somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লেখক হবার গল্প

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১০:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লেখকদের নাকি গোঁফ থাকতে হয়।তারা মোটা ফ্রেমের চশমা পড়েন। প্রতিটা কথা মেপে মেপে বলেন। এতো কঠিন কঠিন বই যারা লিখেন তারা তো একটু ভিন্ন কিসিমের হবেনই। অন্তত ছোটবেলায় আমার সেটাই বিশ্বাস ছিলো। প্রথম ভুলটা ভাঙলো মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাত কাঁটা রবিন বইটা পড়ে। এই লেখকের গোঁফ আছে, আবার দেখি চোখে চশমাও আছে। একদম পুরোদস্তুর লেখক। কিন্তু বইটা তেমন না। দস্যি ছেলেপিলের মনের কথা লিখে ফেলেছে এই লেখক মানুষটা! সেই থেকে আমি তার ভক্ত। ভক্ত ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে চলে গেলো যে তার সব বই আমার একদম মুখস্থ।

ছোটদের গল্প ছাড়িয়ে তখন মাত্র নতুন ধরনের লেখা সায়েন্স ফিকশন পড়তে শুরু করেছি। এমন সময় টিভিতে দেখে ফেললাম ইটি। কি ভয়ানক কথা। এমনো মুভি হতে পারে। এরপর একের পর এক সায়েন্স ফিকশন পড়া। বাংলার মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার, হুমায়ূন আহমেদ, সত্যজিৎ রায়, শীর্ষেন্দু শেষ করে শুরু করলাম এইচ. জি. ওয়েলস, জুল ভার্ন, আর্থার কেনান ডয়েল, আইজাক অসিমভ আরো যা যা পাই। সেবা প্রকাশনীর কল্যানে সেই ছোটবেলায়ই ভালো ভালো অনুবাদ পেয়ে যাই তখন। সেই থেকে সায়েন্স ফিকশনের প্রতি একটা দুর্বলতা তৈরী হয়। মুভি দেখলেও সায়েন্স ফিকশনই বেশী পছন্দ করতে শুরু করি। আর তাই হয়তো ব্লগে এসে কী বোর্ড নিয়ে যুদ্ধ করতে যেয়েও সায়েন্স ফিকশন ই লিখতে শুরু করি। ব্লগাররা উৎসাহ দেয়। সেই সাথে তীব্র সমালোচনা জাফর স্যারকে নকল করার। এর মাঝেই লিখে চলি। সত্যি বলতে এই ব্লগের ব্লগারদের উৎসাহ ছাড়া যেটা চালিয়ে যাওয়া হতোই না। প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে। আরো আরো সেটা পাবার জন্যই তাই লেখা হয়ে যায় অনেকগুলো সায়েন্স ফিকশন।

অনেকদিন থেকেই সহ ব্লগার ভাই বোনরা বলছিলো কেন এরকম একটা বই বের করি না। কি ভয়ঙ্কর কথা! বই বের করা? মানে লেখক হয়ে যাওয়া। নিজেকে মোটেও লেখক মনে হয় না। নাকের নীচে গোঁফ নেই, পাতলা একটা চশমা। এই দিয়ে কি লেখক হওয়া যায়। তাই প্রথমেই এই চিন্তা বাদ। সহ ব্লগারদের কথাটা উৎসাহ হিসেবেই নেই। বাদটা সাধেন বেশ কয়েকজন সহ ব্লগার আর বন্ধু। এই বই মেলায় কেন বই বের করছি না, সেটা নিয়ে উৎসাহ দিতে থাকেন। আমি ও ফুলে ফেঁপে উঠি। কল্পনায় আমার গোঁফ গজায়, চশমার কাঁচ ভারী হয়। নিজেকে লেখক লেখক মনে হয়।

কিন্তু বই কিভাবে ছাপে? সেটা একটা বিশাল রহস্য আমার কাছে।পাশে এসে দাড়ান আর এক সহ ব্লগার। মোজাম্মেল প্রধান। বই ছাপানোর গলি ঘুঁপচির কিছুই চিনি না। তাই পুরোটা তার উপর ছেড়ে বসে থাকি। সত্যি বলতে এই অসাধারন মানুষটা না থাকলে হয়তো আমার বই ছাপাই হতো না। আরো পাশে এসে দাড়ায় প্রতিভা প্রকাশ। সব কিছু তাদের উপর ছেড়ে দিয়ে আমি লেখক হবার স্বপ্ন দেখি। মাঝরাতে ঘুম ভাঙ্গে, কারন আমি স্বপ্নে দেখি আমার বইয়ের পাতা ব্যাবহার হচ্ছে ঝালমুড়ির ঠোঙ্গায়। ভয় পাই। সাহস দেয় সবাই। আবার স্বপ্ন দেখি কালো বোরখা পড়া মহিলারা আমার বই ছুড়ে ছুড়ে মারছে বাসের জানালা দিয়ে। বাসযাত্রীরা সে বই বিরক্ত হয়ে ছুড়ে ফেলছে রাস্তায়। কি ভয়ানক ব্যাপার। তারপরও সাহস পাই বন্ধু, সহব্লগার আর পাশের প্রিয় মানুষটির কথায়। ভাঙ্গতে গড়তে এগিয়ে চলে আমার লেখক হবার স্বপ্ন।

বই মেলা এসে গেছে। দু'দিন আগে আমার বইও চলে এসেছে মেলায়। এখনো যাইনি মেলায়। ক্ষীপ্ত পাঠকদের ভয়েই মনে হয়। বই কেমন বিক্রী হচ্ছে তার খবর নিতেও ভয় পাই। জানি সেটা একনো দুই অঙ্কের ঘর পেরোয় নি। তাতে কি? আমি তবু তো লেখক। গোঁফ হীন পাতলা চশমার লেখক। তবুও লেখক তো।






লজ্জার কথা: আজকাল হচ্ছে মার্কেটিং এর যুগ। কিন্তু নিজের ঢাক আমি নিজে পেটাতে পারি না। জানিও না সেটা কিভাবে পেটাতে হয়। তারপরও বইয়ের প্রচ্ছদটা দিয়ে দিলাম পোস্টে। অবশ্যই সায়েন্স ফিকশন গল্প সংকলন। বইটা পাওয়া যাবে ৪৫০ নাম্বার ষ্টলে। প্রতিভা প্রকাশে। কেউ যদি ভুল করে কিনে ফেলেন তবে খুবই খুশি হবো গল্পগুলো কেমন হয়েছে তা জানালে।
৫১টি মন্তব্য ৫১টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×