somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মশা এবং আমার গণতন্ত্র

০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন ঢাকা থেকে বাসে করে সিলেট আসছিলাম। আগে রাস্তাঘাটে থাকলে একটা ভয় থাকত। সড়ক দুর্ঘটনা। এখন সাথে যুক্ত হয়েছে কখন পেট্রোল বোমা মারা হয়, ট্রেনে গেলে কোথায় না জানি স্লিপার উঠিয়ে রাখা হয়েছে। একটু চিন্তামগ্ন হলাম। আজকে যদি আমি কোনভাবে মারা যাই, তবে কী হবে? আমার জন্য কি রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হবে? রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সশস্র সালাম প্রদর্শন করে দাফন করা হবে? প্রধানমন্ত্রী কি শোক বইতে স্বাক্ষর করবেন? রাষ্ট্রপতি কি ছুটে আসবেন আমার বাসায়? উত্তরটা হল "না"। রাজতন্ত্রের রাজা মারা গেলে গণতান্ত্রিক দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এসব করতে পারেন, তবে গণতান্ত্রিক দেশের “সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী” মারা গেলে খুব বেশি হলে হঠাৎ করে মেধাবী হয়ে উঠব, তার বেশি কিছু না।

গণতন্ত্র ব্যাপারটা নিয়ে আমার এমনিতেই একটু চুলকানি আছে। আমার দেশের প্রেক্ষাপটে চুলকানিটা আরেকটু বেড়ে যায়। গণতন্ত্রে, দেশের সাধারণ মানুষ একজন একনায়ককে নির্বাচিত করে, যে তার দলবল নিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থোদ্ধার করে। আমার প্রশ্নটা সেখানেই। একনায়কই যদি ক্ষমতায় বসে, তবে গণতন্ত্র নামক মুখোশটার দরকার কী? এরচেয়ে রাখঢাক ছাড়া একনায়কতন্ত্রই ভালো নয় কি? তবে সেটা কি কাম্য?

অনেকে বলেন আমরা দলকানা জাতি। সত্যিকার অর্থে আমরা তার চেয়েও বেশি কিছু। আমরা যতটা না আওয়ামী পন্থি তার চেয়ে অনেক বেশি বিএনপি বিরোধী এবং একইভাবে যতটা না বিএনপি পন্থি তার চেয়েও অনেক বেশি আওয়ামী বিরোধী। এই দুই ছাড়াও যে আরও অনেক কিছুই থাকতে পারে সেটাও আমাদের মাথায় নাই। একদলের কাছে তারা নিজেরা কখনই ভুল করে না এবং অপর দল ভুল ছাড়া কিছু করতেই পারে না। ঐক্যমত্য বড়ই দুস্পাপ্য জিনিস। অনেকে বলতে পারেন গত এক বছর তো ভালোই ছিলাম। কারনটা কিন্তু সেই একনায়কতন্ত্র, তবে দলগত। বিএনপির অনেক সিনিওর নেতা বেঁচে নেই, তাতেই একটা দল এভাবে নির্জীব হয়ে যাবে? সত্যিকার অর্থে, যেভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে ধরপাকড় আর অত্যন্ত নিপুন রাজনৈতিক কলাকৌশলে, সত্যিকার অর্থেই তাদের আর করার কিছুই ছিল না শুধু জনগনকে সাথে নিয়ে এগুনো ছাড়া। কিন্তু জনগণ কেনো এগুবে? বিদ্যুতের দাম, শেয়ারবাজারে, চার হাজার কোটি টাকা, বিধ্বস্ত শিক্ষাব্যবস্থা, পাহাড়ি-সংখ্যালঘু নির্যাতন, সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলা লাশ, বিনিময় ছাড়াই ট্রানজিট, বাঁধ ইত্যাদি ইত্যাদি এত এত ইস্যু গেছে, হরতাল তো দূরে থাক তারা টু শব্দটা পর্যন্ত করে নাই। কিন্তু আজকে যখন লেজে পা, তখনও তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারে না, তাই মানুষ পোড়ায়। আর অন্য দল বসে বসে দেখে, জনরোষ যাতে বৃদ্ধিপায় সেজন্য শুধু হাত পা গুটিয়ে বসেই থাকে না, তাদের দলের কাউকে কাউকে ধরাও পরতে দেখা যায় সরঞ্জামাদি সহ। যেন তাদের কী বা করার আছে? “বেডরুম পাহাড়া দেওয়ার দায়িত্ব” তাদের না!

মালয়শিয়া চিনেন? একসময় তাদের অবস্থা নাকি আমাদের চেয়েও খারাপ ছিল। আমাদের কাছে জনশক্তি চেয়েছিল, আমরা দেইনি। কিন্তু এখন? কারণ খুঁজলে একজন মাহাথির মোহাম্মদের নাম চলে আসে।

আমাদের দেশে সবচেয়ে ভালো সময় কখন কেটেছে সাধারণ খেটে খাওয়া জনগনের? জিজ্ঞাসা করে দেখেছেন কখনও? আমি রিকশাওয়ালা, কামলা, শ্রমজীবী মানুষদের মুখে একটাই উত্তর পেয়েছি। ফখরুদ্দিনের সময়কাল। যখন বড় বড় নেতারা সব জেলে আর অফিসাররা সব দুদকের ভয়ে দেশছাড়া, ঘরছাড়া। এতটা নিয়মতান্ত্রিকভাবে এই দেশের মানুষকে চলতে দেখিনি কখনও।তখন পেরেছি, কিন্তু এখন কেন পারব না? কারণ? আছে...


অনেক "কিন্তু" আছে ব্যাপারগুলার মধ্যে, সেটা আমি জানি। অনেকগুলার উত্তর আছে আমার কাছে, কিছু প্রশ্নের উত্তর আবার নাইও। তবে হ্যাঁ, রুমে একটা মশা খুব একটা সমস্যা না। কতই বা আর রক্ত খাবে একলা? এজন্য মশারি লাগে না।কিন্তু দুইটা বড় বড় মশাদের ঝাঁক কিন্তু খুব একটা ভালো ব্যাপার না। যতই তাদের নিজেদের মধ্যে শত্রুতা থাকুক না কেন, রক্ত আপনারই খাবে। তখন মশারিও কাজ নাও করতে পারে।

যে দেশের মানুষ নিজের ভালো নিজে বুঝে না, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষ চেষ্টাটাও করে না বা করতে জানে না, চা-পান-সিগারেটের বিনিময়ে ভোট দেওয়া মানুষের সংখ্যা কতজন সেটাও গবেষণার বিষয়, দুর্নীতিতে বারকয়েক চ্যাম্পিয়ন হয় সে দেশের জন্য গণতন্ত্র অনেক বড় কৌতুক ছাড়া আর কিছু না। যত যাই বলেন আর করেন, যতদিন এদেশের মানুষ নিজের ভালো বুঝতে না শিখবে, ততদিন কোন তন্ত্রই কোন পরিবর্তন আনতে পারবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:২২
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×