somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালো থাকুক প্রশ্রয়েরা,প্রাণ ফিরে পাক প্রশ্রয়’দের বাবার স্বপ্নগুলি।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অবশ্য সেদিনের বিকালটা খুব একটা ভাল কাটছিল না,ঘোর উদাসীনতা বিরাজ করছিলো।এক কাফ ব্ল্যাক কফিকে সঙ্গী করে দক্ষিণের বারান্দায় বসে ছিলাম। একঘেয়েমিতা দূরীকরণের লক্ষ্যে মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছিল কোথাও ঘুরতে বের হওয়ার বাসনা।(প্যান্ট পকেট এ রাখা সাইলেন্ট মোবাইলটা ভাইব্রেট হতে লাগলো) বের করতেই দেখি নিমুর কল।(নিমু আমার খুব কাছের বন্ধু) কলটা রিসিভ করলাম।
-হ্যালো,
হ্যা,কেমন আছিস?
-এইতো ভাল,তুই কেমন আছিস?
ভাল,চিনতে পেরেছিস তাহলে!
-কেন? না চেনার কি হলো,তাছাড়া তোকে চিনবো না তাকি হয় !
হুম,সেতো বুঝলাম কিন্তু এত বছর পর বাড়িতে এলি কোন খোঁজখবর তো নিলিনা,যাকগে বাড়িতেই বসে থাকবি ! আয় কোথাও বের হই।
-আচ্ছা! তুই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বাইরে দাড়া আমি আসছি।
রেডি হওয়ার তাগিদে ফোনটা কেটে দিলাম,ছোট ভাইয়ের বাইকটা নিয়ে বেরিয়ে পরলাম।সঙ্গে কিছু লজেন্স ও গিফট নিলাম।
আমাদের বাড়িটা থেকে ওদের বাড়িটা দুই-তিন কিলোমিটার দূরত্বে হবে।বাড়ি থেকে বের হতে পেরে মনটা অস্বস্তির ঘোর কাটিয়ে স্বস্তির ঠিকানায় পাড়ি জমিয়েছিলো।তাছাড়া পড়ন্ত বিকালের সোনালি রোদ্দুর বৃষ্টিতে ধুয়ে যাওয়া পরিবেশটাকে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করছিলো।যেতে যেতে বেশ কিছু পরিচিতদের সাথে দেখা হল ,কথা হল।তবে এই কয়েক বছরেই আমার স্মৃতির পাতায় অঙ্কিত মানচিত্রের দৃশ্যপট পুরোপুরিই পাল্টে গেছে।কিছুদূর যেতেই পড়লাম বিপাকে ,পিচঢালা কালো রাস্তা ছেড়ে মাটির রাস্তায় এসে পরেছি।অবশ্য নিমুদের বাড়ি এখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়।কি আর করা, বাধ্য হয়ে নিমুকে কল করলাম।
-হ্যালো
হ্যালো ,কোথায় তুই?
-এইতো এসে পড়েছি,কাঁচা রাস্তাটার কাছে।
পথ ভুলে গেছিস নাকি ! অল্পই তো বাকি, চলে আয়।
-কিভাবে আসবো শুনি? সাথে বাইক আছে,আর সকালে বৃষ্টি নেমে রাস্তাটার বেহাল দশা সেটা কি ভুলে গেছিস !
হুমম...তুই তাহলে থাক ,আমি এখনই আসছি।
অগত্য দাড়িয়ে রইলাম ঠিক মিনিট পাঁচেক পরে নিমুর আগমনঃ।
আরে বন্ধু,পুরা ফিটনেসই পাল্টে ফেলেছিস যে।
-তুই আর শুধরাবিনা,তা বউদি কেমন আছে?অন্তত অদ্রিল’কে তো সঙ্গে নিয়ে আসতে পারতিস!(অদ্রিল নিমুর ছেলে)
হুম ও ভালো আছে,আর অদ্রিল আসতে চাইছিল, আমিই নিয়ে আসিনি।
-এইগুলো ধর ,কিছু লজেন্স ও আছে অদ্রিল এর জন্য।
তুই রেখে দে ,পরে নিয়ে নেব ক্ষন।
আর কথা না বাড়িয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
আচ্ছা ! তুই তো অন্তত বিয়েটা করতে পারতিস,বয়সটা তো আর কম হয়নি।
-বাদদে ওসব কথা , অল্প কয়েকদিনের জন্য এসেছি।আচ্ছা ! তুই আমার নাম্বার কোথায় পেয়েছিস?
খবর পেলাম তুই এসেছিস,তাই তোর ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে নিলাম।এই...সামনে একটু থাম।
বাইকটা রাখতেই বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো আধপাকা চুলের বয়স্ক একটা লোক।(আমাকে লক্ষ্য করে)
কেমন আছিস?
-ভালো (রিতিমত হতভম্ভ)
চিনলি নাতো ! আমি অভ্যংশু।(আমদের ক্লাসমেট)
-কিভাবে চিনবো,চেহারার কি হাল করেছিস।
এর মাঝে বাড়ির ভেতর থেকে চার-পাঁচ বছর বয়সী একটা মেয়ে দৌড়ে আসলো।(অভ্যংশু’কে লক্ষ্য করে)
বাবা...বাবা,ইনি আমার কে হন?
ইনি তোমার একটা কাকু হন।
বাইক থেকে নেমে মেয়েটাকে কোলে নিলাম।
