somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

সীমান্ত প্রধান
যতবার মানুষ হওয়ার চেষ্টা করেছি, ততবারই পুরুষ হয়ে উঠি। তুই শালা একটা ‌‘পুরুষ’ শব্দটি সম্ভবত পৃথিবীর নিকৃষ্ট একটা গালিতে রূপান্তরিত হবে। পুরুষ হিসেবে গর্ব করার কিছু নেই, আমি লজ্জিত, সত্যি লজ্জিত যে আজও মানুষ হতে পারিনি।

ধর্ষণের জন্য নারীর পোশাক দায়ী?

২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


পৃথিবী সৃষ্টির লগ্ন থেকেই পক্ষ আর বিপক্ষ, দিন ও রাত কিংবা ভালো এবং মন্দ রয়েছে। কেউ এসব যথোপযুক্ত স্থানে ব্যবহার করেন। আবার কেউ হুদাই লাফায়। অর্থাৎ কিছু মানুষের জন্মগত স্বভাব বিতর্ক করা। এটা সম্ভবত বাঙালির স্বভাবজাত। যার কারণে অনেকেই বলে থাকেন, ‘বাঙালি কাজের থেকে কথা বেশি বলেন’। বিষয়টি ঠিক তাই

সম্প্রতি বাংলাদেশে সব থেকে বেশি আলোচিত ইস্যু হচ্ছে কুমিল্লার কলেজ ছাত্রী সোহাগী জাহান তনু হত্যা। এর আগে ছিলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি। তবে রিজার্ভ চুরির ঘটনাটিকে কেমন যেন ধামাচাপা দিয়ে দিচ্ছে তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি! কেমন অবাক লাগছে না?

সে যা হোক, রিজার্ভ চুরি নিয়ে আমার বক্তব্য না। বক্তব্য ধর্ষণ সংক্রান্ত ব্যাপার। উদ্দেশ নষ্ট কিছু মস্তিষ্কের চিন্তা ভাবনাগুলোর ব্যাবচ্ছেদ। আর ‘আমি পুরুষ’ তেমনটা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলা।

তনু হত্যাকাণ্ড নিয়ে যখন উত্তাল পুরো দেশ। তখন একটা শ্রেণী তনুর চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা শুরু করেন। তার দোষ, সে ‘নাট্যকর্মী’ ছিলেন। আর যুক্তি হচ্ছে, ‘নাট্যকর্মীরা’ ভালো হয় না! আমার ঠিক জানা নেই, তারা এমনটা কি করে বলেন? কোন কিতাবে লেখা আছে যে, নাট্যকর্মীরা ভালো হয় না? ভালো বলতে মানুষ কি বুঝাতে চান? বোধগম্য নয়।

ধর্ষণের কারণ হিসেবে অনেকেই ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, ধর্ষণের জন্য নারীরাই দায়ী। দায়ী তাদের ‘পোশাক’! এসব নিয়ে চলে দারুণ সব আলোচনা। আলোচনাগুলো এমন, তারা ধর্ষণটাকে সহি বানিয়েই ছাড়বেন! অদ্ভুত যতসব মেন্টালিটির মানুষ। তারা কি একবার নিজেকে প্রশ্ন করে দেখেন না যে, ‘পোশাক’ যদি দায়ী হবে, তবে শিশুরা কেন ধর্ষিত হয়? কেন গরু বা ছাগলকেও ধর্ষণ করা হয়? মাদ্রাসায় ছোট ছোট ছেলেরা বলাৎকার হয়?

আমরা দেখেছি, এই দেশে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো পাগলীও গর্ভবতী হয়। যে পাগলীর যৌনতা সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। যার গায়ে দুর্গন্ধ আর দেখতে অসম্ভব রকম নোংরা, তার সাথেও কাম-বাসনা পূরণ করা হয়! কোন মেন্টালেটির আমরা! এসব কি তবে পোশাকের দোষ? নাকি পুরুষের মানসিকতার দোষ? এখানে কি রুচিবোধের প্রশ্ন আসে না?

