একবিংশ শতাব্দীর এক দশক চলে যাচ্ছে। বড় ক্ষিপ্র, সর্বগ্রাসী সময় এখন। মানুষের হূদয়কে অবরোধ করে দ্রুত প্রবাহমান। গাঢ় অন্ধকার থেকে আমরা এ পৃথিবীর আজকের মুহূর্তে এসেছি। আজ অনেক হিংসার খেলা, অনেক দেষ, পণ্যজাত শরীরের মৃত্যু দেখছি প্রতিক্ষ্ণণ।
“ সে এক বিচ্ছিন্ন দিনে আমাদের জন্ম হয়েছিলো
ততোধিক অসুস্থ সময়ে
আমাদের মৃত্যু হয়ে যায়।“
- এ শতাব্দী সন্ধিতে মৃত্যু/ জীবনানন্দ দাশ
এখন জীবন মানেই ক্রমাগত ছুটে চলা।এখন জীবন মানেই অনিশ্চিত জীবনের তরে খানিক নিশ্চিন্তি প্রাপ্তির অবিরাম প্রোতিযোগিতা।প্রযুক্তির বন্যাতে ভেসে চলার প্রতিটি মুহূর্তে জীবনকে মানিয়ে নেয়া নতুবা পেছনে পড়ে থেকে চাওয়া আর পাওয়ার অসম সমীকরনের শুধি নির্ণয় করা। ইতিহাসের খেরোখাতা থেকে “অণির্বান”রা ক্রমাগত হারিয়ে গিয়ে ঠাঁই করে নিচ্ছে এক একজন বামপন্থী পুজীঁবাদী। ধনের অদেয় কিছুই নেই। সবাই এখন এক খন্ডিত বনিক পৃথিবীর জীব। একই সমাজের ধারায় একই ভাসমান তৃণ।
দুই
ঢাকা, মুম্বাই বা লস এঞ্জেলসের পাঁচ তারা হোটেলে, KFC কিংবা Pizza Hut এ নন্দন কিংবা ফ্যান্টাসী কিংডমে কিছু ঝকঝকে তরুন-তরুনী, আটোঁ জিন্সের প্যান্ট একটু নীচে নামানো, পেছনে উঁকি দেয়া অন্তর্বাস “Crocodile” অথবা “Calvin Klein” এর সপ্রতিভ দৃষ্টি আকষর্ণ, হাতে একেবারে হালফ্যাশনের মোবাইল ফোন, যারা কিনা যা খুশী করার সাধীনতাটা চেটেপুটে খাচ্ছে, যাদের কোন আবডাল নেই, কে কি ভাববে ভাবনা নেই।
দিব্যি আছি আমরা।
বাংলা নববর্ষে মঙ্গল শোভাযাত্রা শেষে, বছরে প্রথম এবং শেষ বারের মত পান্তা ঈলিশ খেয়ে তথাকথিত সংস্কতিবান কর্মীর কিশোরী কন্যা গুলশানের বন্ধুর বাড়িতে “উফ তেরি আদা” এর সঙ্গে তার দুধষ নাচ, তার আগে শহরের DJ পাটিতে এক চক্কর। অনিয়ন্ত্রিত ভোগবাদ, Commodity Fetishism, উদ্দাম জীবন চর্চা বিশ্যায়ন এর অনুসংগ হিসেবে আজ আমাদের দোরগোড়ায়।
“আমাদের স্পর্শাতুর কন্যাদের মন
বিশৃংখল শতাব্দির সর্বনাশ হয়ে গেছে জেনে
সপ্রথিভ রূপসীর মতো বিচক্ষন,
যে কোন রাজার উতসাহিত নাগরের তরে;
পৃথিবীর বার গৃহ ধরে তারা উঠে যেতে চায়।
নীরবতা আমাদের ঘরে।“
- সাতটি তারার তিমির/ জীবনানন্দ দাশ
তিন
বোধ গুলোও ক্রমাগত ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। আগের মত ব্যঞ্জনাময় তীর হয়ে আর বিদ্ধ করে না তবে ছূঁয়ে যায়। প্রতিদিন সকাল বেলা এক গাদা দুঃসংবাদ নিয়ে দৈনিক পত্রিকাটা যখন প্রতিবারর মতো হাজির হয় তখন অক্ষম ক্রোধ ছাড়া আমি এক ভেঁতো বাঙ্গালির কিছুই করার থাকেনা। বরং অনেকটা অসহায় আর নির্বাক হয়ে পড়তে থাকি যখন পড়ি আড়াই