(মিছির আলি) হিমু সাহেব এখন কোথায় বের হচ্ছেন ?
হিমু – আজ সকালে রূপা সময় দিয়েছে দেখা করার জন্য ।
মিছির আলি – আপনি এখন বরং আরাম করুন সারারাত হেটেছেন । কি এক নতুন অভ্যাস ধরেছেন যে আপনি ! স্যান্ডেল হাতে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় হাটা । যান তো গিয়ে একটু শুয়ে পড়ুন ।
হিমু – কেন বলুন তো ? একজনের সাথে আমার দেখা করার কথা ,আর আপনি বলছেন শুয়ে পড়তে । খুলে বলুন কি হয়েছে?
মিছির আলি – বাদল ফোন দিয়েছিল । আপনার বান্ধবী রূপা আজ বের হবেন না । কারন আজ তীব্র বৃষ্টি হতে পারে বলে তার ধারণা ।
হিমু – আজ বৃষ্টি হবার কোন সুযোগই নেই । না আছে মেঘের গর্জন আর না আছে বিদ্যুতের ঝলকানি ।
মিছির আলি – হয়তবা । কিন্তু বৃষ্টি হবে বলে ধারণা করছে রূপা , আপনি বরং তাকে বোঝান এবং তার সাথে দেখা করুন ।
হিমু – থাক । সে যখন ধারণা করেই নিয়েছে বৃষ্টি হবে , তার আর আজ বাসা হতে বের হবার ইচ্ছা মরে গেছে । অন্য কাজ করার পরিকল্পনা করে ফেলেছে হয়ত । আমি বরং একটু কাত হই । বাদল আসলে বলবেন , রূপাকে জানাতে যে তার ধারণাটা ভুল ছিল ।
মিছির আলি – বেশ বলব ... কি ভাবছেন ?
হিমু-আপনার কাছে ফোন আছে , রুপার কাছেও ফোন আছে । রূপা আপনাকে ফোন দিলেই পারত বা বাদল এর কাছ থেকে আপনার নাম্বার নিয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করলেই পারত । সেটা কেন হল না ?
মিছির আলি – হিমু সাহেব । আপনি অনেকদিন ধরেই আপনার বান্ধবী রূপার সাথে দেখা করার চেষ্টা করছেন । আর আজও দুপুরে দেখা করার কথা ছিল কিন্তু কোন একটা কারনে রূপা আপনাকে বিকেল সাড়ে চারটার টাইম দিয়েছে । আর বাদল কে নিয়ে চিন্তা করা ছাড়ুন , তার মন ভাল হয়ে গিয়েছে ।
হিমু – আপনি চা খাবেন ? চা আনাব ?
মিছির আলি – আপনি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছেন হিমু সাহেব । চোখ খুলুন আর রূপা যেখানে দেখা করতে বলেছে সেখানে যান । ঘুম থকে উঠুন ...
ঘুম ভেঙেই হিমু তার আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগল । তার রুমের জানালা দরজা সব খোলা । আশে পাশে কোথাও মিছির আলি সাহেব নেই ।
মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি আসছে । হিমু বিছানা ছেড়ে বাইরে বের হয়ে গেল রূপার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্য । রূপা তাকে যেই গলিতে দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছে সেই গলির মাথায় দাঁড়িয়ে সে রূপার জন্যে অপেক্ষা করছে ।
কিছুক্ষন অপেক্ষা করতেই রূপা হিমুর সামনে এসে হাজির ।
রূপা- চল রাস্তা পার হতে হবে । আর স্যান্ডেল পায়ে দাও , হাতে নিয়ে ঘুরছ কেন ?
হিমু – রাস্তা কেন পার হতে হবে ? এখানে দাঁড়িয়ে কথা বললেই তো হল । তুমি তো আর অনেক সময় ধরে আমার সাথে থাকবেনা ।
রূপা- না । হাটার জায়গা খুজেছি , আমি সময় পেলে মাঝে মাঝে ওখানে হাটি । তোমাকেও নিয়ে যাব । চল ... রাস্তা পার হয়ে রিকশা নিতে হবে ।
হিমু – আচ্ছা ।
রিকশায় ওঠার পর ...
হিমু – আচ্ছা রূপা , তুমি হাটার শর্ত জান ?
রূপা- হাটার শর্ত ? হাটার জন্যে আবার শর্ত লাগে নাকি ?
হিমু – আছে তো । প্রথম শর্ত – নিঃশব্দে হাটা ...
রূপা- আমরা হাটতে হাটতেই কথা বলব । তো তোমার শর্ত মেনে হাটা টা রাতের জন্যেই রাখ ।
(রিকশা থেকে নেমে...)