আমরা এখন একবিংশ শতাব্দীর মানুষ। যুগ পাল্টিয়েছে। যুগের সঙ্গে তালমিলিয়ে পরিবর্তন এসেছে পোশাকেরও। এক সময় তথা আদিমকালে ‘পোশাক’ ছিল পশুর চামড়া, গাছের ছাল। আর এখন রয়েছে নানা ধরনের ‘পোশাক’। বর্তমানে দেশ, সংস্কৃতি, সমাজ ব্যবস্থা, কাজের ধরন, অনুষ্ঠান, পছন্দ ও ফ্যাশনের ভিত্তিতে বহু ধরনের পোশাক পরে থাকে আমাদের মেয়েরা। এটা যুগের হাওয়া। ছেলেরাও তাদের ‘পোশাকে’ যথেষ্ট পরিবর্তন এনেছে। আরও আসবে। এটাই স্বাভাবিক।

আচ্ছা এখন একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো, শরীর প্রদর্শন মানেই কি ধর্ষককে আমন্ত্রণ করা? যদি তাই হবে তাহলে সোহাগী জাহান তনু কেন ধর্ষিত অতঃপর খুন হলো? সে তো খোলামেলা পোশাক পড়তো না। বরাবরই হিজাব পড়তো। তারপরও হায়েনার দল তার উপর ঝাঁপিয়ে পরেছিলো কেন? এর কোন উত্তর আছে কি? তাহলে কি দাঁড়ালো? শরীর প্রদর্শন না করে বা তথাকথিত ‘আধুনিক’ পোশাক না পরেও ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েরা। সুতরাই ‘পোশাক’ নয়, সমস্যাটা আমাদের মানসিকতার। তাই নয় কি?

তাহলে ধর্ষণ রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না কেন? এর মাত্রা কি বেড়েই চলবে? এমন প্রশ্ন উদয় হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেন না, তনু হত্যার ঘটনায় যখন পুরো দেশজুড়ে আন্দো্লন চলছে, তখন রাজশাহীতে কিশোরী আর রাজধানীতে শিল্পী কৃষ্ণকলির বাড়িতে গৃহকর্মীর ধর্ষণই প্রমাণ করে ধর্ষণ এ দেশে চলবেই। কারণ এই দেশে চলছে বিচারহীনতার সংস্কৃতি। যা একজন ধর্ষককে দারুণভাবে উৎসাহিত করে। আর ধর্ষককূল জানে, ধর্ষণ করার পর কিছু হয় না। ২০ কি ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে দিলেই সব শেষ হয়ে যায়।

আচ্ছা ভাবুন তো, আজকের এই তনুর ঘটনার জন্য আমরা যারা আন্দোলন করছি, তারা কি তনুর এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী নই? আমরা কি এই দায় এড়াতে পারি? আমি তো মনে করি না। কেন না, আমরা মৌসুমি আন্দোলনকারী। হঠাৎ হঠাৎ আমার বুঝে-শোনে আন্দোলনের নামে ফেসবুকে জ্বলে উঠি, মানববন্ধ করে বিচার দাবী করি। এখন নিশ্চয় গাল দিচ্ছেন আমাকে? দিন। তারপরও ব্যাপারটা মাথায় নিন।

মনে আছে সংখ্যালঘু পূর্ণিমা ধর্ষণ ঘটনা? যার মা আকুতি করে ধর্ষকদের বলছিলো, ‘বাবারা রে তোমরা একজন একজন করে যাও, আমার মেয়েটা ছোট, ও মরে যাবে’। মনে পড়েছে? আরেকটু ভাবুন তো, রাজধানীতে মাইক্রোবাসে গারো এক মেয়ে যখন ধর্ষিত হলো, তখন? পূর্ণিমার ঘটনায় ক্ষমতাসীনরা জড়িত। গারো মেয়ে ধর্ষিত হলেই কি আর না হলেই কি! তাই কি সেসময় আন্দোলন হয়নি? যার খেসারত আজকের তনুকেও দিতে হলো।

