somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিনো প্রযুক্তি, আসুন জানি এটি কি?

০৮ ই অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার ওয়েব সাইটি দেখুনঃ এইখানে ক্লিক করুন

বর্তমান সময়ের বহুল আলোচিত একটি প্রযুক্তি একটি হচ্ছে ন্যানোপ্রযুক্তি। বলা হয় ইন্টারনেটের পর এটিই প্রযুক্তির সবচাইতে বড় উপহার। ন্যানোর কারণে সায়েন্স ফিকশনের অনেক কিছুই এখনবাস্তবতা এবং বিষয়টি এতই ব্যাপক যে, এটি কেবলমাত্র আর বিজ্ঞানের ছাত ্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, বরং সকল বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সম্ভাবণার অপার দুয়ার খুলে দিয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সব শাখায় এই ন্যানোপ্রযুক্তিকে ব্যবহারের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষক।বিশ্বের বড় বড় দেশগুলোর সরকারের সাথে সাথে প্রায় সব বহুজাতিক কোম্পানীগুলোও এখন কাজ করছে এই গবেষণায়। ব্যয় করছে প্রচুর অর্থ। সম্প্রতি জাপান এর জাতীয় গবেষনা বাজেটের সিংহভাগই রাখা হচ্ছে ন্যানোপ্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলিই উপর।

শুধু মাত্র জাপানই নয় ইউরোপ, আমেরিকা,চীন, কোরিয়া সবগুলি দেশই এই প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। কেন ন্যানোপ্রযুক্তি নিয়ে সবার এত আগ্রহ? তার একটা সহজ উত্তর হল, সামনের দিন হবে ন্যানোপ্রযুক্তির যুগ। আপনার হৃদরোগ হয়েছে? ন্যানো রোবোট আপনার শরীরের ভিতরে ঢুকে সেই সব মেরামত করে দেবে। আপনার হাতের ঘড়িটি হয়ে যাবে আপনার কম্পিউটার আপনার মোবাইল, সব কিছুই। তা সম্ভব হবে ন্যানোপ্রযুক্তির বদৌলতে।

ন্যানোপ্রযুক্তি কী?
ন্যানো একটি মাপার একক। হয়। ন্যানো শব্দটি গ্রিক nanos শব্দ থেকে এসেছে যার অভিধানিক অর্থ হল dwarft কিন্তু এটি মাপের একক হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সহজ কথায় এই ন্যানোপ্রযুক্তি হচ্ছে প্রযুক্তির এমন একটি শাখা যেখানে সব গবেষণা হবে ন্যানো স্কেলে। এক ন্যানোমিটার হলো এক মিটারের ১০০ কোটি ভাগের এক ভাগ। ১ থেকে ১০০ ন্যানোমিটারের বস্তুকে ন্যানো স্কেল ধরে নেয়া হয়।

আমরা যদি ইঞ্চির কথা চিন্তা করি তাহলে, ২৫৪00000 ন্যানোমিটারে এক ইঞ্চি। আরও কোন ছোট কোন বস্তুর সাথে তুলনা করার জন্য আমার চুলের সাথে তুলনা করতে পারি।আমাদের একটি চুল হচ্ছে এক লক্ষ্য ন্যানোমিটার প্রসস্থ অথবা আমারা যদি পৃথিবীর সবথেকে ছোট ব্যকটেরিয়ার কথা চিন্তা করি থাকে, সবথেকে ছোট ব্যকটেরিয়ার অকার হচ্ছে ২০০ ন্যানোমিটার। আর এই ন্যানোমিটার স্কেলে যে সমস্ত টেকনোলজি গুলি সর্ম্পকিত সেগুলিকেই বলে ন্যানোপ্রযুক্তি।

সেলফোনে ন্যানোপ্রযুক্তি
ভবিষ্যতের মোবাইলফোনে ন্যানোপ্রযুক্তির ব্যবহার কি রকম তার একটি নমুনা প্রকাশ করেছে নোকিয়া রিসার্চ সেন্টার । আজ থেকে ঠিক ৪ বছর আগে নোকিয়া রিসার্চ সেন্টার এবং ক্যাম্বব্রিজ ইউনিভার্সিটির যৌথ প্রচেষ্টায় নোকিয়া মর্ফ নামের একটি মোবাইল ফোনের উদ্ভাবনের চিন্তা মাথায় আনে৷ তারই প্রতিফলন ঘটে নিউইয়র্কের মিউজিয়াম অব মডার্ন আর্ট জাদুঘরে অনুষ্ঠিত ডিজাইন অ্যান্ড দ্য ইলাস্টিক মাইন্ড শীর্ষক প্রদর্শনীর মাধ্যমে।

উক্ত প্রদর্শনীর মাধ্যমে তারা মোবাইল ফোনের ডিজাইন ও এর কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে যার বিশেষত্ব হিসেবে থাকছে, সেলফোনকে ইচ্ছেমতো বাঁকানো, ভাঁজ করা বা ইচ্ছেমতো আকার দেয়া যাবে৷ এছাড়াও আরো যুক্ত হবে স্বচ্ছতা, ধুলাবালি ও পানির সংস্পর্শ থেকে নিজেকে রক্ষা করার কৌশল, সূর্যরশ্মি থেকে চার্জ হওয়া বা সোলার চার্জিং, বাতাসে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্দেশ করার অপূর্ব সব ক্ষমতা৷