রূপা – আবার রাস্তা পার হতে হবে । চল...
হিমু – ওভারব্রীজ আছে তো । জীবনে ঝুকি নেবার কি প্রয়োজন ?
রূপা – জীবনের ঝুকি ? হা...হা... ভাল বলেছ । চল ওভারব্রীজে দিয়েই পার হই ।
হিমু – তোমার কি ফোন এসেছে ?
রূপা – নাহ ... ফোনটা অন করলাম , বন্ধ ছিল এতক্ষণ । তুমি এই রাস্তায় এসেছ আগে ?
হিমু – হয়ত এসেছি । হাটলে মনে পড়তে পারে ।
রূপা – হা ... হা... । হাটার দ্বিতীয় শর্ত কি ?
হিমু- দেখার চেষ্টা না করা । তৃতীয় শর্ত হচ্ছে , পথে কোথাও থামা চলবেনা । আর চতুর্থ শর্ত যেটা সেটা তুমি ভঙ্গ করতেছ ।
রূপা- কিভাবে ?
হিমু – মোবাইলের দিকে তাকিয়ে হাটতেছ । মাটির দিকে তাকিয়ে হাটা চলবে না ।
রূপা – আচ্ছা , মোবাইল কি তাহলে ব্যাগে রেখে দিব ?
হিমু- সেটা আমি বলি নি ।মোবাইল হচ্ছে পাখির মত । পাখি উড়ে বেড়ায় আর মোবাইল পকেটে বা ব্যাগে ঘুরে বেড়ায় । পাখিও কিচমিচ শব্দ করে , মোবাইলও তাই করে ।
রূপা – তুমি আর তোমার প্রতি-যুক্তি(anti logic) । চল রাস্তা পার হয়ে আবার বিকশা নিব ...
হিমু – আচ্ছা রূপা , আমার কেন জানি খুব বিচলিত লাগছে । যদিও এটা হবার কথা না । কিছু একটা সমস্যা আছে কিন্তু আমি ধরতে পারছিনা । তুমি কি আসলেই রূপা ? আর আমি কি আসলেই হিমু ?
রূপা – রিকশায় ওঠ । এবার সব বুঝতে পারবে ।
হিমু- রিকশা দাঁড়িয়ে কেন আছে ? যাচ্ছেনা কেন?
রূপা- যাত্রী পাইনি সেজন্য ।
হিমু- যাত্রী পাইনি মানে । আমি আর তুমি কি যাত্রী না ?
রূপা – হিমু , আমাদের তো অস্তিত্ব-ই নেই !
(গম্ভীর গলায়)হিমালয় , রিকশা থেকে নাম । কথা আছে ।
হিমু- বাবা ... তুমি ?
বাবা- আমি ভেবেছিলাম প্রশিক্ষণ দিয়ে মহাপুরুষ বানানো সম্ভব । কিন্তু আমার মনে হয় আমি আসলেই বিকারগ্রস্থ ছিলাম । তোমার কি মত ?
হিমু – (অবাক চোখে তাকিয়ে)...
বাবা- অনেক সময় এখন । তুমি থাকবে আমার সাথে আবার চেষ্টা করব তোমাকে মহাপুরুষ বানানোর । আমার উপদেশনামায় আরেকটা উপদেশ যোগ করে নাও , মহাপুরুষ হবার জন্য জীবিত থাকবার কোন প্রয়োজন নেই । লোকমুখে আর বই পুস্তকে মহাপুরুষদের জীবিত রাখার কোন প্রয়োজন নেই ।
হিমালয়, তুমি ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছ কেন , আমার দিকে ? আমাকে দেখে এত বিচলিত হলে মাকে দেখার পর কি করবে ? যদিও আমি চাই তুমি মা’য়ের মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ না হও !
আমার তৃতীয় উপদেশনামা কি ছিল বল তাড়াতাড়ি ...
হিমু - জগতের কর্মকাণ্ড চক্ষু মেলিয়া দেখিয়া যাইবে। কোনোক্রমেই বিচলিত হইবে না। আনন্দে বিচলিত হইবে না, দুঃখেও বিচলিত হইবে না। সুখ দুঃখ এইসব নিতান্তই তুচ্ছ মায়া। তুচ্ছ মায়ায় আবদ্ধ থাকিলে জগতের প্রধান মায়ার স্বরূপ বুঝিতে পারবে না।
বাবা, আমরা কি জগতের ভেতরে না বাহিরে এখন ? আর প্রধান মায়ার স্বরূপটাই বা কি ?
বাবা- ধৈর্য ধর । উত্তরটা নিজেই খোজার চেষ্টা কর …
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:১৪