somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাজেট: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বলির পাঁঠা

০১ লা জুলাই, ২০১২ রাত ১১:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাত-পা বাঁধা থাকলে, যে কোন মানুষকে সহজেই নির্যাতন করা যায়। একজন অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যক্তিও তাকে আঘাত করার ক্ষমতা রাখে। কারন, বাঁধা অবস্থায় নির্যাতিত ব্যক্তির কেবল নির্যাতনের শিকার হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের অনেকটা সেরকমই মনে করা হয়, অন্তত সরকার সংশ্লিষ্টরা সেটাই মনে করে। তাই তাদের বলির পাঠা বানিয়ে রক্ত চুষে খাওয়ার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

সম্প্রতি ২০১২-১৩ অর্থবছরের জন্য ঘোষিত নতুন বাজেটের আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি’র ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আরোপ করা হয়েছে। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ওপর থেকে ৯ শতাংশ হারে কর আদায়ের মাধ্যমে কার্যত শিক্ষার্থীদের নিকট থেকেই অর্থ আদায়ের পরিকল্পনা করেছে সরকার। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এখন থেকে পূর্বের তুলনায় শিক্ষার্থীদের অপেক্ষাকৃত বেশি টাকা গুনতে হবে ।

নতুন বাজেটে প্রতিবারের মত এবারও শিক্ষাখাতে বরাদ্দের পরিমান হতাশাজনক। মাত্র ১১.৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে শিক্ষাখাতে। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর জন্য এত কম বাজেটে কিভাবে সার্বজনীন শিক্ষা বাস্তবায়ন সম্ভব? এই বাজেটে নিজ খরচে পরিচালিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নূন্যতম ভুর্তুকি দেয়ার পরিকল্পনা তো দূরের কথা উল্টো কর আরোপের মধ্য দিয়ে শিক্ষাকে মূলত পন্যে রূপ দেয়ার ষড়যন্ত্রকে চুড়ান্ত বৈধতা দেয়া হয়েছে। একইসাথে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর দীর্ঘদিনের চাওয়া শিক্ষাখাতে বাজেটের ২৫ ভাগ বরাদ্দের দাবিকেও অপমান করা হয়েছে চরমভাবে।

এ বছর শিক্ষাখাতে বরাদ্দ দেয়া ২১ হাজার ৪০৮ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্যে রয়েছে ৯ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্যে রয়েছে ১১ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় এই বাজেটে ১৫৭১ কোটি টাকা বেশি দেখানো হলেও মুদ্রাস্ফিতি বিবেচনা করলে দেখা যায়- এটা কোন বৃদ্ধি নয়, পূর্বের বাজেটেরই পুনরাবৃত্তি। এই বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভুর্তুকি দেয়া কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে সহায়তা করার কোন প্রকল্পও প্রস্তাব করা হয়নি।

এর আগে গত ২০১০-১১ অর্থ বছরে একইভাবে শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি’র ওপর ৪.৫ শতাংশ হারে কর আরেোপ করা হয়েছিল। ওই কর আরোপের পর যখন দেখা গেল করের টাকাও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের নিকট থেকেই আদায় করছে, তখন শিক্ষার্থীরা ফুসে উঠেছিল। ২০১০ সালের জুন মাসে বেসরকাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসলে ঢাকা শহরে ব্যপক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ছাত্রদের ব্যপক আন্দোলনের মুখে সরকার সেসময় কর প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। শিক্ষামন্ত্রী নিজে সেসময় ঘোষনা দিয়েছিলেন যে, শিক্ষার্থীদের বেতন-ফি’র ওপর কোন প্রকার কর আরোপ করা হবে না।

অথচ সে কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছেন সরকার সংশ্লিষ্টরা। তারা পুনরায় কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তবে এবার কর আরোপ করা হয়েছে নতুন কৌশলে। তাতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ করার কোন সুযোগ নেই বলে মনে করছে সরকার। সেই ধারনা থেকেই শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের ভর্তির ওপরেই এই কর বসানো হয়েছে। যখন শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে, সেসময়ই ভর্তির সাথে মোটা অঙ্কের কর দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি না থাকায় এর প্রতিবাদ করারও কোন সুযোগ থাকে না। ফলে যে নতুন ছেলেটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এসেছে, সে ছেলেটি প্রতিবাদ না করেই কর দিতে বাধ্য হবে। মূলত শিক্ষার্থীদের অসহায় অবস্থার সুযোগ নিয়ে এই কর আদায়ের পরিকল্পনা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

বর্তমানে দেশে ৬২ টি অনুমোদিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে। অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা। ভর্তির ওপর কর আরোপের ফলে স্বাভাবিকভাবেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের ফি’এর পরিমান বেড়ে যাবে। সেই বর্ধিত ফিও বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ আদায় করবে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে, অতীতে যেমনটা হয়েছে! স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থীদের সেই টাকা পরিশোধ করতে মধ্যবিত্ত বাবা-মা’রই দ্বারস্থ হতে হবে।

বিভিন্ন কৌশলে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় নতুন নয়। অতীতের সব সরকারই এই নীতি অবলম্বন করে এসেছে। ইউজিসি’র ২০ বছর মেয়াদী প্রকল্পের আলোকে ২০২৬ সালের মধ্যে প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে নিজস্ব আয়ের খাত থেকে চলতে হবে। এটি মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বেসরকারিকরন প্রকল্প। সরকার শুধু সেটাতেই ক্ষান্ত নয়, এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিনত করে কর আদায়ের পরিকল্পনা করেছে। অথচ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষনা করা হয়নি। লাভজনক নয় এমন প্রতিষ্ঠান থেকে কিভাবে কর আদায় করা যায়-আমার বোধগম্য নয়।

প্রতিবছর বাজেটের ঘাটতি পূরন করতেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অযৌক্তিকভাবে কর আরোপ করা হচ্ছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর কর আরোপ- সেই প্রক্রিয়ারই অংশ। উর্ধ্বমুখি বাড়ি ভাড়ার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের যাতাকালে পিষ্ট হয়ে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে ওঠে আসা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেড় লাখ শিক্ষার্থী এমনিতেই সংকটাপন্ন জীবনযাপন করছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অঙ্কের খরচের সাথে কর যুক্ত হলে তাদের জীবন আরো সংকটাপন্ন হয়ে পড়বে। বাজেট জনগনের জন্য কিন্তু সেই বাজেটই যদি জনগনকে আশার আলো না দেখিয়ে উল্টো জীবনকে বিষাদময় করে তোলে তবে সে বাজেটের কোন প্রয়োজনীয়তা নেই।

শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মৌলিক অধিকার পূরন করতে বাধ্য। সরকার মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন করতে না পারুক অন্তত পরিবারের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের ওপর কর আরোপ করে তাদের শিক্ষাজীবনকে আরো বিষাদময় করে তোলার কোন অধিকার সরকারের নেই।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজ রমনায় ঘুড়ির 'কৃষ্ণচূড়া আড্ডা'

লিখেছেন নীলসাধু, ১৮ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:২৬




আজ বিকাল ৪টার পর হতে আমরা ঘুড়ি রা আছি রমনায়, ঢাকা ক্লাবের পর যে রমনার গেট সেটা দিয়ে প্রবেশ করলেই আমাদের পাওয়া যাবে।
নিমন্ত্রণ রইলো সবার।
এলে দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×