somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থালা নয়, স্বভাব বদলাতে হবে

১১ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেশে সম্প্রতি বিনামুল্যে (সীমিত) ইন্টারনেট সেবা চালু হয়েছে। এটা নিয়ে অনেক আলোচনা পর্যালোচনা হচ্ছে। অনেকে গর্বভরে বলছেন , দেশের কত উন্নতি হচ্ছে। আসলেই দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। এর আগে দেশীয় প্রযুক্তিতে ল্যাপটপ এসেছে। এসেছে দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মোটর সাইকেল। ল্যাপটপ, ট্যাবলেট, মোবাইল ফোন কি নেই আমাদের দেশে। সবকিছুই হয়েছে ও হচ্ছে। তাহলে দেশের উন্নতি হয় না বা হচ্ছে না বলে যারা চিতকার করে তারা এমন কেন করে?

বাংলাদেশের জন্মের পর হতে এই পর্যন্ত দেশের উন্নতির চেস্টা করা তো দুরের কথা, এ বিষয়ে কেউ তেমনভাবে চিন্তাও করেনি। আসলে দেশের উন্নতি কি জিনিস, বা কি করলে দেশের উন্নতি হয় সে ব্যাপারে আমাদের জনগনেরও তেমন স্পস্ট ধারনা নেই বললেই চলে। সেই ধারনাটি পাওয়ার চেস্টা করব আজকে। এর আগে ছোট একটি ব্যাপার জানিয়ে রাখছি। সেটা হল, বিনামুল্যে ইন্টারনেট দেবার এই প্রজেক্ট হল ফেসবুক কোম্পানীর। ওরা সারা বিশ্বের অনুন্নত দেশগুলোতে বিনামুল্যে ইন্টারনেট সুবিধা দিচ্ছে। অর্থা্ত বিনা মুল্যে ইন্টারনেট পাওয়াতে গর্ব করার কিছু নেই।

এবার মুল বিষয়ে আসি। উন্নত দেশ বলতে আমরা আসলে কি বুঝি? এই ব্লগের অর্ধেক লোকই দেশের বাইরে থাকেন। যারা দেশে থাকেন তারাও অনেক খোঁজ খবর রাখেন। আমি একটা দেশের নাম বললে, সাথে সাথে আপনারা বলতে পারবেন সেটা উন্নত দেশ কিনা। কিন্তু কি দেখে ওই দেশগুলোকে উন্নত বলেন? কি থাকলে একটি দেশকে উন্নত বলা যায়? উন্নত দেশ সম্পর্কে আমাদের ধারনা তিনটি জিনিসে সীমাবদ্ধ। সেগুলো হল বস্তা ভরা টাকা, উচু উচু বিল্ডিং ও চকচকে রাস্তা। মজার ব্যাপার এই তিনটির কোনটিই উন্নত দেশের লক্ষন নয়। তাহলে উন্নত দেশের লক্ষন কি? এর একটিই লক্ষন। সেটা হল - দেশের সবাই তার নিজের প্রয়োজন মিটিয়ে সুখে শান্তিতে ঝামেলামুক্ত আছে। সেটাই উন্নত দেশ যেখানে সবাই ভালো আছে।

বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক শহরগুলি রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। ওদের তো টাকার অভাব নেই। যা ইচ্ছা তাই করে। সমুদ্রের ভেতরে আবাসিক এলাকা বানায় যাতে প্রত্যেকের বাড়ির সামনে নিজস্ব সমুদ্র সৈকত থাকে। কৃত্তিম দ্বীপ এর উপরে ৮০ তলা বিল্ডিং বানায়। পানির নীচে স্টেডিয়াম বানাচ্ছে। সমুদ্রের মাঝখানে মাটি ভরাট করে সেখানে বানিয়েছে কৃত্তিম সুমুদ্র সৈকত। ওদের আছে এয়ার কন্ডিশন বাস স্ট্যান্ড। ওদের মধ্যবিত্তদের গাড়ী মার্সিডিস। কুকুর নয়, বাঘ পোষে তারা। কার্ড ঢুকালে টাকার মতন স্বর্ন বের হয় এমন এটিএম মেশিন রয়েছে। এমন চিত্র দেখা যায় দুবাই, বাহারাইন, কাতার সহ অন্যান্য শহরে। ইউরোপ আমেরিকা থেকে বড় বড় ইঞ্জিনিয়ার ডাক্তার ছুটে আসে ওখানে বেশী বেতনে কাজ করার জন্য। এসব দেশে আছে বিশ্বের সবচেয়ে বেশী বেতনের চাকুরী। রয়েছে সবচেয়ে দামি বাড়ী, হোটেল, বিল্ডিং ও গাড়ী। রয়েছে চকচকে রাস্তা ঘাট। কোন কিছুরই কমতি নেই এই দেশগুলিতে। সবকিছুতেই তারা সেরা। এর পরেও সেরা দশটি উন্নত দেশের তালিকাতে এদের পাওয়া যায় না। এর একটাই কারন - ওখানে সবাই ভালো নেই। খুব নিম্ন আয় করে মানবেতর জীবন জাপন করে এমন লোকও আছে প্রচুর।

