেচে থাকতাম । এখন আর এসব মনে হয়না । কারন, বেচে তো যাবনা আর !
অর্ক – তো এখন কি কাজ আমাদের ?
অভ্র– এখনই তো উপযুক্ত সময় , মানুষকে পর্যবেক্ষণ করার । বাইরে যান , যেকোন একটা মানুষ কে সিলেক্ট করুন এবং সারাটা সময় ধরে তাকে পর্যবেক্ষন করুন । আপনি দেখতে পারবেন মানুষটি ভুল সিদ্ধান্ত নিচ্ছে , হাজারবার , হাজারভাবে তাকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন সে আপনাকে শুনতেই পাবে না ...
অর্ক – জানেন , আমি ড্রাইভ করার সময় কখনও ঘুমায় না । আজ কীভাবে এমনটা হল এখনও বুঝতে পারছিনা । আচ্ছা , আমাকে আপনি কীভাবে চেনেন?
অভ্র-আমি অনেকদিন ধরে আপনাকে পর্যবেক্ষন করছি । যাবার আগে এতটুকুই বলি ...
অর্ক – কোথায় যাবেন ? আর আমাকে যদি চেনেন তাহলে আমার নাম কেন জিজ্ঞেস করেছিলেন?
অভ্র – আরেকজনকে পর্যবেক্ষন করতে আর ফরমালিটি মেইন্টেইন করেছি,ব্যছ । মানুষ মারা গেলে আর পর্যবেক্ষন করে কি লাভ ...!!
তো যা বলছিলাম , আপনি মানুষটা অনেক বোকা । আপনার স্ত্রীর কান্না সহ্য হয় না আপনার । বোকা বললে ভুল হবে , আপনি আবেগী আতেল ...
অর্ক – এটার মানে কি ?
অভ্র – অর্ক সাহেব । আজ আমি মোটামুটি খুশি কারন আজ আপনি আমার কথা শুনতে পারছেন । কিন্তু কোন লাভ নেই আপনি আর ফিরে আসবেন না । আপনি এই রেস্টুরেন্ট-টা চিনতে পেরেছেন?
অর্ক – (এদিক -ওদিক তাকিয়ে ) ঠিক মনে করতে পারছিনা ।
অভ্র – হাহা । এটাই সেই টেবিল যেখানে আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে প্রথম মিট করতে এসেছিলেন ।
অর্ক – ওহ , হ্যা তাইতো... একদম খেয়াল নেই ।
অভ্র – জানি সেটা । আপনি আবেগী আতেল ।
অর্ক – ধুর ... কি বলছেন ? পরিষ্কার করে বলুন ...
অভ্র – ফেসবুকে ইফতির সাথে পরিচয় আপনার । আমি ইফতির সাথে ,আপনার চ্যাটিং এর সময় থেকে, আপনাকে সাবধান করে যাচ্ছি । নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আপনাকে , অনেকবার বলেছি । আপনি শুনতে পান নি ।
(অর্ক কৌতূহলী চোখে অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে )
আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ইফতির বার্থডেট ,ই-মেইল, আপনার ব্যংক , ক্রেডিট কার্ড এমনকি আপনার ল্যাপটপের পাসওয়ার্ডও ইফতির বার্থডেট । সিরিয়াসলি , আপনার লাইফ ইন্সুরেন্স এর টাকাও ইফতির নামে , ফ্ল্যাট-গাড়ী সবকিছুই ইফতির নামে ... আচ্ছা , আপনি তো কফি পান করেন না কখনও ব্রেক-ফাস্ট এর পর । আজ সকালে তাহলে কেন করলেন ?
অর্ক – ইফতি-ই তো জোর করেছিল । কেন বলুন তো?
অভ্র – (মুচকি হেসে উঠে দাড়াল) । কফিতে ঘুমের ওষুধ মেশানো ছিল ।
আপনি জানেন , আমার কাছের মানুষটার নাম কি ?
অর্ক – কি বলছেন এসব ? না...
অভ্র – অর্ক সাহেব , বিশ্বাস করা ভাল , অন্ধ-বিশ্বাস একদমই নয় (অভ্র হাটা শুরু করল) ।
অর্ক – আপনার কাছের মানুষের নাম কি ?
অভ্র – (পেছন ঘুরে) জবাব দিল , ইফতি ... !!!
(অর্ক নিজের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে আছে । একটু পরে মাটি দেয়া হবে । অর্ক ইফতির দিকে তাকিয়ে আছে । ইফতির চোখে পানি , হাতে টিস্যু আর ঠোটে তৃপ্তির হাসি । অর্কও হাসছে ... হাহা ...হাহা... )
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৮:৩০