somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লীলাবতী'র উপাখ্যান

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লীলাবতী, সুন্দরী একজন নারীর নাম। কাধে ভ্যানিটি ব্যাগ আর সালোয়ার পড়ে হাঁটতে প্রায়সই দেখা যায় এই শহরতলীর একটি পিচঢালা রাস্তায়। মুখখানি বেশিরভাগ সময় নিম্নগামীই থাকে। চেহারাটা দেখে ফেললে সর্বনাশ হয়ে যাবে অমন একটা ভাব। আমি একদিন তার মুখমন্ডল দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। সেদিনও কাধে ভ্যানিটি ব্যাগ আর পরনে সালোয়ার কামিজই ছিল। দীর্ঘদিন পর ক্লেশশূন্য একটি মুখমন্ডলের দর্শন পেয়ে আমার ক্ষুধা সেদিন বেড়ে গিয়েছিল। রাতে অনেক বেশি ভাত খেয়েছিলাম। এমনিতে আমি স্বল্পভোজি ক্ষুদ্রকায় একজন মানুষ। লীলাবতীর কন্ঠ আজ অব্দি শ্রবণের সৌভাগ্য হয়নি আমার। আশা আশা ভবের আশা, সে আশা এখন অব্দি পূরণ হয়নি। লীলাবতী খুব ধীরগতিতে পদাঙ্ক করে থাকে। দেখে মনে হয় যেন রাস্তার অদৃশ্য জীবাণুগুলোর জীবনের প্রতিও উনি বেশ সতর্ক। লীলাবতী নামটা অবশ্য আমারই দেয়া।
রেল স্টেশনের পাশ দিয়ে ভাঙ্গা সরু রাস্তায় লীলাবতীর বেশি আসা যাওয়া। গোধুলীলগ্নেই তার দর্শন পাওয়া যায় বেশিরভাগ সময়। এসময় লীলাবতীকে দেখলে আমার মনে প্রেম জাগে। আমার মনে ভাব জাগে, আর মাঝে মধ্যে জাগে তার প্রতি নিয়ন্ত্রনহীন আবেগ। আমি শুধু লীলাবতীকে দেখি কিন্তু লীলাবতী আমাকে দেখে না। লীলাবতী আজ অব্দি আমাকে দেখেনি। লীলাবতী আর কাউকেই দেখেনা। অন্ধ নয় এটা আমি নিশ্চিত। কারণ তার চলার পথে একদিন কাল একটা বেড়াল চলে এসেছিল তার জন্য লীলাবতী ১ মিনিটের মত স্থির হয়ে দাড়িয়েও ছিল। লীলাবতীর মাঝে কুসংকারও আছে। লীলাবতী নিতান্তই সহজ সরল বাঙ্গালীমনা মেয়ে হয়তোবা। বিপ্লব বিদ্রোহ কিংবা অভিমান ওর মাঝে নেই। দম্ভও নেই। হয়তোবা গানও নেই কবিতাও নেই। কিন্তু আনন্দ আছে, ওর চেহারায় সে আনন্দ স্পষ্ট ফুটে ওঠে।

প্রতিদিন দুপুরের ভাতটা খেয়ে স্টেশনের পেছনের সরু রাস্তাটার যে চায়ের দোকানটায় গিয়ে আমি বসি সে দোকানের ঠিক পেছনের পাঁচতলা বাসার ছেলেটির নাম আহাদ। ব্যাটা খুব বদজাত, আমাকে নিয়ে শুধু মজা করে। আমাকে পাগল বলে ডাকে। কিন্তু আমি তাতে বিচলিত হইনা। বরং মনে মনে আমি আহাদকেই পাগল বলে ধরে নেই কারণ ওর বাবা তৃতীয় শ্রেনীর সরকারী কর্মচারী হয়ে পাঁচতলা দালানের মালিক। ব্যাটা অসুস্থ না হলে কি আর এই স্বল্প বেতনে অত বড় দালান হাকিয়েছে ? তাই অসুস্হ বীর্যের অসুস্থ ফসল হবার সম্ভাবনাই বেশি