লেখকদের নাকি গোঁফ থাকতে হয়।তারা মোটা ফ্রেমের চশমা পড়েন। প্রতিটা কথা মেপে মেপে বলেন। এতো কঠিন কঠিন বই যারা লিখেন তারা তো একটু ভিন্ন কিসিমের হবেনই। অন্তত ছোটবেলায় আমার সেটাই বিশ্বাস ছিলো। প্রথম ভুলটা ভাঙলো মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাত কাঁটা রবিন বইটা পড়ে। এই লেখকের গোঁফ আছে, আবার দেখি চোখে চশমাও আছে। একদম পুরোদস্তুর লেখক। কিন্তু বইটা তেমন না। দস্যি ছেলেপিলের মনের কথা লিখে ফেলেছে এই লেখক মানুষটা! সেই থেকে আমি তার ভক্ত। ভক্ত ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে চলে গেলো যে তার সব বই আমার একদম মুখস্থ।
ছোটদের গল্প ছাড়িয়ে তখন মাত্র নতুন ধরনের লেখা সায়েন্স ফিকশন পড়তে শুরু করেছি। এমন সময় টিভিতে দেখে ফেললাম ইটি। কি ভয়ানক কথা। এমনো মুভি হতে পারে। এরপর একের পর এক সায়েন্স ফিকশন পড়া। বাংলার মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার, হুমায়ূন আহমেদ, সত্যজিৎ রায়, শীর্ষেন্দু শেষ করে শুরু করলাম এইচ. জি. ওয়েলস, জুল ভার্ন, আর্থার কেনান ডয়েল, আইজাক অসিমভ আরো যা যা পাই। সেবা প্রকাশনীর কল্যানে সেই ছোটবেলায়ই ভালো ভালো অনুবাদ পেয়ে যাই তখন। সেই থেকে সায়েন্স ফিকশনের প্রতি একটা দুর্বলতা তৈরী হয়। মুভি দেখলেও সায়েন্স ফিকশনই বেশী পছন্দ করতে শুরু করি। আর তাই হয়তো ব্লগে এসে কী বোর্ড নিয়ে যুদ্ধ করতে যেয়েও সায়েন্স ফিকশন ই লিখতে শুরু করি। ব্লগাররা উৎসাহ দেয়। সেই সাথে তীব্র সমালোচনা জাফর স্যারকে নকল করার। এর মাঝেই লিখে চলি। সত্যি বলতে এই ব্লগের ব্লগারদের উৎসাহ ছাড়া যেটা চালিয়ে যাওয়া হতোই না। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে। আরো আরো সেটা পাবার জন্যই তাই লেখা হয়ে যায় অনেকগুলো সায়েন্স ফিকশন।
অনেকদিন থেকেই সহ ব্লগার ভাই বোনরা বলছিলো কেন এরকম একটা বই বের করি না। কি ভয়ঙ্কর কথা! বই বের করা? মানে লেখক হয়ে যাওয়া। নিজেকে মোটেও লেখক মনে হয় না। নাকের নীচে গোঁফ নেই, পাতলা একটা চশমা। এই দিয়ে কি লেখক হওয়া যায়। তাই প্রথমেই এই চিন্তা বাদ। সহ ব্লগারদের কথাটা উৎসাহ হিসেবেই নেই। বাদটা সাধেন বেশ কয়েকজন সহ ব্লগার আর বন্ধু। এই বই মেলায় কেন বই বের করছি না, সেটা নিয়ে উৎসাহ দিতে থাকেন। আমি ও ফুলে ফেঁপে উঠি। কল্পনায় আমার গোঁফ গজায়, চশমার কাঁচ ভারী হয়। নিজেকে লেখক লেখক মনে হয়।
কিন্তু বই কিভাবে ছাপে? সেটা একটা বিশাল রহস্য আমার কাছে।পাশে এসে দাড়ান আর এক সহ ব্লগার। মোজাম্মেল প্রধান। বই ছাপানোর গলি ঘুঁপচির কিছুই চিনি না। তাই পুরোটা তার উপর ছেড়ে বসে থাকি। সত্যি বলতে এই অসাধারন মানুষটা না থাকলে হয়তো আমার বই ছাপাই হতো না। আরো পাশে এসে দাড়ায় প্রতিভা প্রকাশ। সব কিছু তাদের উপর ছেড়ে দিয়ে আমি লেখক হবার স্বপ্ন দেখি। মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে, কারন আমি স্বপ্নে দেখি আমার বইয়ের পাতা ব্যাবহার হচ্ছে ঝালমুড়ির ঠোঙ্গায়। ভয় পাই। সাহস দেয় সবাই। আবার স্বপ্ন দেখি কালো বোরখা পড়া মহিলারা আমার বই ছুড়ে ছুড়ে মারছে বাসের জানালা দিয়ে। বাসযাত্রীরা সে বই বিরক্ত হয়ে ছুড়ে ফেলছে রাস্তায়। কি ভয়ানক ব্যাপার। তারপরও সাহস পাই বন্ধু, সহব্লগার আর পাশের প্রিয় মানুষটির কথায়। ভাঙ্গতে গড়তে এগিয়ে চলে আমার লেখক হবার স্বপ্ন।
বই মেলা এসে গেছে। দু'দিন আগে আমার বইও চলে এসেছে মেলায়। এখনো যাইনি মেলায়। ক্ষীপ্ত পাঠকদের ভয়েই মনে হয়। বই কেমন বিক্রী হচ্ছে তার খবর নিতেও ভয় পাই। জানি সেটা একনো দুই অঙ্কের ঘর পেরোয় নি। তাতে কি? আমি তবু তো লেখক। গোঁফ হীন পাতলা চশমার লেখক। তবুও লেখক তো।
লজ্জার কথা: আজকাল হচ্ছে মার্কেটিং এর যুগ। কিন্তু নিজের ঢাক আমি নিজে পেটাতে পারি না। জানিও না সেটা কিভাবে পেটাতে হয়। তারপরও বইয়ের প্রচ্ছদটা দিয়ে দিলাম পোস্টে। অবশ্যই সায়েন্স ফিকশন গল্প সংকলন। বইটা পাওয়া যাবে ৪৫০ নাম্বার ষ্টলে। প্রতিভা প্রকাশে। কেউ যদি ভুল করে কিনে ফেলেন তবে খুবই খুশি হবো গল্পগুলো কেমন হয়েছে তা জানালে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




