somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনারঃ পর্দার আড়ালে এক উম্মে সাহেরা খাতুন

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভাষা আন্দেলনের প্রথম শহীদ রফিক। তিনি মানিকগঞ্জের সন্তান। শ্রদ্ধাভাবে তাকে বুকে ধারন করে মানিকগঞ্জবাসী তথা সারা দেশবাসী। তিনি আমাদের গর্ব। আর তার গর্বে আমরা গর্বিত। জাতি হিসাবে এটা আমাদের খুব বড় সম্মানের যে, পৃথিবীতে এক মাত্র আমরাই জাতি যারা, ভাষার তরে জীবন দিয়েছি।ভাষা শহীদদের জন্য শ্রদ্ধা লয়ে নির্মিত শহীদ মিনার। ১৯৫৪ সালে মানিকগঞ্জে নির্মিত হয়েছিল এ জনপদের প্রথম শহীদ মিনার। তবে তার পিছনে রয়েছে আরেক ইতিহাস। এই ইতিহাসের যিনি সাক্ষ্য বহন করছেন তিনি হলেন, উম্মে সাহেরা খাতুন। এই শহীদ মিনারের মত কাল গর্ভে তিনিও হারিয়ে গেছেন। অনেকেই জানেনা তার সেই অবদানের কথা।

১৯৫৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস। তৎকালীন ছাত্র-জনতা উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে আসে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভাষা শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনার নির্মান করনের জন্য। নির্মিতও হয়ে যায় বেশ কিছু শহীদ মিনার। কিন্তু তৎকালীনপাকিস্তানী সরকারের রোষানলে সেগুলোর একটিও মাথা উচু করে দাড়িয়ে থাকতে পারেনি। ভেঙে ফেলা হয় সবকটি শহীদ মিনার। ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে পুষ্পাঞ্জলি দিয়ে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর স্বপ্ন অধরা রয়ে যাবার শঙ্কা জেগে উঠে। কিন্তু ছাত্র নেতৃবৃন্দ ছিল তাদের মননে অনড়। শহীদ মিনার হবেই। শুরু হল জায়গার সন্ধান। অবশেষে মিলে গেল । এগিয়ে এলেন যুক্তফ্রণ্ট সরকারের সাবেক মন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সহধর্মিণী উম্মে সাহেরা খাতুন।

মানিকগঞ্জ জেলা শহরের এস.কে গার্লস স্কুলের সামনেই সাহেরা খাতুনের বাড়ি। ছাত্র নেতৃবৃন্দ তাঁর বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় রাস্তা ঘেঁষে শহীদ মিনারনির্মানের প্রস্তাবনা সাহেরা খাতুনের কাছে উত্থাপন করেন । সরকারের সেই মুহূর্তের লালাভ আখির কথা সাহেরা খাতুন ভালোই জানতেন। তারপরও কাল বিড়ম্বনা না করে অনুমতি দিলেন‘শহীদ মিনার হবে।

দিনটি ছিল ২০ই ফেব্রুয়ারি। পরেরদিনই শহীদদিবস। যে করেই হোক যত ছোটই হোক শহীদ মিনার হবে। ছাত্র নেতারা বুলেট গতিতে ইট,বালু,সিমেন্ট যোগার করে ছোট্ট একটি ইটের স্তম্ভের আকারে শহীদ মিনার তৈরী করলেন সেই দিনের মধ্যেই। মানিকগঞ্জ শহরে শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে এ খবর পৌঁছাতে দেড়ি হয়নি প্রশাসনের কাছে। সে সময়ের এসডিও ছিলেন এ.কে.দত্ত চৌধুরী। তিনি বিপুল সংখ্যক পুলিশ নিয়ে হাজির হলেন শহীদ মিনার গুড়িয়ে দেয়ার জন্য। তবে এসবের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন সাহেরা খাতুন। অসীম সাহসে সেই পুলিশ বাহিনী এবং শহীদ মিনারের মাঝখানে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করলেন সিংহির মত।হুংকার দিয়ে বললেন,” আমার জায়গায় আমি শহীদ মিনার বানিয়েছি। কার সাহস তা ভাঙে?” তার এই হুংকার ও যৌক্তিক কথায় থেমে গেলেন এসডিও এবং পুলিশ বাহিনী। তারা আর সাহেরা খাতুনকে সড়িয়ে দিয়ে শহীদ মিনার ভাঙার সাহস পেলেন না।



২১ফেব্রুয়ারি,১৯৫৪,ছাত্রজনতার ঢল নেমেছিল এই শহীদ মিনারের বেদীতে। ফুলে ফুলে রঙ্গিন হয়ে গিয়েছিল শহীদ মিনারের বেদী। কিন্তু ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চের পর এ শহীদ মিনারটি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় পাকহানাদার বাহিনী।

১৯৭২ সাল। দেশ স্বাধীন হবার পর ঠিক একই স্থানে একইঅবয়বে পুনরায় গড়ে তোলা হয় শহীদ মিনারটি।এটিই মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার। ১৯৭২ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত ভাষা দিবসের মূল অনুষ্ঠানমালা,শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন সবই হয়েছে এই শহীদ মিনারকে কেন্দ্র করেই। শুধু তাই নয়। পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারে বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের প্রেরণারও উৎসও ছিল এই শহীদ মিনার। কিন্তু ২০০৭ সালে মানিকগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যযালযের মাঠের পাশে প্রশাসনের উদ্যোগে মানিকগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মিত হলে প্রায় পরিত্যক্ত হযে যায় প্রথম তৈরি সাহেরা খাতুনের শহীদ মিনারটি। অযত্ন আর অবহেলায় ভেঙে যায় ইটের গাঁথুনীর ছোট্ট শহীদ মিনার। যদিও সাংস্কৃতিক কমী-সংগঠকদের দাবির মুখে মানিকগঞ্জ পৌরসভা মূল শহীদ মিনারটির আদল বদলে দিয়ে সিরামিক টাইলস লাগিয়ে নতুন করে এটাকে গড়া হয়।

দুঃখ আর পরিতাপের কথা হল, প্রথম শহীদ মিনারের সম্মানটুকু তাকে আর ফিড়িয়ে দেয়া হয়নি। একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে আশে পাশের পাড়ার ছেলে মেয়েরা ছাড়া কেউ খোঁজ রাখেনা মিনারটির,ফুলশূন্য লয়ে বেদীটি পরে থাকে। সবচেয়ে চেয়ে বড় কষ্টের বিষয়,মানিকগঞ্জের প্রথম শহীদ মিনার নির্মানের পিছনে পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে থাকা অসীম সাহসী নারী সেই উম্মে সাহেরা খাতুনকে ভাষার দিবস কেন কোন উপলক্ষ্যেই স্মরণ করেনা কেউ গত ৪ যুগ ধরে। এ সময়ে তাঁরস্মরণে একটি স্মরণসভাও হয়নি মানিকগঞ্জে।

শহীদ রফিক যেমন তার তাজা রক্ত ঢেলে নিজেকে দিয়েছিলেন ভাষার তরে আর সেই রক্তিম আভাকে জমিনে শ্রদ্ধা জানাতে সাহেরা খাতুনের অবদানও তেমন চিরকাল অম্লিন। এ শহীদ মিনারের পাশেই বাঁধানো কবরে শায়িত আছেন শ্রদ্ধেয় উম্মে সাহেরা খাতুন এবং তাঁর স্বামী আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।

সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×