somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভুলভাল দোষারোপঃ নুসরাত হত্যাকান্ড।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভুলভাল দোষারোপঃ নুসরাত হত্যাকান্ড।

নুসরাত হত্যাকান্ডের জন্য দায়ী উপাদানগুলো কি, চলুন দেখা যাক।

১) ২০১৭ সালে নুসরাতকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে তার উপর দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ করেছিল বখাটে নূর উদ্দিন। মামলাসহ সকল আইনগত কার্যক্রম গ্রহণ করার পরও সেই অপরাধের বিচার কেন হয়নি? বখাটে নূর উদ্দিনকে আইনের আওতায় নেয়া হয়নি।এখন কেউ কেন আংগুল তুলছে না সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দিকে? তখনকার অপরাধের মূল আসামীবখাটে নূর উদ্দিনই তো এখন নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার মূল পরিকল্পনাকারী!! তখন যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া হত, তাহলে কি এখন এই অপরাধটা হত? প্রথম এবং প্রধান দোষ হচ্ছে তখনকার প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া। সাংবাদিকরাও তাদের বিরুদ্ধে সহজে কঠোর হয় না। কেন কঠোর হয় না সেটা উপজেলায় চাকরি করার সুবাদে আন্দাজ করতে পারি।

২) কালপ্রিট অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এর আগেও প্রশাসনে নারী নির্যাতন বিষয়ক অভিযোগ জানানো ছিল।
গত বছরের ৩ অক্টোবর অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা আলিম শ্রেণির আরেক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেন। প্রতিকার চেয়ে মেয়েটির বাবা মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে অভিযোগ দিয়েছিলেন। চিঠির অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছেও দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং যে তিনজন শিক্ষক অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন, তাঁদের কারণ দর্শানোর চিঠি দেন অধ্যক্ষ। ওই তিন শিক্ষক হলেন আরবি বিভাগের প্রভাষক আবুল কাশেম এবং জ্যেষ্ঠ শিক্ষক বেলায়েত হোসেন ও হাসান আহমেদ। অধ্যক্ষের রোষানলে পড়ে তিনজনই কোণঠাসা হয়ে যান। - সূত্র, প্রথম আলো।
এবারও যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি, উলটো যারা অভিযোগ করেছে, তারাই পরে কোনঠাসা ।
উপরের দুইটা ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে যথাযথ প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হলে এসব ঘটনা ঘটত না। তাহলে আমরা কেন সবার আগে প্রশাসনিক ব্যবস্থার দিকে আংগুল তুলছি না?

৩) ফেনীতে উম্মুল কুরা ডেভেলপার্স নামের একটি কথিত সমবায় প্রতিষ্ঠান আছে। অধ্যক্ষ সিরাজ এ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে জমা পাওয়া টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন। এ ঘটনায় চেক প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৪ হাজার টাকার মামলা হয়। এ বিষয়ে আদালতে দায়ের হওয়া মামলায় (সিআর ৯৪/১৮ নম্বর) আদালত গত বছরের ১০ জুলাই তাঁর জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। পরে জামিনে মুক্ত হন তিনি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে মাদ্রাসা তহবিলের ৪৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
২০১৪ সালে নাশকতা ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলায় সিরাজ উদ দৌলা ২০১৭ সালে কারাভোগ করেন। - সূত্র- প্রথম আলো।

একজন আর্থিক অনিয়মের আর নাশকতামূলক একটিভিটিসের কারণে শাস্তিপ্রাপ্ত আসামী কিভাবে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান থাকেন?
আমরা কি মাদ্রসা বোর্ড বা মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) -কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছি?

৪) মূল অপরাধী অধ্যক্ষ সিরাজের সাথে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের সাথে সখ্যতার বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট। সোনাগাজী পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকসুদের কথা পত্রিকায় এসেছে। মাদ্রসার বিভিন্ন ধরনের ইনকাম ছিল, যেমন দোকান ভাড়া ইত্যাদি। আর্থিক দিকটা বিভিন্ন প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। কিন্তু বেশীরভাগ বিদ্যালয়ের সাথে স্থানীয় রাজনীতিবিদদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা নিয়ে এখনও কোন প্রশ্ন করছি না।

৫) অধ্যক্ষ সিরাজের গ্রেফতারের পর শিশু শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের মুক্তি চেয়ে ব্যানার সহ মিছিল করেছিল, আমরা সেইসব শিশুদেরকে অনলাইনে আজেবাজে কথা বলে তাদের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছি। কিন্তু ঠান্ডা মাথায় ভাবলে এটা স্পষ্ট হতো যে, তারা যদি অধ্যক্ষকে অপরাধী জানতো তাহলে বশ্যই এরকম একটা মিছিলে শামিল হতো না। তাদেরকে দোষারোপ করা বন্ধ করুন।