ভেবে ব্যাটাকে আমি ক্ষমা করে দেই। আহাদের সম্পর্কে আমি অমন কু-মনোবৃত্তি পোষণ করতামনা যদি ব্যাটা আমাকে পাগল বলে না ডাকতো। এটাই মানুষের স্বভাবের স্বাভাবিক দিক। যাই হোক গত তিন মাসে কেবল ৩ দিন আমি লীলাবতীকে দেখতে পারিনি। লীলাবতী হয়তো সেই রাস্তা দিয়ে হেঁটে গিয়েছিল ঠিকই কিন্তু আমি সেই চায়ের দোকানে যাইনি। অসুস্থ ছিলাম । শয্যাশায়ী না কিন্তু আমি অসুস্থ ছিলাম।
লীলাবতীর গাঁয়ের খয়েরী শালের পাঁড়ের দিকে একটা কি যেন লেখা আছে। ওটা আজ আমায় আবিষ্কার করতে হবে। লেখাটা বাংলায় এটা আমি বুঝেছিলাম। ওতে একটা 'ব' ছিল তাও বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু পুরোটা বুঝিনি। আজ ভেবেছি লীলাবতীকে ডাক দিয়ে কথা বলব। মনের কথা বলতে অনেক সাহস লাগে আজ সেই সাহস আমার বুকে নেই তাই সেকথা না হয় অন্য আরেকদিন বলবো কিন্তু আজ কথা বলবো। ভেবেছি পেছন থেকে ডাক দেব। না না পেছন থেকে ডাকা টা অশোভন হবে যদি কিছু মনে করে ? তবে সামনের থেকেই ডাকবো। কিন্তু ডেকে কি বলবো?? কিছুক্ষন চিন্তা করতে হবে। অবশ্য আমার তাড়াও নেই আজ যদি মাথায় ভালো কোন পরিকল্পনা না আসে তবে কাল বলবো। পরিকল্পনা খুবই জরুরি বিশেষ করে যখন গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজের কথা আসে। এটা আমাকে আমার পাশের বাসার মলয় দা প্রায়সই বলতো। কিন্তু পরিকল্পনা কেন? লীলাবতী কি সত্যিই আমার জন্য অতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ? অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, লীলাবতী নয়তো কি ওই বেটা আহাদ গুরুত্বপূর্ণ? আহাদ আমাকে পাগল ডাকে আমিও ওর একটা কুৎসিত নাম দেব অনেকদিন ধরে ভাবছি। কিন্তু কোন উপযুক্ত নাম আমার মাথায় আসছেনা। যাই হোক সেটা পরে দেয়া যাবে।
চিন্তা করতে করে বের করলাম লীলাবতীর সাথে গতরাতের প্রবল শৈত্যপ্রবাহ নিয়ে কথা বলবো। কিন্তু সদ্য পরিচিত একজনের সাথে আলাপ জুড়ে দেয়া কি উচিত হবে?? আসলে তো ওর সাথে আমার এখনও পরিচয়ই হয়নি। তবে এবার পরিচিত হবার একটা পন্থার পরিকল্পনা করতে হবে। কি করা যায়?? কি করা যায়?? এ নিয়ে ভাবতে ভাবতে দুপুর পেরিয়ে বিকেল হয়ে এল। ভাতটা কোন মতে সেরেই রওনা দিলাম চায়ের দোকানটার দিকে। অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না। কখন লীলাবতী আসবে, কখন আসবে ?? অবশ্য এমন অপেক্ষার প্রহর আমার প্রতিদিনই কাটে কিন্তু আজ তাড়াটা কেন জানি একটু বেশি। হঠাৎ একটা লাল সোয়েটার পড়া বিশালাকায় ব্যক্তির আড়ালে আমি