বছরের একটি শিশু আজ মানুষ দেখলে ভয় পায় কারন কোন এক পশু তাকে ধর্ষণ করেছে। পিঠের উপর উদ্যত সহপাঠীর দা কিংবা চাপাতি’র ছবি আজ আর আমাদের বেদনাহত করে না যেমন করে না কোন ভন্ড পীরের ছোট্ট শিশুকে লাথি দিতে দিতে গড়িয়ে নেবার সচিত্র প্রতিবেদন। কারন জীবনে আমরা সবাই আজ মেনে নিতে শিখে গিয়েছি। শিখে গিয়েছি কিভাবে মালা বিক্রি করা ছোট্ট শিশুকে বলতে হয় “মাফ করো”। আমরা জানি আমাদের সময়গুলো এভাবেই কেটে যাবে, কেটে যচ্ছে।
“ মনে হয় এর চেয়ে অন্ধকারে ডুবে যাওয়া ভালো।
এই খানে
পৃথিবীর এই ক্লান্ত, এ অশান্ত কিনারার দেশে
এখানে আশ্চর্য সব মানুষ রয়েছে।
- এই সব দিন রাত্রি/জীবনানন্দ দাশ
চার
ওবামা থেকে শুরু করে আমরাও আমাদের দেশে দিনবদল আমদানী করছি। খোদ বৃটেনে যখন দিন বদল আমদানী করে এক দশক পর টোরি দল ক্ষ্মমতায়, তখন আমরা তো কোন ছার।কিন্তু আমাদের দিন তো বদলায়না! প্রতি ঘন্টা অন্তর বিদ্যুতের অবিরাম লুকোচুরি খেলা যখন থামেনি, দ্রব্যমূল্য যখন হাতের নাগালের আসি আসিও করছেনা, দু;সহ ট্রাফিক জ্যাম যখন কেড়ে নিচ্ছে প্রতি মুহূর্তের ঘাম আর ঘন্টা, আমাদের বিশ্যবিদ্যালয়ের সোনার ছেলেরা যখন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মেতে উঠছে ধবংস – সুখের উল্লাসে তখন আমাদের দিন বদলের সপ্ন আর আট দশটা অসমাপ্ত ছোট গল্পের কাহিনীই রয়ে যায়।
“এই খানে স্মৃতি
এই খানে বিস্মৃতি তবু; প্রেম
ক্রমায়াত আধাঁরকে আলোকিত করার প্রমিতি”
- অনেক নদীর জল/ জীবনানন্দ দাশ
পাঁচ
লেখাটি পুরোমাত্রায় পৌনঃপুনিকতা দোষে দুষ্ট। এই সব কথা আরো অনেক হয়েছে, অনেক ভাবে হয়েছে। সেটি সীকার করে নিয়েই বলতে ইচ্ছে করে “পরিবর্তনের দমকা হাওয়ায় বদলে যাক সবকিছু”। জাতির জনকের হত্যাকারীদের ফাসীঁর রায় কার্যকর চুড়ান্ত বিজয় নয় বরং হতে পারে বিজয়ের পথে একটি মাত্র ধাপ। ৩৯ বছরের পাপ আজও শীরায় শীরায় প্রবাহমান। যেতে হবে অনেক দূর।
“জানি এরকম দিন আজও আসেনিকো।
এরকম যুগ ঢের-হয়তোবা আরো ঢের দূরের জিনিস”
- বিস্ময়/ জীবনানন্দ দাশ
“তবুও তো পেচাঁ জাগে, গলিত স্থবির ব্যাং আরও দুই মুহুর্তের ভিখ মাগে, অনুমেয় উষ্ণ অনুরাগে” – মানুষ তবুও তো সপ্ন খোঁজে। দিগন্তের কাছে দাঁড়িয়ে উদ্ধত হয়ে আকাশের পানে তাকায়। জীবনের খোলনলচে পালটে শুরু করতে চায় ভালোবাসার যৌথ খামার, আহবান জানায় সুমন –
“এসো প্রেম পড় যোদ্ধার সাজ, এসো চুম্বন গ্রেনেড হও, এসো ভালোবাসা আলোর সরাজ, আমার গানের আদর হও”
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:১৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