ডিভাইসটির উপরিভাগ পানিবিকর্ষী পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হবে, যার ফলে এর উপরে পানি জাতীয় কিছু ফেললে তা আপনি থেকেই গড়িয়ে পড়ে যাবে, ডিভাইসটির গায়ে লেগে থাকবে না। এছাড়া এটি ধুলাবালি থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে।ন্যানোটেকনোলজির এই মোবাইল ডিভাইসটি ট্রান্সপারেন্ট করে তৈরি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে এমন ন্যানোডিভাইস ব্যবহার করা হবে, যা অ্যাক্টিভেট করলে ন্যানোডিভাইসগুলো মানুষের চোখে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

এই রকম অনেক চমকপ্রত ফিচার নিয়ে আসছে ন্যানোপ্রযুক্তির সেলফোন যা আপনার কল্পনাকে হার মানাবে। তবে বাস্তবতা হলো এখন পর্যন্ত বাস্তবে রূপ না পেলেও আগামী কয়েক বছরের বছরের মধ্যেই ন্যানোটেকনোলজির কমিউনিকেশন ডিভাইসগুলো সম্বলিত মোবাইল ফোনটি বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে নির্মাতারা।

ভবিষ্যতের ন্যানোপ্রযুক্তি
আমরা এখন যা কিছু ব্যবহার করি তা সব কিছুই হচ্ছে মাইক্রো টেকনলজির মধ্যে। এই ম্যাইক্রো ট্যাকনলজি যদি আমাদের জীবন যাপন কে এত পরিবর্তন করে দেয় তাহলে ন্যানোটেকনোলোজি কেমন পরিবর্তন করবে তা একটু চিন্তা করলেই বুঝা যায়। তখন আর আমাদের কোন আসবাব পত্র এত বড় হবে না। সব ছোট ছোট হবে। সব কিছু হালকা হয়ে যাবে।

আমরা বিশাল এক কম্পিউটারকে ভাঁঝ করে পকেটে পুরে রাখতে পারব। প্রয়জনে আবার পকেট থেকে বের করে ভাঁজ খুলে কাজ করতে পারবো। একটু কল্পনা করে দেখুন কেমন হবে তখন। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই ন্যানোপ্রযুক্তি একসময় পালটে দেবে পৃথিবীর চেহারা। ন্যানোপ্রযুক্তির হাত ধরে কম্পিউটার শিল্পে আসবে গতির বিপ্লব। আর সেই সাথে বাড়বে হার্ডডিস্কের তথ্য ধারণ ক্ষমতা ।

ইতোমধ্যে আমরা এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছি। ন্যানোপ্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করা হবে বিভিন্ন ধরণের কম্পোজিট পদার্থ এবং ফাইবার যেগুলো নির্মাণ শিল্পে বিপ্লব বয়ে আনবে। আর শুনতে সায়েন্স ফিকশনের মতো মনে হলেও একদিন দেহের ভেতরে ঢুকে জটিল সব অস্ত্রোপচার করে দেবে ন্যানোরোবট। ন্যানোপ্রযুক্তির মাধ্যমেই হয়তো মানুষ একদিন হয়ে উঠবে প্রকৃতির নিয়ন্তা।

এতো গেল আশাবাদের কথা। ভয়ংকর ব্যাপারটি হলো, কিছু দেশ প্রতিরক্ষার খোঁড়া অজুহাতে ন্যানোপ্রযুক্তির মাধ্যমেই তৈরি করার চেষ্টা করছে স্ব-নিয়ন্ত্রিত ন্যানোনিউক্লিয়ার মিসাইল সহ ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র, যা হয়তো মানবজাতিকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। এছাড়া ন্যানোপ্রযুক্তি নিয়ে গবেষণাকালে বায়ুমন্ডলে ছড়িয়ে পড়তে পারে ন্যানো স্কেল আকারের কণা যা পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি করতে পারে।

ন্যনোপ্রযুক্তি বিষয়ক ওয়ার্কশপ
স্বাস্থ্য এবং ওষুধ, খাদ্য এবং কৃষি, শক্তি এবং পরিবেশ, আইসিটি এবং ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, শিল্প ও ভোগ্য পণ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে ন্যানোপ্রযুক্তিকে ব্যবহার নিয়ে এমাসেই শুরু হচ্ছে তিন দিন ব্যপি আন্তর্জাতিক কর্মশালা।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে এ কর্মশালায় অংশ নিচ্ছেন দেশের বেশ কয়েকটি সরকারী বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীসহ আরো অনেক প্রযুক্তি বিষেশজ্ঞ। থাকছে ভবিষত প্রযুক্তি হিসেবে ন্যনোটেকনোলোজীর সম্ভাবনা সম্পর্কিত শিক্ষা প্যানেলে আলোচনা: বাংলাদেশর পার্সপেকটিভস।

এ প্রসঙ্গে ন্যানোটেকনোলজি গবেষক এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়- চুয়েট -এর প্রাক্তন শিক্ষক সুদীপ্ত দেব বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ ও ভিশন ২০২১’ নিয়ে যে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তাতে বর্তমান বিশ্বের অত্যাধুনিক ও সাড়া জাগোনো প্রযুক্তি ন্যানোটেকনোলজি একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

তাই আমরা আশা করছি এই ধরনের কর্মশালার মাধ্যমে দেশের প্রযুক্তিপ্রেমিরা এই বিষয়ে আরো আগ্রহ তৈরী হবে এবং এর ব্যবহার খুব দ্রতই প্রসার ঘটাতে সক্ষম হবে।

ভাল লাগলে শেয়ার করতে কিন্তু ভুলবেন না কিন্তু
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×