somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যারা বিড়ি খাওয়া ছাড়তে চান, আগে মেকানিজমটা বোঝেন, তারপর ছাড়েন। (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে)

০৩ রা জুন, ২০১২ সকাল ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিড়ি খাবি খা মারা যাবি যা !!! কথাটা কি ঠিক? আমরাতো বলিনা গরু খাবি খা মারা যাবি যা !! অথচ বিড়ি এবং রেড মিট দুটোই হার্ট ডিজিজের সাথে জোরালো ভাবে সম্পর্কিত। যাই হোক বিড়ি খেয়েও অনেকে দীর্ঘদিন বাঁচেন আবার দাদার আমলের লোকেদের আস্ত খাসী সাবার করে দেবার গল্প বেশী দিন আগের না তবুও তাদের হায়াত নেহায়েত কম ছিলোনা।অনেকে বিড়ি ছাড়তে চান, পারেননা, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে এই পোষ্ট মূলত তাদের উৎসাহ প্রদানে উৎসর্গ করলাম।

বিড়ি এবং তার মেটাবলিক ইফেক্ট: আপনি যখন বিড়ি খান, তখন মূলত তিনটি জিনিস শরীরে প্রবেশ করান। ১: নিকোটিন ২: টার ৩: কার্বন মনোক্সাইড। এর মধ্যে নিকোটিন এর কথাই আমরা বেশী শুনি, কিন্তু নিকোটিন এর থেকে 'টার' এবং 'কার্বন মনোক্সাইড' কিন্তু কম ক্ষতিকর না। এই ''টার'' (এক ধরনের লিকুইড কালো ক্যামিক্যাল যা পোড়া বস্তু থেকে উৎপাদিত হয়) এবং কার্বন মনোক্সাইড এর প্রভাবে আপনার সিগারেটের ফিল্টারে হলদে দাগ পড়ে, দাঁতে দাগ পড়ে, সুতরা আপনার ফুসফুসের অবস্থা কি হবে চিন্তা করে দেখুন। দশ-বিশটা সিগারেটে যে পরিমান টার' থাকে তা এক সাথে শরীরে প্রয়োগ করলে পরপারের টিকিট নিশ্চিত।

ছবি-১: ধূমপায়ী ও অধূমপায়ীর ফুসফুস পার্থক্য:



এখন আসি 'নিকোটিন' এর ব্যাপারে। এটা এক ধরনের উত্তেজক পদার্থ। একসময় পোকামাকড় মারার কাজে ব্যবহার করা হতো।স্তণ্যপায়ীদের ক্ষেত্রে এটা উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। আপনার মস্তিষ্কে হাইপোথ্যালামাস নামে ছোট্ট কিন্তু একটা খুব গুরুত্বপূর্ন অঞ্চল আছে, এই অঞ্চলটা অনেক হরমনাল সিক্রেশনের সাথে সাথে আপনার ক্ষুধা, তৃষ্ঞা, ঠান্ডা, গরম মোদ্দা কথা সমগ্র মেটাবলিক প্রসেস (পরিপাক) ও এন্ডোক্রাইন (হরমোন) সিস্টেম এর সাথে সম্পর্কিত। নিকোটিন আপনার হাইপোথ্যালামাস জোনে প্রভাব ফেলে যার ফলে আপনি ধূমপাণের আসক্তিতে জড়িয়ে পড়েন। আপনি যদি ধূমপান ছেড়ে দেন, নিকোটিন রিসিপটরের অভাবে তাই সাময়িক ভাবে হাইপোথ্যালামাস পাগল হয়ে যায়, আপনার ক্ষুধা পায়না, তৃষ্ঞা উল্টা পাল্টা, ইত্যাদি। বস্তুত নিকোটিন শরীরে যে ক্ষতি করে তার চেয়ে বেশী ক্ষতিকর ওর আসক্তি। আপনি বিড়ি না খেলে, হাইপোথ্যালামাস আপনেরে বলবে, 'খা, খা, ...আরে একটা খা, একটা খাইলে কিছু হৈবেনা :), আচ্ছা বৃষ্টি হৈতেছে একটা খায়া দেখ :) বা হাগতে হাগতে..আহ একটা সুখটান দিলে হেভী হৈতো ......ইত্যাদি।

