ঠিক সেইভাবে ঘটা করে পাত্রি দেখতে যাওয়ার সময়,সুজোগ কিংবা অভিজ্ঞতা কোনটাই এর আগে ছিলনা, হঠাৎ করেই গত বছর এক বন্ধুর সাথে মেয়ে দেখতে গেলাম মেয়ের দাদার বাড়িতে।এখানে একটা বিষয় পরিস্কার করে রাখা ভালো মেয়ে দেখতে যাচ্ছিলাম আমার বন্ধুর জন্য(আমার নিজের জন্য হইলে তো একখানা নিমন্ত্রন্য পেতেন এতদিনে) সাথে বন্ধুর সম্পর্কের এক চাচা ও আছে। যাওয়ার আগে পাত্রের মুখে খানিকটা বিস্ময়,রহস্যের আর চিন্তার ছাপ,তবে আমি ছিলাম খুবই ফুরফুরে মেজাজে। জীবনের প্রথম কোন পাত্রি দেখতে যাওয়ার সহযাত্রী আমি,তাও আবার ছেলের একমাত্র বন্ধু হিসেবে সাথে যাচ্ছি, কিন্তু যদিওবা কারো বাসায় গিয়ে পাত্রী দেখার এইসব ব্যাপারস্যাপার আমার কাছে একদম পছন্দনীয় নয়, কেমন যেন হাটবাজার কিংবা নিলাম কেন্দ্রিক ঘটনা মনে হয় আমার কাছে,তারপরেও বন্ধুর জোরাজুরিতে আর না করতে পারলাম না,সামাজিক প্রথায় গা ভাসিয়ে আয়রন করা শার্ট,প্যান্টের সাথে বডি স্প্রেরের সুগন্ধ মাখিয়ে এক খানা গার্ডিয়ান মার্কা ভাব নিয়ে রওনা হইলাম।
পাত্রীর বাড়িতে গিয়ে গল্প গুজোবের সাথে নানা রকমের খানা-দানা আর আপ্যায়ন চলছে,আমার নজর শুধু খানাপিনার দিকে আর তালে তালে সবার গল্পের সাথে শুধু হু,হা, করে তাল মেরে যাচ্ছি। এর মধ্যে ঘটছে আর এক মজার ঘটনা, যাওয়ার আগে কে যেন আমার বন্ধুরে কানে কানে কইয়া দিছে যে মেয়ে দেখতে গিয়ে মিষ্টি,মিষ্টান্ন ছেলের খাওয়া ঠিক নয়,পাত্রি পক্ষ নাকি মিষ্টি-মিষ্টান্ন তে কি যেন সূরা-টূরা পইরা ফু দিয়ে দেয়।আর সেই মিষ্টি খাইলে নাকি ছেলে পুরাই ওই মেয়ের জন্য ফিদা হইয়া যায়!!! তবে যাইহোক পাত্রের এই মিষ্টি বর্জন আমার জন্য খুবই সু-প্রশন্ন হইয়া গেলো,পাত্র যখন কইলো যে সে মিষ্টি খায়না,তখন সবাই মিলে আমাকে জোর করতে শুরু কইরা দিল,আর ততক্ষণে আমার ভাগের মিষ্টিতো আমি শেষ কইরা ফেলাইছি, আর সবাই যখন এত আদর কইরা আমারে সাধতে লাগলো তখন আমি মুখে না,না,করতে করতে পাত্রের ভাগের মিষ্টি ও ভোজন করতে শুরু কইরা দিলাম!!