এবার আসি বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রসঙ্গে। সত্তরের দশকে বাংলাদেশ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল, আজ সেখানে নেই। অর্থাৎ, বাংলাদেশ সামনে এগিয়েছে, উন্নতি হয়েছে। তবে সেই উন্নতিটা কেমন হয়েছে, তার একটি উদাহরন ছোট এই গল্পে দিচ্ছি। একজন লোক একটা ভাঙ্গা থালা হাতে নিয়ে রাস্তার মোড়ে ভিক্ষা করতো। ধীরে ধীরে কিন্তু টাকা জমল। এর পরে একটা প্লাস্টিকের থালা কিনল। আরো ভিক্ষা করে আরো কয়েকদিন পরে একটা স্টিলের থালা কিনল। এভাবে ভিক্ষা চলতে লাগল আর লোকটির হাতের থালাটা উন্নত হতে লাগল । তার হাতে এলো মেলামাইনের থালা, সিরামিকের থালা, রুপার থালা, সর্বশেষে স্বর্নের থালা। এখন সে স্বর্নের থালা হাতে নিয়ে ভিক্ষা করে। তার আশা আছে ভবিষ্যতে একটি হীরার থালা কিনবে। তা না পারলে স্বর্নের এই থালাটিতে অন্তত হীরার কারুকাজ করাবে। থালার যতই উন্নতি হোক, ভিক্ষা বন্ধ হবে না।

দেশের অবস্থার সাথে কি এই গল্পটি মেলাতে পারছেন? আচ্ছা, আমি মিলিয়ে দিচ্ছি। ৩০ বছর আগে অফিসের যে চাহারা ছিল সেই চেহারা এখন আর নেই। পুরাতন ফার্নিচার বদল হয়ে নতুন ফার্নিচার এসেছে। টাইপ মেশিনের যায়গায় এসেছে কম্পিউটার। ফ্যানের বদলে এসেছে এয়ার কন্ডিশন। স্যার তো দুরের কথা, স্যারে পিওনের রয়েছে মোবাইল ফোন। এমনই অনেক পরিবর্তন হয়ে সেই অফিসটি উন্নত হয়েছে। কিন্তু ওই অফিসের ঘুষ, দুর্নীতি আর আত্মসাদ বন্ধ হয়নি। ওই অফিস যদি স্বর্ন দিয়ে মুড়ে দেওয়া হয় তবুও ঘুষ দুর্নীতি চলতেই থাকবে। স্কুল কলেজে , বই পত্রে অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু নকল বন্ধ হয়নি। পুলিশের কাছে আধুনিক যন্ত্রপাতি এসেছে, সততা আসেনি। ভাঙ্গা রাস্তাতেও কেউ টাফিক আইন মানত না, ভালো রাস্তাতেও কেউ মানে না। আগে সাইকেল নিয়ে বখাটেরা স্কুলের মেয়েদের উত্তক্ত করত এখন মোটরসাইকেল নিয়ে করে। আগে চিঠি দিত এখন এস এম এস দেয়। এভাবে প্রতিটি বিষয় আলাদাভাবে দেখুন। আমরা আমাদের আশেপাশের জিনিসপত্র উন্নত করেছি কিন্তু স্বভাবটাকে একই রকমের আছে। ঠিক যেমনটি ওই ভিক্ষুক, থালের উন্নতি করলেও ভিক্ষা ছাড়তে পারেনি।