ছবি-২ হাইপোথ্যালামাস জোন:



সুতরাং বিড়ি না খেলে মূল যুদ্ধটা আপনার এই হাইপোথ্যালামাস (হাইপো দেবতার) জোনের সাথে।

যুদ্ধটা কি ভাবে করবেন?: এই গল্পটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি। যারা ছাড়তে চাচ্ছেন তারা সাহস পাবেন।

আমার প্রফেশনাল বিড়ি খাবার বয়স ১৮ বছরের বেশী। আমি গত ছয় মাস হলো বিড়ি খাইনা :) :) :) :) :) :) :)

রিসার্চ সম্পর্কিত কারনে আমি ইউকে এর ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এন এইচ এস) এর একজন এম্প্লয়ী। তো ওদের এক সুন্দরী (লিজ) একদিন আমারে বল্লো 'অ্যাই তুমি ট্রিটমেন্ট নিয়ে বিড়ি খাওয়া ছেড়ে দাও'। এখানে চিকিৎসা ফ্রী, কিন্তু বিড়ির চিকিৎসা ফ্রি না। এম্প্লয়ী হবার কারনে বিড়ির চিকিৎসা যে আমি ফ্রী পাবো, এটা আমি জানতামনা। তো রাজী হয়ে গেলাম। ওরা আমারে যা দিলো, সেগুলির ছবি দেখেন:

ছবি-৩ নিকোটিন লজেন্স:



আমারে বলা হৈলো যখনি নেশা চাপবে তখনি এইটা খাইতে। খাইতে জঘন্য।মনে হয় ক্ষ্যাত থেকে তামাক পাতা নিয়ে ডাইরেক্ট চাবায় খাইতেছি :( :(

তার সাথে দিলো নিকোটিন প্যাচ।

ছবি-৪ নিকোটিন প্যাচ:



এইটা কঠিন জিনিস। নেশা ছাড়ানোর জন্য না :) :), নেশা ধরানোর জন্য :) :)। সারারাত আমি ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখি, দারুন দারুন সব স্বপ্ন। এইটা প্রতি রাত্রে লাগাতাম, একটা নেশার মতো পাইতেছিলো :) :), দারুণ ঘোর:P:P

মূলত এই ট্যাবলেট আর প্যাচ, এরা যা করে তা হলো হাইপোথ্যালামাসের চাহিদা মেটায়। অর্থ্যাৎ আপনার শরীরে নিকোটিন প্রবেশ করায়, যেটা আপনার শরীরে যায়না সেটা হলো, টার আর কার্বন মনোক্সাইড। অর্থ্যাৎ এগুলো হলো টার, আর কার্বন মনোক্সাইড ছাড়া ধূম্র পান । ধীরে ধীরে প্যাচ আর লজেন্স এর পরিমান কমিয়ে এনে হাইপোথ্যালামাসকে নিকোটিন বিহীন পরিবেশে অভ্যস্ত করে তোলাটাই এদের ট্রিটমেন্ট।

যাই হোক আমার ক্ষেত্রে এটা কাজ করলোনা। :( :(। কিছুদিন চালালাম কম বিড়ি খেয়ে, তারপর কয়েকদিন না খেয়ে, এরপর আমার দীর্ঘদিনের বিড়ি খোর হাইপো দেবতা আমারে কইলেন এই প্যাচ এর লগে বিড়ি খায়া দেখ, ক্যামুন লাগে :) :)...