আজ যখন আন্দোলন শুরু হলো, তখন কেনো হলো না? রাজন হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুরো বাংলাদেশই আন্দোলন চলেছে। বিচার হয়েছে রাজন হত্যার। কিন্তু সাগর-রুনী, ত্বকী হত্যাকাণ্ড-গুলো নিয়ে কেন আন্দোলন হয় না? এসব ঘটনায় রাজনীতি সম্পৃক্ত বলে? তাই কি আমরা হিসেব করেই আন্দোলন করি? তাহলে আজ যারা আন্দোলন করছি, টিভিতে মুখ দেখাচ্ছেন যারা, তারা কি সুবিধাবাদী নয়? যদি তা নাই হবে, তবে কেন তারা সাগর-রুনী, ত্বকী ও পূর্ণিমা কিংবা গাড়ো মেয়েটির পক্ষে আন্দোলন করলেন না?

যা হোক, বিষয় ছিলো ধর্ষণের কারণ ‘পোশাক’! আসলেই কি তাই? নাকি প্রতিটি ধর্ষণের জন্য আমাদের মানসিকতা আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিই দায়ী? নাকি পরিকল্পিতভাবে নারীকে দাবিয়ে রাখার একটা কৌশল এই ধর্ষণ? একটু ভালো করে ভাবলেই এর উত্তর সহজ। ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির ঘটনাগুলোর নেপথ্যে ‘পোশাক’ নয়, পুরুষের বিকৃত মানসিকতা আর নারীকে দাবিয়ে রাখার একটি নির্মম অস্ত্র। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ হওয়ায় নারীদের দাবিয়ে রাখতে পুরুষরা ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। যাতে করে তারা ঘর থেকে বাইরে বের হতে সাহস না দেখায়। আবার চার দেয়ালের মাঝে তথা পরিবারের ভিতরেও কিন্তু চলে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণ। এরপরও কি ধর্ষণের জন্য পোশাককে দায়ী করা যায়?
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জুমার নামাজে এক অভূতপূর্ব ঘটনা

লিখেছেন সাব্বির আহমেদ সাকিল, ১০ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০



মসজিদের ভেতর জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাহিরে বিছিয়ে দেয়া চটে বসে আছি । রোদের প্রখরতা বেশ কড়া । গা ঘেমে ভিজে ওঠার অবস্থা । মুয়াজ্জিন ইকামাত দিলেন, নামাজ শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। হরিন কিনবেন ??

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫৯



শখ করে বন্য প্রাণী পুষতে পছন্দ করেন অনেকেই। সেসকল পশু-পাখি প্রেমী সৌখিন মানুষদের শখ পূরণে বিশেষ আরো এক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এবার মাত্র ৫০ হাজার টাকাতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠিক কোন বিষয়টা মৌলবাদী পুরুষরা শান্তি মত মানতে পারে???"

লিখেছেন লেখার খাতা, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৭


ছবি - গুগল।


ফেসবুক আর ইনস্টাগ্রাম এখন আর শুধু সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম নয়, রোজগার এর একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্মও। একটু স্মার্ট এবং ব্রেন থাকলে ফেসবুক/ইনস্টাগ্রাম থেকে রোজগার করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধখানা ভ্রমন গল্প!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১০ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৩৯


২০০২ সাল বান্দারবানের রিগ্রিখ্যাং-এর এই রিসোর্ট আজ সকালেই আমরা আবিস্কার করলাম! পাহাড়ের এত উপরে এই মোড়টাতে একেবারে প্রকৃতির মাঝে এমন একটা রিসোর্ট থাকতে পারে তা আমরা সপ্নেও কল্পনা করিনি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×