গ্রামের বাড়িতে শীতকালে পুকুরে মাছ ধরানো হত। ৪/৫ জন লোক একটা বিশাল জাল কাঁধে নিয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে জিজ্ঞেস করত কারো পুকুরে মাছ ধরানো হবে কিনা। কেউ মাছ ধরাতে চাইলে দরকষাকষি করে কিছু একটা মৌখিক চুক্তি হত। সবচেয়ে কমন চুক্তি ছিল, পুকুরের সব মাছ ধরে ফেলা হবে আর তাদেরকে চার ভাগের এক ভাগ মাছ দিতে হবে। মাছ ধরার পর তাদের ভাগের মাছ তারা কখনো আমাদের কাছে বা প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রী করে চলে যেত, প্রত্যাশিত দাম না পেলে আবার বাজারেও নিয়ে যেত। এই পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে কেউ কি কোন অস্বাভাবিকত্ব দেখছেন?
আমরা তো আমাদের ভাগের মাছ ফ্রীতেই খাচ্ছি, অনেক সময় প্রতিবেশী-আত্মীয়স্বজনকেও দিচ্ছি। এখন আমরা কি আশা করব জেলেরা তাদের ভাগের মাছও আমাদের কম দামে দিয়ে দেবে যেহেতু আমাদের পুকুরের মাছ? অথবা এধরনের ভাগাভাগির শর্তে আমরা রাজি হব কিনা সেই সিদ্ধান্ত নিতে আমার জানার দরকার আছে যে তারা তাদের মাছ কত টাকায় বিক্রী করবে? এই জানাটা আমার সিদ্ধান্তের জন্য একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। বরং যেসব বিষয় আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে সেগুলো হচ্ছে:
১। পুকুর আমার, মাছও আমার। আমি নিজেই যদি মাছ ধরতে পারি খুবই ভাল। কিন্তু আমি যদি পেশায় জেলে না হয়ে ব্যবসায়ী হই, তাহলে মাছ ধরা শিখতে আর তারপর মাছ ধরতে আমি যে সময় খরচ করব, সে সময়ে নিজের পেশায় আমি হয়তো আরো বেশী টাকা উপার্জন করতে পারতাম। সেক্ষেত্রে প্রফেশনালদের দিয়ে কাজ করানোই হবে লাভজনক।
নিজে মাছ ধরতে হলে আমার শুধু সময় দিলেই হবে না, জালও লাগবে। ঐ জালগুলো বেশ দামীই হয়। জেলেদের জাল কিনে পোষায় কারন তার অনেকের পুকুরে মাছ ধরে। কিন্তু আমার এক পুকুরে মাছ ধরার জন্য জাল কিনা লাভজনক কিনা সেটাও চিন্তা করতে হবে।
২। আমার পুকুরে মাছ কত আছে আমি জানিনা, জেলেরাও জানেনা। ভাগাভাগির চুক্তিতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশী মাছ পাওয়া গেলে জেলেদের লাভ, কম পাওয়া গেলে লাভ আমার। ঝুঁকি বহন করছে দুই পক্ষই। অন্যথায় আমি তাদের সাথে এভাবে চুক্তি করতে পারি, মাছ সব আমার থাকবে, তারা ধরে দেয়ার জন্য ১০০০ টাকা পাবে। কোনটা ভাল? এককথায় বলে দেয়া সম্ভব নয়, কিন্তু প্রোব্যাবিলিটির অংক করে বের করা সম্ভব। পুকুরে মাছের সম্ভাব্য পরিমান কত, বিভিন্ন জেলের দল কে কত পার্সেন্ট মাছ অথবা কত টাকা চাইছে, সেই সাথে নিজে মাছ ধরলে কত খরচ হবে (ব্যবসার ক্ষতিসহ) সব তুলনা করলে বের করা সম্ভব কোন অপশনটা সবচেয়ে ভাল।
সম্ভাব্য মাছের পরিমান আর অন্যান্য ক্যালকুলেশন যে যত নির্ভুলভাবে করতে পারবে, চুক্তিতে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা তার তত বেশী থাকবে। সেটা না করে যদি গবেষনা করি জেলেরা তাদের ভাগের মাছ কত টাকায় বিক্রী করবে, তাহলে হয়তো দেখা যাবে শীতকাল পার হয়ে গেছে আর বর্ষাকালের ভরা পুকুরে মাছ ধরার খরচ আরো বেড়ে গেছে।
পরিশিষ্ট: বঙ্গোপসাগরে গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে কনোকোফিলিপস এর সাথে সরকারের চুক্তি নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আর আলোচনার একটা বড় জায়গা জুড়ে থাকছে কত বেশী দাম দিয়ে কনোকোফিলিপস এর কাছ থেকে আমাদের গ্যাস কিনতে হবে। কিন্তু আমাদের আর কি কি অপশন ছিল, কোন অপশনের প্রত্যাশিত আয় কত, সেটা নিয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য কোথাও পাচ্ছি না। গবেষনাগুলো কি সঠিক জায়গায় হচ্ছে?
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১১ ভোর ৬:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


