somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা পাঁচজন আর বস্তির রাণী সুরাইয়া

২১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা ছিলাম পাঁচজন।পাঁচ জন এক সাথে একটা বাসা ভাড়া করে মেসের মতো থাকি সিলেট শহরের মুটামুটি ইম্পর্টটেন্ট একটা জায়গায়।সারাদিন ভার্সিটিতে ক্লাশ করে,আড্ডা দিয়ে দিন কাটাই।আমাদের মেসমেট শিহাব।আমার দেখা সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট ছেলেদের মধ্যে একজন।ও মনে হয় একদিন আইনেস্টাইন বা এডিসন টাইপের কিছু একটা হবে।সব মেধাবীদের মধ্যেই মনে হয় ক্র্যাক টাইপ কিছু একটা থাকে।তো আমাদের শিহাবের মধ্যে সেটা একটু বেশী পরিমানেই ছিলো।ওর কাহিনী বলতে বসলে শ’খানেক পোস্ট দিতে হবে।প্রথম শ্রেণীর গর্ধভ। আমরা ওকে গরু বলে ডাকতাম।টুয়েন্টি নাইনের আসরে পারত পক্ষে ওকে কেউ নিতে চাইতো না।মোটে থাকি পাঁচজন,কেউ একজন না থাকলে বা ব্যাস্ত থাকলে তাই ওকে নিতেই হতো।শিহাব যে দলে পড়েছে সে দলের অবস্থা মোটামুটি কেরোসিন।ওর পার্টনার চোখ দিয়ে নানান রকম ইঙ্গিত দিয়েও শিহাবকে দিয়ে সঠিক চালটা ফেলাতে পাড়তো না।ভুল সময়ে ভুল কার্ডটা দিয়ে পার্টনারের মেজাজ চড়মে নিয়ে যেতো।পার্টনার খেপে কতবার কার্ড টার্ড ওর মুখের ওপর ছুড়ে ফেলেছে তার ইয়াত্তা নাই।আর তখন শিহাব এমন এক বোকামী মার্কা হাসি দিতো, যেন সদ্য ভূমিষ্ট হয়েছে।নির্বোধের মতো বলতো,’কই তুই কথন আমাকে চোখ টিপ দিয়েছিস তা বুঝি নাই তো্!’আমাদের দুই নাম্বার মেসমেট হলো সাইফুল।বিশিষ্ট সমাজ সেবক।ক্যাম্পাসের যে কোন অনুষ্ঠান, দাতব্য কার্যকলাপের নেতা।সাইফুলের মতো অর্গানাইজার আমি খুব কমই দেখেছি।সব কিছুতেই নেতা হিসেবে দাড়িয়ে যায়।তিন নাম্বার মেস মেট হলো মারুফ।সে মেকানিক্যালের ফার্স্ট বয়।লেখা পড়াটা কে সে মুটামুটি ইবাদতের পর্যায়ে নিয়ে গেছে।পরীক্ষার আগের দিন আমরা সবাই যখন জীবনে প্রথমবারের মতো বই খুলে কোনটা পড়বো আর কোনটা বাদ দিবো বুঝে উঠতে হিমশিম খাচ্ছি, তখন সে সপ্তম কিংবা অষ্টম বারের মতো সিলেবাস শেষ করে বসে আছে আর এরপর পড়তে ইচ্ছে করছে না বলে কোন একটা মুভি দেখছে বা ঘুম দিচ্ছে।চতুর্থতম মেম্বারটি হলো অনিক।ক্যাম্পাসের সবচেয়ে স্টাইলিশ ছেলে।এক এক দিন চুলের এক এক স্টাইল করে।বিছানার নীচে ইস্ত্রি করা কাপড় ভাজ করে মজুদ রাখে যাতে ইস্ত্রি নষ্ট না হয়ে যায়।তাকে নিয়ে কেউ কোন ফাজলামি করলে খুবই খেপে যায়।আর পঞ্চমজন হচ্ছি আমি, আগাগোড়া নিরামিষ টাইপ ছেলে, গবেট টাইপ, শিহাব না থাকলে গরু উপাধীটা সম্ভবত আমার ভাগ্যেই জুটতো।

