somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেদে পল্লীর ঐ বাচ্চা ছেলেটাকে দেখে সেদিন একটু হিংসাই হয়েছিল ...

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নৌকার উপরের ঢেউ এর মত যে অংশটা আছে অনেকটা ওটার মত দেখতে, ওগুলাকে কি বলে আমি ঠিক জানিনা। সারি সারি ভাবে সাজানো আছে অনেকগুলা, উপরে কালো রঙের পলিইথিন দেওয়া, বোধহয় বৃষ্টি আটকাতে। ওটাই ওদের ঘর, আর বালুর উপরে কিছু সারের বস্তা বিছিয়ে মেঝে বানানো। ওটার ভিতরে একটা মানুষ দাড়াবার মত জায়গাও নেই খুব জোর বসতে পারে ওরা। ওদেরকে যেখানে দেখেছি তার আশেপাশে অনেক জায়গা জুড়েও কোন আমাদের মত সভ্য সামাজিক মানুষের বাসস্থান দেখিনি তবে একটা পুকুর মত কিছু একটা ছিল আর কিছু বাকি সব জংগল , আর এর মাঝে খানিকটা জাগয়া করে নিয়ে ওরা প্রায় ১০/১২ টা পরিবার সংসার বেধেছে।

হালকা বৃষ্টির জন্য কিছু মহিলা নৌকার ঢেউ টুকুর মধ্যদিয়ে মাথা বের করে দিয়ে অস্থায়ী একটা চুলায় ফু দিচ্ছে, হাড়িতে সম্ভবত ভাত রান্না হচ্ছিল, আর কিছু উলংগ বাচ্চা বৃষ্টির তোয়াক্কা না করেই বালুর উপরে লাফিয়ে লাফিয়ে খেলছে। ওদের মায়েরা সম্ভবত ওদের বকা দেয়না কারন তারা জানেন, হাল্কা-জ্বর, সর্দি-কাশি, মাইগ্রেনের ব্যাথা এগুলা আমাদের সভ্য সমাজের রোগ, ওদের ছেলেদেকে অন্তর এই রোগ গুলা কাবু করতে পারবে না। আমি যাদের কথা এতক্ষন বলছি ওরা বেদে, ওদের ব্যাপারে আমার অতটা জানা নেই তবে এটুকু জানি ওদের স্থায়ী কোন বাসস্থান নেই আর ওরা এক জাগায় বেশিদিন থাকেও না। জীবিকার প্রয়োজনে ওরা বিভিন্ন জাগায় নৌকার মত ঐ বাসস্থান করে থাকে। এদের কথা এজন্য বলছি কারন এদের সমাজ থেকে দেখা ছোট্ট একটা দৃশ্য আমি বোধহয় কোনদিন ভুলবনা। সেটাই লিখছি—

ওদের বাসস্থানের পাশে যে হালকা জংগল মত আছে ওখানে আমি একটা ছেলে আর একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। মেয়েটার বয়েস অনেকটা ক্লাস সিক্স-সেভেনে পড়ার মত হবে, পরনে একটা খুবই নোংরা ছেড়া সালোয়ার। মেয়েটা অনেক পিচ্চি, সালোয়ারের ঝুলটা ওর হাটুর অনেক নিচ পর্যন্ত চলে এসেছিল। আর ছেলেট উলংগ, বয়েস ২/৩ বছর বোধহয় আমি জানিনা, তবে হাটতে পারে মোটামুটি কথা বলতে পারে এমন অনেকটা। আন্দজ করা যাচ্ছিল যে ওরা ভাই-বোন । মেয়েটা ঝোপের মধ্যে পেয়ারা কুড়োচ্ছিল, রাখার মত কোন ঝোলা ছিলনা হাতে, সালোয়ারের নিচটা টেনে অনেকটা ব্যাগের মত বানিয়েছিল আর পেয়ারা গুলো ওর মধ্যে রাখছিল। হঠাত দেখলাম ওর ছোট ভাইটা নিচু হয়ে একটা পেয়ারা কুড়িয়ে নিল, মুখের ভিতর দিয়ে যাবে ওমনি বোনটা কেড়ে নিল ওটা। ভায়ের দিকে তেমন মনোযোগ না দিয়েই পেয়ারটিকে ওর নোংরা সালোয়ারের সাথে কয়েকবার ঘষা দিল। তারপর সেটা ভাইয়ের হাতে দিয়ে সামনে চলে গেল পেয়ারা কুড়োতে- এই দৃশ্যটাই আমার চোখের সামনে দিয়ে যাচ্ছেনা।

মেয়েটা ওর কাজের মধ্যেও ঠিক ওর ছোট ভাইটার খেয়াল রেখে চলেছিল, সে জানত এই পেয়ারাটাতে মুখে দিয়ে দিলে ওর ভাইয়ের ফুড পয়জনিং হতে পারত। কিন্তু পাগলীটা কি জানত ঐ ফলটাতে E-coli, Clostridium কিংবা Salmonella র মত জীবানু থাকতে পারে, যেটা কাপড়ের ঘষাতে দূর হয়না এবং ওর শরীরের কাপড়টাও যথেষ্ঠ নোংরা কিংবা মাটিতে পড়ে থাকা পাকা পেয়ারাটার ভিতরে পোকাও থাকতে পারে !!! না, এতকিছু না ভেবে মেয়েটা ঠিক বোনের দায়িত্ত্ব পালন করেছিল আর আমি হলফ করে বলতে পারি ওটা ঐ ছেলেটার কিচ্ছু হবেনা……কিচ্ছু না। হয়ত যুক্তি দেখাতে বললে দেখাতে পারব না, তবে যেই খাবারটাতে এত স্নেহ লেগে থাকে সেখানে ঐ ব্যাকটেরিয়া গুলো ওর কি ক্ষতি করবে !!! আমি অলৌকিকে বিশ্বাস করি, বিশ্বাস করি এবং বিশ্বাস করি…তিনবার বললাম। আর সেই বিশ্বাস থেকেই বলছি – বোনের স্নেহ আর ঐ E-Coli দুটাই আল্লাহর সৃষ্টি , কেন জানিনা মন জোর দিয়ে বলছিল বোনের এই স্নেহের কাছে ব্যাকটেরিয়া কখনো জয়ী হতে পারেনা। দৃশ্যটা অনেক সাধারন আমি জানি সেটা নিয়ে এতটা প্যাচাল পাড়া লাগেনা এটাও বুঝি। আপনাদের খাবার টেবিলে হয়ত এটা নিত্যদিনের ব্যাপার। তবে আমার কাছে এতটা এক্সাইটেড লেগেছিল কেন ঠিক জানিনা হয়ত আমার কোন বোন নেই হয়ত সেজন্য। হয়ত ঐ বাচ্চা ছেলেটাকে দেখে একটু হিংসা করেছিলাম সেদিন। এই বাস্তু ভিটা হীন মানুষগুলো আমাদের মত বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেনি … কিংবা ঐ বাচ্চা মেয়েটাকেও মোটা মোটা বই পড়িয়ে মানবিকতার শিক্ষা দেওয়া হয়নি । তবুও ওরা মানবিকতার চর্চা করে চলেছে নীরবে … আর আমরা যারা নিজেদের সভ্য সমাজের মানুষ বলে ক্লেইম করি, তারা অনেকেই বছরের পুরোনো বইয়ের সাথে ওটাকে মুড়িয়ে শিকেয় তুলে রেখেছি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×