এ কথা সত্য: আমরা ধানও ফলাই গানও ফলাই। বৃত্তান্ত ঘাটলে আমাদের তাগড়া উপলব্ধি/উপস্থিতি নানান যুগ পর্বে মহাজীবনের সম্বন্ধকেই স্বীকার করে। ঝড়-জল-ক্ষরা-রৌদ্র-বিদুতে, নিষ্পেষণ-আগ্রাসন-অত্যাচারে আমরা অনড়, প্রাণপণ লড়ি, আশ্চর্য যাদুকরের মতো হটিয়ে দিই প্রতিপক্ষকে। সময়ের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে হতে আমাদের এইযে জীবন/সৃজন- মন্থন তার প্রতিটি আলোড়ন বিলোড়নই সত্য। জীবনের ভেতর লড়াই এভাবেই দানা বাঁধে। এভাবেই সময়ের তাপে-তৃঞ্চায়, সময়ের আড়মোড় ভেঙ্গে দিয়ে খুঁত-ক্ষত-ক্ষয়-ভঙ-দ্বন্দ্ব গুলোর তীব্র-তীক্ষ্ণ-হীন-শুষ্ক-ঘৃন্য রূপ দেখে দেখে ক্রমাগত হতাশা থেকে ক্রোধের দিকে, অভিমান থেকে দ্রোহের দিকে, লড়াইয়ের দিকে উত্তীর্ন হই।
‘কবি’- ঠিক এমন একটি প্রেক্ষিতের ভেতর কিভাবে বসবাস করেন? আমাদের জানতে ইচ্ছে করে- তার ভেতর কি অন্ধকার ব্যথায় মোচড়ায়, বিষরক্ত উথলে উঠে, অগুনতি মানুষের রূপকল্প নিয়ে তিনিও কি চিৎকার করে উঠেন সাহসে-দুঃসাহসে, না তিনি শান্ত, নিরুদ্বিগ্ন, স্থবির থাকেন? জীবনের কামারশালার সৃষ্টির আগুনকে অস্বীকার করে, নিজস্ব-আত্মকেন্দ্রিক খেয়ালকল্পনায় ভর করে নিছক ব্যক্তিগত প্রকৃতির রূপচর্চা, আকাঙ্ক্ষা, সৌন্দর্যবিলাসী, স্বপ্নবিলাসী, কামবিলাসী, ভাবালুতায় মজে গিয়ে আহার-নিদ্রা-মৈথুনের ছঁক ছেঁচে স্ব-অস্তিত্ব রক্ষাকেই একমাত্র জ্ঞান করেন? ‘কবি’ কি এমন নামবাচক, গুনবাচক-?
আমরা মনে করি- সৌন্দর্য্যের দাবী নিয়ে ‘কবি’ যখন ট্যার পান সময়ের ফ্যাকাশে মুখ, পালিশ করা পৃথিবীর ভেক সভ্যতা, অনুভূতির হাতে-পায়ে ফোঁড়া-ফুসকুড়ি, বেঁচে থাকার কপাল জুড়ে জ্বর- তখন কবি’রাই বাতাসে ভাসিয়ে দেন চেতনার ভারী মুগুর। ক্লেদজ দৃশ্যাবালী, সময়ের অস্বচ্চ আয়নায় বিকৃত মুখ ও আক্রমনের প্রতিউত্তরে প্রেমের, লড়াইয়ের, মুক্তির গান শোনান। অতএব আমরা এখন জেনে গেছি- ‘ ‘কবিতা’ কথাটি এখন আর কেবল লেখার একটি কলা-কৌশলের নাম মাত্র নয়ঃ এর রয়েছে গভীর সামাজিক, রাজনৈতিক এবং দার্শনিক তাৎপর্য, এবং কবিতার ধ্বনি শোনামাত্র শাসকশ্রেনী আক্ষরিক অর্থেই বন্দুকের দিকে হাত বাড়াতে প্রস্তুত’।
সাহিত্যের কোনো দেশকাল নেই, পাত্র অপাত্রও সেখানে তুচ্ছ। যে যেখানে কলম ধরছেন বা নাড়ছেন বা নাড়াচ্ছেন আঙুল দিচ্ছেন তাদের কথা শুনতে চাই। কেউ ঢাকা শাহাবাগ, নাটোর কিম্বা কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়া কেউবা ওয়াশিংটনের কোনো প্রশস্ত রাস্তায় কেউবা কলকাতার শোভা বাজার বউ বাজার থেকে সেই চর্চা করে যাচ্ছেন। মুক্তির কোনো সীমানা নেই, নেই দেশ কাল। সীমান্তের সব কাঁটাতার আর পাসপোর্ট ভিসা ঘুচে যাক এই মিছিলে। আমাদের এই প্রয়াসে আমরা দেখতে চাই, হাত, চোখ, নাক দিয়ে স্পর্শ করতে চাই সময়ের সেইসব নির্মান।
মনে রাখার বিষয় হচ্ছে- ‘সাহিত্য’ রাজনৈতিক ও আইডিওলজিগত ইতিহাসেরই অংশ। সে যতটা না বৌদ্ধিক অনুসন্ধান তার ছেযে বেশী আমাদের ‘সময়কার’ ইতিহাস নিমার্ণে/পর্যবেক্ষণের একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ। ঠিক এ জায়গায় গোঁয়ার স্বভাবি হয়ে আমরা বলতে চাই- কতখানি সামগ্রিক/সামষ্টিক জীবনের/সময়ের যোগ আছে তার উপরই নির্ভর করে ‘কবিতার হয়ে উঠা’। সমাজের ও মানুষের বাইরে চোখ-ঠুলি রেখে ‘সৌন্দর্য্যতত্ত্ব’ সৃষ্টি করতে গিয়ে আমাদের গায়ে মাছি বসে গেছে। পুঁজির পেষণে নদী পরিণত হয়েছে মজা খালে। লোল, মল আর গলিত লাশের ভিড়ে জন্ম-জীবন থাবার মুখে পড়ে গেছে। এর ভেতর বুক চিতিয়ে উঠে দাঁড়াতে স্বদেশ স্বকালের, সময়ের রুগ্ন পাঁজর গুনতে গুনতে কবিই তো উপলব্ধি/সতর্ক করবে মানবলগ্ন সাধনার, বলবেন- ‘পৃথিবীতে ঢের জন্ম নষ্ট হয়ে গেছে’।
আসছে ২০১১'র একুশে বই মেলায় 'সময়ের কবিতা' নামভূমিকায় কবিতার সংকলন প্রকাশিত হতে যাচ্ছে,
'সময়ের কবিতা' সংকলনে আপনার কবিতাগুলো ই-মেইল অথবা পোস্ট করে পাঠান। কবিতা পাঠানোর শেষ সময় ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।
______________________________
মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান
যিশু মহমমদ
01712768955
01913800632
[email protected]