সারা দেশে এখন খালি একটাই রব – ‘টিকেট’! ২৪ ঘন্টা আগে থেকে লাইনে দাঁড়ানো তো চলছেই, এছাড়া বাকিরা যে যেভাবে পারতেসে, নিজস্ব ‘জ্যাক’ বা লিঙ্কগুলা বাজিয়ে দেখার ট্রাই মারতেসে! হ্যাঁ, এটাকে অবশ্য আপনি ভ্যালিডিটি যাচাইয়ের একটা পন্থা হিসেবেও চিন্তা করতে পারেন - যাকে আপনি স্ট্রং লিঙ্ক ভাবতেন সে আসলে ঠিক কতটা স্ট্রং?
আরেকটা পক্ষও আছে যাঁরা সরাসরি অস্ত্র ও গায়ের জোর খাটিয়ে (ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা) লাইনের লোকদেরকে হটিয়ে টিকেট কেনার পাঁয়তারা করতেসে। এনাদের বিরুদ্ধে কথা আর কি বলব? এঁদের হাতে তো আমরা জিম্মি হয়ে আছিই। এঁদেরকে তাই আমার আলোচনায় আনার সাহস পাচ্ছি না আপাতত।
আমার আলোচনার টপিক সেসব সাধারন জনগন যারা আজকে দুভাগে বিভক্তঃ এক পক্ষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, আরেক পক্ষ লিঙ্ক লাগিয়ে বসে আছে। একটা পয়েন্টে অবশ্য দুই পক্ষই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। লাইনে দাঁড়ানো লোকজন যেমন নিশ্চিত নয় সে আসলেই টিকেট পাবে কি না; তেমনি যারা লিঙ্ক ধরে বসে আছে তারাও নিশ্চিত নয়, কারন সে যাকে লিংক ধরেছে, তার চেয়েও বড় রুই-কাতলা লিংককে আরেকজন ধরে বসে আছে নিশ্চিত!
যাই হোক যারা ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছে, তারা যখন টের পাচ্ছে যে আরেকজন সিস্টেম করে (জ্যাক লাগিয়ে)টিকেট জোগাড় করে ফেলেছে, তাদের ক্ষিপ্ত হয়ে উঠাটা খুবই স্বাভাবিক! এখন যে লোকটা সিস্টেমে টিকেট পেয়ে গেল, তাকে যখন জিজ্ঞেস করলাম, সে উলটা প্রশ্ন করলঃ ‘‘ভাই, সত্যিকার অর্থেই আমার টাইম নাই এতক্ষন ধরে লাইনে দাঁড়ানোর! কিন্তু আমার খেলা দেখার ইচ্ছা কিন্তু ওই যারা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। এখন আমার ‘জ্যাক’ ধরা ছাড়া কোন উপায় কি আছে, বলেন?’’ হুম, আপনি অনৈতিক কাজ করছেন, তবে আপনার কথায় যুক্তিও আছে বটে।
যারা ২০/২৪ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তাদের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, আপনাদের এই ২৪ ঘন্টা আগে লাইনে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা কতটা সমর্থনযোগ্য? এই যে আপনি ২৪ ঘন্টা আগেই দাঁড়িয়ে গেলেন লাইনে, সবার কি এইভাবে দাঁড়িয়ে পড়ার সময় আছে নাকি? আপনাদের কারনে শুধুমাত্র ওই লাইনে না দাঁড়ানো লোকগুলাই বঞ্চিত হচ্ছে না, যারা ৭/৮ ঘন্টা আগে লাইনে দাঁড়ানোর চিন্তা-ভাবনা করেছে তারাও অ্যাফেক্টেড হচ্ছে। যে ৭/৮ ঘন্টা আগে লাইনে দাঁড়াচ্ছে, সে গিয়ে দেখতেসে ইতোমধ্যেই ৪০০-৫০০ জন আগে থেকেই উপস্থিত! সে তখন কি করবে? আমি তো মনে করি টিকিট পাবার এই ‘নিশ্চিত’ অনিশ্চয়তায় সে প্রানান্ত চেষ্টা করবে তার কোন ক্ষুদ্র/বৃহৎ জ্যাককে কাজে লাগাতে!
তাই আমার কাছে মনে হচ্ছে দুই পক্ষই আসলে দোষী খানিকটা। আপনি ২৪ ঘন্টা আগে কেন দাঁড়িয়ে আরেকজনকে বঞ্চিত করছেন? আর আপনিই বা কেন অনৈ্তিকভাবে ‘লিঙ্ক’ ব্যবহার করে লাইনে দাঁড়ানো একজনকে বঞ্চিত করছেন?
দায়টা অবশ্য আপনাদের কাউকেই দিচ্ছি না। দায় হচ্ছে সরকারের, যারা ‘ডিজিটাল’ শব্দটাকে শুধু রাজনৈ্তিক ফায়দা লাভের উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করছেন, কার্যক্ষেত্রে ‘অ্যানালগ’ যাদের পিছু ছাড়ছেনা কোনক্রমেই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




