somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ভাবনার গভীরতা

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হুজুর মাথা নাড়িয়া কহিলেন, সে অনেক গভীর কথা। দোযখের মত গভীর।

পুছিলাম, দোযখের গভীরতা কত?
হুজুর মোবাইল বাহির করিলেন। গুগলে লিখিলেন, দোযখের গভীরতা। দিলেন সার্চ।

হুজুর কাছে ডাকিয়া কহিলেন, দেখো।

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/জাহান্নাম

এবার গভীরতা নিয়ে চিন্তায় পড়িলাম। হাহ্! অনেক গভীর নিঃসন্দেহে।
কাগজ কলম আনিলাম। হুজুর পড়িলেন,
আমরা একদা রাসূল ( ﷺ ) এর সাথে
ছিলাম। এমন সময় একটি বিকট শব্দ
শোনা গেল। রাসূল ( ﷺ ) বললেন,
"তোমরা কি জান এটা কিসের শব্দ?"
আমরা বললাম, "আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই
এ ব্যাপারে ভাল জানেন।" তিনি
বললেন, "এটি একটি পাথর, যা আজ
থেকে সত্তর বছর পূর্বে জাহান্নামে
নিক্ষেপ করা হয়েছিল, আর তা তার
তলদেশে যেতে ছিল এবং এত দিনে
সেখানে গিয়ে পৌঁছেছে।"-সহীহ মুসলিম,আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু তা'আলা
আনহু থেকে বর্ণিত।


হুজুরকে বলিলাম, ছোট মাথায় খেলে না, ছোট করিয়া উপমা দেন। ৭০ বছরের জায়গায় ৭০ সেকেন্ড পর শব্দটি শোনা গেলে তার গভীরতা কত?


হুজুর স্মার্ট। ফিজিক্সের জ্ঞান রাখেন। গুনগুন করিলেন।
৭০ সেকেন্ড এ পাথরের অতিক্রান্ত দুরত্বঃ কহিলেন, ধরা যাক, একটা পাথরের নিক্ষেপের পর তার শব্দ শুনতে ৭০ সেকেন্ড লাগে, তাহলে দুটি বিষয় চট করিয়া আমাদের মনে আসে। পাথরের পড়নের গতি, আর দ্বিতীয়টি হইল শব্দের গতি। পাথরটি গর্তে পড়িবে , একটা শব্দ হইবে, সেই শব্দটা ফিরিয়া শ্রোতার কান অবধি পৌঁছাইবে।


কাগজ কলম ক্যালকুলেটর সব'ই মজুদ।
পুছিলেন, প্রস্তুত?
মনে মনে আওড়াইলাম,
পাথর পতনের বেগঃ অভিকর্ষ ত্বরণ, g=৯.৮১মিটার/বর্গ সেকেন্ড।
হুজুরকে বলিলাম, ভুলিয়াছি সব।
"পড়ন্ত বস্তুর সূত্রাবলী" লিখে গুগলে সার্চ দেন।

হুজুর সার্চাইলেন।

notunboi.com/index.php?title=à§&#x
A8;.৬_à&
#xA6;ªà¦¡&
#xE0;¦¼à¦&
#xA8;্à&
#xA6;¤_ব
সà§
à¦¤à
§à¦°
_গতি


হুজুরকে বলিলাম,
মিটার না কিলোমিটারে হিসাব টানিবো?মিটারে ২৪০৩৪.৫ আসে, মানে ২৪ কিলোমিটারেরও অধিক।
পুছিলেন, কেমনে?
-সহজ, যদি অভিকর্ষ ত্বরণ g= ৯.৮১ হয়, একটি পাথর বিনা বাধায় মুক্তভাবে পড়তে দিলে ৭০ সেকেন্ডে কত দুরত্বঃ অতিক্রম করিবে? এরপর, পড়ন্ত বস্তুর সূত্র "এইচ সমান হাফ জি টি স্কয়ার" ফেলিয়াছি। অঙ্ক ধামাধাম।

হুজুর পুছিলেন, আচ্ছা, শব্দটা শোনার জন্য যে পথটা ফিরিয়া আসিতে হইবে সেইটা কত?
কহিলাম,ঐ। তা প্রায় ২৪ কিলোমিটার।
-সেই সময়টা ৭০ সেকেন্ড থাকিয়া মাইনাস করা হইয়াছে কি?
জিভে কামড়াইয়া বলিলাম, হাহ্! হিসাবটা আবার করিতে হৈবে তবে।


মাইনাস ফরমূলা বড়ই কঠিন। একদা সরকার প্রশাসণে ইহার প্রয়োগে নানারুপ বিড়ম্বনা ঘটিয়াছিল।


জটিল পরিস্থিতিতে পড়িয়া মাথা-মগজে প্রশ্ন করিতেছে ঘুরঘুর।

জিগাইলাম, হুজুর,
গর্তখনিখানি ভূ-পৃষ্ঠে না হৈয়া যদি চন্দ্রপৃষ্ঠে হয় তাহাহ হৈলে ক্যালকুলেশন কী হইতো?
চন্দ্রমামাজির মহাকর্ষ বল নাকি পৃথিবীমাতাজির ৮ ভাগের ১ ভাগ। ভাইবোনের বাটোয়ারা; নিষ্পত্তি করা উত্তম।


হুজুর সহজিয়া কহিলেন, আট দিয়া ভাগ দিলেই মিলিবে। মানে, গর্তখানি সেক্ষেত্রে ৩ কিলো হৈবে।
কহিলাম, বাহারে! গর্ত কমিয়া আসিলো!!!
কেনো-কেনো? কি কারন???


