সিক্সে পড়ি। মা'কে বল্লাম
- মা আমি লজিং থাকবো।
মা কিছু বলে না। কেবল মুচকি হাসে। আর আমার রাগ বাড়ে। পরে মা বুঝায়ে বল্লেন
- বাবা গরীব মানুষ লজিং থাকে। আর যাদের স্কুল অনেক দূরে তারা স্কুলের আশেপাশে লজিং থাকে। তুমি থাকবা কেন?
মা'কে জিজ্ঞাসা করলাম
- মা আমরা কি বড়লোক?
মা আবারো একটা মুচকি হাসি দিলেন। বল্লেন
- নাহ বাবা আমরা বড়লোক না। আবার লজিং থাকার মত এত গরীবও না।
আসলে লজিং থাকার ইচ্ছা আমার কেন হলো তা বলি। জন্মের পর থেকেই দেখে আসছি আমাদের বাড়ীতে লজিং মাষ্টার থাকে। কাউকে পড়ায় না। অথচ কি সুন্দর আলাদা একটা রুম আছে। সারা দিন রুমে থাকে। গোসলের সময় গোসল করে, খাওয়ার সময় খায়। সংসারে তার আর কোন কাজ নাই।
মা অবশ্য কখনোই তাদেরকে লজিং মাষ্টার বলতেন না। নাম ধরে ডাকতেন। এবং আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেন - ওমক বোনের ছেলে, তুমুক ভাইয়ের ছেলে ...। কিন্তু আশেপাশের মানুষগুলা তাদেরকে লজিং মাষ্টার বলতো।
-০-
বড় হইলাম। বুঝলাম, যারা আমাদের বাড়ীতে থেকে পড়াশুনা করতেন তারা কেউই মা'র কোন আত্মীয় না। তারা নিতান্তই বিপদে পড়া মানুষজন। গ্রামে অন্যদের তুলনায় আমরা সেই সময়ে কিছুটা বড়লোক ছিলাম। আর মা'র কাছে যে কেউই আবদারটা করতে পারতেন। তাই কারো গরীব আত্মীয়-স্বজন যার নাকি অভাবের কারনে পড়াশুনা বন্ধ হয়ে গেছে। তেমন লোকদের সাহায্যের জন্য মা'র কাছে আব্দার করতেন। আর মা তাদেরকে যথার্থ সম্মানের সাথেই সন্তানের মত করে থাকতে দিতেন। আমাদেরকে মা কোন দিন কোন কাজের অর্ডার দিতেন না। যারা আমাদের বাড়ীতে থেকে পড়াশুনা করতেন তাদেরকেও না।
মা মারা গেলেন ৩১ ডিসেম্বার ২০১৪। হরতাল, বৃষ্টি সবই ছিলো। এরপরেও মা'র জানাজায় প্রচুর মানুষ হলো। গ্রামের অখ্যাত এক মহিলার এ যেন বিরাট খ্যাতি।