somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সীমান্ত প্রধান
যতবার মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছি, ততবারই পুরুষ হয়ে উঠি। তুই শালা একটা ‌‘পুরুষ’ শব্দটি সম্ভবত পৃথিবীর নিকৃষ্ট একটা গালিতে রূপান্তরিত হবে। পুরুষ হিসেবে গর্ব করার কিছু নেই, আমি লজ্জিত, সত্যি লজ্জিত যে আজও মানুষ হতে পারিনি।

‎ম্যারিটাল‬ রেপ বা দাম্পত্য ধর্ষণ

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ম্যারিটাল রেপ অথবা দাম্পত্য ধর্ষণ বলে একটা কথা আছে। যা স্বামীদ্বারা ধর্ষিত হয় স্ত্রী। তবে এ শব্দটা এখনো অনেকের কাছে ‘ভাসুরের নাম মুখে না নেওয়ার মতই’। আর তাই অনেক নারী প্রতিনিয়ত স্ত্রীর ভূমিকায় স্বামী নামের পশুর হাতে ধর্ষিত হচ্ছে।

এখন কেউ বলতেই পারেন, একজন স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করবে-এটাই তো স্বাভাবিক। এখানে আবার ধর্ষণের কথা আসছে কোথা থেকে! স্বামী তার স্ত্রীর সাথে জোর করে হোক আর যেভাবেই যৌন-সঙ্গম করলে সেটা ধর্ষণ হবে কেনো? এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর অধিকার।

হ্যাঁ অধিকার। আমাদের প্রচলিত ধর্মগুলোও ঠিক তাই বলে। আর তাই তো স্বামী তার অধিকার ফলাতে রাতের পর রাত অনেক স্ত্রীকে ধর্ষণ করে যাচ্ছে। ধর্ষিত হচ্ছে অজস্র নারী। ধর্ষিত হচ্ছে আর যৌনাঙ্গের ব্যথা নিয়ে চার দেয়ালের ভেতরে মুখ টিপে কাতরাচ্ছে তারা।

এ সংখ্যা কত হবে? জানা নেই। আমরা জানার চেষ্টাও করি না। এসব নিয়ে মাথা ঘামানোটাও ঠিক না। কি দরকার? এমন বলি আর ভাবি। ভাবি আর এড়িয়ে যাই। অনেক শিক্ষিত সচেতন মেয়েরাও এমন যৌন নির্যাতন মুখ বুজে দিনের পর দিন সহ্য করে যাচ্ছে। এছাড়া কি আর করার আছে তাদের? তারা যদি স্বামী নামের পশুটাকে ধর্ষক বলে দাবী করেন, তবে সমাজ কি তা গ্রাহ্য করবে! বরং সমাজ হাসবে। সমজা ধর্ষিত স্ত্রীকে কুলটা, বেশ্যা, ছিনাল, মাগি এবং নষ্টা নারী বলে উপাধি দিবে।

স্বামী যদি স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করে আর ভুক্তভোগী স্ত্রী আইনের আশ্রয় নেয়, তাহলে ধীরে হলেও ব্যাপারটা আমরা মেনে নিতে শুরু করি। কিন্তু স্বামী স্ত্রীকে ধর্ষণ করছে! এটা মেনে নিতে আজও কোথাও যেন বাধে। ‘ম্যারিটাল রেপ' বা দাম্পত্য ধর্ষণ এখনও যে অপরিচিত না হলেও অনুচ্চারিত একটি শব্দ!

এর পেছনে অবশ্য রয়েছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থা, সামাজিক অবকাঠামো, যেখানে স্ত্রীকে আজও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা হয় স্বামীর সম্পত্তি হিসেবে।

এখানে নারীকে পারিবারিক চাপ অথবা অন্য উপায় না থাকার ফলে বছরের পর বছর বাস করতে হয় ‘স্বামী' নামের ধর্ষকের সঙ্গে। একবার নয়, হয়ত প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে ধর্ষণ হয় তার। লোকলজ্জার ভয়ে ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না সে। তাই বয়ে বেড়াতে হয় যৌন রোগ, ক্ষত বা মানসিক অসুখ।

তাই কোনো নারীকে যদি প্রশ্ন করেন, ‘আপনার স্বামী কি আপনাকে ধর্ষণ করছেন’? এক্ষেত্রে বেশিরভাগ নারীই হয় চুপ হয়ে যাবে নয় তো পড়ে যাবে চিন্তায়। আর কেউ যদি সাহস করে অপ্রিয় সত্যটা বলেও ফেলে, তাহলে তার ভবিষ্যৎ কী? কে দেবে তাকে পুনর্বাসন, অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ? পরিবার? রাষ্ট্র? ধর্ম?