হুজুর লাল জিহবা প্রদর্শণ পূর্বক কহিলেন, গ্রাভিটির কমবেশ।
ততোক্ষনে মুক্তমনে আর একটা প্রশ্ন উদিয়াছে, পুছিলাম, দোযখের গ্রাভিটি না জানিলে গভীরতা আন্দাজ করিবো তবে কিভাবে? উপাত্তের অভাব, প্রশ্নখানা আর একবার দেখেন।

-কোন প্রশ্ন? হুজুর পুছিলেন।
-ঐ যে, দোযখের গভীরতা কত? ৭০ বছর পর শব্দ শুনিয়া উহার গভীরতা আন্দাজা করিবার প্রশ্নখানি। উপাত্তের অভাব রাখিয়া প্রশ্ন, চাতুরীর নামান্তর যে!


হুজুর এইবার ৯০ ডিগ্রী অ্যাঙ্গেল নিয়া কহিলেন, প্রশ্ন করা হয় নাই তো কাহাকেও, শুধুমাত্র আন্দাজ করিবার কথা বলা হৈয়াছে।


হুজুর, নিজগুনে মিস্টেক মার্জনা করিবেন;
আরো একখানি সম্পুরক প্রশ্ন মনে খচখচ করিতেছে অনেক্ষণ । শব্দ শুনিবার বিষয়খানি। চন্দ্রে শব্দের গতি তো আর ৩৩২m/s নহে।

https://bn.m.wikipedia.org/wiki/শব্দ

উহা বাতাসে। চন্দ্রে বাতাস নাই, দোজখের আন্দাজাও কাহারও নাই। শব্দ কি তবে ইথারে ভাসিয়া আসিবে? নাকি প্রস্তর অথবা লোহালক্কড় মারফত? নাকি ত্বরিত চৌম্বকীয় ক্ষেত্র মারফত, যেইভাবে সূর্য থাকিয়া আলো ও তাপ একইসাথে-একইবেগে পৃথিবীতে আসে কোনো মাধ্যম ছাড়াই। এঁইরূপ সুনির্দিষ্ট উপাত্তগুলো এ্যাভয়েড করিয়া প্রশ্নখানিই যে খোঁড়া, অবান্তর।


হুজুর উদ্বিগ্ন মুখে কহিলেন, দোযখের গভীরতা বুঝিবার তৌফিক কাহারও নাই, আন্দাজ করিবার ক্ষমতাও নাই। দোজখের কোনো অভিকর্ষজ ত্বরনের মান কাহারও জানা নাই, তাহার পৃষ্ঠে শব্দটা ফেরতের মাধ্যম কী(বায়ু, না লোহা), সেটাও কাহারও জানা সাধ্যের অতীত। এইসব আমাদের জ্ঞানের পরিসীমার বাহিরে, ঊর্ধ্বে। ঘাটাঘাটি করা নাজায়েজ। শতকোটি আলোকবর্ষ আমরা ভাবিতে পারি, তাই বলিয়া অসীম' নয়।


বুঝিলাম, হুজুর বেকায়দায় চোট পাইয়া আসমান তোলপাড় করিতেছেন। মহাকর্ষ অভিকর্ষ তথা গ্রাভিটি উপেক্ষা করিয়া উহাদের ঊর্ধ্বে আসন পাতিয়া বসিয়া আলাপ ঘুরাইতেছেন সুকৌশলে। কঠিন, তরল, বায়বীয় মাধ্যম এড়াইয়া ইথারীয় মাধ্যমে শব্দ সঞ্চালন করিতেছেন।


আরও বুঝিতে বাকি রহিল না যে,
হুজুর দুরত্বের হিসাবটা আলোকবর্ষ দিয়া করিতে জানেন বটে। বাট পড়ন্ত বস্তুর সহিত তাহার যোগসূত্র মিলাইতে গিয়া গুবলেট পাকাইয়াছেন নিশ্চয়।


আমজনতা চিন্তায়। সত্তুর বছরের চিন্তায়। হাজার হোক, ৭০ বছরের কথা!


এই কথাটাই ভাবিবার বড় বিষয়, অন্যগুলো না ভাবিলেও চলে।
মোদ্দা কথা, জনগনকে ভাবাইতে শিখাইলেই হৈল, টপিক ধরাইয়া দিলে পূন্যবান নিজ দায়িত্বে ভাবুক, সে দায় কি হুজুরের?


আমি হুজুরের সাথে এই 'ভাবাভাবি'র বিষয়ে সহমত। মারহাবা হুজুর, যতটা গানিত, ফিজিক্স বা বিজ্ঞানে জ্ঞান, তার চেয়েও অগাধ পান্ডিত্ব মনোবিজ্ঞান বা মনঃস্তত্বে আপনার; যুগে যুগে।


(জনগনকে ভাবাইতে শিখাইলেই হৈল, টপিক ধরাইয়া দিলে পূন্যবান নিজ দায়িত্বে ভাবুক, সে দায় কাহারো নয়।)

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×