-আম্মু,কি নাম তোমার?
:-প্রশ্রয়
-বাহঃ বেশ ভালো নামতো !
অদ্রিল এর জন্য নেওয়া লজেন্স গুলো নিয়ে আপাতত কাজ চালিয়ে নিলাম,না হলে আবার বিপাকে পড়তে হতো।
তা বাইরেই দাড়িয়ে থাকবি ! ভিতরের দিকে আয়,বস।(মা, এদের জল খাবার এর ব্যাবস্থা করতো)বাড়ির ভিতরে গেলাম,বসলাম।
-তা বউদিকে দেখছিনা !
আম্মু, একটু বাইরে খেলতে যাওতো,তোমার কাকুদের সাথে একটু কথা বলি।(প্রশ্রয় আমার কোল থেকে নেমে চলে গেল)
প্রশ্রয় এর যখন এক বছর বয়স তখন ওর মা মারা গেছে।
-কেন,কি হয়েছিলো?
এটাতো জানিস !আমরা পালিয়ে বিয়ে করেছিলাম,পরে অবশ্য বাড়িতে ঠাই দিয়েছিলো।তারপর সুখে শান্তিতেই কাটছিলো আমাদের দিনগুলি।সংসারের মুখ উজ্জল করে জন্ম নিলো প্রশ্রয়,দুজনেই খুব বেশি ভালবাসতাম প্রশ্রয়’কে।বুঝিস-ই তো মধ্যবিত্ত পরিবার তার উপর নতুন করে যোগ হল আরো একটা মুখ।আমার কাজের চাপ বেড়ে যেতে লাগলো,সকালে এক কাজ তো বিকালে আর এক,তার উপর প্রশ্রয়’কে সময় দেয়া।এমনিতেই তোর বউদি বড়লোক ঘরের জেদি মেয়ে তার উপর তাকে আর ঠিকঠাক সময় দেয়া হতোনা।যদিও আমার অবস্থাটা বুঝে আমাকে মুখ ফুটে কোনদিন কিছুই বলেনি।তবে মনেমনে ছিলো তার ভীষণ আক্ষেপ।তো রিতিমত একদিন বাজার থেকে ফিরলাম।দেখি মেয়েটা উঠানের কাদামাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে,আমি একটু বেশিই রেগে গিয়ে তোর বউদিকে বেশ বকাবকি করেছিলাম।আর তার ফলস্বরূপ তোর বউদিকে ঐ আড়াটা(ঘরের মাঝ বরাবর চালের সাথে একটা কাঠকে ইঙ্গিত করে)থেকে রশ্মি খুলে কাধে করে নামিয়ে ছিলাম।কিছুতেই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না ।
মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে জীবন প্রদিপটা আগলে রাখতে হয়েছে।তাছাড়া মেয়েটাও অসুস্থ,জন্মের পর থেকেই ওর ঠান্ডাকাশি,শাসকষ্ট লেগেই আছে,এমনকি দুধ পান করতে গেলেও হাফিয়ে উঠতো।ওর মা মরে যাওয়ার পর ওর সমস্যাটা বেড়ে গেলো।প্রথম প্রথম সুবল ডাক্তারকে দেখিয়েছি,অবস্থা ভাল হয়না দেখে শহরে নিয়ে গিয়েছিলাম।কিসব পরীক্ষা করে বলে প্রশ্রয়ের নাকি হার্ট এ একটা ছিদ্র আছে।
-ডাক্তার কি বলে, সেরে উঠবে তো !
ডাক্তার বলেছিলো ঔষধ লিখে দিলাম, এগুলো খাওয়াবেন।অবশ্য আর একটা পথ আছে,অপারেশন।তবে এত ছোট বয়সে আমরা সে রিস্ক নিতে পারব না।
আমার আর কিস্যু বাকি নেই-রে সব শেষ।
-পরে আর ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাস নি?
হুম...গিয়েছিলাম,ওরা বলেছে পারবে না।শুনেছি ইন্ডিয়াতে ভালো চিকিৎসা হয়,আমি আমার প্রশ্রয়’কে ইন্ডিয়া নিয়ে যাব,আমার মা ভালো হয়ে উঠবে। আমিতো বলেই যাচ্ছি তোদের জলখাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আচ্ছা ! তোরা বস আমি গরুগুলোকে গোয়ালে রেখে আসি,বেশ অন্ধকার নেমে এসেছে।
-(নির্বাক বনে গেলাম ,অভ্যংশু’র কথা শুনে)না’রে আজ উঠি,যেতে হবে।
প্রশ্রয়’কে কোলে নিলাম,ঠিক ছেড়ে আসতে ইচ্ছে করছিল না।সেদিনের মত বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম।
তবে বলবো,ভালো থাকুক প্রশ্রয়েরা,প্রাণ ফিরে পাক প্রশ্রয়’দের বাবার স্বপ্নগুলি।


[ছবি:- গুগল]
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামাস বিজয় উৎসব শুরু করেছে, ইসরায়েল বলছে, "না"

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:০৮



গতকাল অবধি হামাস যুদ্ধবিরতী মেনে নেয়নি; আজ সকালে রাফাতে কয়েকটা বোমা পড়েছে ও মানুষ উত্তর পশ্চিম দিকে পালাচ্ছে। আজকে , জেরুসালেম সময় সন্ধ্যা ৮:০০টার দিকে হামাস ঘোষণা করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×