লীলাবতীর অস্তিত্ব আবিষ্কার করলাম। একটু স্নায়ুর চাপে থাকি এমনিতেই ওর আসা দেখলে। আজ একটু বেশিই। লীলাবতী সেই চিরচেনা খয়েরী চাঁদর পড়ে পুরনো ভঙ্গিমায় নিচের দিকে চেয়ে এগিয়ে আসছে। আমাকে অতিক্রম করার সাথে সাথে আমি ওর পিছু নিলাম। উদ্দেশ্য চাদরের লেখাটাকে আবিষ্কার করা। খানিকক্ষণ হেঁটে চললাম ওর পিছু পিছু আর 'ব' সমৃদ্ধ শব্দটা আমি উদ্ধারের চেষ্টা করলাম। কিন্তু অবাক হলাম যখন আমি আবিষ্কার করলাম আমার নিজেরই নাম । স্পষ্ট করে লেখা ছিল ' বকুল; হ্যাঁ ওটা তো আমারই নাম। বিস্ময়ে আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। চাদরে লেখা অক্ষরগুলোর থেকে চোখ না হটিয়ে ডাক দিলাম লীলাবতীকে। লীলাবতিকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার চাঁদরে আমার নাম লেখা কেন?? লীলাবতী আমার দিকে চাইলো, আমি আমার চোখদুটো লীলাবতীর চাদর থেকে হটিয়ে ওর মুখমন্ডলে সন্নিবিষ্ট করলাম। লীলাবতী এবার হাসছে। অনেক জোরে জোরে হাসছে। কি যেন বলতে চাইছে কিন্তু নিয়ন্ত্রনহীন হাসির জন্য বলতে পারছে না। বার বার বলতে গিয়েও হাসিটা বাঁধা দিচ্ছে। আমি বললাম "হাসছ কেন?? বল না। আমার নাম কেন তোমার চাঁদরে?"
লীলাবতীর হাঁসি এবার থেমে গেল। এবার নিশ্চই ও কিছু বলবে।
আমি আবার বললাম " উত্তর দাও"
লীলাবতী বলল - তোমার নামই তো লেখা থাকার কথা, তোমার নাম থাকবে নয়তো কি ওই ব্যাটা আহাদের নাম থাকবে?
আমি বললাম 'আমার নাম কেন থাকবে? আমি তোমার কে?'
' তুমি আমার ভগবান, তুমি আমার বিজ্ঞানী, হ্যাঁ তুমিই আমার আবিষ্কর্তা।'
"আমি তোমার আবিষ্কর্তা?? কি বলছো এসব?"
হাসতে হাসতে আবার হাঁটতে লাগলো লীলাবতী , আর কিছু বলছে না শুধু হাসছে, আমি ওর পিছু ছুটছি, আর জিজ্ঞেস করছি 'আমি তোমার আবিষ্কর্তা ?? বল না কি করে??' আমি ওর পিছু ছুটছি আর জানতে চাচ্ছি।। কিন্তু লীলাবতী হেসেই চলেছে। খনিক বাদে হঠাৎ লীলাবতী অদৃশ্য হয়ে গেল। আমি হতবাক হয়ে গেলাম। তবে কি আমি সত্যিই পাগল?? লীলাবতী কি আমার কোন অসুখের নাম?? আমি কি করবো কিছু বুঝতে না পেরে হন্যি হয়ে কিছুক্ষন লীলাবতীকে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। আবার ফিরে এলাম ওই চায়ের দোকানে। আহাদ বসেছিল, ব্যাটা আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে, নিরুপায় হয়ে ওর পাশেই বসলাম স্থানসঙ্কুলানের জন্য। কানের কাছে মুখটা এনে আহাদ আমায় বললো " কিরে পাগল?? ডাক্তারের কাছে শিডিউল আবার কবে?"।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×