উন্নত সেই দেশ যেখানে মানুষের স্বভাব উন্নত। ওই দেশের ব্যাবস্থা ও পরিবেশ আপনাকে জোর করে উন্নত স্বভাবের বানাবে। স্বভাব ভালো না হলে হলে আপনি হবেন সমাজচ্যুত হয়ে যাবেন। ওদিকে আমাদের সমাজে ভালো স্বভাব হলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। আমাদের সমাজ আমাদের স্বভাব নস্ট করতে বাধ্য করে। এটাই একটা পিছিয়ে পড়া দেশের সবচেয়ে বড় লক্ষন। আমাদের এই ব্যাবস্থাটা ঠিক করার কোন ইচ্ছা কারো নেই। সবাই আছে দৌড়ে কিভাবে আগে যাওয়া যায় সেই ধান্দায়। উন্নত দেশগুলিতে মানুষে আয় ও জিনিসপত্রের মুল্য হয় সামঞ্জস্যপুর্ন। কাজেই সবাই সবকিছু কিনতে পারে। আইন সবার জন্য সমান তাই মানুষ ন্যায্য অধিকার পায়। নেই ঘুষ, দুর্নীতি ও চাদাবাজী। আর সবচেয়ে বড় যে জিনিসটি রয়েছে সেটা হল স্বাধীনতা। রয়েছে অন্যের সমস্যা না করে যা ইচ্ছে তাই করার অধিকার। উন্নত দেশে বস্তা ভরা টাকা নেই। রয়েছে সব প্রয়োজন মিটিয়ে ভালো থাকার নিশ্চয়তা।

আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে কেন জানি সব উন্নয়ন রাস্তায় গিয়ে ঠেকে। অমুক সরকার, তমুক নেতা দেশের বা এলাকার উন্নতি করল কিনা সেটা আমরা পরিমাপ করি তারা কতটা রাস্তা করেছে এই দেখে। অমুক সরকারের আমলে অমুক এলাকায় রাস্তা হয়েছে, তমুক নেতা এলাকায় ব্রিজ বানিয়েছেন, তমুক নেতা হাসপাতাল বানিয়েছেন, তমুক নেতা স্কুল/কলেজ বানিয়েছেন। ব্যাস, ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু আমাদের এই উন্নতিগুলো ওই ভিক্ষার থাল উন্নতির মতন। ওই রাস্তায় ইট বালি সিমেন্টের কারচুপি হয়ে রাস্তাটা অকেজো হয়ে যাবে। ওই হাসপাতালের ডাক্তার নিজের চেম্বার সামলিয়ে হাসপাতালে সময় দিতে পারবে না। ওই স্কুলে নকলের মহাউতসব চলবে। উন্নতি কিছুই হল না।

যদি কোনদিন কোন সরকার বাংলাদেশ থেকে নকল বন্ধ করতে পারে তবে সেটা হবে লক্ষ স্কুল বানানোর চেয়ে বড় উন্নয়ন। যদি হাসপাতালে ডাক্তারদের সঠিকভাবে নিস্টার সাথে কাজ করাতে পারে তবে সেটা হবে হাজার হাসপাতাল বানানোর চেয়ে বড় উন্নয়ন। যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির নামে সন্ত্রাসি কর্মকান্ড বন্ধ করতে পারে তবে সেটা হবে শত বিশ্ববিদ্যালয় বানানোর চেয়ে বড় উন্নয়ন। যদি পুলিশকে শততার প্রতিক বানাতে পারে, সেটা হবে দেশের উন্নয়ন। যদি দেশেকে দুর্নীতিমুক্ত করতে পারে সেটা হবে দেশের উন্নয়ন। যদি রাজনীতিবিদকে ব্যাবসায়ী না বানিয়ে সেচ্ছাসেবী বানাতে পারে তাহলে হবে দেশের উন্নয়ন। যদি বখাটেকে যুবককে স্বাবলম্বী কেরানী বানাতে পারে সেটা হবে উন্নয়ন।

এমন উন্নয়ন সম্ভব। এজন্য দেশের নেতাদের সদিচ্ছাই যথেস্ট। তারা যেভাবে বুদ্ধি করে বিরোধীদল দমন করে নিজেরা ক্ষমতায় টিকে থাকার চেস্টা করে তার অর্ধেক বুদ্ধি যদি দেশের অমন উন্নয়নের জন্য খরচ করত তাহলে আমাদের আজ এই দশা হোত না।

সুত্রঃ এস এম এলিট - Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৫ সকাল ৯:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×