somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুঃখজনক বাস্তবতা, এবং এর ভবিষ্যত (একটি কাল্পনিক গল্প)

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০২০ সাল, জুলাই-আগস্ট মাসের কোন একটা অলস দুপুর। ঢাকার পল্টনে চৌরাস্তার মোড়ে কয়েকজন কিশোরকে দেখা যাচ্ছে ছুটোছুটি করে কিছু মলাট করা কাগজ বিক্রি করার চেষ্টা করছে। বিভিন্নভাবে তারা পথচারীদের আকৃষ্ট করে যাচ্ছে, তাদের একজনকে লক্ষ্য করে তার কথাগুলো শোনার চেষ্টা করলাম...

-"এএএএ বাআআইইই একদাম একদাম মাআআত্র পনের ট্যাহা! পনের ট্যাহায় কইরা ফালান আফনার ভবিষ্যত ফকফকা!!
আয়া পরেন... আয়া পরেন... আয়া লয়া যান, থাকবেন সুখে শান্তিতে আল্লাহ মেহেরবান!
একদাম একদাম, আগে আইলে আগে পাইবেন, লেইট কইরলে পস্তাইবেন!"

বেশ কৌতুহল হল, ঘটনা বুঝার জন্য তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো কি না ভাবতে ভাবতেই দেখলাম আঠারো-উনিশ বছরের একটা ছেলে তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, পরনের জামাকাপর আর কাধে ব্যাগ দেখে আন্দাজ করলাম যে সে ছাত্র। কি ঘটে দেখার জন্য অপেক্ষা করলাম।
ঃ-"অই মামা , কত করে দিবা?"
-"একদাম পনের মাম্মা...এএএএএকদম শিউর শাকসেস মামা, লয়া যান, এখনো ঢাকা শ্যাষ হয়নাই"।
ঃ-"আরেহ,কি বল, গত বছরই ত দশ টাকায় বিক্রি হল, এবার আবার পনের কেন?"
-"আরে মামা, ওইডা তো রাজশাহীরডা আসিলো, এবারকার ঢাকারডাও আমার কাসে আসে দেইখা কইতাসি, দামখান একটু বেশি, তাও আপনেগো লাইগা তো অত বেশিও না। পাচখান টেহা বেশি দিতে পারবেন না? :D "
ঃ-"এসব বলে লাভ নাই, দশ টাকায় দিলে দিবা, নাইলে অন্যখানে দেখলাম। আমার সাথে হাংকি পাংকি করে লাভ নাই। এবার ঢাকা মেডিকেলের সিটও দশ টাকায় পাওয়া যায়।"
-"আচ্ছা মাম্মা লয়া যান, আপনেগো লাইগাই তো লয়া আসি, লন :#) "
ঃ- "এইই নাও"
-"আচ্ছা মামা, একটা কথা কই, মনে কষ্ট নিয়েন না।"
ঃ- "হ্যা বল।"
-" ইয়ে মানে শুনসিলাম পাঁচ বচ্ছর আগে নাকি এই প্রশ্ন লাখ লাখ টাকায় বিক্রি হইসিলো?? সত্যি নাকি মাম্মা? শুনলে গায়ের লোম খাড়া হয়া যায়"
ঃ- "তা সত্যি, তখন অবশ্য এসব নিয়ে আন্দোলন হয়েছিলো, এখন ওসবের পাত্তা নেই। মেডিকেলে এখন কেউ পড়ে পরীক্ষা দেয় না। নাম কা ওয়াস্তে পরীক্ষার প্রচলন আছে, তাই প্রশ্ন কিনে পরীক্ষা দেয়। সিটও কিনে রাখা থাকে, সবই আনুষ্ঠানিকতা। আগের কথা ভেবে লাভ নাই, তখন প্রশ্ন ফাঁশ একটা অপরাধ ছিলো। লুকিয়ে লুকিয়ে চুরি করে প্রশ্ন নিতে হত, ঝুঁকি ছিলো অনেক, তাই দামও ছিলো সেইরকম। এখন তো সবার কাছে পানি-ভাত হয়ে গেছে। কেউ প্রশ্ন না কিনে পরীক্ষা দিলে এখন তাকেই বেকুব বলা হয়। বুঝলা? "
- "জ্বে মামা, বুঝতে পারসি"
ঃ- "থাকো তাইলে , গেলাম। ডাক্তার হইলে আইসো, ডিস্কাউন্ট দিবো নে।"
- " ধইন্যবাদ মামা , আমগো পরিচিত কবিরাজ আছে, অর কাসেই যাই, আম্মার কাসে কসম দিসি সরকারী কলেজের ডাক্তারের কাসে মা রে লয়া যামু না। নিজেও যামু না, মরনের ভয় আসে। কেউ নাহি বাচে না।"
ঃ- "আচ্ছা তাহলে কি আর করা, থাকো, প্রশ্ন বিক্রি করো। "
- "জ্বে মামা, ভালা থাইকেন। আমি যাই।
এএএএ বাআআইইই একদাম একদাম মাআআত্র পনের ট্যাহা! পনের ট্যাহায় কইরা ফালান আফনার ভবিষ্যত ফকফকা!!
আয়া পরেন... আয়া পরেন... আয়া লয়া যান, থাকবেন সুখে শান্তিতে আল্লাহ মেহেরবান!
একদাম একদাম, আগে আইলে আগে পাইবেন, লেইট কইরলে পস্তাইবেন......"