৬) অধ্যক্ষের মুক্তি চেয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের ব্যানারসহ মিছিলের ছবিটা এডিট করে অনলাইনে ছাড়া হয়েছে। ব্যানারে অধ্যক্ষ লেখাটা এডিট করে মুছে সেখানে ধর্ষক শব্দটা লেখা হয়েছে। এখন ছবিটা দেখে মনে হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা ধর্ষক সিরাজের মুক্তি চাচ্ছে। যে এই এডিট টা করেছে সে অবশ্যই বিকৃত মনা। উন্নত বিশ্ব হলে এডিটকারীর চরম শাস্তি হত। ছবিটার শিশুদের ছবি ব্লার না করে দিয়ে আপনারা যারা এডিটেড ছবিটা শেয়ার করছেন তারাও কিন্তু ঐসব শিশুদের ন্যভাবে শ্লীলতাহানী করছেন। এসব বিষয়ে সতর্ক হওয়া উচিৎ।

৭) একটা পক্ষ একচোখা দৃষ্টিতে সমানে শুধু জেন্ডারভিত্তিক পুরুষদের দোষারোপ করে যাচ্ছে। কিন্তু শ্লীলতাহানীর মূল অপরাধটা পুরুষ কর্তৃক সংগঠিত হলেও, বা অন্যায়ের পুরোভাগে পুরুষ থাকলেও, ভিকটিমের গায়ে আগুন লাগানোতে ব্যবহৃত হয়েছে একাধিক নারী। তাই এখানে জেন্ডারভিত্তিক পুরুষ যতটা না দায়ী, তার চেয়ে বেশী দায়ী পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতা। ক্ষমতার কেন্দ্রে না থাকা কতিপয় পুরুষ শিক্ষক ক্ষমতার কেন্দ্রে থাকা পুরুষ অধ্যক্ষের অপকর্মের বিরোধিতা আগে থেকেই করছিল।

৮) ভিক্টিমের একটা বক্তব্য থেকে জানা যায় যে, ২০১৭ সালে প্রেমের প্রস্তাবে রাজী না হওয়ার প্রেক্ষিতে তার চোখে তরল দাহ্য ছুড়ে মারায় চোখের বারোটা বাজা সত্তেও , তার নিজের কোন দোষ না থাকা সত্তেও তাকে সমাজে নানা রকম কটু কথা শুনতে হয়েছিল, তার অপবাদ হয়েছিল, অদ্ভুত। এটা সেই সমাজ যেখানে পুরুষ নারী, শিক্ষিত আর অশিক্ষিত সবাইই আছে। শুধু শক্ত অবস্থানে থাকে ক্ষমতাবানরা। এ থেকে স্পষ্ট যে, এ ঘটনা গুলোর জন্য সমাজও কম দায়ী না। ভিক্টিমের সামাজিক অবস্থান সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রযন্ত্রের পার্টগুলো অতটা কার্যকরী না প্রমানিত। এই সকল ব্যার্থতা শুধু এই ঘটনা না, সব ধরনের ধর্ষণ/শ্লীলতাহানী/ দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচারের বেলায়েও প্রযোজ্য।

৯) মাদ্রাসাগুলোতে নারী শিক্ষক হারিকেন দিয়েও খুজে পাওয়া যায় না। পুরুষ শিক্ষকরা তাদের পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্যবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য হলেও নারী শিক্ষক অন্তর্ভুক্তি ঠেকিয়ে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। অন্তত নারী মুসলিম মাদ্রাসা গুলোতে ১০০% নারী শিক্ষকের দাবী ১০০% যৌক্তিক।

### কিন্তু আমরা/আপনারা উপরের এই প্রবলেমগুলোকে পাশ কাটিয়ে শুধু মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে বন্ধ করার দাবী তুলছি । শুধু মাদ্রাসা শিক্ষার দিকে আংগুল তুলে আসলে আমরা সমস্যাগুলোকে জিইয়েই রাখছি। আমি বলবো না যে মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় ত্রুটি নেই, কিন্তু নারী পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কঠোর অবস্থানে থাকা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে থাকা অনুসরণকারীদের ত্রুটির জন্য শিক্ষা ব্যবস্থাটাকে দোষ দেয়া টা আসলে রাজনৈতিক মর্মে দৃশ্যমান।

কিছু বিপদগামী আছে যারা অন্য ধর্মের কারো দোষ পাইলে পুরো জাতিকেই দোষারোপ করা শুরু করে । এখানেও কিছু এরকমই মানুষ পাওয়া যাচ্ছে, যারা লক্ষাধিক মাদ্রাসার মধ্যে গুটিকয়েক বিপথগামীকে উদাহরণ হিসেবে পুরো মাদ্রসা ব্যবস্থাকে বন্ধ করার দাবী তুলছে। আমি আসলে এই দুই গ্রুপের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য দেখতে পাচ্ছি না।
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×