তো আমরা পাঁচজন মোটামুটি টুয়েন্টি নাইন খেলে, চায়ের দোকানের আড্ডায় এক এক বার এক এক জনকে পঁচিয়ে, মুভি টুভি দেখে বেশ ভালো ভাবেই দিন কাটাচ্ছিলাম।এর মাঝে আমাদের পাশের ফ্লাটে নতুন ভাড়াটিয়া এলো।হাজবেন্ড,ওয়াইফ আর তাদের ছোট একটা বাচ্চা, বয়স ৩/৪ বছর হবে।মহিলা(!) দেখতে মোটামুটি সুন্দর।আমি যে গবেট টাইপ, এটা তো আগেই বলেছি, তাই আমি খুব দ্রুত মহিলাকে আপু আপু বলে ডাকা শুরু করলাম আর বিকেল হলেই বাচ্চাটাকে নিয়ে বাসার সামনের খোলা জায়গাটায় খেলতাম।এতে দেখলাম আমার মেসমেটদের কেউ কেউ খুবই নাখোশ হলো।কারন তারা উনাকে ভাবী ডাকতে চায়।আমি আপু ডেকে ফেলায় নাকি মস্তো মুসিবত হয়ে গেছে।তো অন্যরা তাকে ভাবীই ডাকা শুরু করলো।আমরা সবাই মোটামুটি খু্বই ভালো ছোট ভাই বা দেবর হিসেবে আপু (কিংবা ভাবী)-র কাছে পরিচিতি হয়ে গেলাম।আমি পিচ্চিটাকে নিয়ে খেলি, সাইফুল ভাবীর সাথে বাজারের চাল ডালের গল্প করে,অনিক চুলের স্টাইল ঠিক করে,শিহাব বুঝে না বুঝে বেমক্কা জ্ঞানের গল্প জুড়ে দেয়, আর মারুফ বই হাতে একবার উকি দিয়ে যায়-এভাবে ভালো ছেলে হিসেবে আমাদের দিনকাল ভালোই কাটছিলো।এর মাঝে একদিন ঘটলো ঘটনাটা।রাত তখন সম্ভবত ১১টা।আমাদের বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো।কে একজন দরজার পিপ হোলে দেখে বললো যে পাশের বাসার ভাবী নাকি নক করছেন।সাথে সাথে যে যেখানে ছিলাম সবাই এস হাজির হলাম।দেখলাম কথা সত্য। আমরা বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করলাম।ভালো করে বোঝার আগে আপু যেটা বললেন তা হলো কাছের ভিডিও দোকানের ছেলেটা নাকি এসে তাদের বাসায় ভুল করে নক করেছে। আমরা তাকিয়ে দেখলাম গেটের অপর পাশে ছেলেটা দাড়িয়ে আছে।রাত হয়েছে বলে বাসার কলাপসিবল গেট আটকে দেয়া হয়েছে।ওখান থেকে আমাদের দরজায় নক করা যায় না। তাই আপুদের বাসায় নক করেছে।আমরা তাকে জিজ্ঞেস করলাম বিষয় কি?গেটের ওপাশ থেকে ছেলেটা গলা উচিয়ে বললো আমাদের মাঝে অনিক নাকি তার দোকান থেকে একটা মুভির সিডি এনেছে অনেকদিন হলো এখনো ফেরৎ দেয় নি।আপুর সামনে আমাদের প্রেস্টিজের ব্যাপার, সাইফুল নেতা মানুষ, এগিয়ে এসে বললো সিডি এনেছে তো কি হয়েছে? এতো রাতে সে জন্য অন্যদের ডিস্টার্ব করতে হবে?ছেলেটা চিল্লাপাল্লা শুরু করলো।তখন সাইফুল বললো আচ্ছা কোন ছবি? গেটের ওপাশ থেকে ছেলেটা গলা উচিয়েই উত্তর দিলো –“বস্তির রাণী সুরাইয়া”। সাইফুলের মুখটা আমশি হয়ে গেলো, শিহাব গর্দভটা বলে বসলো-‘হ্যা হ্যা আমি দেখেছি, অনিকের টেবিলে উপর ছবিটার সিডি’।পেছনে তাকিয়ে দেখি অনিক হাওয়া, আর মারুফ গিয়ে পড়ার ভান করছে,যেন সে এসব কিচ্ছু জানে না।আর আপু/ভাবী? তিনি দেখলাম মুচকি হাসছেন।

পরিশেষ: এরপর অনিক বহুদিন আর আপুর সামনে যায় নি।চুলের স্টাইলও মারে নি।
বি:দ্র: বন্ধুর তীব্র বিরোধিতায় ছব্দনাম ব্যাবহার করতে বাধ্য হলাম। :(
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:০৯
২২টি মন্তব্য ২০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×