যেই ভাবা সেই কাজ, এর পর চিকিৎসাও নেই বিড়িও খাই :)।এরপর যা হবার তাই হলো, বিড়ি থাকলো, চিকিৎসাকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করে দিলাম। লিজ আমাকে বল্লো, যদি কখনও ছাড়তে চাও আমাকে বলো। ওর সাথে প্রতিদিনই দেখা হয়, কিন্তু এ নিয়ে আর কথা হয় না।

মাস দুয়েক পর: হঠ্যাতই মনে হলো চেষ্টাটা শুরু করেছিলাম, বিড়িটা ছেড়ে দিলেই হতো।যেই ভাবা সেই কাজ। প্রথম কদিন অভ্যাস করলাম কাজের সময় বের না হতে। আগে যেখানে বিড়ি খাবার জন্য একটু পরপর বের হতাম সেখানে কাজের সময় সারাদিন বের হওয়াটা বন্ধ করে দিলাম। বাসায় ফিরেই বারান্দায় বসে একটা কফি আর বিড়ি (আহা...আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম :((:((:(( ), তারপর বাকী কাজ। তারপর একসপ্তাহ পর সেটাও বন্ধ করে দিলাম।

বিশ্বাস করেন, সাতদিন হাইপো দেবতার সাথে যুদ্ধ করতে হবে।গলার স্বর কর্কশ লাগবে, মাথা দ্রুত গরম হয়ে যাবে (হাইপার টেনশন), খাবার পরিমান বেড়ে যাবে (কারন আপনি সব সময় মুখে কিছু রাখতে চাইবেন), ইত্যাদি।

হাইপো দেবতার সাথে যুদ্ধের অস্ত্র:
- ঐসব প্যাচ ফ্যাচ কিছুনা।আগে নিজের ইচ্ছা।আপনি চাইলে এটা কোন সমস্যা না।আপনাকে আগে কলব (অন্তরের অন্ত:স্থল) থেকে চাইতে হবে।
- প্রচুর লিকুইড পান করুন, পানি, জুস।আমি যদিও কাজের ওখানে কমপক্ষে ৫ কাপ (সারা দিন ৮/৯ কাপ) কফি খাই। কিন্তু পানি খাই প্রচুর।
- প্রতিদিন নিয়ম করে একটু ব্যায়াম করুন।
- নেশা কাটানোর জন্য চুইংগাম, বাদাম ইত্যাদি ব্যবহার করুন। তবে এক নেশা ছাড়তে গিয়ে আরেকটা ধরবেননা যেন। অনেকের চুইংগামে আসক্তি চলে আসে।
- এবং অবশ্যই... প্রচুর ঘুমান। কম ঘুম স্ট্রেস এর কারন এবং তার কারনে হাইপো দেবতা চটে যান।

সুতরাং বিড়ি ছাড়তে চাইলে যুদ্ধটা কার সাথে এবং কিভাবে জানলেন, এবার যারা শুরু করতে চান শুরু করে দিন। ফিঙ্গারস্ ক্রসড।:) :)

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- গত ছয় মাসে বিড়ি না খেয়ে আমি কমপক্ষে ৯০০ পাউন্ড বাঁচিয়েছি। :) :)
- ছেড়ে দেবার এক সপ্তাহের মধ্যে এক গাদা সুফল গুলি পাবেন। শ্বাস প্রশ্বাস এ নির্মলতা, সকালে গলায় কালো পদার্থ জমবেনা, কম বয়সী/মাঝ বয়সীদের কুঁচকে যাওয়া চামড়ায় নতুনত্ব, এবং সর্বপরি বেষ্ট অব অল মোটিভেটরস: ড্যাম গুড ফিজিক্যাল এ্যানার্জী :) :)। আক্কল মান কি লিয়ে ইশারায়ে কাফী :) :)
- লিজ কে বলেছি, তোমাদের ঐ ওষুধ গুলো ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানী গুলোর জন্য ভালো ব্যবসা হতে পারে তবে ওগুলো ছাড়াই ধূমপান ত্যাগ সম্ভব।উত্তরে লিজ মিষ্টি হেসে বলে:
‘মানুষের অসাধ্য কিছু নাই, ওষুধ গুলো অমানুষদের জন্য’।
৭৫টি মন্তব্য ৭৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×