এ ক্ষেত্রে একটা বাস্তব ঘটনাকে অবলম্বন করতে পারি। মেয়েটির নাম তিতলি (ছদ্মনাম)। তার বয়স তখন ১৮। অসম্ভব সুন্দরী সে। এর কারণে তার উপর নজর পড়ে একজন রাজনৈতিক নেতার। যে নেতার বয়স তার থেকেও দ্বিগুণ। পরবর্তীতে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে তিতলিকে বিয়ে করে সে। বিয়েটে মেনে নিতে চায়নি তিতলি। তারপরও সে সমাজ সংসারের হাতে বাঁধা। বাধ্য হয়েই বিয়ে করতে হয় তাকে।

তিতলি অবশ্য ভেবেছিল বিয়ে যখনই হয়েই গেছে, তখন আর কি করা? স্বামীকে মেনেই নিই। ভালোবাসার চেষ্টা করি। হয় তো আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে। তাই তিতলি ফুল শয্যা রাতে ভেবেছিল তার বর এসে তাকে দু’চারটে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে। ভালো কি করে বাসতে হয় সে শিখিয়ে নিবে। কিন্তু ঘটনা ঘটলো পুরো উল্টোটা!

স্বামী এসে দু-একটা মিষ্টি কথা বলা তো দূরের কথা, একরকম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল তিতলির শরীরে! যন্ত্রণায় চিৎকারও করতে পারেনি সে, মুখে গুঁজে দেয়া হয়েছিল চাদর...। বাহ্ রে, নিজের বউ বলে কথা। তার ওপর জোর-জবরদস্তি করার একচ্ছত্র অধিকার রয়েছে না স্বামীর? আর ‘বিয়ে' তো শুধু নারী-পুরুষের মধ্যকার সামাজিক ও ধর্মীয় চুক্তি নয়, এ তো স্বামীর ইচ্ছে মতো স্ত্রীকে ভোগ করার একটি বৈধ ‘লাইসেন্স'। তাই না?

সে রাতে ধর্ষিত হয়েছিল তিতলি। ক্ষত হয়েছিল তার যৌনাঙ্গ। রক্তাত্ব যৌনাঙ্গ নিয়ে ব্যথা ঢুকরে ঢুকরে কেঁদেছিল সে। স্বামী ফিরেও দেখেনি! বরং পাশেই তার স্বামী নামের জানোয়ারটা পরম তৃপ্তি সহকারে সিগারেট ফুঁকছিল!

সেদিনের পর থেকে তিতলির কাছে যৌন-সঙ্গম মানেই যন্ত্রণার এক একটি রাত। সেই প্রথম দিন থেকে গত ১৪টি বছর সে ধর্ষিত হয়ে আসছে। তিতলি নিজেও জানে না যৌন-সঙ্গম যে একটা সুখকর, মানসিক প্রশান্তি। এটা জানার ভাগ্য তার হয়নি। তাই তার কাছে যৌন-সঙ্গম মানেই যন্ত্রণার আর চর ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৪
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাইনারি চিন্তাভাবনা থেকে মুক্তি: পূর্ণাঙ্গ তুলনার ধারণা এবং এর গুরুত্ব

লিখেছেন মি. বিকেল, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩০



সাধারণত নির্দিষ্ট কোন বস্তু যা শুধুমাত্র পৃথিবীতে একটি বিদ্যমান তার তুলনা কারো সাথে করা যায় না। সেটিকে তুলনা করে বলা যায় না যে, এটা খারাপ বা ভালো। তুলনা তখন আসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×