এর মধ্যে পাত্রির আগমন ঘটিল,হাতে চায়ের কাপ নিয়ে।তবে এর আগে একজন জিজ্ঞেস করে গেছে যে,কে রং চা আর কে দুধ চা খাবে।পাত্র সাহেব খাবেন রং চা আর আমি দুধ চা'য়ের কথা বললাম ,তো পাত্রী রুমে প্রবেশ করে ভদ্রতা বশত সবার সামনে চা রেখে আমাদের সামনে এসেছে দুই কাপ চা ট্রেতে করে নিয়ে, একটা কাপে দুধ চা,আর একটা কাপে রং চা।কিন্তু সমস্যা হইছে পাত্রী আমাদের সামনে এসে ভুলে গেছে যে কাকে কোন চায়ের কাপ দিতে হবে।আমি মেয়ের চশমা পরা চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি কনফিউশন,সাথে সাথে মাথায় কুবুদ্ধি এসে হাজির,মেয়েরে বললাম আমারে রং চা দেন,সাথে সাথে পাত্র সাহেব বলে উঠলো তুই না দুধ চা খাবি বললি।এই কথা শুইনা মেয়ে তো আরো কনফিউজড!! এবার আমি মেয়ের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখি,মেয়ে আমার দিকে রাগান্বিত হয়ে বাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে।আমি ভয়ে ভয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম,তারপরে পাত্রী আর কিছু না বলে চায়ের কাপ দুইটা সামনে রেখে তার নিদ্রিষ্ঠ আসন গ্রহন করলেন।সবাই চা'য়ে চুমুক দিচ্ছে আর গল্প গুজব করছে আর সাথে মেয়ের সাথে টুকটাক আলাপচারীতা হচ্ছে,গার্ডিয়ানদের পালা শেষে পাত্র মশাই ও টুকটাক কথা বার্তা জিজ্ঞাসাবাদ করে নিলেন,আমি শুধু চুকচুক করে চা'য়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি আর গল্পের সাথে সাথে পাত্রীর রুপদর্শন করছি।অসম্ভব সুন্দর রুপবতী, দেখতে শীতকালে নতুন গজিয়ে ওঠা নচনচে লাউ গাছের মত,কথাবার্তা ও বলছে খুবই চমতকার ভাবে,পাত্রীর চোখ জোড়ায় সপ্নীল সৌন্দর্য ঝরে পরছে,কিন্তু যে ভারি গ্লাসের চশমা চোখে তা দেখে নির্দিধায় বলে দেয়া যায় মুখস্থ করন টাইপের পড়ুয়া মেয়ে!! একফাকে আমি বন্ধুর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম মেয়েকে দেখে শুধু সপ্ন ভাসছে চোখে আর ঠোটের কোনায় মিষ্টি বাকা হাসির নহর!!
সবার গল্পে গল্পে জানতে পারলাম মেয়ে পড়ালেখার সুবাদে সুদুর ঢাকা শহরে থাকে,নামকরা কোন এক প্রাইভেট ভার্সিটি তে BBA তে পড়ে।চেহারা সুরুতেও সেই ছাপ,চোখ বন্ধ করে বলে দেয়া যায় যে বিউটি পার্লার নামক সাজুগুজু ঘড়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ আছে।এর মধ্যে কেউ একজন আমার চিন্তার জগতে টোকা দিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তুমিতো পাত্রের বন্ধু তুমি যে কিছুই বলছ না,আমি খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে হাসি দিয়ে বললাম,আমার আর কি বলার আছে, কিন্তু না,সবাই নাছোড়বন্ধ, বলছে তোমার কিছু জিজ্ঞাসা করার থাকলে কর।কি আর করা,কিছুতো একটা বলতেই হয়, আমি তখন পাত্রী কে জিজ্ঞাসা করলাম,আচ্ছা আপনার নানুবাড়ি কোথায়?? পাত্রী দেখি কিছুই বলছেনা,ভুলে গেছে মনে হয়, পাশে থেকে আর একজন ফিসফসিয়ে কি যেন বলে দিল,আর সাথে সাথে পাত্রী বলে উঠলো সেই থানার নাম।আবার আমার মাথায় কুবুদ্ধি এসে ঘুতাঘুতি শুরু কইরা দিল, আমার আগের ধারনাই ঠিক, মুখস্থ করন টাইপের পড়ুয়া মেয়ে!!আমার আর বুঝা বাকী রইলো না যে,এই প্রশ্ন মেয়ের কমন পড়ে নাই।আমি তখন আবার উল্টা প্রশ্ন করলাম কোন পাড়ায় যেন??? মেয়ে আবারো চুপ,কিছুই বলেনা,আবার ফিসফসিয়ে পাশে থেকে কে যেন কি বলে দিল।আমি তখন মিচমিচিয়ে হাসছি, মেয়ের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছেনা, প্রশ্ন কমন নাই!!
তারপরে মেয়ের এত সুন্দর শুকনা মলিন মুখখানির দিকে তাকিয়ে আর বেফাঁস কোন কিছু জিজ্ঞাস করা হয়নি।পরে ছেলে পক্ষের সবার সবকিছু পছন্দ হলেও, মেয়ে তার নিজের নানাবাড়ির ঠিকানা বলতে পারেনা এই শাস্তিযোগ্য অপরাধ আর কেউ মেনে নেয়নি!!
সব দোষ এই আমার কেনো যে হঠাৎ কইরা কুবুদ্ধি আইসা মাথায় ঘোরাফেরা করে!!
তবে যাইহোক, যে সমস্ত পাত্রীগণ বিবাহের উপযোগী হয়েছেন তারা ঢাকা, লন্ডন,আমিরিকা কিংবা যেখানেই পড়ালেখা করেন না কেনো,নিজের নানা-দাদা বাড়ির ঠিকানা মুখস্থ কইরা ফেলেন,এইটা ২০১৪ সালের প্রশ্ন,যে কোন সালে রিপিট হইতে পারে!!!
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