(সমাপ্ত)



আমি জানি, ছোট একটি ঘটনা দিয়ে যা বুঝাতে চেয়েছি তার তেমন কিছুই বোঝাতে পারিনি। বোঝানো সম্ভবও না। এই বছরের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় যে অবিচার হয়েছে, তার একজন ভুক্তভোগী অনেক খেটে পড়াশুনা করা, ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখা কিছু ছাত্র। পরীক্ষা দিয়েছিলও, কিন্তু চান্স পায়নি। আসলে চান্স পায়নি বললে ভুল হবে, বলতে হবে প্রশ্ন পাইনি। অপরদিকে টাকার জোরে প্রশ্ন পেয়ে চান্স পেয়ে বীরদর্পে সেইসব ছাত্ররা বোধহয় মেডিকেলের জন্য কিভাবে পড়লে চান্স পাবে তার পরামর্শ দিচ্ছে। এর কোন সুরাহা হবে কি না আমি জানি না। কিন্তু শিক্ষাব্যবস্থা, ভবিষ্যত ডাক্তারদের পরিস্থিতির উপর কিন্তু সাধারন মানুষের ভালো-মন্দও নির্ভর করে। কারন একদিন না একদিন সেই সব সৎ(!), সরকারী কলেজে পড়ুয়া ডাক্তারদের কাছে আপনারাই চিকিতসার জন্য যাবেন। প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়ে পাস করা একজন ডাক্তার কতটুকু যোগ্য, তা কাউকে খাতা কলমে লিখে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। এতে আপনার ভালো হবে না খারাপ হবে আশা করি নিজেই বুঝতে পারবেন। দেশকে এরকম আসন্ন দুরাবস্থা থেকে বাঁচানোর জন্য, যাতে উপরে লেখা কাল্পনিক গল্পটি সত্য না হয়ে যায় তার জন্য, আমাদের সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। আসুন আমরা সবাই এর বিপক্ষে নিজেদের মতামত প্রকাশ করি। আন্দোলনের মাধ্যমে যোগ্যকেই তার স্থান দেয়ার চেষ্টা করি। ছাত্রদের জন্য না হলেও নিজের জন্য আন্দোলনে যোগ দেই। মনে রাখবেন, এর সাথে আপনার ভবিষ্যত, আপনার স্বাস্থ্যও জড়িত। একটিবার নিজের পরিবারের দিকে তাকিয়ে আন্দোলনে যোগ দিন, আজকের ছাত্রদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ। এই ভবিষ্যৎ কার হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে, তা নির্ধারন করার সময় এখনো আপনাদের হাতে আছে, সময় থাকতেই এগিয়ে আসুন। এখনো খুব বেশি দেরি হয়নি। আপনাদের একতাই আমাদের অস্ত্র আর শক্তি। :)
ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:১৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×